অর্থের বিচারে ট্রাম্প একজন ক্ষুদ্র মানুষ, সেখানে ইলন মাস্ক অনেক বড়: সমস্যা দেখছেন মার্কিন অধ্যাপক

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে খুব দহরম–মহরম সম্পর্ক ধনকুবের ইলন মাস্কের। এই সম্পর্ক নিয়ে সতর্ক করেছেন দেশটির ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক টিমোথি স্নাইডার। তিনি বলেছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এবং তাঁর ওপর মাস্কের প্রভাব নিয়ে ট্রাম্পের সহযোগী ও মিত্রদের বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে।

স্নাইডার একজন জনপ্রিয় লেখকও। ‘অন টাইরানি’ (২০১৭) ও ‘অন ফ্রিডম’–এর (২০২৪) মতো জনপ্রিয় বই রচনা করেছেন তিনি। স্নাইডার বলেন, ‘অর্থের বিচারে ট্রাম্প একজন ক্ষুদ্র মানুষ আর মাস্ক বড় মানুষ। আর আমার মনে হয়, আপনি যদি ট্রাম্পের বন্ধু হয়ে থাকেন, আপনি (এ নিয়ে) চিন্তিত হবেন।’

গার্ডিয়ানের সঙ্গে আলাপচারিতায় এ কথা বলেছেন অধ্যাপক স্নাইডার। এ সময় ইউক্রেনে নিজের কাজসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন তিনি। এই কাজে তাঁর সঙ্গে ছিলেন হলিউড চলচ্চিত্র স্টার ওয়ারের অভিনেতা মার্ক হ্যামিল। ইউক্রেনে রুশ সামরিক বাহিনীর স্থাপন করা স্থলমাইন সরাতে রোবট কেনার জন্য তহবিল সংগ্রহ করেছিলেন তাঁরা।

স্নাইডার মনে করেন, ট্রাম্প ক্ষমতায় যাওয়ার পর হোয়াইট হাউস তাঁর ও মাস্কের মধ্যে একটি অস্বস্তিকর ও ক্ষতিকর বিরোধের মঞ্চে পরিণত হবে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, আমরা ট্রাম্পকে অতিমূল্যায়ন এবং মাস্ককে অবমূল্যায়ন করি। মানুষ মনে করে, ট্রাম্পের অর্থ আছে। কিন্তু তাঁর তা নেই। আসলে তাঁর কখনো অর্থ ছিল না। অর্থ থাকার কথা তিনি কখনো দাবিও করেননি। তাঁর কাছে অর্থ আছে, এটা আপনাকে বিশ্বাস করানোই ছিল তাঁর আসল উদ্দেশ্য। কিন্তু তিনি কখনো তাঁর ঋণ পরিশোধ করতে পারেননি। তিনি কখনো তাঁর নিজের নির্বাচনী প্রচারণার অর্থায়ন করতে পারেননি।’

টেসলা, স্পেসএক্স ও এক্সের মালিক ইলন মাস্ক ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে লাখ লাখ ডলার ব্যয় করেছেন। ওহাইও অঙ্গরাজ্যের সিনেটর জেডি ভ্যান্সকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নেওয়ার জন্য ট্রাম্পের ওপর মাস্কই সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছেন বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

গত নভেম্বরে ট্রাম্পের বিজয়ের পর থেকে ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের মার-এ-লাগোয় তাঁর বাসভবন থেকে শুরু করে ফ্রান্সের নটর ডেম ক্যাথেড্রালে মাস্ককে সব সময় তাঁর পাশে দেখা গেছে। ট্রাম্পের সঙ্গে এত মাখামাখির জন্য অনেকে তাঁকে নিয়ে ব্যঙ্গ করতেও ছাড়ছেন না। বিবেক রামাস্বামীর সঙ্গে মাস্ককে ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিসিয়েন্সি’–এর দায়িত্ব দিয়েছেন ট্রাম্প। এ বিভাগ যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের কোটি কোটি ডলার ব্যয় কমাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

স্নাইডার বলেন, ট্রাম্প যদি এখনই অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতার অবসান না ঘটান, তাহলে তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাকি জীবনে এ ধরনের নির্ভরশীল সম্পর্কে থাকবেন। কারণ, তিনি মানুষের কাছ থেকে অর্থ নেওয়ায় অভ্যস্ত হয়ে পড়বেন। বিষয়টি ট্রাম্পের মিত্রদের উদ্বিগ্ন করে তুলবে।

ইলন মাস্ক ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পর্ক নিয়ে টিমোথি স্নাইডার বলেন, ‘আমি এটাকে বলছি মাস্কোট্রাম্পোভিয়া। কারণ, আমি মনে করি, মাস্ক বেশি গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষ। কিন্তু ট্রাম্পোমাস্কোভিয়া এখানে আরও ভালো হতে পারত।’

 যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলছেন ইলন মাস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলছেন ইলন মাস্ক। ফাইল ছবি: রয়টার্স

No comments

Powered by Blogger.