স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা করতে হবে -ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ১১ বছর কেন আমি বাইরে থাকলাম। ২০১৩ সালে আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি হলো। দেশের অবস্থা বেশি খারাপ। আমাদেরকে বেশি ঘরের বাইরে থাকতে হচ্ছে। চিন্তা করলাম মাত্র দুই সপ্তাহের জন্য লন্ডন যাবো। ১৮ তারিখ সকালে আমি লন্ডনে নামলাম। হঠাৎ দুপুরে জানতে পারলাম আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আমি নাকি ঢাকার রাস্তায় ছিলাম। পুলিশের ওপর বোমা মেরেছি। এর কিছুদিন পরে আমি জানতে পারলাম উচ্চ পর্যায়ের এক দেশের কূটনৈতিক সোর্স থেকে। শেখ হাসিনা আমাকে গ্রেপ্তার করার অনুমতি দিয়েছেন, আইসিটির অধীনে। কিছুই আমি জানতাম না। সুতরাং এটা আল্লাহর মেহেরবাণী। ৫ বছর পুলিশ আমাকে অত্যন্ত জ্বালাতন করেছে। ’১৮ ও ’১৯ ডিসেম্বর পুলিশ আমার বাসায় গিয়েছে। কিন্তু আল্লাহর সিদ্ধান্ত বিদেশে চলে গেলাম। ফিরতে ১১ বছর লেগেছে। ১১ বছর আমি ইংল্যান্ডে থেকে প্র্যাকটিস করেছি।
জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার, প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন, ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, সিনিয়র আইনজীবী এস এম শাহজাহান, মোহাম্মদ হোসেন, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার বেলায়েত হোসেন প্রমুখ। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক এসোসিয়েটস এ সংবর্ধনার আয়োজন করে।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, একটা জিনিস যদি রক্ষা করতে পারতাম, জুডিশিয়ারি। অনেক লিডারকে দেশ ছাড়তে হতো না। অনেকের জেলে যেতে হতো না। ১৯৩৫ সালের বৃটিশ সরকার থেকে গত সরকার পর্যন্ত আমরা অলমোস্ট আমাদের জুডিশিয়ারি স্বাধীন ছিল, প্রেস স্বাধীন ছিল। মানুষের স্বাধীনতা ছিল। কিন্তু এই স্বাধীনতাকে গত সরকার হরণ করেছিল। সুতরাং জুডিশিয়ারিকে যদি আমরা বাঁচাতে পারতাম, পারতাম কিনা আমি জানি না, তাহলেও এই জাতি অনেক আগে এই ডিক্টেটরশিপের হাত থেকে রক্ষা পেতো। আজকে বার বেঞ্চ, আপামর জনসাধারণ- সবার একটা লক্ষ্য হওয়া উচিত, আমরা আমাদের জুডিশিয়ারিকে কোনো সময়ই পরাধীন হতে দিবো না। সঙ্গে সঙ্গে আমরা একটা স্বাধীন বার গড়ে তুলবো।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, আমরা যদি সত্যিকারার্থে এই বাংলাদেশকে তার নিজের জায়গায় নিয়ে যেতে চাই সবধরনের ইন্টারেস্ট থেকে বারকে মুক্ত করতে হবে। আমরা স্বাধীন বার চাই। আমরা স্বাধীন জুডিশিয়ারি চাই। যদি এগুলোর নিশ্চয়তা প্রদান করতে পারি তাহলে সত্যিকারার্থে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হবে। মানুষের ঋণ শোধ করতে পারবো। আমার আহ্বান হবে আমরা বাইরে রাজনীতি করবো। কিন্তু এখানে (বার) মেম্বারস অব দ্য বার। উই আর লাকি দ্যাট উই হ্যাভ গট ভেরি কম্পিটেন্ট, এডুকেটেড, অনেস্ট চিফ জাস্টিস। উই শুড ট্রাই টু স্টেনদেন হিজ হ্যান্ড সো দ্যাট হি ক্যান রিয়েলি সেপারেট দ্য জুডিশিয়ারি ফ্রম দি এঙিকিউটিভ। তিনি বলেন, আপনি ইংল্যান্ডে একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রভাবিত করতে পারবেন না। কোনো উপায় নেই। আর এখানে কী চলছে আমরা সবাই জানি। আসুন সবাই একমত হই। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এসময় তিনি হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর সুনাম করে দেশের জন্য তার অবদানের কথাও স্মরণ করেন। তিনি তরুণ প্রজন্মকে শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর সম্পর্কে জানার আহ্বান জানান। তিনি হিটলারের কথা উল্লেখ করে বলেন- তাকে সরাতে মহাযুদ্ধের প্রয়োজন হয়েছিল। আমরা শুনে আসছিলাম ‘এক নেতার এক দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’- এটাও নাৎসীবাদের সমতুল্য। এই জগদ্দল পাথরকে যেহেতু আমরা সরাতে পেরেছি, সেহেতু আমাদের স্বাধীন ‘বার’ গড়ে তুলতে হবে। স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমরা যদি এগুলো প্রতিষ্ঠা করতে পারি তাহলেই আমরা শহীদদের প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধা জানাতে পারবো। এ সময় তিনি দেশ গঠনে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, এখানে যারা আইনজীবী আছেন তারা প্রশাসনে যাবেন। আপনারা যদি শক্তিশালী হয়ে থাকেন আজ হোক কাল হোক দেশ ভালো হতে বাধ্য। তিনি বলেন, আমরা সমাজকে দিয়ে যাবো, কি দিয়ে যাবো। আমরা যদি আমাদের সন্তানদের জ্ঞান দিয়ে যেতে পারি। তিনি বলেন, বৃটিশরা আমাদের শাসন-শোষণ করেছে কিন্তু তারাও আইনকে সম্মান করতো। কিন্তু একজন রাজনীতিক রাস্তা দিয়ে যাবে আর তাকে উধাও করে দেয়া হবে। এমন উধাও করে দেয়াটা অতীতে ছিল না। অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ১১ বছর পরে দেশে ফিরে এসেছেন, এজন্য আমি আনন্দিত। একই সঙ্গে আমি মনে করি, আগামীর বাংলাদেশে, বৈষম্যহীন বাংলাদেশে এক অনবদ্য মানুষ হিসেবে, আইনজীবী হিসেবে তিনি ভূমিকা রাখবেন। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আইনজীবী তার মক্কেলের পক্ষে কথা বললে, আইনি সহায়তা করলে, সেই আইনজীবীকে বাংলাদেশের বাইরে অবস্থান করতে হয় ১১ বছর, সেটা ব্যারিস্টার রাজ্জাককে দেখলে বোঝা যায়। আমি মনে করি ব্যারিস্টার রাজ্জাক যে একটি প্রতিষ্ঠান, তিনি যে ক্ষণজন্মা পুরুষ সেটা বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার মনের অজান্তে প্রমাণ করে গেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসামিপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি হিসেবে কাজ করেছিলেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। এরপর ২০১৯ সালে জামায়াত থেকে পদত্যাগ করেন এবং এবি পার্টির প্রধান উপদেষ্টা হয়েছিলেন তিনি।
No comments