থার্ড টার্মিনালে অস্বাভাবিক ব্যয়ের তদন্ত হবে

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিমান ও পর্যটন উপদেষ্টা হাসান আরিফ বলেছেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণে অস্বাভাবিক ব্যয় কেন হয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হবে। এ ছাড়া গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ে বিমানের সক্ষমতার বিষয়টি আমরা দেখবো। দুই বছর যে আমরা হাত দিয়ে বসে থাকবো- বিষয়টা এমন নয়। যদি তার সক্ষমতার ঘাটতি হয় বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া হবে। দুপুরে রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে ‘শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ বিষয়ে গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে এভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজম জার্নালিস্টস ফোরাম অব বাংলাদেশ (এটিজেএফবি)। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি তানজীম আনোয়ার। উপদেষ্টা বলেন, থার্ড টার্মিনাল নির্মাণে দুর্নীতি হয়েছে কিনা তা তদন্ত করা হবে। সেই সঙ্গে শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হবে। আগামী এক বছরের মধ্যে থার্ড টার্মিনাল চালু হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন থেকে ৩৬৫ দিন সময় লাগবে। তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণে যে বিনিয়োগ হয়েছে তা থেকে কেমন সেবা পাওয়া যাবে এবং দেশ ও জাতি লাভবান হবে- সেটা এখন বড় চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাসান আরিফ বলেন, তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের পর প্রশ্ন আসছে ৩০ থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়, এই টার্মিনাল নির্মাণের পর আমাদের রিটার্ন কি? অর্থের দিক দিয়ে নয়, সার্ভিসের দিক দিয়ে রিটার্ন কি? থার্ড টার্মিনাল নির্মাণে ২৩ হাজার কোটি টাকা যে ব্যয় হয়েছে অবশ্যই দুর্নীতি হয়েছে বলে বেশি ব্যয় হয়েছে বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখবো।

গোলটেবিল বৈঠকে লিখিত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এভিয়েশন অপারেটর’স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সেক্রেটারি ও নভোএয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান। প্রবন্ধে মফিজুর রহমান বলেন, সমপ্রতি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে বিমানের জিম্মায় তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবা দুই বছরের জন্য প্রদানের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জোর বিতর্ক চলমান এবং তা যৌক্তিক। তৃতীয় টার্মিনাল অপারেশনের ক্ষেত্রে যেন রাজনীতির উপর অপারেশনাল বিষয় প্রাধান্য পায় তার জোর দাবি রাখবো। তিনি বলেন, তৃতীয় টার্মিনাল গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবা এবং টার্মিনাল অপারেশন উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে বর্তমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং মনোপলি ভেঙে একাধিক কোম্পানিকে দেয়া হোক। এখানে বিমান প্রসঙ্গ নয়, গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবার মনোপলি ভাঙা সম্ভব হলে চূড়ান্ত বিচারে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে। আর অন্য অপারেটরের সঙ্গে যোগ্য বিবেচনা হলে বিমানকেও জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবার দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। এতে দেশ এবং জনগণ একধারে আর্থিকভাবে লাভবান হবে এবং উন্নত সেবা পাবে।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ও বিমান পরিচালনা বোর্ডের সাবেক সদস্য কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, বিশ্বের কোথাও রাজধানীর ভেতর বিমানবন্দর নেই। সেখানে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তথা তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের সময় তা বিবেচনা করা হয়নি। এমন অপরিকল্পিত কার্যক্রমের জন্য ৫৪ বছরেও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) অর্জন শূন্য। তিনি বলেন, বিশ্বের কোথাও কোনো একটি সংস্থা একক ভাবে বিমানবন্দর গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং করে না। সেখানে শাহজালাল বিমানবন্দরসহ দেশের সব বিমানবন্দর এককভাবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং করছে বিমান। এ বিষয়ে সেবা দিতে গিয়ে বিমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। এখন তারা শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং নেয়ার জন্য চেষ্টা করছে। এটা তারা সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারবে তা বলা যায় না।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মনজুর কবির ভূঁইয়া বলেন, থার্ড টার্মিনালসহ দেশের সকল টার্মিনালগুলোকে উন্নত করার জন্য কাজ করছি। এক্সপোর্ট এবং ইমপোর্ট নিয়ে একটি টার্মিনাল হচ্ছে বলেও জানান তিনি। এই টার্মিনালের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য উপদেষ্টার সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে। তৃতীয় টার্মিনাল চালু জাতির কাছে স্বপ্ন। তবে এজন্য তারা বসে নেই। নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। কর্তৃপক্ষ যেটা ভালো হয় সেটাই করার চেষ্টা করছেন বলে জানান তিনি। এয়ার এ্যাস্ট্রা’র সিইও ইমরান আসিফ বলেন, একটি ভবন থাকলে শুধু হবে না। আমাদের মাল্টিপল গ্রাউন্ড সার্ভিস প্রভাইডার লাগবে। এর পাশাপাশি আমাদের দক্ষ ভালো ম্যানেজমেন্ট ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল করতে পারে- এমন জনবলও লাগবে। আমাদের টার্মিনালগুলোতে যেসব লোক কাজ করে তাদের বেতন পর্যাপ্ত নয়। যারা গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সেবা দেবেন তাদের সেবায় যেনো দেশি-বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর যাত্রীরা সন্তুষ্ট থাকে। এসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় পরিবহন করে বিদেশে এয়ারলাইন্সগুলো সন্তুষ্ট না। তারা জানিয়েছে, বিশ্ব অন্যান্য যেকোনো দেশের তুলনায় শাহজালাল বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং চার্জ বেশি। তাদেরকে সন্তুষ্ট করতে হলে শাহজালাল বিমানবন্দরকে এভিয়েশন হাব করতে হবে।

এয়ারলাইন্স অপারেটরস কমিটির ঢাকার (এওসি) চেয়ারপারসন দিলারা হোসেন বলেন, শাহজালাল বিমানবন্দরে আজ থেকে ৩০-৪০ বছর আগে যেসব অভিযোগ শুনেছি- এখনো একই ধরনের অভিযোগ আসছে। এই বিমানবন্দরে ক্রমেই বিদেশি এয়ারলাইন্স বাড়ছে। কিন্তু গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের সেবার মান বাড়ছে না।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.