একাকী মা কিংবা একাকী বাবাদের জীবনের গল্প by সানজানা চৌধুরী
একাকী মায়েদের জীবনযুদ্ধ অনেক কঠিন |
ঢাকার ধানমন্ডির বাসিন্দা আয়েশা সিদ্দিকার স্বামী মারা যাওয়ার সময় তার বড় মেয়ের বয়স ছিল আট এবং ছোট মেয়ের মাত্র তিন বছর।
এরপর দীর্ঘ ২৭ বছর স্বামীকে ছাড়া দুই মেয়েকে নিয়ে এক হাতে সংসার সামলেছেন তিনি। যা কখনোই সহজ ছিল না।
মেয়েদের পড়াশোনা, বাড়ি ভাড়া, মাসের খরচ- সেইসঙ্গে সামাজিক মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কঠোর সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে তাকে। চলার পথের সেইসব বাধা কিভাবে তিনি সামাল দিয়েছেন সেই অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন মিসেস সিদ্দিকা।
"যখন আমার স্বামী মারা যান, আমি দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম যে কি করবো। দুটো মেয়েকে বড় করবো কিভাবে। তখন পরিবারের অনেক কাছের মানুষও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল।"
"আবার অল্প বয়সে স্বামী হারিয়েছি বলে অনেক পুরুষই নানা সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করতো। কিন্তু আমি মনকে শক্ত করে চাকরি করে গেছি। সবাই বলতো মেয়েদের ছোট অবস্থাতেই বিয়ে দিয়ে দিতে। আমি কারও কথা শুনিনি। কারণ আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলাম যে আমি আমার মেয়েদের কারও মুখাপেক্ষী করবো না।"
মিসেস সিদ্দিকার দুই মেয়েই এখন বড় বড় প্রতিষ্ঠানে বড় চাকরি করেন। তারাই এখন মায়ের দেখাশোনা করছে। তিনি যে এভাবে সন্তানদের বড় করতে পারবেন এটা তার কাছের মানুষরাই কখনও ভাবতে পারেনি।
বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নজরুল ইসলামও তার স্ত্রীকে হারিয়েছেন প্রায় দুই দশক হল। দুই ছেলের বয়স তখন খুব কম থাকায় পরিবার থেকে বার বার চাপ আসে দ্বিতীয় বিয়ের জন্য।
সবাই প্রশ্ন করতো পুরুষ হয়ে একা কিভাবে সংসার সামলাবেন। কিন্তু নজরুল ইসলাম ছিলেন অটল। কাছের মানুষদের সাহায্যে একা একাই তিনি পালন করেছেন বাবা ও মায়ের ভূমিকা।
"আমার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর সবাই চাপ দিতে শুরু করে বিয়ে করতে। ভাবতো যে পুরুষ মানুষ একা সংসার সামলাতে পারবেনা। কিন্তু আমি তা কখনোই চাইনি। এটা ঠিক যে একজন মায়ের অভাব কখনোই পূরণ করা সম্ভব না। কিন্তু আমি অফিস শেষে সংসারের কাজ করেছি। ছেলেদের পড়িয়েছি। আমার ছেলেরাও বুঝে গিয়েছিল তাদের মনকে শক্ত রাখতে হবে। আসলে সংসার চালানোর জন্য দ্বিতীয় বিয়ে করতে হবে, এমনটা আমি ভাবতেই পারিনি।"
বাংলাদেশে সামাজিকভাবে পরিবারের সংজ্ঞা মানেই মা এবং বাবা। সিঙ্গেল প্যারেন্টিংয়ের যুতসই কোন শব্দও বাংলা অভিধানে নেই। বাংলাদেশে একক মা কিংবা একক বাবার ধারণাটিকে স্বাভাবিকভাবে নেয়ার জন্য যে সামাজিক পরিবেশ বা মানসিকতার প্রয়োজন, সেটার যথেষ্ট অভাব রয়েছে বলে মনে করেন সমাজবিজ্ঞানী মাহবুবা নাসরিন।
"আমাদের সমাজে ধরেই নেয়া হয় যে একা মা অথবা একা একজন বাবা সন্তান মানুষ করতে পারবেনা, সংসার করতে পারবেনা। সিঙ্গেল প্যারেন্টিং কনসেপ্টটাকে গ্রহণ করার মতো মানসিকতাই আমাদের মধ্য তৈরি হয়নি। তাছাড়া রাষ্ট্রীয় কিছু সুযোগ সুবিধার বিষয়ও আছে, যেটা কিনা স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে একক বাবা মায়েদের দেয়া হয়। অথচ আমাদের দেশে এমন কোন সুবিধা দেয়ার ব্যাপারে কোন আলোচনাই হয়না।"
এক্ষেত্রে অভিভাবকের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন বলে মনে করেন সমাজবিজ্ঞানী মাহবুবা নাসরিন। সমাজে একক অভিভাবকত্বের বিষয়টিকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পাঠ্যপুস্তকে এ সংক্রান্ত বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে গণমাধ্যমেরও এগিয়ে আসার প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
"পাঠ্যসূচিতে এটা উল্লেখ করা প্রয়োজন যে একজন বাবা কিংবা মা চাইলেই সংসার করতে পারেন, সন্তানকে দেখাশোনা করতে পারেন, ভরনপোষণ করতে পারেন। যেসব দেশে সলো মাদার সলো ফাদার কনসেপ্ট আছে, সেইসব দেশে রাষ্ট্র তাদেরকে কিভাবে সহায়তা করে সেখান থেকে ধারণা নেয়া যেতে পারে। তাদের থেকে উদাহরণ নিয়ে আমরা কিছু আইনগত দিক তৈরি করতে পারি। এছাড়া সিঙ্গেল প্যারেন্টিংয়ের বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে গনমাধ্যমেরও ভূমিকা রাখতে হবে।"
বাবা অথবা মায়ের মধ্যে কোন একজনের মৃত্যু হলে বা , কাজের প্রয়োজনে কেউ আলাদা বসবাস করলে অথবা বিবাহ বিচ্ছেদের কারণে অনেক অভিভাবককেই একা সন্তান লালন পালন করা হয়। বাংলাদেশে সিঙ্গেল প্যারেন্টসদের নিয়ে কোন গবেষণা না হলেও এই সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে বলে মনে করেন সমাজবিজ্ঞানীরা।
এরপর দীর্ঘ ২৭ বছর স্বামীকে ছাড়া দুই মেয়েকে নিয়ে এক হাতে সংসার সামলেছেন তিনি। যা কখনোই সহজ ছিল না।
মেয়েদের পড়াশোনা, বাড়ি ভাড়া, মাসের খরচ- সেইসঙ্গে সামাজিক মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কঠোর সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে তাকে। চলার পথের সেইসব বাধা কিভাবে তিনি সামাল দিয়েছেন সেই অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন মিসেস সিদ্দিকা।
"যখন আমার স্বামী মারা যান, আমি দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম যে কি করবো। দুটো মেয়েকে বড় করবো কিভাবে। তখন পরিবারের অনেক কাছের মানুষও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল।"
"আবার অল্প বয়সে স্বামী হারিয়েছি বলে অনেক পুরুষই নানা সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করতো। কিন্তু আমি মনকে শক্ত করে চাকরি করে গেছি। সবাই বলতো মেয়েদের ছোট অবস্থাতেই বিয়ে দিয়ে দিতে। আমি কারও কথা শুনিনি। কারণ আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলাম যে আমি আমার মেয়েদের কারও মুখাপেক্ষী করবো না।"
মিসেস সিদ্দিকার দুই মেয়েই এখন বড় বড় প্রতিষ্ঠানে বড় চাকরি করেন। তারাই এখন মায়ের দেখাশোনা করছে। তিনি যে এভাবে সন্তানদের বড় করতে পারবেন এটা তার কাছের মানুষরাই কখনও ভাবতে পারেনি।
বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নজরুল ইসলামও তার স্ত্রীকে হারিয়েছেন প্রায় দুই দশক হল। দুই ছেলের বয়স তখন খুব কম থাকায় পরিবার থেকে বার বার চাপ আসে দ্বিতীয় বিয়ের জন্য।
সবাই প্রশ্ন করতো পুরুষ হয়ে একা কিভাবে সংসার সামলাবেন। কিন্তু নজরুল ইসলাম ছিলেন অটল। কাছের মানুষদের সাহায্যে একা একাই তিনি পালন করেছেন বাবা ও মায়ের ভূমিকা।
"আমার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর সবাই চাপ দিতে শুরু করে বিয়ে করতে। ভাবতো যে পুরুষ মানুষ একা সংসার সামলাতে পারবেনা। কিন্তু আমি তা কখনোই চাইনি। এটা ঠিক যে একজন মায়ের অভাব কখনোই পূরণ করা সম্ভব না। কিন্তু আমি অফিস শেষে সংসারের কাজ করেছি। ছেলেদের পড়িয়েছি। আমার ছেলেরাও বুঝে গিয়েছিল তাদের মনকে শক্ত রাখতে হবে। আসলে সংসার চালানোর জন্য দ্বিতীয় বিয়ে করতে হবে, এমনটা আমি ভাবতেই পারিনি।"
বাংলাদেশে সামাজিকভাবে পরিবারের সংজ্ঞা মানেই মা এবং বাবা। সিঙ্গেল প্যারেন্টিংয়ের যুতসই কোন শব্দও বাংলা অভিধানে নেই। বাংলাদেশে একক মা কিংবা একক বাবার ধারণাটিকে স্বাভাবিকভাবে নেয়ার জন্য যে সামাজিক পরিবেশ বা মানসিকতার প্রয়োজন, সেটার যথেষ্ট অভাব রয়েছে বলে মনে করেন সমাজবিজ্ঞানী মাহবুবা নাসরিন।
"আমাদের সমাজে ধরেই নেয়া হয় যে একা মা অথবা একা একজন বাবা সন্তান মানুষ করতে পারবেনা, সংসার করতে পারবেনা। সিঙ্গেল প্যারেন্টিং কনসেপ্টটাকে গ্রহণ করার মতো মানসিকতাই আমাদের মধ্য তৈরি হয়নি। তাছাড়া রাষ্ট্রীয় কিছু সুযোগ সুবিধার বিষয়ও আছে, যেটা কিনা স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে একক বাবা মায়েদের দেয়া হয়। অথচ আমাদের দেশে এমন কোন সুবিধা দেয়ার ব্যাপারে কোন আলোচনাই হয়না।"
এক্ষেত্রে অভিভাবকের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন বলে মনে করেন সমাজবিজ্ঞানী মাহবুবা নাসরিন। সমাজে একক অভিভাবকত্বের বিষয়টিকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পাঠ্যপুস্তকে এ সংক্রান্ত বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে গণমাধ্যমেরও এগিয়ে আসার প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
"পাঠ্যসূচিতে এটা উল্লেখ করা প্রয়োজন যে একজন বাবা কিংবা মা চাইলেই সংসার করতে পারেন, সন্তানকে দেখাশোনা করতে পারেন, ভরনপোষণ করতে পারেন। যেসব দেশে সলো মাদার সলো ফাদার কনসেপ্ট আছে, সেইসব দেশে রাষ্ট্র তাদেরকে কিভাবে সহায়তা করে সেখান থেকে ধারণা নেয়া যেতে পারে। তাদের থেকে উদাহরণ নিয়ে আমরা কিছু আইনগত দিক তৈরি করতে পারি। এছাড়া সিঙ্গেল প্যারেন্টিংয়ের বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে গনমাধ্যমেরও ভূমিকা রাখতে হবে।"
বাবা অথবা মায়ের মধ্যে কোন একজনের মৃত্যু হলে বা , কাজের প্রয়োজনে কেউ আলাদা বসবাস করলে অথবা বিবাহ বিচ্ছেদের কারণে অনেক অভিভাবককেই একা সন্তান লালন পালন করা হয়। বাংলাদেশে সিঙ্গেল প্যারেন্টসদের নিয়ে কোন গবেষণা না হলেও এই সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে বলে মনে করেন সমাজবিজ্ঞানীরা।
No comments