‘এই নৈরাজ্য থামাতে হবে এখনই’ by মরিয়ম চম্পা
গুজব
ছড়িয়ে হামলা, খুনের মতো নৈরাজ্যকর কর্মকাণ্ডে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন
বিশিষ্টজনরা। এখনই এই নৈরাজ্যকর অবস্থা থেকে উত্তরণের পদক্ষেপ নেয়ার
পরামর্শ দিয়েছেন তারা। বলেছেন, এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে
পারে। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, এটা আসলে অনুসন্ধান
করা দরকার। এমনও হতে পারে কারো সাথে কারো একটু মতবিরোধ বা শত্রুতা আছে।
কয়েকজন মিলে কাউকে ছেলেধরা গুজবে ফাঁসিয়ে দিল। এটা অত্যন্ত দু:খজনক।
এক্ষেত্রে পুলিশকে খুব সতর্কতার সঙ্গে তদন্ত করে, যারা এর সঙ্গে জড়িত এবং
কেন এসব করছে এটা খুঁজে বের করা উচিৎ।
তা না হলে যে কেউ যে কোনো কারণে শত্রুতা থাকলে এটাকে ব্যবহার করতে পারে। পুলিশের সাবেক আইজি ও সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ বলেন, স্বাধীনতা উত্তরকালে আমরা এই ধরনের গুঁজব শুনেছি। এক্ষেত্রে আমার মনে হয় কেউ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এই গুঁজবটা ছড়াচ্ছে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য। সম্প্রতি প্রিয়া সাহার বক্তব্য এবং এই ছেলেধরা গুঁজবের ঘটনা আমার মনে হয় একইসূত্রে গাথা।
এখানে করনীয় হচ্ছে সাধারণ জনগণের মাঝে জনসচেতনতা তৈরি করা। এক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধি, সরকারের বিভিন্ন বাহিনী, বিশেষ করে আইশৃঙ্খলা বাহিনী, সাধারণ মানুষকে বলা, সচেতন করা এবং তাদের মাথায় ঢুকানো যেন সন্দেহভাজন ব্যক্তির গায়ে হাত না তুলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হবে। আমরা প্রায়ই দেখি একটি ঘটনা ঘটলে পরপর অনেকগুলো ঘটনা ঘটতে থাকে। নিজেদের একটু সচেতন থাকা, টেলিভিশন, বিভিন্ন অনুষ্ঠান, পত্রপত্রিকা, লিফলেট, মসজিদের ইমাম, উঠান বৈঠক ইত্যাদির মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি এবং বৃদ্ধি করতে হবে।
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, সমাজে যখন মানুষের ভেতর অস্থিরতা এসে যায়, মানুষ যখন কোনো কিছুতে বিশ্বাস করতে পারে না, অস্বাভাবিক প্রতিযোগীতায় নেমে যায় তখন তাদের মূল্যবোধের অবক্ষয় হয়। তখন এই ধরনের ঘটনা ঘটে। এখন মানুষতো অসুস্থ্য হয়ে গেছে। কোনো কিছু সহ্য করতে পারছে না। এর কারণ হচ্ছে, মানুষ দেখতে পাচ্ছে অপরাধীরা চোখের সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অন্যায় করে তারা পার পেয়ে যাচ্ছে। অতএব আমরা আইন নিজের হাতে তুলে নেই। এবং পরবর্তীতে তারা একটি অসহিষ্ণু আচরণ করে সন্দেহজনক ও বেপরোয়াভাবে একজন মানুষকে মেরে ফেলে। এবং দলবদ্ধভাবে হত্যা করে। এটা হচ্ছে একটি হত্যাযজ্ঞ এবং অপরাধ। আরেকটি বিষয় হচ্ছে ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মানুষকে আক্রান্ত করতে বা সমাজে অস্থিরতা তৈরি করতে গুঁজব তৈরি করে থাকে। এক্ষেত্রে অনেকগুলো মোটিভ কাজ করে।
মানবাধিকার আইনজীবী সালমা আলী বলেন, সমাজের অস্থিরতা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সব কিছুতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। সামাজিক অবক্ষয়, বিচারহীনতা এই বিষয়গুলো মিলিয়ে মানুষ একটি আতঙ্কের মধ্যে আছে। মানুষ প্রায় ক্ষেত্রে বিচার হতে দেখেনা। পুলিশের কাছে গেলে কোনো অপরাধীকে শাস্তি দিতে দেখে না। ছেলেধরা গুঁজবে একজন মানুষকে মেরে ফেলতে হবে এই ধরনের একটি পৈশাচিক আক্রমণ এবং বিকৃত মানসিকতা ছড়িয়ে পরেছে। এর একটাই কারণ মানুষ এখন আর বিচার ব্যবস্থার ওপর বিশ্বাস করে না। তারা অনেক অসহনীয় হয়ে গেছে। তারা সর্বক্ষণ একটি অস্থিরতার মধ্যে থাকে। এটা কিন্তু খুবই ভয়াবহ। তাই এই ধরনের অপরাধীদের খুঁজে বের করে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ এখন সাধারণ মানুষ নিজের হাতে আইন তুলে নেয় এবং বিচার করে। এটা তাদের করার কথা না। একজন প্রকৃত ছেলেধরা হলেও তাকে পিটানোর অধিকার আমাদের নেই। গণহারে একজন মানুষকে পিটানোর অর্থ দাঁড়ায় এই যে আমার মধ্যে কোনো ভয় নেই। এটা করলে আমার কোনো কিছু হবে না। ঘটনার সময় চারপাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলো কতোটা বিবেকহীন। তারা কেউ বাধা দেয় না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মানুষজন আশপাশে থাকলেও তারা কেউ এগিয়ে আসে না। এসকল কারণেই ঘটনাগুলো ঘটে। প্রকৃত ঘটনা ভেরিফাই না করে কোনো একটি একশনে যাওয়া এটা তখনই মানুষ করতে পারে যখন তার আইনশৃঙ্খলার প্রতি কোনো শ্রদ্ধা, মানবিক মূল্যবোধ এবং বিচারের প্রতি কোনো আস্থা থাকে না।
অপরাধ বিজ্ঞানী তৌহিদুল হক বলেন, আমাদের দেশে অতীতেও উন্নয়ন কেন্দ্রীক প্রকল্পকে সামনে রেখে অনেক গুজব ছড়িয়েছে। একই সাথে আমাদের সামাজিক অনেকগুলো উপাদানের মধ্যে গুজবের একটি জায়গা আছে। আমাদের সমাজের সর্বস্তরের মানুষের গুজব কেন্দ্রীক রুপকথা শোনার অভিজ্ঞতা আছে। এই পরিস্থিতিতে মানুষের মধ্য একধরনের অনুভুতি কেন্দ্রীক ক্ষোভ এবং অসন্তোষ তৈরি হয়। দেখা গেছে, কোনো একটি এলাকায় কোনো একটি শিশুকে খুঁজে পাওয়া যায় নি। অথবা তার মাথা পাওয়া গেছে। অথবা তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। ফলে ওই এলাকার মানুষের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ তৈরি হয়েছে এবং দীর্ঘদিন হয়তো সেটা তারা লালনও করেছে। ফলে এই ধরনের ঘটনা যখন সামনে পায় তখন সেই মানুষগুলো একধরনের হিংস্র আচরণ করে। ব্যক্তিটিকে নির্যাতন করে। একটা সময় ছিল তাকে মানসিক ভাবে নির্যাতন এবং গালিগালাজ করে পুলিশের হাতে তুলে দিতো। এখন কিন্তু তার বিপরীত হয়েছে।
তিনি বলেন, সার্বিক অর্থে বাংলাদেশের সামাজিক পরিবেশ, মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক, আত্মিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে। একজন অপরিচিত লোক অন্য এলাকায় গেলে সে বিভিন্নভাবে ভিক্টিম হতে পারে। গুজবকে কেন্দ্র করে কেউ যদি ব্যক্তিগত কোনো ক্ষোভ চরিতার্থ করতে চায় তারও কিন্তু সুযোগ রয়েছে। সুতারাং অনেকভাবে একটি সামাজিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। যিনি ভিক্টিম হয় তিনিও জানেন না কি কারণে ভিক্টিম হচ্ছেন। আর যিনি অপরাধী হচ্ছেন, মারছেন তিনিও জানেন না কেন মারছেন। তিনি বলেন, এই সমস্যা থেকে বের হতে হলে গুজব যে প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে ছড়িয়ে পরছে সেই প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে মনিটরিং করতে হবে। মূল ধারার মিডিয়ার এক্ষেত্রে বড় একটি ভূমিকা বা দায়িত্ব আছে। তাদের উচিৎ হবে সঠিক তথ্যটি উপস্থাপন করা। আইশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা বা তৎপরতা আরো বেশি করে বাড়ানো দরকার। এসব ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। স্থানীয় নির্বাচিত প্রতিনিধি, ধর্মীয় নেতা, শিক্ষক সবাই মিলে সমন্বিতভাবে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন তুলতে হবে।
সমাজবিজ্ঞানী ড. নেহাল করিম বলেন, সম্প্রতি নিত্য নতুন কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। এগুলো বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা না। সমাজকে অস্থিতিশীল করার জন্যই এসকল উপযোগীতার সৃষ্টি হয়েছে। একটি সমাজে গুজবটা তখনই হয় যখন কোনো তথ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে কিছু শুন্যতা বিরাজ করে। তখন মানুষ তথ্যটা পাওয়ার জন্য নিজের মতো করে গুজব তৈরি করে। বাজারে ছড়িয়ে দেয়। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা সরকারের গোয়েন্দা বাহিনী এবং সোর্স আছে। তারা কেন ঘটনার আগে এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারে না। তাদের উচিৎ সবার আগে জেনে বিষয়টিকে ছত্রভঙ্গ করা। এবং এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া।
তা না হলে যে কেউ যে কোনো কারণে শত্রুতা থাকলে এটাকে ব্যবহার করতে পারে। পুলিশের সাবেক আইজি ও সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ বলেন, স্বাধীনতা উত্তরকালে আমরা এই ধরনের গুঁজব শুনেছি। এক্ষেত্রে আমার মনে হয় কেউ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এই গুঁজবটা ছড়াচ্ছে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য। সম্প্রতি প্রিয়া সাহার বক্তব্য এবং এই ছেলেধরা গুঁজবের ঘটনা আমার মনে হয় একইসূত্রে গাথা।
এখানে করনীয় হচ্ছে সাধারণ জনগণের মাঝে জনসচেতনতা তৈরি করা। এক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধি, সরকারের বিভিন্ন বাহিনী, বিশেষ করে আইশৃঙ্খলা বাহিনী, সাধারণ মানুষকে বলা, সচেতন করা এবং তাদের মাথায় ঢুকানো যেন সন্দেহভাজন ব্যক্তির গায়ে হাত না তুলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হবে। আমরা প্রায়ই দেখি একটি ঘটনা ঘটলে পরপর অনেকগুলো ঘটনা ঘটতে থাকে। নিজেদের একটু সচেতন থাকা, টেলিভিশন, বিভিন্ন অনুষ্ঠান, পত্রপত্রিকা, লিফলেট, মসজিদের ইমাম, উঠান বৈঠক ইত্যাদির মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি এবং বৃদ্ধি করতে হবে।
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, সমাজে যখন মানুষের ভেতর অস্থিরতা এসে যায়, মানুষ যখন কোনো কিছুতে বিশ্বাস করতে পারে না, অস্বাভাবিক প্রতিযোগীতায় নেমে যায় তখন তাদের মূল্যবোধের অবক্ষয় হয়। তখন এই ধরনের ঘটনা ঘটে। এখন মানুষতো অসুস্থ্য হয়ে গেছে। কোনো কিছু সহ্য করতে পারছে না। এর কারণ হচ্ছে, মানুষ দেখতে পাচ্ছে অপরাধীরা চোখের সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অন্যায় করে তারা পার পেয়ে যাচ্ছে। অতএব আমরা আইন নিজের হাতে তুলে নেই। এবং পরবর্তীতে তারা একটি অসহিষ্ণু আচরণ করে সন্দেহজনক ও বেপরোয়াভাবে একজন মানুষকে মেরে ফেলে। এবং দলবদ্ধভাবে হত্যা করে। এটা হচ্ছে একটি হত্যাযজ্ঞ এবং অপরাধ। আরেকটি বিষয় হচ্ছে ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মানুষকে আক্রান্ত করতে বা সমাজে অস্থিরতা তৈরি করতে গুঁজব তৈরি করে থাকে। এক্ষেত্রে অনেকগুলো মোটিভ কাজ করে।
মানবাধিকার আইনজীবী সালমা আলী বলেন, সমাজের অস্থিরতা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সব কিছুতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। সামাজিক অবক্ষয়, বিচারহীনতা এই বিষয়গুলো মিলিয়ে মানুষ একটি আতঙ্কের মধ্যে আছে। মানুষ প্রায় ক্ষেত্রে বিচার হতে দেখেনা। পুলিশের কাছে গেলে কোনো অপরাধীকে শাস্তি দিতে দেখে না। ছেলেধরা গুঁজবে একজন মানুষকে মেরে ফেলতে হবে এই ধরনের একটি পৈশাচিক আক্রমণ এবং বিকৃত মানসিকতা ছড়িয়ে পরেছে। এর একটাই কারণ মানুষ এখন আর বিচার ব্যবস্থার ওপর বিশ্বাস করে না। তারা অনেক অসহনীয় হয়ে গেছে। তারা সর্বক্ষণ একটি অস্থিরতার মধ্যে থাকে। এটা কিন্তু খুবই ভয়াবহ। তাই এই ধরনের অপরাধীদের খুঁজে বের করে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ এখন সাধারণ মানুষ নিজের হাতে আইন তুলে নেয় এবং বিচার করে। এটা তাদের করার কথা না। একজন প্রকৃত ছেলেধরা হলেও তাকে পিটানোর অধিকার আমাদের নেই। গণহারে একজন মানুষকে পিটানোর অর্থ দাঁড়ায় এই যে আমার মধ্যে কোনো ভয় নেই। এটা করলে আমার কোনো কিছু হবে না। ঘটনার সময় চারপাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলো কতোটা বিবেকহীন। তারা কেউ বাধা দেয় না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মানুষজন আশপাশে থাকলেও তারা কেউ এগিয়ে আসে না। এসকল কারণেই ঘটনাগুলো ঘটে। প্রকৃত ঘটনা ভেরিফাই না করে কোনো একটি একশনে যাওয়া এটা তখনই মানুষ করতে পারে যখন তার আইনশৃঙ্খলার প্রতি কোনো শ্রদ্ধা, মানবিক মূল্যবোধ এবং বিচারের প্রতি কোনো আস্থা থাকে না।
অপরাধ বিজ্ঞানী তৌহিদুল হক বলেন, আমাদের দেশে অতীতেও উন্নয়ন কেন্দ্রীক প্রকল্পকে সামনে রেখে অনেক গুজব ছড়িয়েছে। একই সাথে আমাদের সামাজিক অনেকগুলো উপাদানের মধ্যে গুজবের একটি জায়গা আছে। আমাদের সমাজের সর্বস্তরের মানুষের গুজব কেন্দ্রীক রুপকথা শোনার অভিজ্ঞতা আছে। এই পরিস্থিতিতে মানুষের মধ্য একধরনের অনুভুতি কেন্দ্রীক ক্ষোভ এবং অসন্তোষ তৈরি হয়। দেখা গেছে, কোনো একটি এলাকায় কোনো একটি শিশুকে খুঁজে পাওয়া যায় নি। অথবা তার মাথা পাওয়া গেছে। অথবা তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। ফলে ওই এলাকার মানুষের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ তৈরি হয়েছে এবং দীর্ঘদিন হয়তো সেটা তারা লালনও করেছে। ফলে এই ধরনের ঘটনা যখন সামনে পায় তখন সেই মানুষগুলো একধরনের হিংস্র আচরণ করে। ব্যক্তিটিকে নির্যাতন করে। একটা সময় ছিল তাকে মানসিক ভাবে নির্যাতন এবং গালিগালাজ করে পুলিশের হাতে তুলে দিতো। এখন কিন্তু তার বিপরীত হয়েছে।
তিনি বলেন, সার্বিক অর্থে বাংলাদেশের সামাজিক পরিবেশ, মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক, আত্মিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে। একজন অপরিচিত লোক অন্য এলাকায় গেলে সে বিভিন্নভাবে ভিক্টিম হতে পারে। গুজবকে কেন্দ্র করে কেউ যদি ব্যক্তিগত কোনো ক্ষোভ চরিতার্থ করতে চায় তারও কিন্তু সুযোগ রয়েছে। সুতারাং অনেকভাবে একটি সামাজিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। যিনি ভিক্টিম হয় তিনিও জানেন না কি কারণে ভিক্টিম হচ্ছেন। আর যিনি অপরাধী হচ্ছেন, মারছেন তিনিও জানেন না কেন মারছেন। তিনি বলেন, এই সমস্যা থেকে বের হতে হলে গুজব যে প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে ছড়িয়ে পরছে সেই প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে মনিটরিং করতে হবে। মূল ধারার মিডিয়ার এক্ষেত্রে বড় একটি ভূমিকা বা দায়িত্ব আছে। তাদের উচিৎ হবে সঠিক তথ্যটি উপস্থাপন করা। আইশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা বা তৎপরতা আরো বেশি করে বাড়ানো দরকার। এসব ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। স্থানীয় নির্বাচিত প্রতিনিধি, ধর্মীয় নেতা, শিক্ষক সবাই মিলে সমন্বিতভাবে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন তুলতে হবে।
সমাজবিজ্ঞানী ড. নেহাল করিম বলেন, সম্প্রতি নিত্য নতুন কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। এগুলো বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা না। সমাজকে অস্থিতিশীল করার জন্যই এসকল উপযোগীতার সৃষ্টি হয়েছে। একটি সমাজে গুজবটা তখনই হয় যখন কোনো তথ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে কিছু শুন্যতা বিরাজ করে। তখন মানুষ তথ্যটা পাওয়ার জন্য নিজের মতো করে গুজব তৈরি করে। বাজারে ছড়িয়ে দেয়। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা সরকারের গোয়েন্দা বাহিনী এবং সোর্স আছে। তারা কেন ঘটনার আগে এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারে না। তাদের উচিৎ সবার আগে জেনে বিষয়টিকে ছত্রভঙ্গ করা। এবং এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া।
No comments