উজ্জীবিত জাতি by জে এফ আর জ্যাকব
জে এফ আর জ্যাকব |
১৯৭১
সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের চিফ অব স্টাফ ও
অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় লেফটেন্যান্ট জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব গতকাল বুধবার
প্রয়াত হয়েছেন। প্রথম আলোর চতুর্দশ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আমরা
বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য কীর্তি ও অনন্য দিকগুলো নিয়ে লিখতে অনুরোধ
করেছিলাম বিশ্বের বিভিন্ন ব্যক্তিত্বকে। তখন সেই অনুরোধে সাড়া দিয়ে একটি
লেখা লিখেছিলেন জ্যাকব। ২০১২ সালের ২৫ নভেম্বর লেখাটি ছাপা হয়েছিল। পাঠকদের
আগ্রহ বিবেচনায় নিয়ে ও তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে লেখাটি আবার প্রকাশ করা
হলো।
বাংলাদেশের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় ঘটেছিল কৈশোরেই। বাবা আমাকে ভর্তি করিয়েছিলেন দার্জিলিংয়ের একটি আবাসিক স্কুলে। কলকাতা থেকে বাংলাদেশের ভূখণ্ড দিয়ে দার্জিলিংয়ে যেতাম ট্রেনে করে। আমাদের ট্রেন-যাতায়াত ছিল রাতের বেলায়। তাই দিনের আলোয় তখন বাংলার রূপ দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি বলা চলে। ট্রেনের জানালায় চোখ রেখে বাংলাদেশের যেটুকু দেখেছি তা অতি সামান্য।
এর বেশ পরের কথা। সামরিক বাহিনীতে আমি তত দিনে যোগ দিয়ে দিয়েছি। ১৯৪৩ সাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। যুদ্ধের সময়টায় আমি অংশ নিয়েছিলাম বার্মা ফ্রন্টে। চারদিকে তখন দুর্ভিক্ষের সেকি নিদারুণ হাহাকার! দুর্ভিক্ষের নির্মম কশাঘাতে সবকিছু ন্যুব্জ হয়ে পড়েছিল। সে সময় আমাদের আরাকানে যেতে হয়েছিল বাংলাদেশের বুকের ভেতর দিয়ে। আমাদের সেনাদলের জন্য খাদ্যের যে মজুত ছিল, তার অর্ধেক আমরা দুর্গত মানুষের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমাদের সেনাদলে ছিলেন ২০০ জন। আমরা বুদ্ধি করে তাঁদের কথা বলে পথিমধ্যে সাত দিনের রসদ তুলেছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল অভাবী মানুষগুলোর মধ্যে সেগুলো বিলিয়ে দেওয়া। কিন্তু এই খাদ্য তোলা নিয়ে ঢাকার ডিপোতে সরবরাহের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্রিটিশ কর্মকর্তার সঙ্গে আমার বিতণ্ডা বেঁধে যায়। ব্রিটিশ কর্মকর্তাটি খাদ্য সরবরাহে খুবই আপত্তি করলেন। কিন্তু আমি ছিলাম অনড়। অবশেষে তিনি আমাকে নির্দিষ্ট চালানের তিনটি অনুলিপিতে স্বাক্ষর দিতে বললেন। আমিও সেটি পালন করি।
শেষ পর্যন্ত খাদ্য সরবরাহ করা হলো। পথের বিভিন্ন স্থানে সেই খাদ্য আমরা বিতরণ করলাম। আমি জানতাম, এতে ঝুঁকি রয়েছে। কিন্তু এটাও জানতাম, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি বলে এটি নিয়ে আমাকে তেমন কোনো কৈফিয়তের কবলে পড়তে হবে না। আমার অনুমান ঠিকই ছিল। আমাকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো জবাবদিহি করতে হয়নি। ঢাকার মতো করে কক্সবাজার থেকেও আমরা একইভাবে খাদ্য তুলি এবং মানুষের মধ্যে তা সুষ্ঠুভাবে বণ্টনও করে দিই। এরপর আমরা আরাকানে প্রবেশ করি।
বাংলাদেশের সঙ্গে আমার সম্পর্ক বহুদিনের, স্মৃতিও গভীর। এ দেশের মানুষের প্রতি আমার মমতা ও ভালোবাসা অপরিসীম। মুক্তিযুদ্ধের পরপর বাংলাদেশ শুধু একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত ভূখণ্ডই ছিল না, এর আগের কয়েকটি দশক তারা পাকিস্তানিদের দীর্ঘ বঞ্চনারও শিকার হয়েছিল। অবকাঠামোগত তেমন কোনো শক্তিই দেশটির ছিল না। এ রকম এক প্রেক্ষাপটে চার দশকের ব্যবধানে বাংলাদেশ আজ যেভাবে পৃথিবীর সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে, তাতে আমি গভীর সন্তুষ্টি ও তৃপ্তি বোধ করি।
১৯৭১ সালে যে ত্যাগ ও বীরত্বের দৃষ্টান্ত বাংলাদেশের মানুষ দেখিয়েছে, আমার জীবনে সে রকম কিছু আমি কখনো দেখিনি। সমগ্র জাতি সেদিন একটি মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়েছিল। ১৯৭১ সালের পরপর বাংলাদেশে প্রায় কিছুই ছিল না। অথচ আজ সেখানে শিল্প ও কৃষিনির্ভর অর্থনীতি শক্ত পায়ে দাঁড়িয়ে গেছে। গ্যাস ও তেলের খনি আবিষ্কৃত হয়েছে। আমি তো মনে করি, বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে ইতিমধ্যেই যে অগ্রগতি সাধন করেছে, তা তাকে অদূর ভবিষ্যতে একটি বৃহৎ শক্তি হিসেবে পৃথিবীর বুকে পরিচিত করে তুলবে। পাকিস্তানের দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান, অর্থাৎ বাংলাদেশে কলকারখানা গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে কোনো মনোযোগই দেয়নি। সেখানে আজ বাংলাদেশ একটি ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনীতি। এমনকি একে আমি একটি শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ হিসেবেই গণ্য করি। কারণ বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত বর্ধিঞ্চু। বর্তমান সরকারের আমলেও ভালোভাবেই এর অগ্রগতি ঘটে চলেছে।
সর্বাগ্রে যে কথাটি অনুধাবন করতে হবে তা হলো, বাংলাদেশের বৃহত্তম সম্পদ হচ্ছে তার জনগণ ও তাদের মানসিকতা। নতুন কিছু গ্রহণ করার ব্যাপারে বাংলাদেশের জনগণ অত্যন্ত উন্মুখ। বাংলাদেশের জনগণ স্পন্দমান। তারা যদি স্পন্দমান না হতো, তাহলে হয়তো এ দেশেরই জন্ম হতো না। একাত্তরে দেখেছি সমগ্র জাতি কীভাবে তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া অন্যায় ও গণহত্যার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। জাতি হিসেবে তারা পরিশ্রমী ও বীর। আমার বিশ্বাস ছিল, তারা জাগবেই। আমার সে বিশ্বাসের বাস্তবায়ন এখন ঘটে চলেছে।
কিছুকাল আমি গোয়া ও পাঞ্জাবের গভর্নরের দায়িত্ব পালন করেছি। শাসনগত সেই অভিজ্ঞতার আলোকেও বলতে পারি, বাংলাদেশের জনগণ কর্মনিষ্ঠ এবং বাংলাদেশের জন্য তাদের জীবন উৎসর্গিত। রাজনৈতিক সমস্যা বাংলাদেশের উন্নতির জন্য বিরাট কোনো বাধা হিসেবে গণ্য হবে বলে আমি মনে করি না। কারণ রাজনৈতিক সমস্যা বিশ্বের সর্বত্র রয়েছে। একই সমস্যা রয়েছে ভারতে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও। তাতে তাদের উন্নয়ন আটকে থাকেনি।
রাষ্ট্র হিসেবে ভারত ও বাংলাদেশ পাশাপাশি দুই প্রতিবেশী হিসেবে বসবাস করছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক যে অবস্থায় রয়েছে, সেটি অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় অত্যন্ত উত্তম। উভয় দেশের জনগণই এটি উপলব্ধি করতে পেরেছে যে পারস্পরিক স্বার্থে বর্তমানের এই সুসম্পর্ককে সামনের দিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। একটি শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ভারতের নিজ জাতীয় স্বার্থেরও পরিপূরক। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে, যেমন তিস্তা চুক্তি নিয়ে উদ্ভূত অমিল ইত্যাদি নিয়ে, কিছু সমস্যা রয়েছে। কিন্তু আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে সেসব কেটে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। ভারত-বাংলাদেশের ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও দীর্ঘজীবী হোক।
আমার এখন জীবনসায়াহ্ন। সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে গিয়ে এই পড়ন্ত বেলায় আবারও আমি অত্যন্ত বিমোহিত ও মুগ্ধ হয়েছি। আবারও বলব, বাংলাদেশের মানুষ খুবই স্পন্দমান। তাদের জন্য আমার ভালোবাসা অত্যন্ত গভীর। বাংলাদেশের জনগণকে আমি শ্রদ্ধা করি। জাতি হিসেবে তারা অতি উত্তম। বাংলাদেশের জনগণকে আমি শুভেচ্ছা জানাই। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আমি বিপুল সমৃদ্ধি কামনা করি।
জে এফ আর জ্যাকব: অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় লেফটেন্যান্ট জেনারেল; ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের চিফ অব স্টাফ।
বাংলাদেশের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় ঘটেছিল কৈশোরেই। বাবা আমাকে ভর্তি করিয়েছিলেন দার্জিলিংয়ের একটি আবাসিক স্কুলে। কলকাতা থেকে বাংলাদেশের ভূখণ্ড দিয়ে দার্জিলিংয়ে যেতাম ট্রেনে করে। আমাদের ট্রেন-যাতায়াত ছিল রাতের বেলায়। তাই দিনের আলোয় তখন বাংলার রূপ দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি বলা চলে। ট্রেনের জানালায় চোখ রেখে বাংলাদেশের যেটুকু দেখেছি তা অতি সামান্য।
এর বেশ পরের কথা। সামরিক বাহিনীতে আমি তত দিনে যোগ দিয়ে দিয়েছি। ১৯৪৩ সাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। যুদ্ধের সময়টায় আমি অংশ নিয়েছিলাম বার্মা ফ্রন্টে। চারদিকে তখন দুর্ভিক্ষের সেকি নিদারুণ হাহাকার! দুর্ভিক্ষের নির্মম কশাঘাতে সবকিছু ন্যুব্জ হয়ে পড়েছিল। সে সময় আমাদের আরাকানে যেতে হয়েছিল বাংলাদেশের বুকের ভেতর দিয়ে। আমাদের সেনাদলের জন্য খাদ্যের যে মজুত ছিল, তার অর্ধেক আমরা দুর্গত মানুষের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমাদের সেনাদলে ছিলেন ২০০ জন। আমরা বুদ্ধি করে তাঁদের কথা বলে পথিমধ্যে সাত দিনের রসদ তুলেছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল অভাবী মানুষগুলোর মধ্যে সেগুলো বিলিয়ে দেওয়া। কিন্তু এই খাদ্য তোলা নিয়ে ঢাকার ডিপোতে সরবরাহের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্রিটিশ কর্মকর্তার সঙ্গে আমার বিতণ্ডা বেঁধে যায়। ব্রিটিশ কর্মকর্তাটি খাদ্য সরবরাহে খুবই আপত্তি করলেন। কিন্তু আমি ছিলাম অনড়। অবশেষে তিনি আমাকে নির্দিষ্ট চালানের তিনটি অনুলিপিতে স্বাক্ষর দিতে বললেন। আমিও সেটি পালন করি।
শেষ পর্যন্ত খাদ্য সরবরাহ করা হলো। পথের বিভিন্ন স্থানে সেই খাদ্য আমরা বিতরণ করলাম। আমি জানতাম, এতে ঝুঁকি রয়েছে। কিন্তু এটাও জানতাম, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি বলে এটি নিয়ে আমাকে তেমন কোনো কৈফিয়তের কবলে পড়তে হবে না। আমার অনুমান ঠিকই ছিল। আমাকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো জবাবদিহি করতে হয়নি। ঢাকার মতো করে কক্সবাজার থেকেও আমরা একইভাবে খাদ্য তুলি এবং মানুষের মধ্যে তা সুষ্ঠুভাবে বণ্টনও করে দিই। এরপর আমরা আরাকানে প্রবেশ করি।
বাংলাদেশের সঙ্গে আমার সম্পর্ক বহুদিনের, স্মৃতিও গভীর। এ দেশের মানুষের প্রতি আমার মমতা ও ভালোবাসা অপরিসীম। মুক্তিযুদ্ধের পরপর বাংলাদেশ শুধু একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত ভূখণ্ডই ছিল না, এর আগের কয়েকটি দশক তারা পাকিস্তানিদের দীর্ঘ বঞ্চনারও শিকার হয়েছিল। অবকাঠামোগত তেমন কোনো শক্তিই দেশটির ছিল না। এ রকম এক প্রেক্ষাপটে চার দশকের ব্যবধানে বাংলাদেশ আজ যেভাবে পৃথিবীর সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে, তাতে আমি গভীর সন্তুষ্টি ও তৃপ্তি বোধ করি।
১৯৭১ সালে যে ত্যাগ ও বীরত্বের দৃষ্টান্ত বাংলাদেশের মানুষ দেখিয়েছে, আমার জীবনে সে রকম কিছু আমি কখনো দেখিনি। সমগ্র জাতি সেদিন একটি মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়েছিল। ১৯৭১ সালের পরপর বাংলাদেশে প্রায় কিছুই ছিল না। অথচ আজ সেখানে শিল্প ও কৃষিনির্ভর অর্থনীতি শক্ত পায়ে দাঁড়িয়ে গেছে। গ্যাস ও তেলের খনি আবিষ্কৃত হয়েছে। আমি তো মনে করি, বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে ইতিমধ্যেই যে অগ্রগতি সাধন করেছে, তা তাকে অদূর ভবিষ্যতে একটি বৃহৎ শক্তি হিসেবে পৃথিবীর বুকে পরিচিত করে তুলবে। পাকিস্তানের দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান, অর্থাৎ বাংলাদেশে কলকারখানা গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে কোনো মনোযোগই দেয়নি। সেখানে আজ বাংলাদেশ একটি ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনীতি। এমনকি একে আমি একটি শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ হিসেবেই গণ্য করি। কারণ বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত বর্ধিঞ্চু। বর্তমান সরকারের আমলেও ভালোভাবেই এর অগ্রগতি ঘটে চলেছে।
সর্বাগ্রে যে কথাটি অনুধাবন করতে হবে তা হলো, বাংলাদেশের বৃহত্তম সম্পদ হচ্ছে তার জনগণ ও তাদের মানসিকতা। নতুন কিছু গ্রহণ করার ব্যাপারে বাংলাদেশের জনগণ অত্যন্ত উন্মুখ। বাংলাদেশের জনগণ স্পন্দমান। তারা যদি স্পন্দমান না হতো, তাহলে হয়তো এ দেশেরই জন্ম হতো না। একাত্তরে দেখেছি সমগ্র জাতি কীভাবে তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া অন্যায় ও গণহত্যার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। জাতি হিসেবে তারা পরিশ্রমী ও বীর। আমার বিশ্বাস ছিল, তারা জাগবেই। আমার সে বিশ্বাসের বাস্তবায়ন এখন ঘটে চলেছে।
কিছুকাল আমি গোয়া ও পাঞ্জাবের গভর্নরের দায়িত্ব পালন করেছি। শাসনগত সেই অভিজ্ঞতার আলোকেও বলতে পারি, বাংলাদেশের জনগণ কর্মনিষ্ঠ এবং বাংলাদেশের জন্য তাদের জীবন উৎসর্গিত। রাজনৈতিক সমস্যা বাংলাদেশের উন্নতির জন্য বিরাট কোনো বাধা হিসেবে গণ্য হবে বলে আমি মনে করি না। কারণ রাজনৈতিক সমস্যা বিশ্বের সর্বত্র রয়েছে। একই সমস্যা রয়েছে ভারতে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও। তাতে তাদের উন্নয়ন আটকে থাকেনি।
রাষ্ট্র হিসেবে ভারত ও বাংলাদেশ পাশাপাশি দুই প্রতিবেশী হিসেবে বসবাস করছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক যে অবস্থায় রয়েছে, সেটি অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় অত্যন্ত উত্তম। উভয় দেশের জনগণই এটি উপলব্ধি করতে পেরেছে যে পারস্পরিক স্বার্থে বর্তমানের এই সুসম্পর্ককে সামনের দিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। একটি শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ভারতের নিজ জাতীয় স্বার্থেরও পরিপূরক। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে, যেমন তিস্তা চুক্তি নিয়ে উদ্ভূত অমিল ইত্যাদি নিয়ে, কিছু সমস্যা রয়েছে। কিন্তু আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে সেসব কেটে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। ভারত-বাংলাদেশের ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও দীর্ঘজীবী হোক।
আমার এখন জীবনসায়াহ্ন। সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে গিয়ে এই পড়ন্ত বেলায় আবারও আমি অত্যন্ত বিমোহিত ও মুগ্ধ হয়েছি। আবারও বলব, বাংলাদেশের মানুষ খুবই স্পন্দমান। তাদের জন্য আমার ভালোবাসা অত্যন্ত গভীর। বাংলাদেশের জনগণকে আমি শ্রদ্ধা করি। জাতি হিসেবে তারা অতি উত্তম। বাংলাদেশের জনগণকে আমি শুভেচ্ছা জানাই। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আমি বিপুল সমৃদ্ধি কামনা করি।
জে এফ আর জ্যাকব: অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় লেফটেন্যান্ট জেনারেল; ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের চিফ অব স্টাফ।
No comments