সরকারের সদিচ্ছার অঙ্গীকার থাকতে হবে by তোফায়েল আহমেদ
স্থানীয়
সরকার নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ নিয়ে নানা
মত আছে। তোফায়েল আহমেদ এর রাজনৈতিক মত এখানে তুলে ধরা হলো
দলীয় মনোনয়ন ও দলীয় প্রতীক নিয়ে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদের নীতিগত সিদ্ধান্ত দেশের নিস্তেজ-নিস্তরঙ্গ রাজনৈতিক অঙ্গনে সাময়িক একটি প্রাণবন্ত তর্ক-বিতর্কের অবকাশ সৃষ্টি করেছে। ক্ষমতাসীন দল ছাড়া অন্যরা এখনো দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছে, বিশেষত বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট। জাতীয় পার্টির আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। ইতিমধ্যে গণমাধ্যমের বিভিন্ন শাখায় প্রকাশিত মতামত মিশ্র। তবে অতি দ্রুততার সঙ্গে এ জাতীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার পদ্ধতিটি প্রশ্নবোধক হলেও স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবেই হয়ে আসছিল এবং ভবিষ্যতেও দলীয়ভাবেই হতো এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। দেশে যেহেতু বিরোধী রাজনীতি ও রাজনৈতিক শক্তি নিষ্প্রভ, তাই সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা বিনা বাধায় আইনে পরিণত করে বাস্তবায়নে যাবে তা স্বতঃসিদ্ধ। তবে দেশের রাজনীতি ও স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় সুদূরপ্রসারী উন্নয়নকে লক্ষ্য রেখে সরকার যদি আন্তরিকভাবে কিছু করতে চায়, তাহলে শুধু এতটুকু সংশোধনী বা সংযোজনী যথেষ্ট নয়। তাই পূর্ণাঙ্গ আইন করার সময় আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করতে পারি।
এক.
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের বিরাজিত সাংগঠনিক কাঠামো পরিবর্তন করে এই কাঠামোটিকে কথিত রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারের আদল থেকে সংসদীয় পদ্ধতিতে রূপান্তর করা হলে দলভিত্তিক নির্বাচন অধিক ফলপ্রসূ হবে। নির্বাচন পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনা সহজ হয়ে যাবে। হ্রাস পাবে নির্বাচনী ব্যয়। পরিষদের অভ্যন্তরে অধিক সংখ্যায় সক্ষম নেতৃত্বের সমাবেশ হবে।
দুই.
স্থানীয় সরকার, বিশেষত ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের অন্যতম প্রধান সমস্যা অর্থায়ন ও অপ্রতুল জনবল। বিদ্যমান আইনে অর্থসম্পদসহ জনবল ও কার্যাদি হস্তান্তরের যে বিধান রয়েছে তা কার্যকর করলে পরিষদের সক্ষমতা ও কার্যকারিতায় নতুন মাত্রা যুক্ত হতে পারে।
নতুন এ সংশোধনীর নেতিবাচক প্রবণতা নিয়ে যাঁরা সোচ্চার হয়েছেন, তাঁদের যুক্তি ও আশঙ্কাগুলো উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। নেতিবাচক আশঙ্কাগুলোকে ইতিবাচকে রূপান্তর করতে হলে দুটি দিক থেকে সরকার ও সরকারি দলে আন্তরিকতা ও সদিচ্ছার স্পষ্ট অঙ্গীকার থাকতে হবে। প্রথমত. নির্বাচনের সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, কারণ এখন নির্বাচন নিয়ে কেউ আগ্রহ বোধ করে না। তাই সর্বত্র আইনের শাসন ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতার নিশ্চয়তা দিতে হবে। দ্বিতীয়ত. ব্যবহারের চিন্তা থেকে যদি তড়িঘড়ি এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং তা বাস্তবায়নে সরকারি দল প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকে তাহলে এ প্রচেষ্টা দীর্ঘ মেয়াদে তৃণমূলে রাজনীতির সুস্থ ও সুষ্ঠু বিকাশ বাধাগ্রস্ত করবে। অন্তত প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে এ নির্বাচন অনুষ্ঠান সব ধরনের হস্তক্ষেপমুক্তভাবে করা সম্ভব হলে, এ ব্যবস্থাটি একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিতে পারে। অন্যথায় এ ব্যবস্থা স্থানীয় সরকারের গ্রহণযোগ্যতা ও কার্যকারিতাকে ক্ষতিগ্রস্তই করবে।
তোফায়েল আহমেদ: স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ।
দলীয় মনোনয়ন ও দলীয় প্রতীক নিয়ে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদের নীতিগত সিদ্ধান্ত দেশের নিস্তেজ-নিস্তরঙ্গ রাজনৈতিক অঙ্গনে সাময়িক একটি প্রাণবন্ত তর্ক-বিতর্কের অবকাশ সৃষ্টি করেছে। ক্ষমতাসীন দল ছাড়া অন্যরা এখনো দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছে, বিশেষত বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট। জাতীয় পার্টির আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। ইতিমধ্যে গণমাধ্যমের বিভিন্ন শাখায় প্রকাশিত মতামত মিশ্র। তবে অতি দ্রুততার সঙ্গে এ জাতীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার পদ্ধতিটি প্রশ্নবোধক হলেও স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবেই হয়ে আসছিল এবং ভবিষ্যতেও দলীয়ভাবেই হতো এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। দেশে যেহেতু বিরোধী রাজনীতি ও রাজনৈতিক শক্তি নিষ্প্রভ, তাই সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা বিনা বাধায় আইনে পরিণত করে বাস্তবায়নে যাবে তা স্বতঃসিদ্ধ। তবে দেশের রাজনীতি ও স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় সুদূরপ্রসারী উন্নয়নকে লক্ষ্য রেখে সরকার যদি আন্তরিকভাবে কিছু করতে চায়, তাহলে শুধু এতটুকু সংশোধনী বা সংযোজনী যথেষ্ট নয়। তাই পূর্ণাঙ্গ আইন করার সময় আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করতে পারি।
এক.
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের বিরাজিত সাংগঠনিক কাঠামো পরিবর্তন করে এই কাঠামোটিকে কথিত রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারের আদল থেকে সংসদীয় পদ্ধতিতে রূপান্তর করা হলে দলভিত্তিক নির্বাচন অধিক ফলপ্রসূ হবে। নির্বাচন পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনা সহজ হয়ে যাবে। হ্রাস পাবে নির্বাচনী ব্যয়। পরিষদের অভ্যন্তরে অধিক সংখ্যায় সক্ষম নেতৃত্বের সমাবেশ হবে।
দুই.
স্থানীয় সরকার, বিশেষত ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের অন্যতম প্রধান সমস্যা অর্থায়ন ও অপ্রতুল জনবল। বিদ্যমান আইনে অর্থসম্পদসহ জনবল ও কার্যাদি হস্তান্তরের যে বিধান রয়েছে তা কার্যকর করলে পরিষদের সক্ষমতা ও কার্যকারিতায় নতুন মাত্রা যুক্ত হতে পারে।
নতুন এ সংশোধনীর নেতিবাচক প্রবণতা নিয়ে যাঁরা সোচ্চার হয়েছেন, তাঁদের যুক্তি ও আশঙ্কাগুলো উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। নেতিবাচক আশঙ্কাগুলোকে ইতিবাচকে রূপান্তর করতে হলে দুটি দিক থেকে সরকার ও সরকারি দলে আন্তরিকতা ও সদিচ্ছার স্পষ্ট অঙ্গীকার থাকতে হবে। প্রথমত. নির্বাচনের সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, কারণ এখন নির্বাচন নিয়ে কেউ আগ্রহ বোধ করে না। তাই সর্বত্র আইনের শাসন ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতার নিশ্চয়তা দিতে হবে। দ্বিতীয়ত. ব্যবহারের চিন্তা থেকে যদি তড়িঘড়ি এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং তা বাস্তবায়নে সরকারি দল প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকে তাহলে এ প্রচেষ্টা দীর্ঘ মেয়াদে তৃণমূলে রাজনীতির সুস্থ ও সুষ্ঠু বিকাশ বাধাগ্রস্ত করবে। অন্তত প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে এ নির্বাচন অনুষ্ঠান সব ধরনের হস্তক্ষেপমুক্তভাবে করা সম্ভব হলে, এ ব্যবস্থাটি একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিতে পারে। অন্যথায় এ ব্যবস্থা স্থানীয় সরকারের গ্রহণযোগ্যতা ও কার্যকারিতাকে ক্ষতিগ্রস্তই করবে।
তোফায়েল আহমেদ: স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ।
No comments