এডেনে ধ্বংসযজ্ঞ চলছে
ইয়েমেনের বন্দরনগরী এডেনে ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হয়েছে বলে হুশিয়ারি দিয়েছে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা রেডক্রস। বন্দরনগরীর পথে পথে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে অসংখ্য মরদেহ। হাসপাতালগুলোতে উপচেপড়া ভিড়! এমতাবস্থায় দেশটিতে মানবিক বিপর্যয় চরম আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শতাধিক শিশুসহ গত কয়েকদিনে অন্তত ৫৬০ জন নিহত হয়েছে, ১৭ শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে এবং আশ্রয়হীন হয়েছে আরও এক লাখ মানুষ।
জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এই পরিস্থিতিতে দেশটির বিপর্যস্ত এলাকাগুলোতে ত্রাণ পৌঁছানোও সম্ভব হচ্ছে না। রেডক্রসের দুটি বিমানের প্রয়োজনীয় সাহায্য নিয়ে সোমবার ইয়েমেনে পৌঁছানোর কথা থাকলেও দেশটির বর্তমান পরিস্থিতিতে তা সম্ভব হচ্ছে না। ১৭ টন ওষুধ-পথ্য নিয়ে একটি কার্গো বিমান জর্ডানের রাজধানী আম্মানে জরুরি অবতরণের পর সেখানেই অবস্থান করছে। বুধবার বিমানটি ইয়েমেনে পৌঁছাতে পারে। আরও ৩৫ টন সহায়তা নিয়ে উড়ার অপেক্ষায় রয়েছে আরও একটি বিমান। এদিকে, ইয়েমেন সংকটের ফায়দা লুটছে আল কায়দা। বিশৃংখল সরকার ব্যবস্থায় সৃষ্ট চলমান অস্থিরতা, গোলযোগের মধ্যে দেশটির বিভিন্ন এলাকা দখল করে নিচ্ছে আল কায়দা। বুধবার টোকিওতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাস্টন কার্টার। আঞ্চলিক মিত্রদের সঙ্গে আলোচনার জন্য এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে বর্তমানে জাপানে অবস্থান করছেন কার্টার। তবে তিনি অঙ্গীকার করেছেন, ইয়েমেনে চলমান যুদ্ধ সত্ত্বেও চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখবে ওয়াশিংটন। কার্টার বলেন, ‘আমরা দেখেছি, ইয়েমেনে কিছু ক্ষেত্রে আল কায়দা সাফল্য পেয়েছে। তারা বিভিন্ন এলাকা দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে।’ জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেন নাকাতানির সঙ্গে ওই যৌথ সংবাদ সম্মেলনে কার্টার আরও বলেন, ইয়েমেনভিত্তিক আল কায়দা ইন দ্য এরাবিয়ান পেনিনসুলা যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের জন্য হুমকি। তাই যুক্তরাষ্ট্র আল কায়দার বিরুদ্ধে যুদ্ধ অব্যাহত রাখবে।
তিনি বলেন, ‘অবশ্যই একটি বৈধ সরকার সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করলে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান অনেক সহজ হয়।’ তিনি বলেন, ‘ইয়েমেনে এখন সে ধরনের পরিস্থিতি নেই। তার অর্থ এই নয় যে, আমাদের সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ অব্যাহত রাখব না। আমরা ভিন্নভাবে তা অব্যাহত রাখব।’ কার্টার আশা প্রকাশ করেন, তবে শুধু এই কারণে নয়, ইয়েমেনের মানুষের দুর্দশা লাঘবে সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। গত কয়েক মাস ধরে ইয়েমেনে রাজনৈতিক অচলাবস্থা চলছে। জাতিসংঘের মতে, ইয়েমেনের বৈধ সরকারের প্রধান হলেন হাদি। আর তার ‘নির্বাচিত বৈধ সরকারকে রক্ষায়’ হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ২৬ মার্চ বিমান হামলা শুরু করেছে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন আরব দেশগুলোর জোটবাহিনী। ওদিকে, সৌদি নেতৃত্বাধীন আরব জোটকে ইয়েমেনে বিমান হামলায় সহায়তা করতে দ্রুত অস্ত্র দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মঙ্গলবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ সফরের সময় এ ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। ব্লিনকেন জানিয়েছে, তারা সৌদি আরবকে সমর্থন করতেই দ্রুত অস্ত্র পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি আরব জোটের বিমান হামলাকে সমর্থন করে আরও বলেছেন, তাদের এ পদক্ষেপ হুথি এবং তাদের মিত্রদের জন্য একটি শক্তিশালী বার্তা। সে বার্তাটি হচ্ছে, জোর করে ইয়েমেন দখল করা যাবে না। এদিকে, ইয়েমেনের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ইতি টানতে একটি কার্যকর রাজনৈতিক সমাধান প্রয়োজন বলে মত ইরান ও তুরস্কের রাষ্ট্রপ্রধানদের। বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ইয়েমেনের রাজনৈতিক সংকট ইরান ও তুরস্কের মধ্যে টানাপোড়েন সৃষ্টি করছে। মঙ্গলবার ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি আংকারায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগানের সঙ্গে সাক্ষাতের পর এসব কথা জানান।
No comments