স্টেথোস্কোপ, একে-৪৭ দুটোই থাকে পাক-ডাক্তারদের কাছে
গুপ্ত হামলা, চাঁদাবাজি, অপহরণ আর মৃত্যু আতংকের ভেতর দিন কাটছে পাকিস্তানে চিকিৎসকদের। যে হাতে থাকত প্রাণের প্রাণবাতি, স্পন্দন পরীক্ষার যন্ত্র স্টেথোস্কোপ, সেই হাতেই এখন ধরতে হয় একে-৪৭। জীবন বাঁচাতে ও জীবন রক্ষায় এ দুই-ই এখন তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় পার্বত্য এলাকা পেশোয়ারে কাজ করেন ডাক্তার মাহমুদ জাফরি। সকালে কাজে যাওয়ার আগে প্রথমেই তিনি যা করেন তা হল- গাড়িতে একে-৪৭ রাইফেল রাখেন। পরে বাড়ির সশস্ত্র গার্ডদের কিছু করণীয় বিষয় সম্পর্কে জানিয়ে তিনি হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হন। জাফরি এর আগে একবার খুন এবং অপহরণের হাত থেকে অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন।
ফলে জীবন হারানোর দ্বিতীয় কোনো সুযোগ তিনি তৈরি করতে চান না। ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষায় নিজের ব্যবস্থা তিনি নিজেই করছেন। এ পরিস্থিতিতে রয়েছেন পেশোয়ারের শত শত ডাক্তার। যারা তালেবান জঙ্গি ও সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের নিত্য হুমকির মধ্যে বসবাস করছেন। খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন থেকে বলা হয়েছে, গত তিন বছরে বেশ কিছুসংখ্যক ডাক্তারকে হত্যা ও ৩০ জনেরও বেশিকে অপহরণ করা হয়েছে। প্রায় তিন হাজারের মতো ডাক্তার শান্তিপূর্ণ জীবনের আশায় অন্যত্র চলে গেছেন। পরিস্থিতি এমনই যে, ডাক্তারদের কাছে স্টেথোস্কোপের মতোই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এক-৪৭। করাচির ডাক্তার সমিতির তথ্য অনুযায়ী, গত ১৪ মাসে ২০ জন ডাক্তারকে হত্যা এবং গত দু’বছরে ১০ জনকে অপহরণ করা হয়েছে। প্রাদেশিক স্বাস্থ্যমন্ত্রী শেহরাম খান তারাকি ৩০ জন ডাক্তার অপহৃত হওয়া এবং ডজনখানেকের মতো নিহত হওয়ার ঘটনা নিশ্চিত করেন। গোটা পাকিস্তানে এখন এই একই চিত্র। এদিকে যেসব ডাক্তারকে অপহরণ করা হয়, তারা ফিরে এসে মারাত্মক আতংকের মধ্যে দিন কাটান। কারও সঙ্গে কথা বলেন না।
কারণ, যারা তাদের অপহরণ করে তাদের প্রবল নিষেধাজ্ঞা থাকে অপহরণ সংক্রান্ত ঘটনা প্রকাশ করা যাবে না। ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট আমির তাজ খান বলেন, তারা আমাদের কোনো সভায় আসেন না। তাদের পক্ষে প্রকাশ্যে অপহরণের ঘটনা বর্ণনা সম্ভব হয় না। এমনকি তাদের লাখ লাখ রুপি দেয়া হলেও না। তিনি বলেন, প্রায় ৩২ জন ডাক্তারকে অপহরণ করা হয়েছে। কেবল দু’জন অপহরণের ঘটনার বর্ণনা করেছেন। তারা জানিয়েছেন, অপহরণকারীরা ডাক্তারদের দড়ি দিয়ে বেঁধে উত্তর ওয়াজিরিস্তানের প্রত্যন্ত এলাকায় নিয়ে যায়। তাদের সঙ্গে কারোরই কোনো যোগাযোগ থাকে না। তারা অসুস্থ হয়ে পড়লেও কোনো চিকিৎসা সুবিধা পান না। এছাড়া পেশোয়ারের ডাক্তারদের নিয়মিত জঙ্গিদের চাঁদা দিয়ে আসতে হয়। এখন এখানে জঙ্গিদের অন্যতম আয়ের উৎস চাঁদাবাজি আর অপহরণ ব্যবসা। তাজ খান বলেন, এখানকার প্রায় শত ভাগ ডাক্তার অপহরণ ও খুন এড়াতে জঙ্গিদের চাঁদা দিয়ে আসছে।
No comments