তবু ফিরতে হচ্ছে আফসোস নিয়ে by তারেক মাহমুদ
সবখানে বিদায়ের সুর। করুণ রাগিণী। আজ
সমাপনী অনুষ্ঠান দিয়ে পর্দা নামবে ১৭তম ইনচন এশিয়ান গেমসের। আর এর মধ্যেই
এল ‘গেচ্ছন জন্নাল’। স্থানীয় ভাষায় গেচ্ছন জন্নালই বলা হয় কোরিয়ার
জন্মদিনকে। কাল ছিল সেই জন্মদিন, যে দিনে পাঁচ হাজার বছর বয়স পূর্ণ করল
কোরিয়ানরা। এই জন্মদিনের সঙ্গে আবার স্বাধীনতার ব্যাপার-স্যাপার মেলাবেন
না। এই দিনে কোরিয়ার মানুষ জন্মদিনটা পালন করে প্রাচীন সংস্কৃতির একটা
রীতি মেনে।
গেচ্ছন জন্নালের সৃষ্টি নিয়ে বিরাট গল্প আছে। সেদিকে আপাতত না গিয়ে জন্মদিনে এশিয়ান গেমসের ছবিটাই দেখুন। জন্মদিন উপলক্ষে দক্ষিণ কোরিয়ায় কাল ছিল সরকারি ছুটি এবং তার প্রভাব পড়ল গেমসেও। ছুটির দিনে অসংখ্য মানুষ সপরিবারে এলেন ইনচনের মূল স্টেডিয়াম এলাকায়। উৎসবের আবহ গায়ে মেখে ঘুরে বেড়ালেন স্টেডিয়াম চত্বরে বসা ফুড ফেয়ার আর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্টলে। তাদের উৎসবের সঙ্গে একটা উৎসব মিলে গেল বাংলাদেশ ক্রিকেট দলেরও। কোরিয়ানদের গেচ্ছন জন্নালের দিনেই যে তৃতীয় স্থাননির্ধারণী ম্যাচে হংকংকে ২৭ রানে হারিয়ে ব্রোঞ্জ পেল বাংলাদেশ! এবারের গেমসে এটি বাংলাদেশের তৃতীয় পদক, যার দুটিই এসেছে ক্রিকেট থেকে। অন্যটি পেয়েছে মহিলা কাবাডি দল।
গেচ্ছন জন্নালের সৃষ্টি নিয়ে বিরাট গল্প আছে। সেদিকে আপাতত না গিয়ে জন্মদিনে এশিয়ান গেমসের ছবিটাই দেখুন। জন্মদিন উপলক্ষে দক্ষিণ কোরিয়ায় কাল ছিল সরকারি ছুটি এবং তার প্রভাব পড়ল গেমসেও। ছুটির দিনে অসংখ্য মানুষ সপরিবারে এলেন ইনচনের মূল স্টেডিয়াম এলাকায়। উৎসবের আবহ গায়ে মেখে ঘুরে বেড়ালেন স্টেডিয়াম চত্বরে বসা ফুড ফেয়ার আর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্টলে। তাদের উৎসবের সঙ্গে একটা উৎসব মিলে গেল বাংলাদেশ ক্রিকেট দলেরও। কোরিয়ানদের গেচ্ছন জন্নালের দিনেই যে তৃতীয় স্থাননির্ধারণী ম্যাচে হংকংকে ২৭ রানে হারিয়ে ব্রোঞ্জ পেল বাংলাদেশ! এবারের গেমসে এটি বাংলাদেশের তৃতীয় পদক, যার দুটিই এসেছে ক্রিকেট থেকে। অন্যটি পেয়েছে মহিলা কাবাডি দল।
বলতে পারেন সোনা জয়ের স্বপ্ন নিয়ে আসা গেমসে ব্রোঞ্জ পেয়ে আবার কিসের উৎসব! আসলে বাংলাদেশ দল যে সোনা জয়ের লড়াইটা লড়তে পারল না, সেটা তো নিতান্তই দুর্ভাগ্যের কারণে। টস নামক নিয়তিই ছিটকে দিয়েছে তাদের সেই দৌড় থেকে। তার চেয়ে বরং হংকংয়ের বিপক্ষে যে বাংলাদেশ দল বাংলাদেশ দলের মতোই খেলে ব্রোঞ্জ জিতল, ব্যর্থতার দীর্ঘ সুড়ঙ্গের শেষ প্রান্তে একটু আশার আলো দেখাল, সেটাই বা কম কী! ব্যর্থতার ক্লান্তিময় পথ পেরিয়ে হয়তো এখান থেকেই আবার শুরু হবে নতুন পথচলা।
এশিয়ান গেমসে কাল প্রথমবারের মতো টসে জিতলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। আগে ব্যাটিং নিয়ে হংকংয়ের সামনে লক্ষ্য দিলেন ১৬৩ রানের। জবাবে হংকং একেবারে খারাপ করেনি। ৭ উইকেটে ১৩৫ রান তাদের জন্য ভালোই সান্ত্বনা হতে পারে। অবশ্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুই দলের সর্বশেষ ম্যাচটা যেহেতু হংকংই জিতেছিল, থাকতে পারে আরেকটি অঘটন ঘটাতে না পারার মৃদু আফসোসও।
কুয়েতের বিপক্ষে ম্যাচে ব্যাট হাতে তেমন কিছু করতে পারেননি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যে ১১ ওভার ব্যাটিং করেছিল বাংলাদেশ, সাকিব আল হাসান আউট হয়ে গিয়েছিলেন তাতেও। বহিষ্কারাদেশ থেকে খেলায় ফেরা এই অলরাউন্ডার অপেক্ষায় ছিলেন ফর্মে ফেরার। কাল ব্যাট হাতে দুই ছক্কায় ৩৭ বলে ৪৬ রান আর বল হাতে ২ উইকেট নিয়ে সাকিব যেন ফিরে আসারই ঘোষণা দিলেন। দুই ছক্কা আর এক বাউন্ডারিতে ২১ বলে ৩৫ রান করে মাহমুদউল্লাহও ধরে রেখেছেন সদ্য ফিরে পাওয়া ফর্মটা।
হংকংয়ের ব্যাটিং দেখে কখনোই মনে হয়নি তারা বাংলাদেশের ১৬২ রান তাড়া করে জেতার জন্য খেলছে। বরং বাংলাদেশের স্পিনারদের খেলতে কষ্টই হচ্ছিল তাদের। সাকিবের ২ উইকেটের পাশে ২২ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন আরাফাত সানিও।
তা সোনা ধরে রাখতে এসে ব্রোঞ্জ জিতে কেমন লাগল খেলোয়াড়দের? ম্যাচ শেষে দলের প্রতিনিধি হয়ে আসা মাহমুদউল্লাহ জানালেন, ‘মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে। ভালো লাগছে কারণ আজ (গতকাল) আমরা ভালো ক্রিকেট খেলেছি। পদক পেয়েছি। আবার আফসোসও আছে, কারণ আমরা সোনা জয়ের জন্য এসেছিলাম। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটা হয়নি। টস তো যেকোনো দিকেই যেতে পারে। সে জন্য আফসোসটাই বেশি।’ তবে মাহমুদউল্লাহ এর মধ্যেও খুঁজে নিতে চান ভালো কিছু, ‘আজ (গতকাল) ভালো ক্রিকেট খেলতে পারাটাই আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল। সবাই সেটা করতে পারায় আমরা খুশি।’
কালই হওয়া ফাইনালে আফগানিস্তানকে ৬৮ রানে হারিয়ে সোনা জিতেছে শ্রীলঙ্কা। আর বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের প্রাপ্তির খাতায় একটা ব্রোঞ্জ পদকের সঙ্গে থাকবে গেমসে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতাও। দলের কারও কারও সে অভিজ্ঞতা আগেই হয়েছে, যদিও মাহমুদউল্লাহসহ বেশির ভাগ খেলোয়াড়ের জন্য তা নতুন। মাহমুদউল্লাহ বলছিলেন, ‘শামসুর-সাব্বিরসহ বেশ কয়েকজন এর আগেও এশিয়ান গেমসে খেলেছে। তবে আমার এবং মাশরাফি, সাকিব, তামিমসহ অনেকেরই এটা প্রথম অভিজ্ঞতা। গেমস নিয়ে অনেক গল্প শুনেছি। এবার আমারও অন্য রকম একটা অভিজ্ঞতা হলো। সব মিলিয়ে ভালোই লেগেছে।’
গত গুয়াংজু এশিয়ান গেমসে খেলা সাব্বির অবশ্য ইনচন এশিয়ান গেমসের তুলনায় এগিয়ে রাখলেন প্রথম অভিজ্ঞতাকেই, ‘চীনের এশিয়ান গেমসটাই ভালো হয়েছিল। সুযোগ-সুবিধা অনেক বেশি ছিল সেবার।’
ইনচনের চেয়ে গুয়াংজুকে এগিয়ে রাখার আরেকটা কারণও আছে। গুয়াংজু থেকে বাংলাদেশ দল দেশে ফিরেছিল গলায় সোনার পদক পরে। অথচ গতবারের তুলনায় শক্তিশালী দল নিয়ে এসেও ভাগ্যের ফেরে আজ বাংলাদেশ দল দেশের বিমানে উঠবে ব্রোঞ্জ নিয়ে। সোনা জয়ের সুখস্মৃতি আছে যাঁদের, ব্রোঞ্জ গলায় ঝোলাতে নিশ্চয়ই তাঁদের খারাপ লাগবে?
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৬২/৬ (তামিম ২২, এনামুল ১১, শামসুর ২৬, সাকিব ৪৬, সাব্বির ১১, মাহমুদউল্লাহ ৩৫*, শুভাগত ১, মাশরাফি ২*; আদিল ০/২০, ইরফান ০/৩৯, নাদিম ৩/৩৬, নিজাকাত ১/৩০, আইজাজ ১/২৫, ওয়াকাস ০/১২)। হংকং: ২০ ওভারে ১৩৫/৭ (ইরফান ৩১, ওয়াকাস ০, অ্যাটকিনসন ৭, নিজাকাত ০, চ্যাপম্যান ৩৮, শাখাওয়াত ১১, আইজাজ ২৬*, ল্যামস্যাম ৩, নাদিম ১০*; মাশরাফি ০/২৬, আরাফাত ৩/২২, রুবেল ১/৩৫, সাকিব ২/২৩, তাসকিন ০/১১, শুভাগত ০/১৩)। ফল: বাংলাদেশ ২৭ রানে জয়ী।
No comments