প্রাচীন ইতিহাসের খনি মহাস্থানগড়ে খনন কাজ শুরম্ন- মাটির নিচে লুকিয়ে রয়েছে হাজার বছরের নানা কীর্তি

সমুদ্র হক প্রাচীন ইতিহাসের খনি বগুড়ার মহাস্থানগড়ের খননকাজ শুরম্ন হয়েছে সোমবার। বাংলাদেশ-ফ্রান্স যৌথ প্রত্নতাত্তি্বক দল মহাস্থান মাজারের দণি ধারে বছর চারেক আগে যে স্থানে মাটির নিচে মন্দির আবিষ্কার করেছিল সেই স্থানেই এবারের খননকাজ শুরম্ন করেছে।
খননকাজে বাংলাদেশ দলের প েটিম লিডার হিসাবে আছেন শাহাজাদপুর রবীন্দ্র কাচারিবাড়ির কাস্টডিয়ান নাহিদ সুলতানা। ফরাসী দলের নেতৃত্বে আছেন টিম ডিরেক্টর প্রফেসর জাঁ ফ্রাঁসোয়া সাল। তাদের সহযোগিতা দিচ্ছেন মহাস্থান জাদুঘরের কাস্টডিয়ান মাহবুবুল আলম, ফরাসী প্রত্নতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ আরনেল বেবলিয়ে, বারবারা ফুটিকন, ব্রনো হেলা। প্রাচীন ইতিহাস অনুসন্ধানে মহাস্থানগড়ে ১৯৯৩ সাল থেকে খননকাজ চলছে। এ জন্য বাংলাদেশ ও ফ্রান্স প্রত্নতাত্তি্বক বিভাগের মধ্যে মেয়াদী চুক্তি আছে। এই চুক্তির আলোকে এ বছর ১৮তম খননকাজ শুরম্ন হয়েছে, যা চলবে দেড় মাস। এদিকে বাংলাদেশের পাহাড়পুর (নওগাঁ) ও সাতগম্বুজ মসজিদকে (বাগেরহাট) ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে অনত্মর্ভুক্ত করা হয়েছে। সূত্র জানায়, মহাস্থানগড়কে (বগুড়া) এই সাইটের আওতায় নেয়া হয়েছে।
প্রত্নতাত্তি্বকগণ জানান মহাস্থানগড়কে ঘিরে তার চারপাশে মাটির নিচে প্রাচীন ইতিহাসের যে নিদর্শন লুকিয়ে আছে তা ৫শ' বছর খনন করলেও শেষ করা যাবে না। মহাস্থানগড়েই আছে মৌর্য সুঙ্গ কুশান গুপ্ত শশাঙ্ক পাল সেনসহ কয়েকটি কালের ইতিহাস। আজকের যে মহাস্থানগড় তা একসময় ছিল প্রাচীন পু-্রবর্ধন ভুক্তির রাজধানী পু-্রনগর। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ দশকে তা আবিষ্কার হয়েছে। মহাভারতেও এই পু-্র ইতিহাসের কথা উলেস্নখ আছে। গত দুই খননকালে দুর্গ প্রাচীরের ধ্বংসাবশেষ, বৌদ্ধ মন্দিরের স্ট্রাকচার, বৌদ্ধ মাউন্ট, কষ্টিপাথরের চেয়েও প্রাচীন ও মূল্যবান বেলে পাথরের মূর্তি, সূর্য মূর্তির অংশবিশেষ, বস্ন্যাক স্টোন মৃত্তিকাপাত্র, য়ে যাওয়া ইটসহ এমন কিছু নিদর্শন মিলেছে, যা কয়েক হাজার বছরের ইতিহাসের সা্য দেয়। এসব প্রত্ননিদর্শন নিয়ে বাংলাদেশ ও ফ্রান্সে গবেষণা চলছে। গত বছর প্রাচীরের ঢালে পাওয়া যায় এ্যাঙ্কর। এ থেকে প্রমাণিত হয় এই অঞ্চলে একদা বিরাট যে বানারসি বিলের অসত্মিত্ব মেলে তার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল কোন পোর্টের। বৌদ্ধদের টেম্পল, স্ট্রাকচার বলে দেয় অন্য কোন অবজেক্ট আছে মাটির নিচে। প্রসঙ্গত, মহাস্থানগড় থেকে কিছুটা দূরে ভাসু বিহারে যে স্ট্রাকচার মিলেছে তা যে বৌদ্ধ আমলের কোন বিদ্যাপীঠ (হতে পারে তা বিশ্ববিদ্যালয়) সেই প্রমাণ মিলেছে। এই মাটির নিচে মিলেছে ব্রাহ্মি হরফের শিলালিপি। গৌতম বুদ্ধের আগমনের ইতিহাস মিলেছে।
বগুড়ার মহাস্থানগড়কে ঘিরে দেশে দেশে মানুষের কৌতূহলের অনত্ম নেই। এবারের খননকাজের বাংলাদেশ প্রত্নতাত্তি্বক টিম লিডার নাহিদ সুলতানা জানান, প্রতি বছর খননকালে যে প্রত্ননিদর্শন বের হচ্ছে তা থেকে কিছু না কিছু নতুন তথ্য মিলছে। প্রত্নতাত্তি্বক খননের যে রীতি তাই অনুসরণ করা হচ্ছে। মহাস্থানগড় ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের অনত্মর্ভুক্ত হলে এই স্থানকে পর্যটক আগমনের সুযোগসুবিধা সৃষ্টি করা হবে। ইতিহাস অনুসন্ধানের এত যে কার্যক্রম তারপরও মহাস্থানগড় এলাকায় গিয়ে চোখে পড়ে প্রত্নভূমির বড় একটি অংশ বেদখল হয়ে গেছে। সেখানে গড়ে উঠেছে বসতবাড়ি। এলাকার একটি শ্রেণী প্রত্ন প্রাচীরের ইট খুলে নিয়েও বাড়ি বানিয়েছে। খোঁজখবর করে জানা যায়, এলাকার একটি শ্রেণী রাতের বেলায় মহাস্থানগড়ের আশপাশে মাটি খুঁড়ে প্রত্নসম্পদ হাতিয়ে নিচ্ছে। মহাস্থানের কাছে গোকুল এলাকায় ইতিহাসের চিহ্ন হিসাবে ছিল অনেক ঢিবি। উঁচু এই ঢিবি কেটে সমানত্মরাল করেছে ভূমিগ্রাসী একটি চক্র। এই ঢিবি কেটে সমানত্মরাল করার সময় অনেক কিছু পাওয়া গিয়েছিল বলে জানা যায়। এগুলো কোথায় গেল তা কেউ জানে না। বগুড়ার সুধীজন বলেন, প্রাচীন ইতিহাসের এই ভূমিকে তথা প্রত্ন এলাকাকে নিরাপদ করে রাখার দায়িত্ব নেয়া দরকার।

No comments

Powered by Blogger.