দুদক বনাম সরকারি প্রতিষ্ঠান-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি by এম হাফিজউদ্দিন খান
সম্প্রতি সংবাদপত্র মারফত জানা গেছে, সরকারি প্রতিষ্ঠান-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি কর্তৃত দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান, বর্তমান দুজন কমিশনার এবং সাবেক সচিবের কাছ থেকে ১৬ কোটি টাকা আদায়ের ব্যবস্থা নিতে মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই সংসদীয় কমিটির মতে, এ অর্থ দুদক অপব্যয় করেছে বিধায় যারা অপব্যয়ের জন্য দায়ী, তাদের কাছ থেকে তা আদায় করতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠান-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার ভিত্তি হলো মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের অধীন স্থানীয় ও রাজস্ব নিরীক্ষা অধিদপ্তরে মহাপরিচালক কর্তৃক প্রণীত একটি পরিদর্শন প্রতিবেদন। জানা গেছে, পরিদর্শন প্রতিবেদনে অর্থ আদায়ের কোনো সুপারিশ করা হয়নি। শুধু বলা হয়েছে, ১৬ কোটি টাকা ব্যয় নিয়মমাফিক হয়নি, সুতরাং তা নিয়মিত করতে হবে।
পরিদর্শন প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে সরকারি প্রতিষ্ঠান-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি কর্তৃক অর্থ আদায়ের যে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে, তাতে কিছু গুরুতর সাংবিধানিক ও আইনি সংশ্লেষ রয়েছে।
সংবিধানের ১২৮(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘মহা হিসাব নিরীক্ষক প্রজাতন্ত্রের সরকারি হিসাব এবং সকল আদালত, সরকারি কর্তৃপক্ষ ও কর্মচারীর সরকারি হিসাব নিরীক্ষা করিবেন ও অনুরূপ হিসাব সম্পর্কে রিপোর্ট দান করিবেন এবং সেই উদ্দেশে তিনি কিংবা সেই প্রয়োজনে তাঁর দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্তি যেকোনো ব্যক্তির দখলভুক্ত সকল নথি, বহি, রসিদ, দলিল, নগদ অর্থ, স্ট্যাম্প, জামিন, ভাণ্ডার বা অন্য প্রকার সরকারি সম্পত্তি পরীক্ষার অধিকারী হইবেন।’ এবং ১২৮(৪) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘এই অনুচ্ছেদের (১) দফার অধীন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে মহা হিসাব নিরীক্ষককে অন্য কোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের পরিচালনা বা নিয়ন্ত্রণের অধীন করা হইবে না।’ সুতরাং সরকারি প্রতিষ্ঠান-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি কর্তৃক বিতর্কিত ওই অর্থ আদায়ের জন্য মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রককে নির্দেশনা দেওয়া সংবিধানের উপরিউক্ত অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রককে কোনো কাজের জন্য কোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষ কোনো নির্দেশ দিতে পারে না।
প্রকৃত পক্ষে সংবিধান অনুসারে সরকারি অর্থ বা সম্পদের অপচয়, চুরি, আত্মসাত্ ইত্যাদি আদায় করার কোনো দায়িত্ব মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের ওপর ন্যস্ত করা হয়নি। মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব হলো, প্রজাতন্ত্রের হিসাব নিরীক্ষা করে নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রণয়ন করে তা অনুচ্ছেদ ১৩২ অনুসারে রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করা। একই অনুচ্ছেদের বিধান অনুসারে রাষ্ট্রপতি তাঁর কাছে পেশ করা নিরীক্ষা প্রতিবেদনগুলো সংসদে পেশের কার্যক্রম গ্রহণ করবেন। অনুচ্ছেদ ১৩২-এর বিধান নিম্নরূপ: ‘প্রজাতন্ত্রের হিসাব সম্পর্কিত মহা হিসাব নিরীক্ষকের রিপোর্টসমূহ রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করা হইবে এবং রাষ্ট্রপতি তাহা সংসদে পেশ করার ব্যবস্থা করিবেন।’ এই পদ্ধতিতে পেশ করা প্রতিবেদনগুলো সংসদ-সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটি অর্থাত্ সরকারি হিসাব সম্পর্কিত কমিটিতে পাঠানো হবে। সরকারি হিসাব সম্পর্কিত কমিটি প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনা করবে। পর্যালোচনার সময় সংশ্লিষ্ট সংস্থা এবং সচিব (যিনি পদাধিকারবলে মন্ত্রণালয়ের প্রিন্সিপাল অ্যাকাউন্টিং অফিসার) উপস্থিত থাকেন এবং তাঁদের বক্তব্য ও দলিলাদি পরীক্ষা করে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। পর্যালোচনান্তে কোনো অর্থ আদায়যোগ্য হলে সে দায়িত্ব প্রিন্সিপাল অ্যাকাউন্টিং অফিসার অর্থাত্ সচিবের ওপর বর্তাবে, মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের ওপর নয়। সরকারের রুলস অব বিজিনেস অনুসারে প্রিন্সিপাল অ্যাকাউন্টিং অফিসারের দায়িত্ব নিম্নরূপ:
‘The Secretary shall be the Principal Accounting Officer of the Ministry/Division, Attached Department and Subordinate Offices and shall ensure that funds allocated to the Ministry/Division, its Attached Departments and Subordinate Offices are spent in accordance with rules/laws for the time being in force :
Provided that in relation to the funds allocated to the Supreme Court of Bangladesh the Registrar of the Court shall be the Principal Accounting Officer who shall ensure that the said funds are spent in accordance with the rules/laws for the time being in force.’
দ্বিতীয়ত, মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের নিরীক্ষা প্রতিবেদন পর্যালোচনা করার একমাত্র অধিকারী হলো সরকারি হিসাব সম্পর্কিত কমিটি, সরকারি প্রতিষ্ঠান-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি নয়।
বিবেচ্য, ১৬ কোটি টাকা আদায়যোগ্য মর্মে মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কোনো নিরীক্ষা প্রতিবেদন আছে কি না, তা বোঝা যাচ্ছে না এবং প্রতিবেদন থেকে থাকলে তা সংবিধানের ১৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করা হয়েছিল কি না এবং রাষ্ট্রপতি তা সংসদে পেশের ব্যবস্থা করেছেন কি না, প্রতিবেদনটি পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটিতে পর্যালোচিত হয়েছিল কি না এবং তা পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটিতে পর্যালোচিত হওয়ার পর কোনো নির্দেশনা জারি হয়েছে কি না, তাও বোঝা যাচ্ছে না। যদি প্রকৃতই নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুসারে এই অর্থ আদায়যোগ্য বিবেচিত হয়ে থাকে, তাহলে তা আদায়ের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট প্রিন্সিপাল অ্যাকাউন্টিং অফিসারের। তবে যতটুকু জানা গেছে তাতে সরকারি প্রতিষ্ঠান-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির নির্দেশনার ভিত্তি পূর্বোল্লিখিত পরিদর্শন প্রতিবেদন, নিরীক্ষা প্রতিবেদন নয়।
প্রিন্সিপাল অ্যাকাউন্টিং অফিসার সরকারি পাওনা আদায়ের জন্য প্রচলিত আইন অনুসারে যথাবিহিত কার্যক্রম গ্রহণ করবেন। প্রয়োজনবোধে তিনি পাবলিক ডিমান্ড রিকভারি অ্যাক্টের আশ্রয় নেবেন। এ ছাড়া অন্য কোনো আইন বা বিধি আছে মর্মে প্রতীয়মান হয় না। অন্তত অর্থ আদায়ের কোনো দায়িত্ব কোনোমতেই মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের ওপর বর্তায় না।
এম হাফিজউদ্দিন খান: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, সাবেক মহাহিসাবনিরীক্ষক।
পরিদর্শন প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে সরকারি প্রতিষ্ঠান-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি কর্তৃক অর্থ আদায়ের যে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে, তাতে কিছু গুরুতর সাংবিধানিক ও আইনি সংশ্লেষ রয়েছে।
সংবিধানের ১২৮(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘মহা হিসাব নিরীক্ষক প্রজাতন্ত্রের সরকারি হিসাব এবং সকল আদালত, সরকারি কর্তৃপক্ষ ও কর্মচারীর সরকারি হিসাব নিরীক্ষা করিবেন ও অনুরূপ হিসাব সম্পর্কে রিপোর্ট দান করিবেন এবং সেই উদ্দেশে তিনি কিংবা সেই প্রয়োজনে তাঁর দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্তি যেকোনো ব্যক্তির দখলভুক্ত সকল নথি, বহি, রসিদ, দলিল, নগদ অর্থ, স্ট্যাম্প, জামিন, ভাণ্ডার বা অন্য প্রকার সরকারি সম্পত্তি পরীক্ষার অধিকারী হইবেন।’ এবং ১২৮(৪) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘এই অনুচ্ছেদের (১) দফার অধীন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে মহা হিসাব নিরীক্ষককে অন্য কোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের পরিচালনা বা নিয়ন্ত্রণের অধীন করা হইবে না।’ সুতরাং সরকারি প্রতিষ্ঠান-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি কর্তৃক বিতর্কিত ওই অর্থ আদায়ের জন্য মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রককে নির্দেশনা দেওয়া সংবিধানের উপরিউক্ত অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রককে কোনো কাজের জন্য কোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষ কোনো নির্দেশ দিতে পারে না।
প্রকৃত পক্ষে সংবিধান অনুসারে সরকারি অর্থ বা সম্পদের অপচয়, চুরি, আত্মসাত্ ইত্যাদি আদায় করার কোনো দায়িত্ব মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের ওপর ন্যস্ত করা হয়নি। মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব হলো, প্রজাতন্ত্রের হিসাব নিরীক্ষা করে নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রণয়ন করে তা অনুচ্ছেদ ১৩২ অনুসারে রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করা। একই অনুচ্ছেদের বিধান অনুসারে রাষ্ট্রপতি তাঁর কাছে পেশ করা নিরীক্ষা প্রতিবেদনগুলো সংসদে পেশের কার্যক্রম গ্রহণ করবেন। অনুচ্ছেদ ১৩২-এর বিধান নিম্নরূপ: ‘প্রজাতন্ত্রের হিসাব সম্পর্কিত মহা হিসাব নিরীক্ষকের রিপোর্টসমূহ রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করা হইবে এবং রাষ্ট্রপতি তাহা সংসদে পেশ করার ব্যবস্থা করিবেন।’ এই পদ্ধতিতে পেশ করা প্রতিবেদনগুলো সংসদ-সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটি অর্থাত্ সরকারি হিসাব সম্পর্কিত কমিটিতে পাঠানো হবে। সরকারি হিসাব সম্পর্কিত কমিটি প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনা করবে। পর্যালোচনার সময় সংশ্লিষ্ট সংস্থা এবং সচিব (যিনি পদাধিকারবলে মন্ত্রণালয়ের প্রিন্সিপাল অ্যাকাউন্টিং অফিসার) উপস্থিত থাকেন এবং তাঁদের বক্তব্য ও দলিলাদি পরীক্ষা করে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। পর্যালোচনান্তে কোনো অর্থ আদায়যোগ্য হলে সে দায়িত্ব প্রিন্সিপাল অ্যাকাউন্টিং অফিসার অর্থাত্ সচিবের ওপর বর্তাবে, মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের ওপর নয়। সরকারের রুলস অব বিজিনেস অনুসারে প্রিন্সিপাল অ্যাকাউন্টিং অফিসারের দায়িত্ব নিম্নরূপ:
‘The Secretary shall be the Principal Accounting Officer of the Ministry/Division, Attached Department and Subordinate Offices and shall ensure that funds allocated to the Ministry/Division, its Attached Departments and Subordinate Offices are spent in accordance with rules/laws for the time being in force :
Provided that in relation to the funds allocated to the Supreme Court of Bangladesh the Registrar of the Court shall be the Principal Accounting Officer who shall ensure that the said funds are spent in accordance with the rules/laws for the time being in force.’
দ্বিতীয়ত, মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের নিরীক্ষা প্রতিবেদন পর্যালোচনা করার একমাত্র অধিকারী হলো সরকারি হিসাব সম্পর্কিত কমিটি, সরকারি প্রতিষ্ঠান-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি নয়।
বিবেচ্য, ১৬ কোটি টাকা আদায়যোগ্য মর্মে মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কোনো নিরীক্ষা প্রতিবেদন আছে কি না, তা বোঝা যাচ্ছে না এবং প্রতিবেদন থেকে থাকলে তা সংবিধানের ১৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করা হয়েছিল কি না এবং রাষ্ট্রপতি তা সংসদে পেশের ব্যবস্থা করেছেন কি না, প্রতিবেদনটি পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটিতে পর্যালোচিত হয়েছিল কি না এবং তা পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটিতে পর্যালোচিত হওয়ার পর কোনো নির্দেশনা জারি হয়েছে কি না, তাও বোঝা যাচ্ছে না। যদি প্রকৃতই নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুসারে এই অর্থ আদায়যোগ্য বিবেচিত হয়ে থাকে, তাহলে তা আদায়ের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট প্রিন্সিপাল অ্যাকাউন্টিং অফিসারের। তবে যতটুকু জানা গেছে তাতে সরকারি প্রতিষ্ঠান-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির নির্দেশনার ভিত্তি পূর্বোল্লিখিত পরিদর্শন প্রতিবেদন, নিরীক্ষা প্রতিবেদন নয়।
প্রিন্সিপাল অ্যাকাউন্টিং অফিসার সরকারি পাওনা আদায়ের জন্য প্রচলিত আইন অনুসারে যথাবিহিত কার্যক্রম গ্রহণ করবেন। প্রয়োজনবোধে তিনি পাবলিক ডিমান্ড রিকভারি অ্যাক্টের আশ্রয় নেবেন। এ ছাড়া অন্য কোনো আইন বা বিধি আছে মর্মে প্রতীয়মান হয় না। অন্তত অর্থ আদায়ের কোনো দায়িত্ব কোনোমতেই মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের ওপর বর্তায় না।
এম হাফিজউদ্দিন খান: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, সাবেক মহাহিসাবনিরীক্ষক।
No comments