গরিবদের ব্যাংক ঋণ না দেওয়া নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য -নুরুল মতিন স্মারক বক্তৃতায় আকবর আলি খান
গরিবদের ব্যাংক ঋণ না দেওয়া বা অতিমাত্রায় কম ঋণ দেওয়া নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ব্যাপার। ব্যাংকগুলোকে বরং ধনিক শ্রেণীকে অতি মাত্রায় ঋণ দেওয়া থেকে বিরত থাকা দরকার। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক সচিব আকবর আলি খান নুরুল মতিন স্মারক বক্তৃতায় গতকাল মঙ্গলবার এসব কথা বলেন।
আকবর আলি খান বলেন, ধনীদের ঋণ দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণও। কারণ বড় ঋণ গ্রহীতারা তা ফেরত না দিলে ব্যাংক বিপদে পড়ে যায়। তখন ধনী আরও ধনী এবং গরিবকে আরও গরিব করে বৈষম্যপূর্ণ সমাজ গড়ে তুলতে অনভিপ্রেত ভূমিকা পালন করে ব্যাংক।
আকবর আলি খান নুরুল মতিন স্মারকের সপ্তম বক্তা ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর বিমল জালানের বক্তব্য উদ্ধৃত করে তাঁর সঙ্গে একমত হন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগ পরিহার করা জরুরি। এসব নিয়োগে ব্যাংকের প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট হয়। তাঁরা রাজনীতিকে অর্থ উপার্জনের পথ হিসেবে বেছে নেন এবং বিষয় দুটিকে গুলিয়ে ফেলেন।
আকবর আলি খান জানান, শরিয়াহিভক্তিক ব্যাংকিংয়ের কথা বলে অধিকাংশ ইসলামি ব্যাংক বিভিন্ন ফাঁকফোকরে সাধারণ ব্যাংকিং করে।
রাজধানীর স্থানীয় একটি হোটেলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত ‘ব্যাংকিংয়ে নৈতিকতা’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতায় গতকাল তিনি এসব কথা বলেন। তিনি ছিলেন নুরুল মতিন স্মারকের নবম বক্তা।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এতে প্রধান অতিথি ছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক বন্দনা সাহা।
প্রসঙ্গত, ৫০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণকারী বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর নুরুল মতিন ছিলেন বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের অন্যতম পথিকৃত। প্রতিবছর এই প্রথিতযশা ব্যাংকারের স্মরণে বক্তৃতার আয়োজন করা হয়।
আকবর আলি খান তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ব্যাংক ব্যবসায়ের মূল ভিত্তি হলো আমানতকারী তথা জনগণের আস্থা। ব্যাংক কোম্পানিকে অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে এ আস্থা অর্জন করতে হয়। সুতরাং নৈতিকতার দিকটি বিবেচনায় রাখা দরকার শুধু ব্যাংকের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থে নয়, বরং ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকেও।
সাম্প্রতিক বিশ্বমন্দা, আর্থিক খাতে বিপর্যয় ও কেলেঙ্কারির নেপথ্যের চারটি কারণকে চিহ্নিত করেন আকবর আলি খান। এগুলো হচ্ছে অতিমাত্রায় ঝুঁকি গ্রহণ, অপর্যাপ্ত নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ, ব্যবস্থাপনাগত ব্যর্থতা এবং বিকল্প ব্যাংকিং সুবিধার অভাব। যথাযথ নিরীক্ষা না হওয়াও এই বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ বলে মনে করেন তিনি।
আকবর আলি খান বলেন, করপোরেট সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো কোম্পানির নৈতিক সংস্কৃতি। নৈতিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠাটা আবার নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহীরা নৈতিকতার ব্যাপারে কোন নীতি মেনে চলেন তার ওপর।
আকবর আলি খান বলেন, করপোরেট, সমষ্টিগত ও ব্যক্তিগত—এই তিন পর্যায়েই কাজ করে ব্যাংক। এর মধ্যে অনৈতিক লোক নিয়োজিত থাকলে নৈতিক ব্যাংকিং করা দুঃসাধ্য। ব্যাংক জগতের নৈতিকতাহীনতা গোটা অর্থনীতিতেই ডেকে আনতে পারে গুরুতর বিপর্যয়।
ব্যাংক ব্যবসায় নৈতিকতার জন্য আগে ব্যাংকের পরিচালক ও শীর্ষস্থানীয় নির্বাহীদের নৈতিক মান উন্নত হওয়া দরকার বলে মনে করেন সাবেক এই উপদেষ্টা ও অর্থসচিব। তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে ব্যাংক পরিচালকদের অনেকেই পেশাগত দায়িত্ব পালনে অনীহ ও অনভিজ্ঞ। অনেকেই পর্ষদের সদস্য হওয়ার গুরুদায়িত্বকে হালকাভাবে নেন এবং ব্যাংককে বেছে নেন ব্যক্তিগত লাভালাভের জায়গা হিসেবে।’
আকবর আলি খানের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত ব্যাংক পরিচালকদের যোগ্যতা সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া। নিয়মিত ভিত্তিতে তাঁদের কর্মদক্ষতাও (পারফরম্যান্স) মূল্যায়িত হওয়া উচিত।
দেশের ব্যাংক খাতে নৈতিকতা প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যাংকের ভেতরে ও বাইরে এর চর্চা থাকা দরকার বলে মনে করেন আকবর আলি খান। বাইরের চর্চার মধ্যে আইনগত কাঠামো শক্তিশালী করার কথা উল্লেখ করেন তিনি। বিলুপ্ত বিসিআইয়ের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘এখানে আমানতকারীদের সুরক্ষাব্যবস্থা দুর্বল। আজ পর্যন্ত একটি হায় হায় কোম্পানির উদ্যোক্তাদেরও বিচার হয়নি।’
আকবর আলি খান বলেন, অনৈতিক ব্যক্তির সঙ্গে নৈতিক আচরণ টেকে না। তবে এও ঠিক যে, বাংলাদেশের মতো দেশ যেখানে সমুদ্রসম অনৈতিকতায় ভরপুর, সেখানে ব্যাংক খাত কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়।
ব্যাংক খাতে নৈতিকতার জন্য কয়েকটি বিষয়ে জোর দিতে বলেন আকবর আলি খান। আমানতকারীদের আমানত বীমার মাধ্যমে সুরক্ষা করা এবং বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আলাদা করে ভবিষ্যতে আমানত বীমা করপোরেশন নামে একটি সংস্থা গঠনের পরামর্শ দেন তিনি।
ক্যামেল রেটিংয়ের ফলাফল নিয়মিতভাবে প্রকাশ করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে পরামর্শ দেন আকবর আলি খান। এতে মান উন্নত করতে ব্যাংকগুলোর মধ্যে এক ধরনের চাপ তৈরি হবে বলে তিনি জানান।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘ব্যাংক খাত দিন দিন বড় হচ্ছে। কিন্তু খাতটিতে শৃঙ্খলার বড় অভাব দেখা যায় এখনো। এর পরিবর্তন আজ অপরিহার্য।’
আকবর আলি খান বলেন, ধনীদের ঋণ দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণও। কারণ বড় ঋণ গ্রহীতারা তা ফেরত না দিলে ব্যাংক বিপদে পড়ে যায়। তখন ধনী আরও ধনী এবং গরিবকে আরও গরিব করে বৈষম্যপূর্ণ সমাজ গড়ে তুলতে অনভিপ্রেত ভূমিকা পালন করে ব্যাংক।
আকবর আলি খান নুরুল মতিন স্মারকের সপ্তম বক্তা ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর বিমল জালানের বক্তব্য উদ্ধৃত করে তাঁর সঙ্গে একমত হন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগ পরিহার করা জরুরি। এসব নিয়োগে ব্যাংকের প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট হয়। তাঁরা রাজনীতিকে অর্থ উপার্জনের পথ হিসেবে বেছে নেন এবং বিষয় দুটিকে গুলিয়ে ফেলেন।
আকবর আলি খান জানান, শরিয়াহিভক্তিক ব্যাংকিংয়ের কথা বলে অধিকাংশ ইসলামি ব্যাংক বিভিন্ন ফাঁকফোকরে সাধারণ ব্যাংকিং করে।
রাজধানীর স্থানীয় একটি হোটেলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত ‘ব্যাংকিংয়ে নৈতিকতা’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতায় গতকাল তিনি এসব কথা বলেন। তিনি ছিলেন নুরুল মতিন স্মারকের নবম বক্তা।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এতে প্রধান অতিথি ছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক বন্দনা সাহা।
প্রসঙ্গত, ৫০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণকারী বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর নুরুল মতিন ছিলেন বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের অন্যতম পথিকৃত। প্রতিবছর এই প্রথিতযশা ব্যাংকারের স্মরণে বক্তৃতার আয়োজন করা হয়।
আকবর আলি খান তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ব্যাংক ব্যবসায়ের মূল ভিত্তি হলো আমানতকারী তথা জনগণের আস্থা। ব্যাংক কোম্পানিকে অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে এ আস্থা অর্জন করতে হয়। সুতরাং নৈতিকতার দিকটি বিবেচনায় রাখা দরকার শুধু ব্যাংকের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থে নয়, বরং ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকেও।
সাম্প্রতিক বিশ্বমন্দা, আর্থিক খাতে বিপর্যয় ও কেলেঙ্কারির নেপথ্যের চারটি কারণকে চিহ্নিত করেন আকবর আলি খান। এগুলো হচ্ছে অতিমাত্রায় ঝুঁকি গ্রহণ, অপর্যাপ্ত নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ, ব্যবস্থাপনাগত ব্যর্থতা এবং বিকল্প ব্যাংকিং সুবিধার অভাব। যথাযথ নিরীক্ষা না হওয়াও এই বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ বলে মনে করেন তিনি।
আকবর আলি খান বলেন, করপোরেট সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো কোম্পানির নৈতিক সংস্কৃতি। নৈতিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠাটা আবার নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহীরা নৈতিকতার ব্যাপারে কোন নীতি মেনে চলেন তার ওপর।
আকবর আলি খান বলেন, করপোরেট, সমষ্টিগত ও ব্যক্তিগত—এই তিন পর্যায়েই কাজ করে ব্যাংক। এর মধ্যে অনৈতিক লোক নিয়োজিত থাকলে নৈতিক ব্যাংকিং করা দুঃসাধ্য। ব্যাংক জগতের নৈতিকতাহীনতা গোটা অর্থনীতিতেই ডেকে আনতে পারে গুরুতর বিপর্যয়।
ব্যাংক ব্যবসায় নৈতিকতার জন্য আগে ব্যাংকের পরিচালক ও শীর্ষস্থানীয় নির্বাহীদের নৈতিক মান উন্নত হওয়া দরকার বলে মনে করেন সাবেক এই উপদেষ্টা ও অর্থসচিব। তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে ব্যাংক পরিচালকদের অনেকেই পেশাগত দায়িত্ব পালনে অনীহ ও অনভিজ্ঞ। অনেকেই পর্ষদের সদস্য হওয়ার গুরুদায়িত্বকে হালকাভাবে নেন এবং ব্যাংককে বেছে নেন ব্যক্তিগত লাভালাভের জায়গা হিসেবে।’
আকবর আলি খানের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত ব্যাংক পরিচালকদের যোগ্যতা সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া। নিয়মিত ভিত্তিতে তাঁদের কর্মদক্ষতাও (পারফরম্যান্স) মূল্যায়িত হওয়া উচিত।
দেশের ব্যাংক খাতে নৈতিকতা প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যাংকের ভেতরে ও বাইরে এর চর্চা থাকা দরকার বলে মনে করেন আকবর আলি খান। বাইরের চর্চার মধ্যে আইনগত কাঠামো শক্তিশালী করার কথা উল্লেখ করেন তিনি। বিলুপ্ত বিসিআইয়ের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘এখানে আমানতকারীদের সুরক্ষাব্যবস্থা দুর্বল। আজ পর্যন্ত একটি হায় হায় কোম্পানির উদ্যোক্তাদেরও বিচার হয়নি।’
আকবর আলি খান বলেন, অনৈতিক ব্যক্তির সঙ্গে নৈতিক আচরণ টেকে না। তবে এও ঠিক যে, বাংলাদেশের মতো দেশ যেখানে সমুদ্রসম অনৈতিকতায় ভরপুর, সেখানে ব্যাংক খাত কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়।
ব্যাংক খাতে নৈতিকতার জন্য কয়েকটি বিষয়ে জোর দিতে বলেন আকবর আলি খান। আমানতকারীদের আমানত বীমার মাধ্যমে সুরক্ষা করা এবং বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আলাদা করে ভবিষ্যতে আমানত বীমা করপোরেশন নামে একটি সংস্থা গঠনের পরামর্শ দেন তিনি।
ক্যামেল রেটিংয়ের ফলাফল নিয়মিতভাবে প্রকাশ করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে পরামর্শ দেন আকবর আলি খান। এতে মান উন্নত করতে ব্যাংকগুলোর মধ্যে এক ধরনের চাপ তৈরি হবে বলে তিনি জানান।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘ব্যাংক খাত দিন দিন বড় হচ্ছে। কিন্তু খাতটিতে শৃঙ্খলার বড় অভাব দেখা যায় এখনো। এর পরিবর্তন আজ অপরিহার্য।’
No comments