ডিগ্রিহীন ইতিহাসবিদ by মুহাম্মদ শামসুল হক
ডিগ্রি দূরে থাক, নিম্ন মাধ্যমিকের গণ্ডিও তিনি পেরোতে পারেননি। কিন্তু সমাজ-সংস্কৃতি বা ইতিহাস বিষয়ে যে গবেষণা করেছেন, তা দৃষ্টান্তমূলক; তিনি চট্টল তত্ত্ববিদ আবদুল হক চৌধুরী। তাঁর একটি বই চট্টগ্রামের সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ভারতীয় কথাশিল্পী সৈয়দ মুস্তফা সিরাজ কলকাতার দেশ-এ লিখেছিলেন, ‘এ তো একটা সাংস্কৃতিক মহাফেজখানা গড়ে তুলেছেন ভদ্রলোক। কি বিশাল, বিস্তারিত এবং শ্রেণীবদ্ধ মহাফেজখানা। চৌদ্দটি পরিচ্ছেদে চট্টগ্রামের মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তাবত্ আচার-অনুষ্ঠান, বিশ্বাস, আদর্শ, জীবনযাপন পদ্ধতি এবং লৌকিক-অলৌকিক যা কিছু বেঁচে থাকার জন্য জরুরি—সবই সাজিয়ে দিয়েছেন। (দেশ, মে ১৯৮২, কলকাতা)
বাংলা একাডেমী প্রকাশিত চারটিসহ ১২টি গবেষণামূলক গ্রন্থ রয়েছে আবদুল হক চৌধুরীর। এসব গ্রন্থে চট্টগ্রামের বহু প্রাচীন কীর্তি ও নিদর্শনের বিবরণ, চট্টগ্রামের মুসলমানদের লৌকিক আচার-অনুষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা, পাঁচ শতাধিক কবি-সাহিত্যিক-গবেষকের পরিচিতি, প্রাত্যহিক জীবনের ওপর নৃতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক গবেষণা, চট্টগ্রাম ও আরাকানের রাজনৈতিক-সামাজিক ইতিহাস ইত্যাদি প্রকাশ পেয়েছে। চট্টগ্রামের সঙ্গে সিলেটের একটি ঐতিহাসিক যোগসূত্রের সন্ধান করছিলেন তিনি। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৭ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময় সিলেট অঞ্চল ঘুরে বহু তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তিনি লিখেছেন সিলেটের ইতিহাস প্রসঙ্গ (১৯৮১)। তাঁর অন্যান্য গ্রন্থ চট্টগ্রামের ইতিহাস প্রসঙ্গ (প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড ১৯৭৬), চট্টগ্রামের চরিতাভিধান (১৯৭৯), চট্টগ্রামের সমাজ ও সংস্কৃতি (১৯৮০), শহর চট্টগ্রামের ইতিকথা (১৯৮৫), চট্টগ্রামের সমাজ ও সংস্কৃতির রূপরেখা (১৯৮৮, বাংলা একাডেমী), চট্টগ্রাম-আরাকান (১৯৮৯), চট্টগ্রামের ইতিহাস বিষয়ক প্রবন্ধ (১৯৯২), প্রাচীন আরাকান রোইঙ্গা হিন্দু ও বৌদ্ধ বড়ুয়া আধিবাসী, (১৯৯৪, বাংলা একাডেমী), বন্দর শহর চট্টগ্রাম (১৯৯৪, বাংলা একাডেমী), প্রবন্ধ বিচিত্রা (১৯৯৫ বাংলা একাডেমী)।
এর মধ্যে চট্টগ্রামের ইতিহাস প্রসঙ্গ ও চট্টগ্রামের সমাজ ও সংস্কৃতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগে স্নাতকোত্তর শ্রেণীর সহায়ক বই হিসেবে তালিকাভুক্ত। তাঁর বহু প্রবন্ধ-নিবন্ধ-সাক্ষাত্কার পত্রপত্রিকা ও সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ বেতারের বেতার কথিকা লেখক ও বিশেষজ্ঞ বক্তা হিসেবেও তাঁর সুনাম ছিল।
শিক্ষাবিদ আনিসুজ্জামান লিখেছেন, ‘ইতিহাসের উপাদান সমাজের নানা স্তরে ছড়িয়ে থাকে, নানা কিছুর মধ্যে এ সম্পর্কে আবদুল হক চৌধুরী যে সচেতনতার পরিচয় দিয়েছেন, সেটা এক হিসেবে আমাদের বিশ্বাস জাগ্রত করে। এর কারণ, এ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে খুব বেশি ইতিহাস আমাদের দেশে লেখা হয়নি।’
আবদুল হক চৌধুরীর জন্ম ১৯২২ সালের ২৪ আগস্ট রাউজান থানার নওয়াজিশপুর গ্রামে। এক ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি বড়। অষ্টম শ্রেণীর গণ্ডি পেরোতে পারেননি তিনি। তাঁর ভাষায়, ‘বাল্যকাল থেকেই আমি ছিলাম রোগা। বছরের ছয় মাস কাল আমি পেটের কামড়িতে শয্যাগত থাকতাম। তাই আমাকে স্কুলে ভর্তি করা হয়েছিল প্রায় ৯ বছর বয়সে। স্বগ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণী পাস করার পর পার্শ্ববর্তী ডাবুয়া মধ্য ইংরেজি স্কুলে দু’বছর লেখাপড়া করি। এই সময় আমি মাসিক ‘মোহাম্মদী’ ও মাসিক ‘বুলবুল’ পত্রিকার গ্রাহক হয়েছিলাম। অতঃপর ১৯৩৮ সালে রাউজান হাইস্কুলে ভর্তি হই। এবং রীতিমতো পড়াশুনা করি। ষান্মাষিক পরীক্ষা দিয়ে বোনের বিয়ে উপলক্ষে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে বাড়িতে আসি। বিয়ের এক সপ্তাহ পর ১৯৪০ সালে ৩রা অক্টোবর তারিখে আমার পিতা পরলোক গমন করেন। অষ্টম শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষা আর দেওয়া হলো না। পিতার মৃত্যুর পর এক মাসের মধ্যে বিষয় সম্পত্তির ঝামেলায় পড়তে হল। গ্রাম্য টাউট টর্নীরা আমাকে দুটি দেওয়ানী মোকদ্দমায় জড়িয়ে ফেলে। ফলে আমার লেখাপড়ার এখানেই ইতি হলো।’
রাউজান উচ্চবিদ্যালয়ে পড়ার সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্রীশচন্দ্র চৌধুরী এবং গ্রন্থাগারিক সারদাচরণ চক্রবর্তীর অনুপ্রেরণায় তিনি নিয়মিত পাঠাগারে গিয়ে বই পড়তেন। ১৯৪২ সালে তাঁর বাবার স্থাপিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগ দিয়ে ’৪৭ সাল পর্যন্ত প্রায় পাঁচ বছর শিক্ষকতা করেন। এ সময় তিনি রাউজান, হাটহাজারী ও ফটিকছড়ি থানার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে রাজা-বাদশাহদের আমলের স্মারক নিদর্শনের পরিচিতি এবং এ ব্যাপারে কিংবদন্তি সংগ্রহ শুরু করেন। একই সঙ্গে বয়স্ক নারী-পুরুষদের সঙ্গে আলাপ জমিয়ে স্থানভেদে মানুষের বর্তমান আচার-আচরণ ও প্রাচীন আমলের কথা জেনে নিতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিন রোববার স্থানীয় মোহাম্মদ ডাক্তার মেমোরিয়াল লাইব্রেরি থেকে প্রচুর পুরোনো পত্রপত্রিকা ও বই সংগ্রহ করে এনে পড়তেন। আবদুল হক চৌধুরীর গবেষণাকর্মের ব্যাপারে অন্যতম অনুপ্রেরণা ছিলেন আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ। ১৯৪৩ সালে চিঠি বিনিময়ের মাধ্যমে সাহিত্যবিশারদের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। ’৪৪ সালে সাহিত্যবিশারদ এক চিঠির মাধ্যমে তাঁর গ্রাম সূচক্রদণ্ডীতে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান। সেখানে সাহিত্যবিশারদের কথা ও কাজের নানা দিক আবদুল হক চৌধুরীর মনে দাগ কাটে।
পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের বেশ কয়েক বছর ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। কিন্তু তাতে তেমন সফল হতে পারেননি। ব্যবসার বাইরে মূলত পড়ালেখা ও ইতিহাস-ঐতিহ্যের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের দিকে মনোনিবেশ ছিল বেশি। লেখালেখিতে তাঁর হাতেখড়ি স্বাধীনতার পর আহমদ শরীফের সহযোগিতায় ইতিহাস পত্রিকার পঞ্চম বর্ষ ১-৩ সংখ্যায় (১৩৭৮ বাংলা) তিনখানা চিঠি প্রকাশের মাধ্যমে। বিষয় ছিল ‘বার ভূঁঞা প্রধান ঈশা খাঁ সম্পর্কে নতুন তথ্য।’ ১৯৭২ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিরামহীনভাবে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লিখে গেছেন তিনি। ১৯৯৪ সালের ২৬ অক্টোবর ৭২ বছর বয়সে তিনি মারা যান।
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আবদুল হক চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভায় মুনতাসীর মামুনের দেওয়া বক্তব্য থেকে উদ্ধৃত করে শেষ করি—‘আমাদের দেশে যাঁরা শিক্ষকতা করেন, তাঁদের অনেকেই ভাবেন তাঁরাই সব জানেন। যাঁরা লেখালেখি করেন তাঁদের অনেকেই লেখেন দুর্ভেদ্য ভাষায়। কিন্তু আবদুল হক চৌধুরীর মতো গবেষকরা মানুষের অন্তরে পৌঁছানোর জন্য লিখেন অত্যন্ত সরল ও সাবলীল ভাষায়। গবেষণা কর্মের সব রীতি ঠিক রেখে ইতিহাস রচনা করে তিনি হয়ে উঠেছেন মহান।
বাংলা একাডেমী প্রকাশিত চারটিসহ ১২টি গবেষণামূলক গ্রন্থ রয়েছে আবদুল হক চৌধুরীর। এসব গ্রন্থে চট্টগ্রামের বহু প্রাচীন কীর্তি ও নিদর্শনের বিবরণ, চট্টগ্রামের মুসলমানদের লৌকিক আচার-অনুষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা, পাঁচ শতাধিক কবি-সাহিত্যিক-গবেষকের পরিচিতি, প্রাত্যহিক জীবনের ওপর নৃতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক গবেষণা, চট্টগ্রাম ও আরাকানের রাজনৈতিক-সামাজিক ইতিহাস ইত্যাদি প্রকাশ পেয়েছে। চট্টগ্রামের সঙ্গে সিলেটের একটি ঐতিহাসিক যোগসূত্রের সন্ধান করছিলেন তিনি। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৭ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময় সিলেট অঞ্চল ঘুরে বহু তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তিনি লিখেছেন সিলেটের ইতিহাস প্রসঙ্গ (১৯৮১)। তাঁর অন্যান্য গ্রন্থ চট্টগ্রামের ইতিহাস প্রসঙ্গ (প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড ১৯৭৬), চট্টগ্রামের চরিতাভিধান (১৯৭৯), চট্টগ্রামের সমাজ ও সংস্কৃতি (১৯৮০), শহর চট্টগ্রামের ইতিকথা (১৯৮৫), চট্টগ্রামের সমাজ ও সংস্কৃতির রূপরেখা (১৯৮৮, বাংলা একাডেমী), চট্টগ্রাম-আরাকান (১৯৮৯), চট্টগ্রামের ইতিহাস বিষয়ক প্রবন্ধ (১৯৯২), প্রাচীন আরাকান রোইঙ্গা হিন্দু ও বৌদ্ধ বড়ুয়া আধিবাসী, (১৯৯৪, বাংলা একাডেমী), বন্দর শহর চট্টগ্রাম (১৯৯৪, বাংলা একাডেমী), প্রবন্ধ বিচিত্রা (১৯৯৫ বাংলা একাডেমী)।
এর মধ্যে চট্টগ্রামের ইতিহাস প্রসঙ্গ ও চট্টগ্রামের সমাজ ও সংস্কৃতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগে স্নাতকোত্তর শ্রেণীর সহায়ক বই হিসেবে তালিকাভুক্ত। তাঁর বহু প্রবন্ধ-নিবন্ধ-সাক্ষাত্কার পত্রপত্রিকা ও সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ বেতারের বেতার কথিকা লেখক ও বিশেষজ্ঞ বক্তা হিসেবেও তাঁর সুনাম ছিল।
শিক্ষাবিদ আনিসুজ্জামান লিখেছেন, ‘ইতিহাসের উপাদান সমাজের নানা স্তরে ছড়িয়ে থাকে, নানা কিছুর মধ্যে এ সম্পর্কে আবদুল হক চৌধুরী যে সচেতনতার পরিচয় দিয়েছেন, সেটা এক হিসেবে আমাদের বিশ্বাস জাগ্রত করে। এর কারণ, এ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে খুব বেশি ইতিহাস আমাদের দেশে লেখা হয়নি।’
আবদুল হক চৌধুরীর জন্ম ১৯২২ সালের ২৪ আগস্ট রাউজান থানার নওয়াজিশপুর গ্রামে। এক ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি বড়। অষ্টম শ্রেণীর গণ্ডি পেরোতে পারেননি তিনি। তাঁর ভাষায়, ‘বাল্যকাল থেকেই আমি ছিলাম রোগা। বছরের ছয় মাস কাল আমি পেটের কামড়িতে শয্যাগত থাকতাম। তাই আমাকে স্কুলে ভর্তি করা হয়েছিল প্রায় ৯ বছর বয়সে। স্বগ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণী পাস করার পর পার্শ্ববর্তী ডাবুয়া মধ্য ইংরেজি স্কুলে দু’বছর লেখাপড়া করি। এই সময় আমি মাসিক ‘মোহাম্মদী’ ও মাসিক ‘বুলবুল’ পত্রিকার গ্রাহক হয়েছিলাম। অতঃপর ১৯৩৮ সালে রাউজান হাইস্কুলে ভর্তি হই। এবং রীতিমতো পড়াশুনা করি। ষান্মাষিক পরীক্ষা দিয়ে বোনের বিয়ে উপলক্ষে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে বাড়িতে আসি। বিয়ের এক সপ্তাহ পর ১৯৪০ সালে ৩রা অক্টোবর তারিখে আমার পিতা পরলোক গমন করেন। অষ্টম শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষা আর দেওয়া হলো না। পিতার মৃত্যুর পর এক মাসের মধ্যে বিষয় সম্পত্তির ঝামেলায় পড়তে হল। গ্রাম্য টাউট টর্নীরা আমাকে দুটি দেওয়ানী মোকদ্দমায় জড়িয়ে ফেলে। ফলে আমার লেখাপড়ার এখানেই ইতি হলো।’
রাউজান উচ্চবিদ্যালয়ে পড়ার সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্রীশচন্দ্র চৌধুরী এবং গ্রন্থাগারিক সারদাচরণ চক্রবর্তীর অনুপ্রেরণায় তিনি নিয়মিত পাঠাগারে গিয়ে বই পড়তেন। ১৯৪২ সালে তাঁর বাবার স্থাপিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগ দিয়ে ’৪৭ সাল পর্যন্ত প্রায় পাঁচ বছর শিক্ষকতা করেন। এ সময় তিনি রাউজান, হাটহাজারী ও ফটিকছড়ি থানার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে রাজা-বাদশাহদের আমলের স্মারক নিদর্শনের পরিচিতি এবং এ ব্যাপারে কিংবদন্তি সংগ্রহ শুরু করেন। একই সঙ্গে বয়স্ক নারী-পুরুষদের সঙ্গে আলাপ জমিয়ে স্থানভেদে মানুষের বর্তমান আচার-আচরণ ও প্রাচীন আমলের কথা জেনে নিতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিন রোববার স্থানীয় মোহাম্মদ ডাক্তার মেমোরিয়াল লাইব্রেরি থেকে প্রচুর পুরোনো পত্রপত্রিকা ও বই সংগ্রহ করে এনে পড়তেন। আবদুল হক চৌধুরীর গবেষণাকর্মের ব্যাপারে অন্যতম অনুপ্রেরণা ছিলেন আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ। ১৯৪৩ সালে চিঠি বিনিময়ের মাধ্যমে সাহিত্যবিশারদের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। ’৪৪ সালে সাহিত্যবিশারদ এক চিঠির মাধ্যমে তাঁর গ্রাম সূচক্রদণ্ডীতে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান। সেখানে সাহিত্যবিশারদের কথা ও কাজের নানা দিক আবদুল হক চৌধুরীর মনে দাগ কাটে।
পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের বেশ কয়েক বছর ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। কিন্তু তাতে তেমন সফল হতে পারেননি। ব্যবসার বাইরে মূলত পড়ালেখা ও ইতিহাস-ঐতিহ্যের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের দিকে মনোনিবেশ ছিল বেশি। লেখালেখিতে তাঁর হাতেখড়ি স্বাধীনতার পর আহমদ শরীফের সহযোগিতায় ইতিহাস পত্রিকার পঞ্চম বর্ষ ১-৩ সংখ্যায় (১৩৭৮ বাংলা) তিনখানা চিঠি প্রকাশের মাধ্যমে। বিষয় ছিল ‘বার ভূঁঞা প্রধান ঈশা খাঁ সম্পর্কে নতুন তথ্য।’ ১৯৭২ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিরামহীনভাবে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লিখে গেছেন তিনি। ১৯৯৪ সালের ২৬ অক্টোবর ৭২ বছর বয়সে তিনি মারা যান।
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আবদুল হক চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভায় মুনতাসীর মামুনের দেওয়া বক্তব্য থেকে উদ্ধৃত করে শেষ করি—‘আমাদের দেশে যাঁরা শিক্ষকতা করেন, তাঁদের অনেকেই ভাবেন তাঁরাই সব জানেন। যাঁরা লেখালেখি করেন তাঁদের অনেকেই লেখেন দুর্ভেদ্য ভাষায়। কিন্তু আবদুল হক চৌধুরীর মতো গবেষকরা মানুষের অন্তরে পৌঁছানোর জন্য লিখেন অত্যন্ত সরল ও সাবলীল ভাষায়। গবেষণা কর্মের সব রীতি ঠিক রেখে ইতিহাস রচনা করে তিনি হয়ে উঠেছেন মহান।
No comments