বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক -অমীমাংসিত সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে by মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ
বিগত যেকোনো সময়ের তুলনায় সম্ভবত এখনই বাংলাদেশ-ভারতের সুপ্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক সুদৃঢ় এবং সুসংহত করার সবচেয়ে অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে। উভয় দেশের বিদ্যমান অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে এ কথার সারবত্তা উপলব্ধি করা যায়। বাংলাদেশে ডিসেম্বর ২০০৮ সালের সংসদীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের পক্ষে বিপুল গণরায় এবং এ বছরের এপ্রিল-মের লোকসভা নির্বাচনে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে গঠিত সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চার উপর্যুপরি দ্বিতীয় বিজয় একযোগে দুই দেশের রাজনীতিতে যে গুণগত পরিবর্তন সূচিত করেছে, ’৭৫ পরবর্তীকালে তা নিতান্তই অচিন্তনীয় ছিল। ঢাকা ও দিল্লিতে নতুন সরকার গঠিত হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই দুই দেশের সরকার তাদের মধ্যকার সুসম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে বেশ কিছু দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে দুই দেশের মধ্যে গত সাড়ে তিন দশকের পুঞ্জীভূত অবিশ্বাস ও সন্দেহের বরফ গলতে শুরু করেছে এবং বিভিন্ন অমীমাংসিত বিষয়ের পারস্পরিক গ্রহণযোগ্য সমাধানের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।
এ বছরের শুরুতে সবার আগে ভারতের তত্কালীন বিদেশমন্ত্রী তথা ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি ঢাকায় এসেছিলেন বাংলাদেশের নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানাতে। ওই সময় দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগসংক্রান্ত দুটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এরপর ১৫ জুলাই মিশরের শরম আল শেখ সৈকত শহরে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের মধ্যে অত্যন্ত হূদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
সম্প্রতি ৭ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি ভারতে সরকারি সফরে যান। সফরকালে তিনি ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি, পানিসম্পদমন্ত্রী পবন কুমার বনসলের সঙ্গেও সাক্ষাত্ করেন। সফর শেষে একটি যৌথ প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। দুই দেশের সম্পর্কের বহুমাত্রিক ঐতিহ্যের আলোকে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন, দুই দেশের সাম্প্রতিক সাধারণ নির্বাচন এ সম্পর্ককে আরও প্রসারিত ও বিকশিত করার ঐতিহাসিক সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
দুই মন্ত্রী দুই দেশের বিভিন্ন অমীমাংসিত বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন। তাঁদের আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক সংযোগব্যবস্থা, ত্রিপুরার পালাতোনায় বিদ্যুত্ প্রকল্পের বৃহদাকার যন্ত্রাংশ নিয়ে যেতে আশুগঞ্জ নদীবন্দর ব্যবহার করতে দিতে বাংলাদেশের সম্মতি ইত্যাদি স্থান পায়। বাংলাদেশের সঙ্গে নেপাল ও ভুটানের সংযোগব্যবস্থা সুগম করতে ভারতও সম্মত হয়। উভয় পক্ষ বিদ্যুত্ খাতে সহযোগিতা বাড়াতে একমত হয়। ভারত দুই দেশের মধ্যে বিদ্যুত্ গ্রিড আন্তসংযোগের সম্ভাব্যতা পরীক্ষা করে দেখতে সম্মত হয় এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাংলাদেশকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ সরবরাহ করতেও রাজি হয়। এ ছাড়া তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহের সুষ্ঠু বণ্টনব্যবস্থা দ্রুত চূড়ান্ত করার বিষয়েও উভয় পক্ষ অভিন্ন মত পোষণ করে। এ ব্যাপারে দুই পক্ষ নিজ নিজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কারিগরি ও অন্যান্য দিক খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেয়। ভারত টিপাইমুখ বাঁধের বিষয়ে বাংলাদেশকে আশ্বাস দেয় যে এমন কিছু করা হবে না যাতে বাংলাদেশের কিছুমাত্র ক্ষতি হয়।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিদ্যমান সব প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া পুরোপুরি কার্যকর করতে উভয় পক্ষ একমত হয়। বাংলাদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারতের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ-ত্রিপুরার সীমান্তের সবরুম-রামগড় সীমান্তপথসহ অন্যান্য সীমান্তের হাটব্যবস্থা চালু করতে এবং বাংলাদেশ ও মিজোরামের মধ্যে দেমাগিরি-তেগামুখ স্থলপথ উন্মুক্ত করতে উভয় পক্ষ একমত পোষণ করে।
কূটনৈতিক মহলের ধারণা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির দিল্লি সফর সম্ভবত এ বছরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বহু প্রতীক্ষিত ভারত সফরের প্রস্তুতি মাত্র। দীপু মনি বলেছেন, অতি শিগগির তিনটি চুক্তি সই করা হবে—ফৌজদারি অপরাধমূলক বিষয়ে পারস্পরিক আইনি সহায়তা চুক্তি, সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের প্রত্যর্পণসংক্রান্ত চুক্তি ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস, সংঘবদ্ধ অপরাধ এবং অবৈধ মাদক পাচার প্রতিরোধসংক্রান্ত চুক্তি। এসব চুক্তি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় স্বাক্ষরিত হবে।
বাংলাদেশ ও ভারতের বর্তমান সম্পর্কের উষ্ণতা যে দীর্ঘস্থায়ী সুফল বয়ে আনবে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। আমাদের এ দুই দেশ বিগত সময়ের তিক্ততা ও অবিশ্বাস দূরে ফেলে যত দ্রুত জনগণের কল্যাণে দুই দেশের বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারবে ততই আমাদের মঙ্গল। আমরা বিশ্বাস করি, দুই দেশের বর্তমান নেতৃত্ব এ বিষয়ে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল ও তত্পর।
মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ: সংসদ সদস্য।ভারত ও মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত
সম্প্রতি ৭ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি ভারতে সরকারি সফরে যান। সফরকালে তিনি ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি, পানিসম্পদমন্ত্রী পবন কুমার বনসলের সঙ্গেও সাক্ষাত্ করেন। সফর শেষে একটি যৌথ প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। দুই দেশের সম্পর্কের বহুমাত্রিক ঐতিহ্যের আলোকে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন, দুই দেশের সাম্প্রতিক সাধারণ নির্বাচন এ সম্পর্ককে আরও প্রসারিত ও বিকশিত করার ঐতিহাসিক সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
দুই মন্ত্রী দুই দেশের বিভিন্ন অমীমাংসিত বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন। তাঁদের আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক সংযোগব্যবস্থা, ত্রিপুরার পালাতোনায় বিদ্যুত্ প্রকল্পের বৃহদাকার যন্ত্রাংশ নিয়ে যেতে আশুগঞ্জ নদীবন্দর ব্যবহার করতে দিতে বাংলাদেশের সম্মতি ইত্যাদি স্থান পায়। বাংলাদেশের সঙ্গে নেপাল ও ভুটানের সংযোগব্যবস্থা সুগম করতে ভারতও সম্মত হয়। উভয় পক্ষ বিদ্যুত্ খাতে সহযোগিতা বাড়াতে একমত হয়। ভারত দুই দেশের মধ্যে বিদ্যুত্ গ্রিড আন্তসংযোগের সম্ভাব্যতা পরীক্ষা করে দেখতে সম্মত হয় এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাংলাদেশকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ সরবরাহ করতেও রাজি হয়। এ ছাড়া তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহের সুষ্ঠু বণ্টনব্যবস্থা দ্রুত চূড়ান্ত করার বিষয়েও উভয় পক্ষ অভিন্ন মত পোষণ করে। এ ব্যাপারে দুই পক্ষ নিজ নিজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কারিগরি ও অন্যান্য দিক খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেয়। ভারত টিপাইমুখ বাঁধের বিষয়ে বাংলাদেশকে আশ্বাস দেয় যে এমন কিছু করা হবে না যাতে বাংলাদেশের কিছুমাত্র ক্ষতি হয়।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিদ্যমান সব প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া পুরোপুরি কার্যকর করতে উভয় পক্ষ একমত হয়। বাংলাদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারতের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ-ত্রিপুরার সীমান্তের সবরুম-রামগড় সীমান্তপথসহ অন্যান্য সীমান্তের হাটব্যবস্থা চালু করতে এবং বাংলাদেশ ও মিজোরামের মধ্যে দেমাগিরি-তেগামুখ স্থলপথ উন্মুক্ত করতে উভয় পক্ষ একমত পোষণ করে।
কূটনৈতিক মহলের ধারণা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির দিল্লি সফর সম্ভবত এ বছরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বহু প্রতীক্ষিত ভারত সফরের প্রস্তুতি মাত্র। দীপু মনি বলেছেন, অতি শিগগির তিনটি চুক্তি সই করা হবে—ফৌজদারি অপরাধমূলক বিষয়ে পারস্পরিক আইনি সহায়তা চুক্তি, সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের প্রত্যর্পণসংক্রান্ত চুক্তি ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস, সংঘবদ্ধ অপরাধ এবং অবৈধ মাদক পাচার প্রতিরোধসংক্রান্ত চুক্তি। এসব চুক্তি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় স্বাক্ষরিত হবে।
বাংলাদেশ ও ভারতের বর্তমান সম্পর্কের উষ্ণতা যে দীর্ঘস্থায়ী সুফল বয়ে আনবে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। আমাদের এ দুই দেশ বিগত সময়ের তিক্ততা ও অবিশ্বাস দূরে ফেলে যত দ্রুত জনগণের কল্যাণে দুই দেশের বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারবে ততই আমাদের মঙ্গল। আমরা বিশ্বাস করি, দুই দেশের বর্তমান নেতৃত্ব এ বিষয়ে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল ও তত্পর।
মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ: সংসদ সদস্য।ভারত ও মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত
No comments