স্মরণ মাদার তেরেসা-অসহায়ের বন্ধু- আশরাফুল হক
দ্য পুওর মাস্ট নো দ্যাট উই লাভ দেম (গরিবরা বুঝবে যে আমরা তাদের ভালোবাসি)— মাদার তেরেসা এ কথা বলতেন, বিশ্বাস করতেন এবং আজীবন চর্চা করতেন। জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি ব্যয় করেছেন আর্তমানবতার সেবায়। তিনি ছিলেন অসহায়দের সহায়। ভালোবাসাবঞ্চিতদের তিনি ভালোবাসতেন। সমাজে যারা অনাকাঙ্ক্ষিত, আশ্রয়হীন, তিনি তাঁদের আশ্রয়দাত্রী ছিলেন। তিনি ১৯৪৩ সালে দুর্ভিক্ষপীড়িত ও ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের ফলে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় ভারতীয় উপমহাদেশের দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এ ছাড়া ইথিওপিয়ার দুর্ভিক্ষপীড়িত, চেরনোবিল তেজস্ক্রিয়তায় আক্রান্ত, আর্মেনিয়ার ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর অন্যতম।
মাদার তেরেসা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় উদ্বাস্তুদের সাহায্য করেছেন, আবার স্বাধীনতার পর বহু বীরাঙ্গনা ও তাঁদের অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তানদের আশ্রয় দিয়েছেন। এমনি আরও অনেক কাজের সঙ্গে তিনি এবং তাঁর গড়া সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ‘মিশনারিজ অব চ্যারিটি’ যুক্ত ছিল। এসব কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বহু সম্মান ও পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এসবের মধ্যে ১৯৭৯ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার, ১৯৬২ সালে র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার, ১৯৭১ সালে পোপ জন পল শান্তি পুরস্কার এবং ১৯৮০ সালে প্রাপ্ত ভারত সরকারের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ভারতরত্ন উল্লেখযোগ্য।
আজ ৫ সেপ্টেম্বর তাঁর দ্বাদশ মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে আমরা তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারি তাঁরই কিছু অমর বাণী স্মরণ করে—
The fruit of silence is prayer
The Fruit of prayer is faith
The fruit of faith is love
The Fruit of love is service
The Fruit of service is peace
[নীরবতাই প্রার্থনা/ প্রার্থনাতেই বিশ্বাস জন্মায়/ নিবিড় বিশ্বাস ভালোবাসার উত্স/ গভীর ভালোবাসাই সেবার ভিত্তি/ সেবাতেই শান্তি]।
মাদার তেরেসা যে শুধু অর্থনৈতিক দারিদ্র্য নিয়ে ভাবতেন তা নয়, যাঁরা নানা কারণে মানসিক কষ্টে আছে, তাদের কষ্ট কীভাবে দূর করা যায় তা নিয়েও তিনি চিন্তা করতেন। বরং এ কাজটিকে তিনি বেশি কঠিন মনে করতেন। এ সম্পর্কে তিনি নোবেল বক্তৃতায় বলেন, ‘অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড, নট অনলি ইন দ্য পুওর কান্ট্রিজ, বাট আই ফাউন্ড দ্য পোভার্টি অব দ্য ওয়েস্ট সো মাচ মোর ডিফিকাল্ট টু রিমুভ. হোয়েন আই পিক আপ আ পারসন ফ্রম দ্য স্ট্রিট, হাংরি, আই গিভ হিম আ প্লেট অব রাইস, আ পিস অব ব্রেড, আই হ্যাভ স্যাটিসফাইড, আই হ্যাভ রিমুভ দ্যাট হাংগার. বাট আ পারসন দ্যাট ইজ শাট আউট, দ্যাট ফিল আনওয়ান্টেড, টেরিফাইড, দ্য পারসন দ্যাট হ্যাজ বিন থ্রোন আউট ফ্রম সোসাইটি—দ্যাট পোভার্টি ইজ সো হার্টেবল (Hurtable) অ্যান্ড সো মাচ, অ্যান্ড আই ফাইন্ড দ্যাট ভেরি ডিফিকাল্ট।’ [শুধু দরিদ্র দেশগুলোতে নয়, পশ্চিমা দেশগুলোর সমস্যা দূর করা আরও কঠিন। রাস্তার ক্ষুধার্ত একজনকে ডেকে এনে এক প্লেট ভাত, এক টুকরো রুটি দিয়ে আমি তার ক্ষুধা নিবারণ করে সন্তুষ্ট হতে পারি। কিন্তু সমাজ যাকে পরিত্যাগ করেছে, যে ভালোবাসাবঞ্চিত, সমাজে যে অনাকাঙ্ক্ষিত, যে ভীত, তার অবস্থা খুব করুণ। তার জন্য কিছু করা সত্যি দুরূহ।]
নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করতে গেলে মাদার তেরেসাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘কীভাবে আমরা বিশ্বশান্তির পথে অগ্রসর হতে পারি?’ জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘গো হোম অ্যান্ড লাভ ইওর ফ্যামিলি।’
এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেছিলেন, ‘প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই সৃষ্টিকর্তা আছেন। আমি যখন কোনো কুষ্ঠরোগীর ক্ষত পরিষ্কার করি, তখন অনুভব করি, আমি যেন স্রষ্টারই সেবা করছি। এর চেয়ে সুখময় অভিজ্ঞতা আর কী হতে পারে!’
এক নজরে মাদার তেরেসা
মাদার তেরেসা ১৯১০ সালের ২৬ আগস্ট মেসিডোনিয়ার এক আলবেনিয়ান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মিশনারিদের কাজ ও জীবনযাত্রা শৈশবেই তাঁকে আকর্ষণ করেছিল। ১২ বছর বয়সে তিনি এ বিষয়ে মনস্থ করেন এবং ১৮ বছর বয়সে বাড়ি ছেড়ে ‘সিস্টার অব লরেটো’তে যোগ দেন। সেই থেকে তাঁর মানবসেবার পথচলা শুরু। এর পর থেকে আর কখনো পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেননি। ১৯২৯ সালে তিনি ভারতের কলকাতায় আসেন। ১৯৫০ সালে ভ্যাটিকানের অনুমতি নিয়ে নিজেই গড়ে তোলেন ‘মিশনারিজ অব চ্যারিটি’। বর্তমান ১২৩টির মতো দেশে এই প্রতিষ্ঠানটির শাখা কার্যকর, এসব শাখায় চার হাজারের বেশি সিস্টার আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত। বাংলাদেশে এর ১৩টির মতো শাখা রয়েছে। মাদার তেরেসা ১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ভারতের কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। aurka.dhaka@gmail.com
মাদার তেরেসা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় উদ্বাস্তুদের সাহায্য করেছেন, আবার স্বাধীনতার পর বহু বীরাঙ্গনা ও তাঁদের অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তানদের আশ্রয় দিয়েছেন। এমনি আরও অনেক কাজের সঙ্গে তিনি এবং তাঁর গড়া সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ‘মিশনারিজ অব চ্যারিটি’ যুক্ত ছিল। এসব কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বহু সম্মান ও পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এসবের মধ্যে ১৯৭৯ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার, ১৯৬২ সালে র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার, ১৯৭১ সালে পোপ জন পল শান্তি পুরস্কার এবং ১৯৮০ সালে প্রাপ্ত ভারত সরকারের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ভারতরত্ন উল্লেখযোগ্য।
আজ ৫ সেপ্টেম্বর তাঁর দ্বাদশ মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে আমরা তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারি তাঁরই কিছু অমর বাণী স্মরণ করে—
The fruit of silence is prayer
The Fruit of prayer is faith
The fruit of faith is love
The Fruit of love is service
The Fruit of service is peace
[নীরবতাই প্রার্থনা/ প্রার্থনাতেই বিশ্বাস জন্মায়/ নিবিড় বিশ্বাস ভালোবাসার উত্স/ গভীর ভালোবাসাই সেবার ভিত্তি/ সেবাতেই শান্তি]।
মাদার তেরেসা যে শুধু অর্থনৈতিক দারিদ্র্য নিয়ে ভাবতেন তা নয়, যাঁরা নানা কারণে মানসিক কষ্টে আছে, তাদের কষ্ট কীভাবে দূর করা যায় তা নিয়েও তিনি চিন্তা করতেন। বরং এ কাজটিকে তিনি বেশি কঠিন মনে করতেন। এ সম্পর্কে তিনি নোবেল বক্তৃতায় বলেন, ‘অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড, নট অনলি ইন দ্য পুওর কান্ট্রিজ, বাট আই ফাউন্ড দ্য পোভার্টি অব দ্য ওয়েস্ট সো মাচ মোর ডিফিকাল্ট টু রিমুভ. হোয়েন আই পিক আপ আ পারসন ফ্রম দ্য স্ট্রিট, হাংরি, আই গিভ হিম আ প্লেট অব রাইস, আ পিস অব ব্রেড, আই হ্যাভ স্যাটিসফাইড, আই হ্যাভ রিমুভ দ্যাট হাংগার. বাট আ পারসন দ্যাট ইজ শাট আউট, দ্যাট ফিল আনওয়ান্টেড, টেরিফাইড, দ্য পারসন দ্যাট হ্যাজ বিন থ্রোন আউট ফ্রম সোসাইটি—দ্যাট পোভার্টি ইজ সো হার্টেবল (Hurtable) অ্যান্ড সো মাচ, অ্যান্ড আই ফাইন্ড দ্যাট ভেরি ডিফিকাল্ট।’ [শুধু দরিদ্র দেশগুলোতে নয়, পশ্চিমা দেশগুলোর সমস্যা দূর করা আরও কঠিন। রাস্তার ক্ষুধার্ত একজনকে ডেকে এনে এক প্লেট ভাত, এক টুকরো রুটি দিয়ে আমি তার ক্ষুধা নিবারণ করে সন্তুষ্ট হতে পারি। কিন্তু সমাজ যাকে পরিত্যাগ করেছে, যে ভালোবাসাবঞ্চিত, সমাজে যে অনাকাঙ্ক্ষিত, যে ভীত, তার অবস্থা খুব করুণ। তার জন্য কিছু করা সত্যি দুরূহ।]
নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করতে গেলে মাদার তেরেসাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘কীভাবে আমরা বিশ্বশান্তির পথে অগ্রসর হতে পারি?’ জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘গো হোম অ্যান্ড লাভ ইওর ফ্যামিলি।’
এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেছিলেন, ‘প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই সৃষ্টিকর্তা আছেন। আমি যখন কোনো কুষ্ঠরোগীর ক্ষত পরিষ্কার করি, তখন অনুভব করি, আমি যেন স্রষ্টারই সেবা করছি। এর চেয়ে সুখময় অভিজ্ঞতা আর কী হতে পারে!’
এক নজরে মাদার তেরেসা
মাদার তেরেসা ১৯১০ সালের ২৬ আগস্ট মেসিডোনিয়ার এক আলবেনিয়ান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মিশনারিদের কাজ ও জীবনযাত্রা শৈশবেই তাঁকে আকর্ষণ করেছিল। ১২ বছর বয়সে তিনি এ বিষয়ে মনস্থ করেন এবং ১৮ বছর বয়সে বাড়ি ছেড়ে ‘সিস্টার অব লরেটো’তে যোগ দেন। সেই থেকে তাঁর মানবসেবার পথচলা শুরু। এর পর থেকে আর কখনো পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেননি। ১৯২৯ সালে তিনি ভারতের কলকাতায় আসেন। ১৯৫০ সালে ভ্যাটিকানের অনুমতি নিয়ে নিজেই গড়ে তোলেন ‘মিশনারিজ অব চ্যারিটি’। বর্তমান ১২৩টির মতো দেশে এই প্রতিষ্ঠানটির শাখা কার্যকর, এসব শাখায় চার হাজারের বেশি সিস্টার আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত। বাংলাদেশে এর ১৩টির মতো শাখা রয়েছে। মাদার তেরেসা ১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ভারতের কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। aurka.dhaka@gmail.com
No comments