চীনের একদিন পরেই যুক্তরাষ্ট্র ফিলিপাইনের সামরিক মহড়া

তাইওয়ানের চারপাশে চীনের বড় রকমের সামরিক মহড়ার পর ফিলিপাইনের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে ১০ দিনের যৌথ সামরিক মহড়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ফিলিপাইনের কয়েক হাজার নৌসেনা। মঙ্গলবারের এই বার্ষিক ‘কামানডাগ’ বা ভেনোম মহড়া শুরু হয়েছে ফিলিপাইনের উত্তরাঞ্চলীয় উপকূলে প্রধানত লুজোন দ্বীপকে রক্ষার উদ্দেশ্যে। এই দ্বীপটি স্বশাসিত তাইওয়ান থেকে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার দূরে। তবে বিজ্ঞ মহল যুক্তরাষ্ট্র ও ফিলিপাইনের এই যৌথ মহড়াকে দেখছেন চীনের সোমবারের মহড়ার জবাব হিসেবে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। উল্লেখ্য, তাইওয়ানকে নিজেদের মূল ভূখণ্ড হিসেবে দাবি করে বেইজিং। একে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে প্রয়োজনে শক্তি ব্যবহারের হুঁশিয়ারি দিয়েছে চীন। অন্যদিকে তাইওয়ান নিজেদেরকে স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে দাবি করে। এর প্রেক্ষিতে চীনের চোখে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে কঠোর হুঁশিয়ারি’ হিসেবে সোমবারের মহড়াকে উল্লেখ করেছে তারা। দক্ষিণ চীন সাগরের বিভিন্ন অন্তরীপ এবং পানিসীমা নিয়ে চীনের সঙ্গে বিরোধ আছে ফিলিপাইনেরও। মাঝেমধ্যেই বেইজিং পুরো ওই অঞ্চলকে নিজেদের বলে দাবি করে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে উত্তেজনা, মুখোমুখি অবস্থান বিদ্যমান। তারই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র-ফিলিপাইন যৌথ সামরিক মহড়া শুরু করেছে। রাজধানী ম্যানিলায় মঙ্গলবার এই অভিযানের উদ্বোধন করেছেন ফিলিপাইনের মেরিন কোরের কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল আর্থুরো রোজাস। এ সময় তিনি বলেন, এই মহড়া বহু আগে থেকেই পরিকল্পনায় ছিল। এ অঞ্চলে যা ঘটছে তার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। জানানো হয়, মহড়ার প্রাথমিক লক্ষ্য হলো লুজোন দ্বীপের উত্তর উপকূলে সরাসরি গুলির মহড়া। অন্যান্য কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে ফিলিপাইনের লুজোন দ্বীপ ও তাইওয়ানের মধ্যবর্তী অঞ্চলে। ফিলিপাইনের মহড়া পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ভিসেন্টে ব্লাঙ্কো বলেন, এই মহড়া হলো উপকূলকে সুরক্ষার জন্য। আমরা তাইওয়ানের বিষয়ে লড়াই করার জন্য যৌথ মহড়া দিচ্ছি না। যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর প্রতিনিধি কর্নেল স্টুয়ার্ট গ্লেন বলেন, এই মহড়ার উদ্দেশ্য হলো যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেরকে যেকোনো সংকটে সহায়তা করার জন্য। বিরোধপূর্ণ দক্ষিণ চীন সাগরের দিকে মুখ করে থাকা ফিলিপাইনের পশ্চিমাঞ্চলীয় দ্বীপ পালাওয়ানেও মহড়ার কিছু অংশ পালিত হবে। দুই দেশের প্রতিটির কমপক্ষে এক হাজার সদস্য এই মহড়ায় অংশ নিচ্ছেন। এর বাইরে অস্ট্রেলিয়ান, বৃটিশ, জাপানিজ ও দক্ষিণ কোরিয়ার স্বল্প সংখ্যক সদস্য আছেন এই মিশনে। রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্রের বিরুদ্ধে সুরক্ষিত থাকার বিষয়ে পানি এবং মাটিতে কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে এতে। মঙ্গলবার এই ওয়ারগেম যখন শুরু হয়েছে তখন ফিলিপাইন সরকার ঘোষণা দিয়েছে যে, গত ১১ই অক্টোবর তাদের একটি বেসামরিক টহল বিষয়ক নৌযানে ধাক্কা দেয় চাইনিজ মেরিটাইম মিলিশিয়াদের নৌযান। তাদের ইচ্ছাকৃত এই ধাক্কায় ফিলিপাইনের নৌযানের অল্প ক্ষতি হয়েছে। ব্যুরো অব ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকুয়াটিক রিসোর্সেস বলেছে, এই সংঘর্ষ হয়েছে ফিলিপাইনের গ্যারিসন দ্বীপ বলে পরিচিত থিতু থেকে প্রায় ৯.৩ কিলোমিটার দূরে। এতে নাবিকরা অক্ষত আছেন। উল্লেখ্য, দক্ষিণ চীন সাগরের বিস্তৃতি বাড়ানোর জন্য বছরের পর বছর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে চীন। এক্ষেত্রে তারা আন্তর্জাতিক আইন বা রায়কে একপাশে ঠেলে রাখছে। সাম্প্রতিক সময়ে তারা ওই অঞ্চলে সামরিক ও কোস্টগার্ডের নৌযান মোতায়েন করেছে।
mzamin

No comments

Powered by Blogger.