শেখ হাসিনাসহ ৭০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাইবে প্রসিকিউশন by রাশিম মোল্লা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী  অপরাধের বিচার কার্যক্রম আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে। বুধবার ট্রাইব্যুনালের এজলাস কক্ষে বিচারপতিদের সংবর্ধনা দেয়া হবে। এরপর কাল বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা জুমদারের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ এজলাসে বসবেন। সেদিন থেকে বিচারকাজ শুরু হবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় যারা সরাসরি মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তাদের বিচার অগ্রাধিকার পাবে বলে জানা গেছে। ট্রাইব্যুনাল সূত্র জানায়, বিচারকার্যক্রমের প্রথম দিন বৃহস্পতিবারই সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ ৭০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চেয়ে আবেদন করবে প্রসিকিউশন। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) প্রধান কৌঁসুলি মো. তাজুল ইসলাম বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের রেওয়াজ অনুযায়ী নবনিযুক্ত বিচারপতিদের আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে বরণ করে নেয়া হয়। বুধবার আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ও অপর দুই সদস্যের বরণ অনুষ্ঠান হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মূল ভবনের সংস্কার কাজের পূর্বে বর্তমান অস্থায়ী কক্ষে বৃহস্পতিবার থেকে বিচার কার্যক্রম শুরু হবে।

সূত্র জানায়,  শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য যাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাওয়া হতে পারে তারা হলেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, সাবেক তথ্যমন্ত্রী এ আরাফাত ও পুলিশের পলাতক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। পুলিশের মধ্যে বিশেষ করে- ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার হারুন-আর-রশিদ, সাবেক যগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার ও এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ট্রাইব্যুনালে এরইমধ্যে ৪৫টি এবং তদন্ত সংস্থায় ১৬টি অভিযোগ জমা পড়েছে। সবমিলে ৬১টি অভিযোগ পড়েছে। বেশির ভাগ অভিযোগই আওয়ামী লীগ নেতা, সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও পুলিশের সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। সবচেয়ে বেশি অভিযোগ পড়েছে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। তিনি ইতিমধ্যে দেশত্যাগ করেছেন। অন্য অভিযুক্তদের একটি বড় অংশও এরইমধ্যে দেশত্যাগ করেছেন বলে বিভিন্ন মাধ্যমে খবর  মিলছে।

এর আগে সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারকে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান এবং বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও সাবেক  জেলা ও দায়রা জজ মো. মহিতুল হক এনাম চৌধুরীকে সদস্য হিসেবে নিয়োগ দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। নিয়োগের পর প্রথম কর্মদিবসে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদার। সঙ্গে ছিলেন ট্রাইব্যুনালের দুই সদস্য বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ  মো. মহিতুল হক এনাম চৌধুরী। এদিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তারা ট্রাইব্যুনালে আসেন। এ সময় ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার ও অন্য কর্মকর্তারা তাদের অভ্যর্থনা জানান। এরপর বিকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ভবনের সংস্কার কাজ পরিদর্শন করেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। ট্রাইব্যুনাল ভবনের বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেন, জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে নির্মমভাবে তৎকালীন ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠী নির্মমভাবে ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। সে সময় কমপক্ষে দেড় হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। হাজার হাজার মানুষের অঙ্গহানি, গুরুতর আহত ও চিরতরের জন্য বিকলাঙ্গ হয়ে গিয়েছে। আইন উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ কেন, এ উপমহাদেশের ইতিহাসে শান্তিকালীন সময়ে এত বড় গণহত্যার নজির কোথাও নাই। পৃথিবীর ইতিহাসেও এরূপ ঘটনা বিরল।  আসিফ নজরুল বলেন, এত বড় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার যেখানে হবে সেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সংস্কার কাজ আজ আমরা দ্বিতীয় বারের মতো পরিদর্শন করলাম। সংস্কার কাজ সুন্দর ও সঠিকভাবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে গণপূর্ত উপদেষ্টা সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামও মেরামত ও সংস্কার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে তদারকি করছেন। আমরা কাজের অগ্রগতি দেখতে আবারো এখানে আসবো।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকার্যক্রম নিয়ে অনেক অভিযোগ ছিল। এবার যেন এমন কোনো অভিযোগ না উঠে যেটার কারণে বিচার প্রশ্নবিদ্ধ হয়। তিনি বলেন, আদালতে কোনো দরখাস্ত দায়েরের ক্ষেত্রে প্রসিকিউশনকে সতর্ক থাকতে হবে। যেন ভাষাগত ও তথ্যগত কোনো ভুল না থাকে। মামলার সাক্ষীগণ যেন রিলেইবল ও নিরপেক্ষ হয়। যেহেতু এখন থেকে ট্রাইব্যুনালে ইলেকট্রিক ডিভাইস ব্যবহারের অনুমতি আছে, সেহেতু ব্যবহৃত চিত্রগুলো যাতে সঠিকভাবে উত্থাপিত হয়।
উল্লেখ্য, গত ৮ই অক্টোবর হাইকোর্টে ২৩ জন অতিরিক্ত বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়। তাদের মধ্যে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার ও বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ রয়েছেন।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.