ইসলামি বিপ্লবের ৪০ বছর: ইরানের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করতে শত্রুদের চেষ্টা অব্যাহত
ইসলামি বিপ্লবের পর গত ৪০ বছর ধরে ইরানে ইসলামি
বিপ্লবের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন করা এবং সারা বিশ্বে ইরান আতঙ্ক সৃষ্টিতে
শত্রুর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ইরানে ইসলামি বিপ্লবের শুরু থেকেই শত্রুরা
মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে।
তারা
নানা প্রচার চালিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তাহীনতা ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির
জন্য তেহরানকে দায়ী করার মাধ্যমে এ অঞ্চলে ইরানভীতি ছড়ানোর চেষ্টা করছে।
কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় ইরানের গঠনমূলক ভূমিকা ব্যাপক
প্রশংসিত হওয়ায় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইরানের অবস্থান ও গ্রহণযোগ্যতা
বৃদ্ধি পাওয়ায় শত্রুর অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র কার্যত ব্যর্থ ও ম্লান হয়ে
পড়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে ইতিবাচক ভূমিকার কারণে ইসলামি ইরানের অবস্থা দিনকে দিন
শক্তিশালী হয়ে উঠছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী
সম্প্রতি আযাদি স্টেডিয়ামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের হাজার হাজার সদস্যের এক
সমাবেশে বলেছেন, ইরানের শক্তির ভিত্তিগুলোকে ধ্বংস করে দেয়ার চেষ্টা করছে
সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইরানে নিরাপত্তা, সামাজিক
স্থিতিশীলতা, জাতীয় ঐক্য, ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ,
অব্যাহত উন্নতি, ক্ষেপণাস্ত্র ও সামরিক শক্তিতে বলিয়ান এবং মধ্যপ্রাচ্যে
ইরানের উপস্থিতি দেশটির শক্তির ভিত্তি যা কিনা শত্রুরা ধ্বংস করে দেয়ার
চেষ্টা করছে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী
ইসলামি বিপ্লবের আগে ইরান ছিল একটি দুর্বল
ও স্বৈরাচারী রাষ্ট্র। এ কারণে ভূ-কৌশলগত দিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থানে
থাকলেও আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে সাম্রাজ্যবাদী বৃহৎ শক্তিগুলোর নীতি
অনুসরণ করে চলত ইরানের তৎকালীন সরকার। কিন্তু ইসলামি বিপ্লবের পর
মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা বিশ্বে ইরানের মর্যাদা ও সম্মান বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে
এবং দেশটি এখন আঞ্চলিক বৃহৎ শক্তিতে পরিণত হয়েছে।
ইরানের
ইসলামি বিপ্লব গত ২০০ বছরের মধ্যে পশ্চিম এশিয়া তথা মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। মধ্যপ্রাচ্যে পাশ্চাত্যের প্রতিনিধি হিসেবে পরিচিত
দখলদার ইসরাইলের মানবতা বিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে ইরানের
বিপ্লবী সরকার। পাশ্চাত্যের মতো আগ্রাসন চালিয়ে বা আধিপত্য বিস্তারের
মাধ্যমে নয় বরং সংলাপ ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে কাজে লাগিয়ে ইরান মধ্যপ্রাচ্যে
প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে। শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইরানের পদক্ষেপ
ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। এ কারণে আমেরিকা হতাশ হয়ে পড়েছে এবং এ অঞ্চলে
ইরানের প্রভাব খর্ব করার জন্য ওয়াশিংটন এ পর্যন্ত কোটি কোটি ডলার ব্যয়
করেছে। ইরানের মর্যাদা ক্ষুন্ন করার জন্য মার্কিন কর্মকর্তারা অনবরত দেশটির
বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। মিউজিক
এতে
কোনো সন্দেহ নেই যে, ইরানের ইসলামি বিপ্লবী শাসন ব্যবস্থা অত্যন্ত মজবুত
ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। ভূ-কৌশলগত অবস্থান এবং বিরাজমান অর্থনৈতিক
সুযোগ-বিধাকে কাজে লাগিয়ে ইরান আজ এমন এক শক্তিশালী অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে
যা এ অঞ্চলের অন্য দেশের জন্যও আদর্শ বা মডেলে পরিণত হয়েছে। ইরানের ইসলামি
বিপ্লব এ অঞ্চলের নির্যাতিত জাতিগুলোর জন্য প্রেরণা হয়ে আছে এবং জুলুমের
বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস যুগিয়েছে। ইরানের প্রেরণায় মধ্যপ্রাচ্যে যেসব
প্রতিরোধ সংগঠন গড়ে উঠেছে তা এ অঞ্চলে আমেরিকা ও দখলদার ইসরাইলকে চিন্তিত
করে তুলেছে এবং ক্রমেই ওই দুই অপশক্তি কোণঠাসা হয়ে পড়ছে।
লেবাননের প্রতিরোধ সংগঠন হিজবুল্লাহ
ইরানের প্রধান নীতি হচ্ছে সারা বিশ্বে
শান্তি প্রতিষ্ঠা করা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্বাধীন নীতি
মেনে চলা। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বৈঠকে ইয়েমেনসহ এ অঞ্চলে বিরাজমান
নানা সংকট নিরসন এবং রোহিঙ্গা মুসলমানদের সমস্যা সমাধানেও ইরান ব্যাপক
চেষ্টা চালাচ্ছে। ইরান এমন এক শান্তিময় বিশ্ব গড়ার চেষ্টা করছে যেখানে
যুদ্ধ ও মারণাস্ত্র ব্যবহারের কোনো জায়গা থাকবে না।
ইসলামি
প্রজাতন্ত্র ইরান মনে করে গঠনমূলক সহযোগিতার মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদসহ যেকোনো
অভিন্ন হুমকি মোকাবেলা করা সম্ভব। ইরানের সংসদে শাহরুদ এলাকার প্রতিনিধি এ
ব্যাপারে বলেছেন, "বর্তমানে মুসলিম বিশ্ব ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদের শিকার। এ
অবস্থায় মুসলিম দেশগুলোর আন্ত:সংসদীয় ইউনিয়ন দায়েশসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী
গোষ্ঠীগুলোর মোকাবেলায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।"
যাইহোক,
গত এক দশকের ঘটনাবলীতে প্রমাণিত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে বিদেশি হস্তক্ষেপ,
দখলদারিত্ব ও আধিপত্যের অবসান না ঘটা পর্যন্ত এ অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তা
প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। ইরান সবসময় এটা বোঝানোর চেষ্টা করে আসছে এবং এখনো
বিশ্বাস করে একমাত্র এভাবেই ফিলিস্তিনসহ মুসলমানদের অন্যান্য সমস্যার
সমাধান এবং জাতিগুলোর অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। ইরান মনে করে, ফিলিস্তিন
শরণার্থীদের নিজ মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তন, ভাগ্য নির্ধারণে তাদের অধিকার
ফিরিয়ে দেয়া, সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং বায়তুল মোকাদ্দাসকে
রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমেই কেবল মধ্যপ্রাচ্যে
শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
ফিলিস্তিন শরণার্থীদের একটি ক্যাম্প
কিন্তু দখলদার ইসরাইল চায় বিশ্ববাসী এটা মেনে নিক যে ফিলিস্তিনিরা এমন
এক শরণার্থী যাদের কোনো জায়গা নেই, দেশ নেই এবং তারা প্রতিরোধকামিতাকে
সন্ত্রাসবাদে পরিণত করেছে।
ইরানের
সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী সম্প্রতি মুসলিম দেশগুলোর ১৩তম
আন্তঃসংসদীয় ইউনিয়নের সম্মেলনে বলেছেন, "এটা ভাবা উচিত হবে না দখলদার
ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে কোনো লাভ হবে না বরং আল্লার দেয়া
প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ইসরাইল বিরোধী প্রতিরোধ সংগ্রামীরাই বিজয়ী হবে। যেমনটি
প্রতিরোধ যোদ্ধারা আগের চেয়ে আরো বেশি সফলতা দেখাতে সক্ষম হয়েছে এবং তারা
ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠছে।"
ইরানের
সর্বোচ্চ নেতা ফিলিস্তিন সংকটকে তিনটি অংশে বিভক্ত করেছেন। অর্থাৎ প্রথমত,
ইসরাইলের দখলদারিত্ব, দ্বিতীয়ত, স্থানীয় লাখ লাখ অধিবাসীকে গণভাবে উৎখাত
বা বিতাড়ন এবং তৃতীয়ত, ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ও মানবতা বিরোধী অপরাধযজ্ঞ। এই
তিনটি ঘটনা ইসরাইলকে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জুলুমবাজে পরিণত করেছে। তাই মুসলিম
বিশ্বকে অবশ্যই দখলদার ইসরাইলের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।
যাইহোক,
ইসলামি ইরান বিশ্বকে এটা দেখিয়ে দিয়েছে, কোনো শক্তিই ইরানকে তার দায়িত্ব ও
লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থেকে সরাতে পারবে না। তাই, ইসলামি বিপ্লবের ৪০ বছর পরও
ইরান মজলুম ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন দেয়া অব্যাহত রেখেছে।
No comments