শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় প্রিয় নেতাকে বিদায়
সর্বস্তরের
মানুষের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন আওয়ামী লীগের সাবেক
সাধারণ সম্পাদক, জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। গতকাল সন্ধ্যায়
রাজধানীর বনানী কবরস্থানে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। এর আগে গতকাল
সকালে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের প্রথম নামাজে
জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, মন্ত্রিপরিষদের
সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, সর্বস্তরের নাগরিক, রাজনৈতিক
সহকর্মী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা, প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের
কর্মকর্তা, সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশ
নেন। নামাজে জানাজা শেষে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কফিন জাতীয় পতাকা দিয়ে ঢেকে
দেয়া হয় এবং ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়।
প্রথমে মরহুমের কফিনে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। এছাড়াও তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দলের পক্ষে দলীয় নেতৃবৃন্দের নিয়ে আরেকবার শ্রদ্ধা জানান।
এরপর জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া, ১৪ দলের পক্ষে মুখপাত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এবং জাতীয় পার্টি, জাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষে মরহুমের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এর আগে মরহুমের কর্মময় জীবন নিয়ে আলোকপাত করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এবং পরিবারের পক্ষে তার ছোট ভাই ড. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম। এ সময় মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনায় মোনাজাত করা হয়। নামাজে জানাজা শেষে তাকে হেলিকপ্টারে কিশোরগঞ্জে নেয়া হয়। মরহুমের দ্বিতীয় নামাজে জানাজা কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান এবং তৃতীয় নামাজে জানাজা ময়মনসিংহের আঞ্জুমান ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়।
জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত জানাজায় অংশ নেন হাজার হাজার মানুষ। মানুষের এই ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। সকাল সাড়ে ১০টার কিছু আগে সৈয়দ আশরাফের কফিন সংসদ চত্বরে আনার পর একাত্তরের এই মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। এ সময় বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। পরে আশরাফের মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। পরে জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে দলের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত সঙ্গী আশরাফের প্রতি শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সংসদ সচিবালয় জামে মসজিদের ইমাম আবু রায়হানের পরিচালনায় জানাজা ও মোনাজাত শেষে সৈয়দ আশরাফের মরদেহে শ্রদ্ধা জানায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। জানাজার আগে সৈয়দ আশরাফকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন আশরাফের ছোট ভাই সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
ভালোবাসার এমন মহাসমুদ্র কখনো দেখেনি কিশোরগঞ্জ: এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য! ঈদে যে শোলাকিয়া ময়দান মুখরিত হয় লাখো মুসল্লির পদভারে, সেই শোলাকিয়া ময়দান এবার মহাসমুদ্রের রূপ নিলো শোকাহত মানুষের ভিড়ে। চোখে অশ্রু আর নীরব বেদনা নিয়ে লাখো মানুষ অংশ নিলেন রাজনীতির কবি সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নামাজে জানাজায়। দুপুর সোয়া একটায় নামাজে জানাজা শুরু হলেও এর অনেক আগেই জনসমুদ্রে পরিণত হয় ঐতিহাসিক এই ঈদগাহ ময়দান। সারা বাংলার মানুষকে হয়তো কিশোরগঞ্জবাসী দেখাতে চেয়েছিলেন, সৈয়দ আশরাফের প্রতি ভালোবাসার নমুনা। প্রিয় নেতার জানাজার নামাজ তাই হয়ে যায় মহাসমুদ্র। ভালোবাসার এমন মহাসমুদ্র এর আগে কখনো দেখেনি কিশোরগঞ্জ। প্রিয় নেতাকে শেষ বিদায় জানানোর জন্য লাখো জনতার এমন ভিড় হয়তো বা কখনো দেখবেও না কিশোরগঞ্জ।
সকাল থেকেই দলমত নির্বিশেষে শোকাহত মানুষ আসতে শুরু করেন শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে। সৈয়দ আশরাফকে শেষবারের মতো একপলক দেখার জন্য মানুষ দাঁড়িয়ে ছিল রাস্তার দু’ধারে। হাতে ফুল আর চোখে অশ্রু নিয়ে ব্যাকুল প্রতীক্ষা প্রিয় নেতার জন্য!
মহাসমুদ্রে পরিণত হওয়ায় মাঠের আশেপাশের রাস্তায়, বাড়ির উঠানে পর্যন্ত জায়গা করে নিয়ে মানুষ জানাজায় অংশ নেন।
জানাজা শেষে মানুষ ছোটেন তার কফিনের দিকে। নিথর দেহে কফিনবন্দি শুদ্ধ রাজনীতির মানুষটির স্পর্শ নিতে, কফিনটাকে একটু ছুঁয়ে দিতে, তাতে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দিতে কি প্রাণান্ত চেষ্টাই না তারা করেছেন। কেউ পেরেছেন, কেউবা পারেননি। শেষ বিদায়ে এমন ভালোবাসা ক’জন রাজনীতিকের ভাগ্যেই বা জুটেছে!
কিশোরগঞ্জবাসী কাঁদছে নীরবে, তারা স্তব্ধ প্রিয় নেতার অকাল প্রয়াণে। কিশোরগঞ্জের মানুষের কাছে তিনি সততা ও স্বচ্ছতার প্রতীক। তাদের মতে একজন সৎ আদর্শবান নেতা নির্দিষ্ট কোনো দলের হয় না, তিনি সকলের শ্রদ্ধেয়।
বাবার প্রতি মানুষের এই ভালোবাসা দেখে শোলাকিয়া মাঠের মিম্বরের দোতলায় দাঁড়িয়ে নীরবে চোখের জল ফেলছিলেন একমাত্র সন্তান সৈয়দা রীমা ইসলাম। দেখলেন, বাবার প্রতি কিশোরগঞ্জের মানুষের ভালোবাসা। কিশোরগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষ যেন ভাগাভাগি করে নিতে চাইছেন তার পাথরচাপা কষ্টটা।
দুপুর ১২টা ৩৮ মিনিটে কফিনে শুয়ে প্রিয় কিশোরগঞ্জের মাটিকে স্পর্শ করেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তার মরদেহ বহনকারী হেলিকপ্টার নামে কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের আলোরমেলা এলাকার শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্টেডিয়ামে। সেখানে প্রশাসনের কর্মকর্তা ছাড়াও উপস্থিত হাজারো নেতাকর্মী তার মরদেহ গ্রহণ করেন।
পরে দুপুর ১টায় শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। গার্ড অব অনার শেষে পরিবারের পক্ষ থেকে মরহুমের জন্য মাগফিরাত কামনা করে দোয়া চান সৈয়দ আশরাফের ছোট ভাই ড. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম। এছাড়া দোয়া কামনা করে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। পরে ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা খলিলুর রহমান এর ইমামতিতে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে জানাজায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান পাপন, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মো. আফজাল হোসেন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সহকারী কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ুন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহজাহান, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমএ আফজল, জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ, বিপিএম প্রমুখসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।
জানাজা শেষে মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কিছুক্ষণের জন্য লাশ রাখা হয় ঈদগাহ মাঠেই। সেখানে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী, এরপর বিভিন্ন সংগঠন ও উপস্থিত সাধারণ মানুষ ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগের এই নেতার প্রতি। প্রিয় শহর ছেড়ে অন্তিমযাত্রায় সৈয়দ আশরাফ ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে দুপুর ২টা ৯ মিনিটে কিশোরগঞ্জ ছাড়েন।
ময়মনসিংহে জানাজা: হাজার হাজার মুসল্লির অংশগ্রহণে আওয়ামী লীগের দু’বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের জন্মস্থান ময়মনসিংহের আঞ্জুমান ঈদগাহ মাঠে তৃতীয় ও শেষ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার বিকাল ৩টার দিকে জানাজায় জনতার ঢল নামে। দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ এই জানাজায় অংশ নেয়। জানাজার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা ও প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ভাই ডা. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম।
জানাজায় ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল, ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন আহমেদ, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. ইকরামুল হক টিটু, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইউসুফ খান পাঠান, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত, ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার মাহমুদুল হাসান, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শাহীনুর রহমান, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রকিবুল ইসলাম রকিবসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন।
প্রথমে মরহুমের কফিনে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। এছাড়াও তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দলের পক্ষে দলীয় নেতৃবৃন্দের নিয়ে আরেকবার শ্রদ্ধা জানান।
এরপর জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া, ১৪ দলের পক্ষে মুখপাত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এবং জাতীয় পার্টি, জাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষে মরহুমের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এর আগে মরহুমের কর্মময় জীবন নিয়ে আলোকপাত করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এবং পরিবারের পক্ষে তার ছোট ভাই ড. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম। এ সময় মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনায় মোনাজাত করা হয়। নামাজে জানাজা শেষে তাকে হেলিকপ্টারে কিশোরগঞ্জে নেয়া হয়। মরহুমের দ্বিতীয় নামাজে জানাজা কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান এবং তৃতীয় নামাজে জানাজা ময়মনসিংহের আঞ্জুমান ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়।
জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত জানাজায় অংশ নেন হাজার হাজার মানুষ। মানুষের এই ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। সকাল সাড়ে ১০টার কিছু আগে সৈয়দ আশরাফের কফিন সংসদ চত্বরে আনার পর একাত্তরের এই মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। এ সময় বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। পরে আশরাফের মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। পরে জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে দলের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত সঙ্গী আশরাফের প্রতি শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সংসদ সচিবালয় জামে মসজিদের ইমাম আবু রায়হানের পরিচালনায় জানাজা ও মোনাজাত শেষে সৈয়দ আশরাফের মরদেহে শ্রদ্ধা জানায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। জানাজার আগে সৈয়দ আশরাফকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন আশরাফের ছোট ভাই সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
ভালোবাসার এমন মহাসমুদ্র কখনো দেখেনি কিশোরগঞ্জ: এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য! ঈদে যে শোলাকিয়া ময়দান মুখরিত হয় লাখো মুসল্লির পদভারে, সেই শোলাকিয়া ময়দান এবার মহাসমুদ্রের রূপ নিলো শোকাহত মানুষের ভিড়ে। চোখে অশ্রু আর নীরব বেদনা নিয়ে লাখো মানুষ অংশ নিলেন রাজনীতির কবি সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নামাজে জানাজায়। দুপুর সোয়া একটায় নামাজে জানাজা শুরু হলেও এর অনেক আগেই জনসমুদ্রে পরিণত হয় ঐতিহাসিক এই ঈদগাহ ময়দান। সারা বাংলার মানুষকে হয়তো কিশোরগঞ্জবাসী দেখাতে চেয়েছিলেন, সৈয়দ আশরাফের প্রতি ভালোবাসার নমুনা। প্রিয় নেতার জানাজার নামাজ তাই হয়ে যায় মহাসমুদ্র। ভালোবাসার এমন মহাসমুদ্র এর আগে কখনো দেখেনি কিশোরগঞ্জ। প্রিয় নেতাকে শেষ বিদায় জানানোর জন্য লাখো জনতার এমন ভিড় হয়তো বা কখনো দেখবেও না কিশোরগঞ্জ।
সকাল থেকেই দলমত নির্বিশেষে শোকাহত মানুষ আসতে শুরু করেন শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে। সৈয়দ আশরাফকে শেষবারের মতো একপলক দেখার জন্য মানুষ দাঁড়িয়ে ছিল রাস্তার দু’ধারে। হাতে ফুল আর চোখে অশ্রু নিয়ে ব্যাকুল প্রতীক্ষা প্রিয় নেতার জন্য!
মহাসমুদ্রে পরিণত হওয়ায় মাঠের আশেপাশের রাস্তায়, বাড়ির উঠানে পর্যন্ত জায়গা করে নিয়ে মানুষ জানাজায় অংশ নেন।
জানাজা শেষে মানুষ ছোটেন তার কফিনের দিকে। নিথর দেহে কফিনবন্দি শুদ্ধ রাজনীতির মানুষটির স্পর্শ নিতে, কফিনটাকে একটু ছুঁয়ে দিতে, তাতে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দিতে কি প্রাণান্ত চেষ্টাই না তারা করেছেন। কেউ পেরেছেন, কেউবা পারেননি। শেষ বিদায়ে এমন ভালোবাসা ক’জন রাজনীতিকের ভাগ্যেই বা জুটেছে!
কিশোরগঞ্জবাসী কাঁদছে নীরবে, তারা স্তব্ধ প্রিয় নেতার অকাল প্রয়াণে। কিশোরগঞ্জের মানুষের কাছে তিনি সততা ও স্বচ্ছতার প্রতীক। তাদের মতে একজন সৎ আদর্শবান নেতা নির্দিষ্ট কোনো দলের হয় না, তিনি সকলের শ্রদ্ধেয়।
বাবার প্রতি মানুষের এই ভালোবাসা দেখে শোলাকিয়া মাঠের মিম্বরের দোতলায় দাঁড়িয়ে নীরবে চোখের জল ফেলছিলেন একমাত্র সন্তান সৈয়দা রীমা ইসলাম। দেখলেন, বাবার প্রতি কিশোরগঞ্জের মানুষের ভালোবাসা। কিশোরগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষ যেন ভাগাভাগি করে নিতে চাইছেন তার পাথরচাপা কষ্টটা।
দুপুর ১২টা ৩৮ মিনিটে কফিনে শুয়ে প্রিয় কিশোরগঞ্জের মাটিকে স্পর্শ করেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তার মরদেহ বহনকারী হেলিকপ্টার নামে কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের আলোরমেলা এলাকার শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্টেডিয়ামে। সেখানে প্রশাসনের কর্মকর্তা ছাড়াও উপস্থিত হাজারো নেতাকর্মী তার মরদেহ গ্রহণ করেন।
পরে দুপুর ১টায় শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। গার্ড অব অনার শেষে পরিবারের পক্ষ থেকে মরহুমের জন্য মাগফিরাত কামনা করে দোয়া চান সৈয়দ আশরাফের ছোট ভাই ড. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম। এছাড়া দোয়া কামনা করে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। পরে ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা খলিলুর রহমান এর ইমামতিতে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে জানাজায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান পাপন, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মো. আফজাল হোসেন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সহকারী কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ুন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহজাহান, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমএ আফজল, জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ, বিপিএম প্রমুখসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।
জানাজা শেষে মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কিছুক্ষণের জন্য লাশ রাখা হয় ঈদগাহ মাঠেই। সেখানে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী, এরপর বিভিন্ন সংগঠন ও উপস্থিত সাধারণ মানুষ ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগের এই নেতার প্রতি। প্রিয় শহর ছেড়ে অন্তিমযাত্রায় সৈয়দ আশরাফ ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে দুপুর ২টা ৯ মিনিটে কিশোরগঞ্জ ছাড়েন।
ময়মনসিংহে জানাজা: হাজার হাজার মুসল্লির অংশগ্রহণে আওয়ামী লীগের দু’বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের জন্মস্থান ময়মনসিংহের আঞ্জুমান ঈদগাহ মাঠে তৃতীয় ও শেষ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার বিকাল ৩টার দিকে জানাজায় জনতার ঢল নামে। দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ এই জানাজায় অংশ নেয়। জানাজার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা ও প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ভাই ডা. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম।
জানাজায় ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল, ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন আহমেদ, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. ইকরামুল হক টিটু, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইউসুফ খান পাঠান, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত, ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার মাহমুদুল হাসান, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শাহীনুর রহমান, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রকিবুল ইসলাম রকিবসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন।
No comments