‘বাংলাদেশের অর্থনীতির নিশ্চয়তা নেই’ -বিশ্বব্যাংক
বাংলাদেশের অর্থনীতি চলমান পরিস্থিতিতে স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকলেও নিশ্চয়তা নেই বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। অনিশ্চয়তার প্রধান উদ্বেগ হিসেবে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে সক্ষমতা ও রাজনীতির অমীমাংসিত ইস্যুকে দেখছে সংস্থাটি। বিশ্বব্যাংক মনে করে, ২০১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি ৬.৫ শতাংশের বেশি হবে না। গতকাল আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ শীর্ষক প্রতিবেদন উপস্থাপন অনুষ্ঠানের প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানানো হয়। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের আগামীর অর্থনীতির জন্য আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ অনেকগুলো চ্যালেঞ্জের কথা জানিয়েছে সংস্থাটি। চালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে দেশের অর্থনীতি অনেক কুয়াশাচ্ছন্ন, কিছুই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, শ্রমশক্তি রপ্তানিতে ভাটা ও চীনের প্রবৃদ্ধির হ্রাস। এ জন্য বাংলাদেশ সরকার চলতি অর্থবছরে বাজেটে ৭ শতাংশ মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার আশা করলেও তা ৬.৫ শতাংশের বেশি অর্জিত হবে না বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের সার্বিক প্রবৃদ্ধি ভাল, মূল্যস্ফীতি কমেছে ও রিজার্ভও বেড়েছে। তবে আন্তর্জাতিক অর্থনীতির ঝুঁকির চিত্র পাল্টানোর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়ছে না। এছাড়া ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগে স্থবিরতা এখনও কাটেনি। রাজস্ব আদায়ে টার্গেট পূরণও চ্যালেঞ্জিং। বাংলাদেশের অর্থনীতির উদ্বেগের কারণ জানিয়ে ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ঘাটতি আছে। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ভাল না। গত বছর রেমিটেন্স ভাল থাকলেও চলতি বছরে তা কমার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। কারণ গত কয়েক বছর থেকে বিদেশে শ্রমিক অবস্থান করা শ্রমিকদের প্রবৃদ্ধি কমেছে। তিনি জানান, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকলেও স্থিতিশীলতা নেই। তেমনি দেশ এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অর্থনীতির বেলাতেও স্থিরতা নেই। আগে ঝুঁকি বিবেচনা করা হতো অভ্যন্তরীণ ইস্যু নিয়ে। কিন্তু এখন আন্তর্জাতিক বৈশিষ্ট্য-গতিপ্রকৃতি বিবেচনায় নিলে দেখা যাচ্ছে সেখানেও অনিশ্চয়তা বেড়েছে। অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ঝুঁকিতে পড়বে বলেও মন্তব্য করেন জাহিদ।
সরকারের বিনিয়োগনীতির সমালোচনা করে জাহিদ হাসান বলেন, দেশে সরকারি বিনিয়োগ বেড়ে ৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। সরকারের বিনিয়োগ কাগজে কলমে যতটা দেখা যায়। মাঠ পর্যায়ে ততটা দেখা যায় না। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ ৬.৫ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, ভিয়েতনামের চেয়ে ভাল। তবে চায়না, ভারত ও শ্রীলঙ্কার থেকে পিছিয়ে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত পণ্য রপ্তানি সুবিধা কল্পে ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ চুক্তির (টিপিপি) ফলে বাংলাদেশ মধ্য মেয়াদি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে মনে করে বিশ্বব্যাংক। কেননা, বাংলাদেশের তৈরী পোশাক খাতের প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনাম আগে ৮ শতাংশ শুল্ক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানি করতো। এখন করবে বিনা শুল্কে, যা রপ্তানি প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের জন্য একটি মধ্য মেয়াদি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীক ব্যয়, রাজনীতিবিদদের প্রতি মানুষের আস্থা, অবকাঠামো ও বন্দর সুবিধাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এমনিতেই ভিয়েতনাম বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। এই চুক্তি তাদেরকে আরও এগিয়ে রাখবে।
বিশ্বব্যাংকের এ অর্থনীতিবিদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ৬.২ শতাংশ মূল্যস্ফীতি নির্ধারণ করেছে তা অর্জন সম্ভব। তবে আন্তর্জাতিক মূল্যস্ফীতির চেয়ে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি বেশি। যেমন, চলতি বছরের ৬ মাসে বাংলাদেশে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতি বেশি ছিল। এছাড়া চিকিৎসা পণ্য ও পরিবহন খরচও বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, এডিবি’র হিসাবে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৬.৭ শতাংশ। আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকের হিসাবে ৬.৫। সরকারি লক্ষ্যমাত্রা ৭ শতাংশ, এখন বিতর্ক হতে পারে। তবে এ বিতর্কে শুধু উত্তাপ ছড়াবে, সেখানে ইতিবাচক কোন ফলাফল আসবে না বলেই মনে করি।
জাহিদ হোসেন বলেন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার পথে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অনিশ্চয়তা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করে, বিনিয়োগ বাড়ানোর দিকে বাংলাদেশ সরকারকে নজর দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ ঘাটতি সম্পর্কে জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগে স্থবিরতা কাটছে না। এজন্য শুধু মাত্র রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা প্রধান বাধা এটা বলা যাবে না। মূল সমস্যা বাংলাদেশের ব্যবসায়ীক পরিবেশে। তিনি বলেন, কোন বিনিয়োগকারী তাদের উৎপাদিত পণ্য নির্বিঘ্নে বিশ্ব বাজারে রপ্তানি করার নিশ্চয়তা পেলে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে। তিনি বলেন, এছাড়া পরিবহন
ব্যবস্থা, বন্দর ও মৌলিক সেবার নিশ্চয়তার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের দুর্বলতা রয়েছে, যা বিনিয়োগের অন্তরায়। তবে এ থেকে উত্তরণে অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন ও ইকোনমিক জোন করার বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু এগুলোর অগ্রগতি খুবই কম।
বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে কোন পণ্যের দাম বাড়লে বাংলাদেশে খুব দ্রুত বেড়ে যায়, কিন্তু দাম কমলে তার প্রতিফলন ঘটতে সময় লাগে। দাম যে হারে বাড়ে সে অনুসারে পণ্যের দাম কমে না। এর পিছনে বাজার প্রতিযোগী না থাকা বা সিন্ডিকেটকে দায়ী করেন তিনি। এছাড়া মজুতেরও একটি সম্পর্ক আছে। এ জন্য ভোক্তা সতর্কতা ও সরকারের নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
আর্থিক খাত নিয়ে রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, সম্প্রতি সময়ে মোট ঋণের তুলনায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। ব্যাংকিং খাতে প্রাতিষ্ঠানিক সমস্যা এখনও রয়েছে। ব্যবসার ক্ষেত্রে ঋণের প্রাপ্যতার সমস্যা এখনও রয়েছে। শেয়ার বাজারে কিছুটা ভাল করলেও প্রত্যাশার চেয়ে কম।
বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর ইউহানেস জাট বলেছেন, মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে হলে বাংলাদেশকে কিছু সংস্কার কাজ করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক কমিটমেন্ট। বিশ্বব্যাংক বিশ্বাস করে এশিয়ার অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক দেশ হওয়ার যোগ্যতা আছে বাংলাদেশের। তবে এক্ষেত্রে কিছু সংস্কার করতে হবে। দেশের অর্থনীতিতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের অভাব রয়েছে। আর পুঁজিবাজার এখনো অস্থিতিশীল। কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে এই জায়গাগুলোতে উন্নতি করতে হবে। ইউহানেস জাট বলেন, ভূ-রাজনৈতিক অস্থতিরতা বাড়ছে, ডলার শক্তিশালী হচ্ছে। এ ছাড়া চীনের অর্থনৈতিক গতি শ্লথ ও আর্থিক বাজার অস্থির। এই কারণে বাংলাদেশ তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে না।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতি ছিলেন বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ইউহানেস জাট, কমিউনিকেশন অফিসার মেহরীন এ মাহবুব প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের আগামীর অর্থনীতির জন্য আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ অনেকগুলো চ্যালেঞ্জের কথা জানিয়েছে সংস্থাটি। চালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে দেশের অর্থনীতি অনেক কুয়াশাচ্ছন্ন, কিছুই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, শ্রমশক্তি রপ্তানিতে ভাটা ও চীনের প্রবৃদ্ধির হ্রাস। এ জন্য বাংলাদেশ সরকার চলতি অর্থবছরে বাজেটে ৭ শতাংশ মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার আশা করলেও তা ৬.৫ শতাংশের বেশি অর্জিত হবে না বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের সার্বিক প্রবৃদ্ধি ভাল, মূল্যস্ফীতি কমেছে ও রিজার্ভও বেড়েছে। তবে আন্তর্জাতিক অর্থনীতির ঝুঁকির চিত্র পাল্টানোর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়ছে না। এছাড়া ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগে স্থবিরতা এখনও কাটেনি। রাজস্ব আদায়ে টার্গেট পূরণও চ্যালেঞ্জিং। বাংলাদেশের অর্থনীতির উদ্বেগের কারণ জানিয়ে ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ঘাটতি আছে। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ভাল না। গত বছর রেমিটেন্স ভাল থাকলেও চলতি বছরে তা কমার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। কারণ গত কয়েক বছর থেকে বিদেশে শ্রমিক অবস্থান করা শ্রমিকদের প্রবৃদ্ধি কমেছে। তিনি জানান, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকলেও স্থিতিশীলতা নেই। তেমনি দেশ এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অর্থনীতির বেলাতেও স্থিরতা নেই। আগে ঝুঁকি বিবেচনা করা হতো অভ্যন্তরীণ ইস্যু নিয়ে। কিন্তু এখন আন্তর্জাতিক বৈশিষ্ট্য-গতিপ্রকৃতি বিবেচনায় নিলে দেখা যাচ্ছে সেখানেও অনিশ্চয়তা বেড়েছে। অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ঝুঁকিতে পড়বে বলেও মন্তব্য করেন জাহিদ।
সরকারের বিনিয়োগনীতির সমালোচনা করে জাহিদ হাসান বলেন, দেশে সরকারি বিনিয়োগ বেড়ে ৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। সরকারের বিনিয়োগ কাগজে কলমে যতটা দেখা যায়। মাঠ পর্যায়ে ততটা দেখা যায় না। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ ৬.৫ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, ভিয়েতনামের চেয়ে ভাল। তবে চায়না, ভারত ও শ্রীলঙ্কার থেকে পিছিয়ে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত পণ্য রপ্তানি সুবিধা কল্পে ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ চুক্তির (টিপিপি) ফলে বাংলাদেশ মধ্য মেয়াদি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে মনে করে বিশ্বব্যাংক। কেননা, বাংলাদেশের তৈরী পোশাক খাতের প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনাম আগে ৮ শতাংশ শুল্ক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানি করতো। এখন করবে বিনা শুল্কে, যা রপ্তানি প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের জন্য একটি মধ্য মেয়াদি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীক ব্যয়, রাজনীতিবিদদের প্রতি মানুষের আস্থা, অবকাঠামো ও বন্দর সুবিধাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এমনিতেই ভিয়েতনাম বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। এই চুক্তি তাদেরকে আরও এগিয়ে রাখবে।
বিশ্বব্যাংকের এ অর্থনীতিবিদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ৬.২ শতাংশ মূল্যস্ফীতি নির্ধারণ করেছে তা অর্জন সম্ভব। তবে আন্তর্জাতিক মূল্যস্ফীতির চেয়ে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি বেশি। যেমন, চলতি বছরের ৬ মাসে বাংলাদেশে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতি বেশি ছিল। এছাড়া চিকিৎসা পণ্য ও পরিবহন খরচও বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, এডিবি’র হিসাবে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৬.৭ শতাংশ। আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকের হিসাবে ৬.৫। সরকারি লক্ষ্যমাত্রা ৭ শতাংশ, এখন বিতর্ক হতে পারে। তবে এ বিতর্কে শুধু উত্তাপ ছড়াবে, সেখানে ইতিবাচক কোন ফলাফল আসবে না বলেই মনে করি।
জাহিদ হোসেন বলেন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার পথে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অনিশ্চয়তা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করে, বিনিয়োগ বাড়ানোর দিকে বাংলাদেশ সরকারকে নজর দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ ঘাটতি সম্পর্কে জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগে স্থবিরতা কাটছে না। এজন্য শুধু মাত্র রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা প্রধান বাধা এটা বলা যাবে না। মূল সমস্যা বাংলাদেশের ব্যবসায়ীক পরিবেশে। তিনি বলেন, কোন বিনিয়োগকারী তাদের উৎপাদিত পণ্য নির্বিঘ্নে বিশ্ব বাজারে রপ্তানি করার নিশ্চয়তা পেলে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে। তিনি বলেন, এছাড়া পরিবহন
ব্যবস্থা, বন্দর ও মৌলিক সেবার নিশ্চয়তার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের দুর্বলতা রয়েছে, যা বিনিয়োগের অন্তরায়। তবে এ থেকে উত্তরণে অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন ও ইকোনমিক জোন করার বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু এগুলোর অগ্রগতি খুবই কম।
বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে কোন পণ্যের দাম বাড়লে বাংলাদেশে খুব দ্রুত বেড়ে যায়, কিন্তু দাম কমলে তার প্রতিফলন ঘটতে সময় লাগে। দাম যে হারে বাড়ে সে অনুসারে পণ্যের দাম কমে না। এর পিছনে বাজার প্রতিযোগী না থাকা বা সিন্ডিকেটকে দায়ী করেন তিনি। এছাড়া মজুতেরও একটি সম্পর্ক আছে। এ জন্য ভোক্তা সতর্কতা ও সরকারের নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
আর্থিক খাত নিয়ে রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, সম্প্রতি সময়ে মোট ঋণের তুলনায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। ব্যাংকিং খাতে প্রাতিষ্ঠানিক সমস্যা এখনও রয়েছে। ব্যবসার ক্ষেত্রে ঋণের প্রাপ্যতার সমস্যা এখনও রয়েছে। শেয়ার বাজারে কিছুটা ভাল করলেও প্রত্যাশার চেয়ে কম।
বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর ইউহানেস জাট বলেছেন, মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে হলে বাংলাদেশকে কিছু সংস্কার কাজ করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক কমিটমেন্ট। বিশ্বব্যাংক বিশ্বাস করে এশিয়ার অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক দেশ হওয়ার যোগ্যতা আছে বাংলাদেশের। তবে এক্ষেত্রে কিছু সংস্কার করতে হবে। দেশের অর্থনীতিতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের অভাব রয়েছে। আর পুঁজিবাজার এখনো অস্থিতিশীল। কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে এই জায়গাগুলোতে উন্নতি করতে হবে। ইউহানেস জাট বলেন, ভূ-রাজনৈতিক অস্থতিরতা বাড়ছে, ডলার শক্তিশালী হচ্ছে। এ ছাড়া চীনের অর্থনৈতিক গতি শ্লথ ও আর্থিক বাজার অস্থির। এই কারণে বাংলাদেশ তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে না।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতি ছিলেন বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ইউহানেস জাট, কমিউনিকেশন অফিসার মেহরীন এ মাহবুব প্রমুখ।
No comments