চৌকিদারের ম্যাজিক, না নবীনবরণ? by অনিম আরাফাত
ভারতের
লোকসভা নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। নির্বাচনী প্রচারণায় ছড়িয়েছে
উত্তাপ। চলছে তরজা। দেশজুড়ে শুরু হয়ে গেছে ভোটের দামামা। দিল্লি দখলের আসল
লড়াইটা বিজেপি আর কংগ্রেসের মধ্যেই হবে। ভোটে কে জিততে চলেছে তা নিয়ে চলছে
হাজারো হিসাব-নিকেশ। ভারতের জনগণ কি আবারো মোদি ম্যাজিকে বস হবে, নাকি
লোকসভা নির্বাচনের মধ্যদিয়ে রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীদের নবীন বরণ
হতে চলেছে?
ভারতকে বলা হয় পৃথিবীর সব থেকে বড় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। তাই দেশটির নির্বাচনের দিকে আলাদা নজর রয়েছে সবার।
১১ই এপ্রিল থেকে শুরু হতে চলা এ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন প্রায় ৯০ কোটি ভারতীয় যা যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার ৩ গুণ। ১৮ বছর পেরুলেই দেশটিতে ভোট দেয়ার উপযুক্ত হিসেবে গণ্য হয়। ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রায় ৮৩ কোটি মানুষ ভোটের উপযুক্ত ছিলেন। সে নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন প্রায় ৫৫ কোটি মানুষ। এতে ভূমিধস জয় পেয়েছিল বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেও পুনরায় জয়ের জন্য লড়ছে দলটি।
বিজেপির প্রধান জাতীয় প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে থাকা কংগ্রেস। ভারতীয় রাজনীতির সব থেকে প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য তিনি। তার পিতা ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজিব গান্ধী। তার দাদি ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। ইন্দিরা গান্ধীর পিতা জওহরলাল নেহরু হচ্ছেন স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সব থেকে বেশি দিন দেশের নিয়ন্ত্রণ ছিল কংগ্রেসের হাতেই। তাই চারদিকে নরেন্দ্র মোদির জয়জয়কারের মধ্যেও কংগ্রেসকে ছোট করে দেখার উপায় নেই। দেশটির রাজনীতিতে দলটির প্রভাব উপেক্ষা করা অসম্ভব।
তবে ভারতের এবারের নির্বাচনে কে জিততে চলেছে তা নিয়ে হওয়া সব জরিপেই অনেক এগিয়ে আছেন নরেন্দ্র মোদি। মোদি ম্যাজিকে ভারতীয়রা এতটাই মুগ্ধ যে তাকে হারাতে কার্যত সকল বিরোধী দল এখন একজোট হতে বাধ্য হয়েছে। তাই আসন্ন নির্বাচনটা আসলে মোদি বনাম সকলের। লোকসভায় মোট আসন ৫৪৩টি যার প্রায় সব আসনেই বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে একাই লড়ছে বিজেপি। এরকম একজনের বিরুদ্ধে সকলে মিলে লড়াই এর আগে ভারত কখনো দেখেনি। খুব অল্প সময়েই সর্বভারতীয় দল হয়ে উঠেছে বিজেপি। তাই তাকে থামাতে প্রয়োজন আরেক সর্বভারতীয় দল কংগ্রেসের। কিন্তু দলটির বর্তমান অবস্থাকে অতীতের তুলনায় নাজুকই বলতে হবে। গত নির্বাচনে কংগ্রেস জিতেছিল মাত্র ৪৪টি আসনে! তাদের অবস্থা এতই করুণ হয়েছিল যে লোকসভার বিরোধী নেতার আনুষ্ঠানিক মর্যাদাটুকু তাদেরকে হারাতে হয়েছিল।
এত সবের পরেও বিজেপির কাঁধে নানা অনিশ্চয়তা ভর করেছে। গত নির্বাচনে জয় লাভ করা ৯টি আসনের উপনির্বাচনে হারতে হয়েছে তাদের। বিধানসভার উপনির্বাচনের ১৬টিতে বিজেপির জয় মাত্র ২টিতে। যে দুটিতে জিতেছে তাতেও ব্যবধান অতি সামান্য। আর কংগ্রেসের মনে শক্তি যোগাচ্ছে এই ফলই। বিজেপির বিরুদ্ধে রয়েছে গুরুতর সব অভিযোগও। বেকারত্ব বৃদ্ধি, কৃষক আন্দোলন, সামপ্রদায়িকতা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা, শিল্পে স্থবিরতার মতো শত শত ব্যর্থতার জন্য মোদি সরকারকে অভিযুক্ত করেছে কংগ্রেস। একই সঙ্গে উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতেও মোদিবিরোধী মনোভাব জোরদার হয়েছে। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের কারণে আদিবাসী অধ্যুষিত এ রাজ্যগুলো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। ইতিমধ্যে ভারতের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা হরণের চেষ্টায় উদ্বিগ্ন দেশটির সুশীল সমাজের একাংশ। সব মিলে নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে একটা স্রোত সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখছে বিরোধীরা।
তাই ৭ ধাপে সম্পন্ন হতে চলা এই নির্বাচনে জিততে মোদি ব্যবহার করছেন তার সেরা অস্ত্রটিকে। এবারও হিন্দুত্ববাদকে সামনে রেখে এগিয়ে চলতে চাইছে বিজেপি। সঙ্গে রয়েছে দেশে পাকিস্তানবিরোধী রব তোলা। কট্টর জাতীয়তাবাদকে ব্যবহার করে বিজেপি বিরোধীদের আখ্যা দেয়া হচ্ছে পাকিস্তানপন্থী হিসেবে। বিজেপিকে তুলে ধরা হচ্ছে ভারতের জন্য অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে। ইতিমধ্যে নরেন্দ্র মোদিসহ বিজেপি নেতারা নিজেদের নামের আগে চৌকিদার যুক্ত করেছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে জনসভা করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জ্বালাময়ী বক্তব্য রাখছেন মোদি। কথায় কথায় লড়াইয়ের আভাস তার। কথা একটাই, পাকিস্তানকে দমাতে বিজেপির বিকল্প নেই।
অপরদিকে রাহুল গান্ধীকে নিয়ে বলা হচ্ছে নির্বাচনী যুদ্ধ শুরুর আগেই হেরে গেছেন তিনি। প্রশ্ন উঠছে মোদিকে হঠাতে তার যোগ্যতা নিয়েও। মোদি যেমন সর্বভারতীয় নেতা হয়ে উঠেছেন সেক্ষেত্রে রাহুল গান্ধী অনেকটাই ব্যর্থ। নির্বাচনে তিনি লড়ছেন কেরালার একটি আসন থেকে। এটি এমন একটি আসন যেখানে বিজেপি সাংগঠনিকভাবেই দুর্বল। নির্বাচনের আগেই তিনি নিরাপদে থাকতে চাইছেন। সমালোচকরা বলছেন, যেখানে রাহুল গান্ধী নিজেই বিজেপির মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছেন, সেখানে তার দল কংগ্রেস কীভাবে বিজেপির এই জয়জয়কার থামাবে?
মোদি বিরোধীদের জন্য বিশাল এক ভোট ব্যাংক হচ্ছেন দেশটির মুসলমান ভোটাররা। এর আগে ভারতে মুসলিমরা কংগ্রেসকে ভোট দিলেও এবার এক তরফা মুসলিম ভোট পাচ্ছে না কংগ্রেস। তবে সে ভোট হিন্দুত্ববাদী বিজেপিরও পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। দেশটির মুসলিম ভোটাররা অবশ্যই বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দেবেন। মোদ্দা কথা হলো, নিজেদের আসনে যেই বিজেপির বিরুদ্ধে দাঁড়াবে, সে যে দলেরই হোক না, মুসলিমরা তাকেই ভোট দেবে। মুসলিমদের প্রভাবশালী সংগঠন অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড, জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ ও দিল্লি শাহী মসজিদের ইমাম কেউই এখন পর্যন্ত আসন্ন নির্বাচনে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করেননি। তবে মোদির বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থানটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তারা প্রকাশ করছেনই। ভারতীয় মুসলমানদের সর্ববৃহৎ সামাজিক সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মাহমুদ মাদানী বলেছেন, এবারের নির্বাচনে সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার্থেই লড়াই করবেন তারা। দেশটিতে সামপ্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টি করেছে কারা সেটি স্পষ্ট। আঙুল সরাসরি বিজেপির দিকেই। মুসলিমদের ভোট তাই বিজেপির পক্ষে না গেলেও সেই ভোট কার্যত ভাগ হয়ে একেক দলে পড়বে বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা।
সব মিলে দিল্লি দখলের লড়াইয়ে কে সফল হচ্ছে, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে ২৩শে মে পর্যন্ত। ১১ এপ্রিল থেকে শুরু হতে চলা নির্বাচন ৭ ধাপে চলবে ১৯শে মে পর্যন্ত। আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা হবে ২৩শে মে। সেদিনই জানা যাবে মোদি ম্যাজিকে কি এখনো মুগ্ধ ভারতীয়রা, নাকি তারা এই সাম্প্রদায়িক শক্তিকে ছুড়ে ফেলে রাহুল গান্ধীকে বরণের জন্য প্রস্তুত। মোদির ভাষায়, টাইটানিক জাহাজের মতো ডুবে যাচ্ছে কংগ্রেস। তাই প্রশ্ন উঠেছে, গত নির্বাচনের লজ্জা কাটিয়ে কি কংগ্রেসের আবার উত্থান হবে, নাকি মোদির ভাষ্যমতে দলটির ভরাডুবি আসন্ন? সকল প্রশ্নের উত্তর পেতে অপেক্ষা করতে হবে ২৩শে মে পর্যন্ত।
ভারতকে বলা হয় পৃথিবীর সব থেকে বড় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। তাই দেশটির নির্বাচনের দিকে আলাদা নজর রয়েছে সবার।
১১ই এপ্রিল থেকে শুরু হতে চলা এ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন প্রায় ৯০ কোটি ভারতীয় যা যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার ৩ গুণ। ১৮ বছর পেরুলেই দেশটিতে ভোট দেয়ার উপযুক্ত হিসেবে গণ্য হয়। ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রায় ৮৩ কোটি মানুষ ভোটের উপযুক্ত ছিলেন। সে নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন প্রায় ৫৫ কোটি মানুষ। এতে ভূমিধস জয় পেয়েছিল বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেও পুনরায় জয়ের জন্য লড়ছে দলটি।
বিজেপির প্রধান জাতীয় প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে থাকা কংগ্রেস। ভারতীয় রাজনীতির সব থেকে প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য তিনি। তার পিতা ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজিব গান্ধী। তার দাদি ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। ইন্দিরা গান্ধীর পিতা জওহরলাল নেহরু হচ্ছেন স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সব থেকে বেশি দিন দেশের নিয়ন্ত্রণ ছিল কংগ্রেসের হাতেই। তাই চারদিকে নরেন্দ্র মোদির জয়জয়কারের মধ্যেও কংগ্রেসকে ছোট করে দেখার উপায় নেই। দেশটির রাজনীতিতে দলটির প্রভাব উপেক্ষা করা অসম্ভব।
তবে ভারতের এবারের নির্বাচনে কে জিততে চলেছে তা নিয়ে হওয়া সব জরিপেই অনেক এগিয়ে আছেন নরেন্দ্র মোদি। মোদি ম্যাজিকে ভারতীয়রা এতটাই মুগ্ধ যে তাকে হারাতে কার্যত সকল বিরোধী দল এখন একজোট হতে বাধ্য হয়েছে। তাই আসন্ন নির্বাচনটা আসলে মোদি বনাম সকলের। লোকসভায় মোট আসন ৫৪৩টি যার প্রায় সব আসনেই বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে একাই লড়ছে বিজেপি। এরকম একজনের বিরুদ্ধে সকলে মিলে লড়াই এর আগে ভারত কখনো দেখেনি। খুব অল্প সময়েই সর্বভারতীয় দল হয়ে উঠেছে বিজেপি। তাই তাকে থামাতে প্রয়োজন আরেক সর্বভারতীয় দল কংগ্রেসের। কিন্তু দলটির বর্তমান অবস্থাকে অতীতের তুলনায় নাজুকই বলতে হবে। গত নির্বাচনে কংগ্রেস জিতেছিল মাত্র ৪৪টি আসনে! তাদের অবস্থা এতই করুণ হয়েছিল যে লোকসভার বিরোধী নেতার আনুষ্ঠানিক মর্যাদাটুকু তাদেরকে হারাতে হয়েছিল।
এত সবের পরেও বিজেপির কাঁধে নানা অনিশ্চয়তা ভর করেছে। গত নির্বাচনে জয় লাভ করা ৯টি আসনের উপনির্বাচনে হারতে হয়েছে তাদের। বিধানসভার উপনির্বাচনের ১৬টিতে বিজেপির জয় মাত্র ২টিতে। যে দুটিতে জিতেছে তাতেও ব্যবধান অতি সামান্য। আর কংগ্রেসের মনে শক্তি যোগাচ্ছে এই ফলই। বিজেপির বিরুদ্ধে রয়েছে গুরুতর সব অভিযোগও। বেকারত্ব বৃদ্ধি, কৃষক আন্দোলন, সামপ্রদায়িকতা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা, শিল্পে স্থবিরতার মতো শত শত ব্যর্থতার জন্য মোদি সরকারকে অভিযুক্ত করেছে কংগ্রেস। একই সঙ্গে উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতেও মোদিবিরোধী মনোভাব জোরদার হয়েছে। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের কারণে আদিবাসী অধ্যুষিত এ রাজ্যগুলো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। ইতিমধ্যে ভারতের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা হরণের চেষ্টায় উদ্বিগ্ন দেশটির সুশীল সমাজের একাংশ। সব মিলে নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে একটা স্রোত সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখছে বিরোধীরা।
তাই ৭ ধাপে সম্পন্ন হতে চলা এই নির্বাচনে জিততে মোদি ব্যবহার করছেন তার সেরা অস্ত্রটিকে। এবারও হিন্দুত্ববাদকে সামনে রেখে এগিয়ে চলতে চাইছে বিজেপি। সঙ্গে রয়েছে দেশে পাকিস্তানবিরোধী রব তোলা। কট্টর জাতীয়তাবাদকে ব্যবহার করে বিজেপি বিরোধীদের আখ্যা দেয়া হচ্ছে পাকিস্তানপন্থী হিসেবে। বিজেপিকে তুলে ধরা হচ্ছে ভারতের জন্য অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে। ইতিমধ্যে নরেন্দ্র মোদিসহ বিজেপি নেতারা নিজেদের নামের আগে চৌকিদার যুক্ত করেছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে জনসভা করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জ্বালাময়ী বক্তব্য রাখছেন মোদি। কথায় কথায় লড়াইয়ের আভাস তার। কথা একটাই, পাকিস্তানকে দমাতে বিজেপির বিকল্প নেই।
অপরদিকে রাহুল গান্ধীকে নিয়ে বলা হচ্ছে নির্বাচনী যুদ্ধ শুরুর আগেই হেরে গেছেন তিনি। প্রশ্ন উঠছে মোদিকে হঠাতে তার যোগ্যতা নিয়েও। মোদি যেমন সর্বভারতীয় নেতা হয়ে উঠেছেন সেক্ষেত্রে রাহুল গান্ধী অনেকটাই ব্যর্থ। নির্বাচনে তিনি লড়ছেন কেরালার একটি আসন থেকে। এটি এমন একটি আসন যেখানে বিজেপি সাংগঠনিকভাবেই দুর্বল। নির্বাচনের আগেই তিনি নিরাপদে থাকতে চাইছেন। সমালোচকরা বলছেন, যেখানে রাহুল গান্ধী নিজেই বিজেপির মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছেন, সেখানে তার দল কংগ্রেস কীভাবে বিজেপির এই জয়জয়কার থামাবে?
মোদি বিরোধীদের জন্য বিশাল এক ভোট ব্যাংক হচ্ছেন দেশটির মুসলমান ভোটাররা। এর আগে ভারতে মুসলিমরা কংগ্রেসকে ভোট দিলেও এবার এক তরফা মুসলিম ভোট পাচ্ছে না কংগ্রেস। তবে সে ভোট হিন্দুত্ববাদী বিজেপিরও পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। দেশটির মুসলিম ভোটাররা অবশ্যই বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দেবেন। মোদ্দা কথা হলো, নিজেদের আসনে যেই বিজেপির বিরুদ্ধে দাঁড়াবে, সে যে দলেরই হোক না, মুসলিমরা তাকেই ভোট দেবে। মুসলিমদের প্রভাবশালী সংগঠন অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড, জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ ও দিল্লি শাহী মসজিদের ইমাম কেউই এখন পর্যন্ত আসন্ন নির্বাচনে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করেননি। তবে মোদির বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থানটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তারা প্রকাশ করছেনই। ভারতীয় মুসলমানদের সর্ববৃহৎ সামাজিক সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মাহমুদ মাদানী বলেছেন, এবারের নির্বাচনে সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার্থেই লড়াই করবেন তারা। দেশটিতে সামপ্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টি করেছে কারা সেটি স্পষ্ট। আঙুল সরাসরি বিজেপির দিকেই। মুসলিমদের ভোট তাই বিজেপির পক্ষে না গেলেও সেই ভোট কার্যত ভাগ হয়ে একেক দলে পড়বে বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা।
সব মিলে দিল্লি দখলের লড়াইয়ে কে সফল হচ্ছে, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে ২৩শে মে পর্যন্ত। ১১ এপ্রিল থেকে শুরু হতে চলা নির্বাচন ৭ ধাপে চলবে ১৯শে মে পর্যন্ত। আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা হবে ২৩শে মে। সেদিনই জানা যাবে মোদি ম্যাজিকে কি এখনো মুগ্ধ ভারতীয়রা, নাকি তারা এই সাম্প্রদায়িক শক্তিকে ছুড়ে ফেলে রাহুল গান্ধীকে বরণের জন্য প্রস্তুত। মোদির ভাষায়, টাইটানিক জাহাজের মতো ডুবে যাচ্ছে কংগ্রেস। তাই প্রশ্ন উঠেছে, গত নির্বাচনের লজ্জা কাটিয়ে কি কংগ্রেসের আবার উত্থান হবে, নাকি মোদির ভাষ্যমতে দলটির ভরাডুবি আসন্ন? সকল প্রশ্নের উত্তর পেতে অপেক্ষা করতে হবে ২৩শে মে পর্যন্ত।
No comments