খাবারের অভাবে মেয়েদের বাল্যবিবাহ দিতে বাধ্য হচ্ছে রোহিঙ্গারা
নিজের
দেশে নিধন-নিপীড়নের শিকার হয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে রোহিঙ্গারা আশ্রয়
নিয়েছে বাংলাদেশে। প্রাণ বাঁচিয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে খুঁজে
পেয়েছে জীবনের নিরাপত্তা। তবে, তাদের সংকট কতোটা লাঘব হয়েছে? আশ্রয়কেন্দ্রে
দু’বেলা খেয়ে-পরে বেঁচে থাকা রোহিঙ্গারা মুখোমুখি হচ্ছে এক ভিন্ন ধরনের
বাস্তবতার। খাবারের অভাবে রোহিঙ্গারা তাদের অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের বিয়ে
দিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। লন্ডনের গার্ডিয়ানের সমীক্ষায় উঠে এসেছে এমনই
চিত্র। জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের ‘রেশন’ পরিকল্পনা অনুযায়ী,
আশ্রয়কেন্দ্রের প্রতিটি রোহিঙ্গা পরিবারকে প্রতি পনেরো দিন অন্তর ২৫ কেজি
চাল দেয়া হয়।
এ ক্ষেত্রে প্রতি পরিবারে গড়ে পাঁচ জন সদস্য হিসাব করে ওই পরিমাণ চাল দেয়া হয়। তবে, অনেক পরিবারেই সদস্য সংখ্যা পাঁচের বেশি। এই ক্ষেত্রে বাড়তি সদস্যদের জন্য কোনো বাড়তি বরাদ্দ নেই। এমনিতেই, সাধারণ বরাদ্দে ৫ জনের একটি পরিবারের খাদ্য সংস্থান দুরূহ। তার উপরে বাড়তি সদস্যবিশিষ্ট পরিবারের জন্য ওই পরিমাণ চালে ক্ষুধা মেটানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই অনেক ক্ষেত্রেই রোহিঙ্গারা শুধুমাত্র খাবারের সংস্থান করতে পরিবারের অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। এতে অন্য একটি পরিবার গড়ে উঠে। ফলে সাহায্যপ্রাপ্ত চালের পরিমাণ বাড়ে। এভাবে তারা দু’বেলা পেটপুরে খেয়ে বাঁচতে পারে! এ প্রসঙ্গে ১৪ বছর বয়সী রোহিঙ্গা কিশোরী আনোয়ারা জানায়, যখন আমাকে বিয়ে দেয়া হয়, আমি সংসার সমপর্কে কিছুই বুঝতাম না। মিয়ানমারে আমাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার পর আমরা বাংলাদেশে পালিয়ে আসি। এখানে এসে আমাকে বিয়ে দিয়ে দেয় আমার পরিবার। ক’দিন আগেই মা হয়েছে এই কিশোরী। অন্য এক রোহিঙ্গা মরিয়ম জানায়, বাংলাদেশে পালিয়ে আসার তিন মাসের মধ্যে আমাকে বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়। আমি বিবাহোত্তর শারীরিক সম্বন্ধ সমপর্কে কিছুই জানতাম না। যখন আমার বর এসে আমাকে ছোঁয়, আমি ভয়ে শিউরে উঠি। আমার ইচ্ছে করছিলো আমি ছুটে পালাই, কিন্তু আমি জানতাম বিয়ে না করে পরিবারের ওপর ভর করে থাকলে আমাকে খাওয়াতে কষ্ট হবে পরিবারের। তাই বিয়ে করি বাধ্য হয়ে। তবে উপায় থাকলে আমি এখন বিয়ে করতাম না। জীবনটাকে আরো উপভোগ করতাম। লেখাপড়া করতাম। জীবন সমপর্কে একটা পরিপূর্ণ ধারণা নেয়ার পরই বিয়ে করার ইচ্ছে ছিলো আমার। তবে, যেহেতু বিয়ে করতেই হয়েছে, আমি একজন ভালো স্ত্রী হওয়ার চেষ্টা করবো। ছয় মেয়ে এবং এক ছেলের জনক রোহিঙ্গা মোহাম্মদ। তিনি আক্ষেপের স্বরে বলেন, যদিও আমার জানা মতে মেয়েদের অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে দেয়া উচিত না, কিন্তু আমার কিছু করার নেই। তাদের বিয়ে দিয়ে দিলেই তারা ভালো থাকবে। প্রতিবেলা পেট ভরে খেতে পারবে। তিনি একেক করে সব মেয়েকেই বিয়ে দিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানান।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অত্যাচারে বাধ্য হয়ে দেশত্যাগ করা রোহিঙ্গারা তাবৎ বিশ্বের সহানুভূতি পাচ্ছে। তবে বাস্তবতার কিছু রুঢ় খড়গ থেকে তাদের রেহাই মিলছে না। এমনিতেই সেনাবাহিনীর নিধনযজ্ঞের সময় রোহিঙ্গা বালিকা এবং কিশোরীরা নির্যাতনের বড় লক্ষ্যবস্তু ছিলো। প্রায় প্রতিদিনই নারী এবং কিশোরী রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চালানো গণধর্ষণের নতুন নতুন খবর পাওয়া যাচ্ছে। সে অত্যাচার থেকে হয়তো দেশ ছেড়ে পালিয়ে বেঁচেছে রোহিঙ্গারা। তবে, পালিয়ে আসার পর শুধু খাবারের অভাব পূরণ করতে যখন বাল্যবিবাহে বাধ্য হচ্ছে রোহিঙ্গারা, তখন কিন্তু আর বলার উপায় থাকছে না যে, তারা পালিয়ে মুক্তি পেয়েছে।
রোহিঙ্গাদের খাদ্যের ঘাটতির কথা জানানো হলে ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের একজন কর্মকর্তা বলেন, আটজনের বেশি সদস্যবিশিষ্ট পরিবারের জন্য খাবারের বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। তবে খাবারের অভাবে রোহিঙ্গারা বাল্যবিয়েতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে- এমন সম্ভাবনা থাকার কথা নয় বলে প্রথমদিকে দাবি করেন সংস্থাটির একজন মুখপাত্র। পরে অবশ্য এই বিষয়ে পরিচালিত সমীক্ষা এবং তথ্য-উপাত্ত জানতে পেরে তিনি মত পাল্টান। বলেন, বিষয়টি গভীরভাবে এবং গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
(দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত নিবন্ধের সংক্ষিপ্ত অনুবাদ করেছেন নাজমুস সাদাত পারভেজ)
এ ক্ষেত্রে প্রতি পরিবারে গড়ে পাঁচ জন সদস্য হিসাব করে ওই পরিমাণ চাল দেয়া হয়। তবে, অনেক পরিবারেই সদস্য সংখ্যা পাঁচের বেশি। এই ক্ষেত্রে বাড়তি সদস্যদের জন্য কোনো বাড়তি বরাদ্দ নেই। এমনিতেই, সাধারণ বরাদ্দে ৫ জনের একটি পরিবারের খাদ্য সংস্থান দুরূহ। তার উপরে বাড়তি সদস্যবিশিষ্ট পরিবারের জন্য ওই পরিমাণ চালে ক্ষুধা মেটানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই অনেক ক্ষেত্রেই রোহিঙ্গারা শুধুমাত্র খাবারের সংস্থান করতে পরিবারের অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। এতে অন্য একটি পরিবার গড়ে উঠে। ফলে সাহায্যপ্রাপ্ত চালের পরিমাণ বাড়ে। এভাবে তারা দু’বেলা পেটপুরে খেয়ে বাঁচতে পারে! এ প্রসঙ্গে ১৪ বছর বয়সী রোহিঙ্গা কিশোরী আনোয়ারা জানায়, যখন আমাকে বিয়ে দেয়া হয়, আমি সংসার সমপর্কে কিছুই বুঝতাম না। মিয়ানমারে আমাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার পর আমরা বাংলাদেশে পালিয়ে আসি। এখানে এসে আমাকে বিয়ে দিয়ে দেয় আমার পরিবার। ক’দিন আগেই মা হয়েছে এই কিশোরী। অন্য এক রোহিঙ্গা মরিয়ম জানায়, বাংলাদেশে পালিয়ে আসার তিন মাসের মধ্যে আমাকে বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়। আমি বিবাহোত্তর শারীরিক সম্বন্ধ সমপর্কে কিছুই জানতাম না। যখন আমার বর এসে আমাকে ছোঁয়, আমি ভয়ে শিউরে উঠি। আমার ইচ্ছে করছিলো আমি ছুটে পালাই, কিন্তু আমি জানতাম বিয়ে না করে পরিবারের ওপর ভর করে থাকলে আমাকে খাওয়াতে কষ্ট হবে পরিবারের। তাই বিয়ে করি বাধ্য হয়ে। তবে উপায় থাকলে আমি এখন বিয়ে করতাম না। জীবনটাকে আরো উপভোগ করতাম। লেখাপড়া করতাম। জীবন সমপর্কে একটা পরিপূর্ণ ধারণা নেয়ার পরই বিয়ে করার ইচ্ছে ছিলো আমার। তবে, যেহেতু বিয়ে করতেই হয়েছে, আমি একজন ভালো স্ত্রী হওয়ার চেষ্টা করবো। ছয় মেয়ে এবং এক ছেলের জনক রোহিঙ্গা মোহাম্মদ। তিনি আক্ষেপের স্বরে বলেন, যদিও আমার জানা মতে মেয়েদের অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে দেয়া উচিত না, কিন্তু আমার কিছু করার নেই। তাদের বিয়ে দিয়ে দিলেই তারা ভালো থাকবে। প্রতিবেলা পেট ভরে খেতে পারবে। তিনি একেক করে সব মেয়েকেই বিয়ে দিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানান।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অত্যাচারে বাধ্য হয়ে দেশত্যাগ করা রোহিঙ্গারা তাবৎ বিশ্বের সহানুভূতি পাচ্ছে। তবে বাস্তবতার কিছু রুঢ় খড়গ থেকে তাদের রেহাই মিলছে না। এমনিতেই সেনাবাহিনীর নিধনযজ্ঞের সময় রোহিঙ্গা বালিকা এবং কিশোরীরা নির্যাতনের বড় লক্ষ্যবস্তু ছিলো। প্রায় প্রতিদিনই নারী এবং কিশোরী রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চালানো গণধর্ষণের নতুন নতুন খবর পাওয়া যাচ্ছে। সে অত্যাচার থেকে হয়তো দেশ ছেড়ে পালিয়ে বেঁচেছে রোহিঙ্গারা। তবে, পালিয়ে আসার পর শুধু খাবারের অভাব পূরণ করতে যখন বাল্যবিবাহে বাধ্য হচ্ছে রোহিঙ্গারা, তখন কিন্তু আর বলার উপায় থাকছে না যে, তারা পালিয়ে মুক্তি পেয়েছে।
রোহিঙ্গাদের খাদ্যের ঘাটতির কথা জানানো হলে ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের একজন কর্মকর্তা বলেন, আটজনের বেশি সদস্যবিশিষ্ট পরিবারের জন্য খাবারের বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। তবে খাবারের অভাবে রোহিঙ্গারা বাল্যবিয়েতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে- এমন সম্ভাবনা থাকার কথা নয় বলে প্রথমদিকে দাবি করেন সংস্থাটির একজন মুখপাত্র। পরে অবশ্য এই বিষয়ে পরিচালিত সমীক্ষা এবং তথ্য-উপাত্ত জানতে পেরে তিনি মত পাল্টান। বলেন, বিষয়টি গভীরভাবে এবং গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
(দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত নিবন্ধের সংক্ষিপ্ত অনুবাদ করেছেন নাজমুস সাদাত পারভেজ)
No comments