জয়ে অগণন তারার আলো by পবিত্র কুন্ডু
অমাবস্যার
রাতে আকাশে তারা ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশ যখন প্রতিপক্ষকে আরেকটি
ধবলধোলাইয়ের হাতছোঁয়া দূরত্বে এসে দাঁড়িয়েছে, গ্যালারিতে জ্বলে উঠল
অগণন তারা। সেটি আবার কী? মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে এটিই যে বাংলাদেশের
কালকের জয়ের সবচেয়ে রহস্যময় এবং রোমাঞ্চকর গল্প।
মুস্তাফিজুর রহমান তৃতীয় স্পেলে বোলিং করতে এসে ফিরিয়ে দিলেন সিকান্দার রাজা ও জঙ্গুয়েকে। হ্যাটট্রিকটা ঠেকিয়ে দিলেন ক্রেমার। তবে মুস্তাফিজ ৫ উইকেট ঠিকই পেলেন। পরের ওভারে পানিয়াঙ্গারা তাঁর পঞ্চম শিকার। আর তারপরই অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা ঠিক করলেন, তাঁর এই পেসরত্নকে অন্য রকম একটু সম্মান জানাবেন। স্লিপ বেষ্টনীতে দাঁড় করালেন আট ফিল্ডারকে, স্লিপে পাঁচজন, গালিতে তিন। এই অভাবিত দৃশ্যকে কে না চাইবে সেলফোনে বন্দী করে রাখতে!
হাজার মুঠোফোনের আলো জ্বলে উঠল গ্যালারিতে। তাদের মুঠোফোনগুলো আলোকিতই হয়ে রইল। মুস্তাফিজকে ‘বঞ্চিত’ করে জিম্বাবুয়ে ২১৫ রানে শেষ হলো সানির বাঁহাতি স্পিনে। তবু আলো ছড়িয়েই গেল কিছু মুঠোফোন। এই জয়োৎসবের মুহূর্তটি যে বাংলাদেশের ক্রিকেটে আলোরও উৎসব। প্রতিপক্ষকে ১১তম বারের মতো ধবলধোলাই করল বাংলাদেশ, জিম্বাবুয়েকে তৃতীয়বারের মতো। জিম্বাবুয়ের মতো হতদরিদ্র হয়ে পড়া এক ক্রিকেটশক্তিকে ধবলধোলাই করে মনের মধ্যে উপচে পড়া আনন্দের জলকল্লোল হয়তো অনুভব করা যায় না, তবু তো বাংলাদেশ জয়ের রথে ভেসে চলা এক ক্রিকেট অভিযাত্রী!
সেই অভিযাত্রায় আবারও নেতৃত্বে মাশরাফি। প্রতিটি ম্যাচেই সামনে থেকে অনুপ্রেরণাদায়ী নেতৃত্ব। কাল তাই বাংলাদেশ দলটা যেমন জনতার মুঠোফোনের আলোয় ধরা থাকল, তেমনি মাশরাফির নামটাও বাঁধাই হয়ে গেল সোনার হরফে। সেই সোনা খাঁটি ২৪ ক্যারেটের। মাশরাফি ওয়ানডেতে যেন দিগ্বিজয়ী বীর। অস্ট্রেলিয়া আসেনি বলে জিম্বাবুয়েকে ডেকে আনা হয়েছে এই সিরিজে। মাশরাফির দলের মধ্যে সবাই হয়তো চাইছিলেন অস্ট্রেলীয় মানসিকতার জাগরণ। সেটি হয়তো পুরোপুরি হয়নি, তবে কালকের শেষ মুহূর্তটিই জাগিয়ে তুলল ওই ভাবনাটিকে। প্রতিপক্ষকে কোনো সুযোগ দিয়ো না, একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দাও।
যদিও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জিততে ইদানীং সেই মানসিকতার খুব একটা প্রয়োজনই পড়ছে না। সেলুকাস, এ এক বিচিত্র দল। আপনি হয়তো আগেই জেনে বসে থাকেন, এরা বাংলাদেশের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যকে তাড়া করতে গিয়ে মোটামুটি ছুটবে। হাতে যখন ৬টি উইকেট থাকবে, মনে হবে এরা জিতে যেতে পারে, কিন্তু শেষ মুহূর্তে লেজেগোবরে করে ফেলবে। এ ম্যাচেও তাই হলো, শেষ ৯০ বলে ৯৫ রান করতে হবে, হাতে ৬ উইকেট, সেখান থেকেই ভেঙে পড়ল তারা। এখানে ওয়ালারকে আউট করে ধাক্কাটা দিলেন আল আমিন। তার আগে শন উইলিয়ামসের সঙ্গে ৮০ রানের জুটি গড়ার পর বিদায় নিয়েছেন বিপদ ছড়াতে থাকা চিগুম্বুরা। শেষ পর্যন্ত মুস্তাফিজের তোপে ধ্বংস হয়ে গেছে জিম্বাবুয়ে। ৮ রানে পড়েছে শেষ ৪ উইকেট।
বিজয়ের মুহূর্তে দলকে সম্মানের একুশ তোপধ্বনিতেই বরণ করে নেওয়া উচিত। ক্রিকেট-জনতা তা নিয়েছেও। তারপরও বড় রান না করতে পারায় মাশরাফির দলেরই অতৃপ্তি থেকে যাবে।
নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসের ১৪তম শত রানের ওপেনিং জুটি। ২৯.৩ ওভারে তামিম ও ইমরুল করে ফেললেন ১৪৭। এমন আলোকিত মঞ্চে কত বড় হতে পারত বাংলাদেশের ইনিংস? আপনার কল্পনাশক্তিকে লাগাম পরানো হলেও বলত, তিন শ রানের কম কিছুতেই নয়। শেষ পর্যন্ত হলো ২৭৬। কেউ কাউকে ছাপিয়ে যাবেন না পণ করে দুই ওপেনারেরই ৭৩। নিজেকে ফিরে পেয়ে মাহমুদউল্লাহ আগ্রাসন ও কবজিসৃজিত শিল্প থেকে করলেন ৫২। রানআউট হওয়ার আগে মাশরাফির সঙ্গে সপ্তম উইকেট জুটিতে তাঁর ৩৭ রানই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটি। সম্ভাবনা জাগিয়েও কেন বড় হলো না স্কোর, সেটি তো বুঝতেই পারছেন।
এর আগে এই মাহমুদউল্লাহর বিপক্ষেই একটি রানআউট সিদ্ধান্ত নিয়ে স্টেডিয়াম দেখেছে মস্ত একটি নাটক। সিকান্দার রাজার থ্রো স্টাম্পে লাগার আগেই বেল ফেলে দিয়েছেন উইকেটকিপার চাকাভা। আম্পায়ার আলিম দার অবশ্য আঙুল তুলে দিয়েছেন। রানআউট ভেবে হাঁটাও শুরু করে দেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু সীমানাদড়ির কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন ড্রেসিংরুমে থাকা সতীর্থদের হাত ইশারায়। দাঁড়িয়ে থাকেন তো দাঁড়িয়েই থাকেন। টিভি আম্পায়ার এনামুল হক রিপ্লে দেখছেন তো দেখছেনই। মিনিট দশেক পর নটআউট ঘোষণা করা হয় মাহমুদউল্লাহকে।
ততক্ষণে অধৈর্য জিম্বাবুয়ে দল চরম অসন্তুষ্ট, সিদ্ধান্তে অসম্মত। তাদের খেলায় ফেরাতে দুই আম্পায়ার তো বটেই, বাংলাদেশের অধিনায়ককেও এগিয়ে আসতে হয়। এরপর মাহমুদউল্লাহ করেছেন আরও ২০ রান, ফিরেছেন রানআউট হয়েই।
তবে বাংলাদেশের ইনিংসে এর চেয়েও কি আলোচিত তিনটি স্টাম্পিং? ইমরুল, তামিম, মুশফিক—দলের হয়ে সর্বোচ্চ রান যেমন করেছেন প্রথম তিন ব্যাটসম্যান, তিনজনই হয়েছেন স্টাম্পড। এমন ঘটনার দৃষ্টান্ত খুঁজে বের করতে ক্রিকেট ইতিহাসটাই ঢুঁড়ে ফেলতে হবে এবং শেষ পর্যন্ত পাওয়া যাবে না।
এই প্রতিবেদন যখন লেখা হচ্ছে, তখন ইতিহাস ঢুঁড়ে খারাপ কিছু খুঁজে নিতে চাইছে না মানুষ। তারা জয়ধ্বনি করছে ম্যান অব দ্য ম্যাচ তামিমের নামে, ম্যান অব দ্য সিরিজ মুশফিকের নামে। মাশরাফির দল তাদের অন্তরে! জয় এক আশ্চর্য সম্মোহন। সবকিছুকেই সে ভুলিয়ে দেয়।
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৭৬/৯
জিম্বাবুয়ে: ৪৩.৩ ওভারে ২১৫
ফল: বাংলাদেশ ৬১ রানে জয়ী
মুস্তাফিজুর রহমান তৃতীয় স্পেলে বোলিং করতে এসে ফিরিয়ে দিলেন সিকান্দার রাজা ও জঙ্গুয়েকে। হ্যাটট্রিকটা ঠেকিয়ে দিলেন ক্রেমার। তবে মুস্তাফিজ ৫ উইকেট ঠিকই পেলেন। পরের ওভারে পানিয়াঙ্গারা তাঁর পঞ্চম শিকার। আর তারপরই অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা ঠিক করলেন, তাঁর এই পেসরত্নকে অন্য রকম একটু সম্মান জানাবেন। স্লিপ বেষ্টনীতে দাঁড় করালেন আট ফিল্ডারকে, স্লিপে পাঁচজন, গালিতে তিন। এই অভাবিত দৃশ্যকে কে না চাইবে সেলফোনে বন্দী করে রাখতে!
হাজার মুঠোফোনের আলো জ্বলে উঠল গ্যালারিতে। তাদের মুঠোফোনগুলো আলোকিতই হয়ে রইল। মুস্তাফিজকে ‘বঞ্চিত’ করে জিম্বাবুয়ে ২১৫ রানে শেষ হলো সানির বাঁহাতি স্পিনে। তবু আলো ছড়িয়েই গেল কিছু মুঠোফোন। এই জয়োৎসবের মুহূর্তটি যে বাংলাদেশের ক্রিকেটে আলোরও উৎসব। প্রতিপক্ষকে ১১তম বারের মতো ধবলধোলাই করল বাংলাদেশ, জিম্বাবুয়েকে তৃতীয়বারের মতো। জিম্বাবুয়ের মতো হতদরিদ্র হয়ে পড়া এক ক্রিকেটশক্তিকে ধবলধোলাই করে মনের মধ্যে উপচে পড়া আনন্দের জলকল্লোল হয়তো অনুভব করা যায় না, তবু তো বাংলাদেশ জয়ের রথে ভেসে চলা এক ক্রিকেট অভিযাত্রী!
সেই অভিযাত্রায় আবারও নেতৃত্বে মাশরাফি। প্রতিটি ম্যাচেই সামনে থেকে অনুপ্রেরণাদায়ী নেতৃত্ব। কাল তাই বাংলাদেশ দলটা যেমন জনতার মুঠোফোনের আলোয় ধরা থাকল, তেমনি মাশরাফির নামটাও বাঁধাই হয়ে গেল সোনার হরফে। সেই সোনা খাঁটি ২৪ ক্যারেটের। মাশরাফি ওয়ানডেতে যেন দিগ্বিজয়ী বীর। অস্ট্রেলিয়া আসেনি বলে জিম্বাবুয়েকে ডেকে আনা হয়েছে এই সিরিজে। মাশরাফির দলের মধ্যে সবাই হয়তো চাইছিলেন অস্ট্রেলীয় মানসিকতার জাগরণ। সেটি হয়তো পুরোপুরি হয়নি, তবে কালকের শেষ মুহূর্তটিই জাগিয়ে তুলল ওই ভাবনাটিকে। প্রতিপক্ষকে কোনো সুযোগ দিয়ো না, একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দাও।
যদিও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জিততে ইদানীং সেই মানসিকতার খুব একটা প্রয়োজনই পড়ছে না। সেলুকাস, এ এক বিচিত্র দল। আপনি হয়তো আগেই জেনে বসে থাকেন, এরা বাংলাদেশের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যকে তাড়া করতে গিয়ে মোটামুটি ছুটবে। হাতে যখন ৬টি উইকেট থাকবে, মনে হবে এরা জিতে যেতে পারে, কিন্তু শেষ মুহূর্তে লেজেগোবরে করে ফেলবে। এ ম্যাচেও তাই হলো, শেষ ৯০ বলে ৯৫ রান করতে হবে, হাতে ৬ উইকেট, সেখান থেকেই ভেঙে পড়ল তারা। এখানে ওয়ালারকে আউট করে ধাক্কাটা দিলেন আল আমিন। তার আগে শন উইলিয়ামসের সঙ্গে ৮০ রানের জুটি গড়ার পর বিদায় নিয়েছেন বিপদ ছড়াতে থাকা চিগুম্বুরা। শেষ পর্যন্ত মুস্তাফিজের তোপে ধ্বংস হয়ে গেছে জিম্বাবুয়ে। ৮ রানে পড়েছে শেষ ৪ উইকেট।
বিজয়ের মুহূর্তে দলকে সম্মানের একুশ তোপধ্বনিতেই বরণ করে নেওয়া উচিত। ক্রিকেট-জনতা তা নিয়েছেও। তারপরও বড় রান না করতে পারায় মাশরাফির দলেরই অতৃপ্তি থেকে যাবে।
নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসের ১৪তম শত রানের ওপেনিং জুটি। ২৯.৩ ওভারে তামিম ও ইমরুল করে ফেললেন ১৪৭। এমন আলোকিত মঞ্চে কত বড় হতে পারত বাংলাদেশের ইনিংস? আপনার কল্পনাশক্তিকে লাগাম পরানো হলেও বলত, তিন শ রানের কম কিছুতেই নয়। শেষ পর্যন্ত হলো ২৭৬। কেউ কাউকে ছাপিয়ে যাবেন না পণ করে দুই ওপেনারেরই ৭৩। নিজেকে ফিরে পেয়ে মাহমুদউল্লাহ আগ্রাসন ও কবজিসৃজিত শিল্প থেকে করলেন ৫২। রানআউট হওয়ার আগে মাশরাফির সঙ্গে সপ্তম উইকেট জুটিতে তাঁর ৩৭ রানই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটি। সম্ভাবনা জাগিয়েও কেন বড় হলো না স্কোর, সেটি তো বুঝতেই পারছেন।
এর আগে এই মাহমুদউল্লাহর বিপক্ষেই একটি রানআউট সিদ্ধান্ত নিয়ে স্টেডিয়াম দেখেছে মস্ত একটি নাটক। সিকান্দার রাজার থ্রো স্টাম্পে লাগার আগেই বেল ফেলে দিয়েছেন উইকেটকিপার চাকাভা। আম্পায়ার আলিম দার অবশ্য আঙুল তুলে দিয়েছেন। রানআউট ভেবে হাঁটাও শুরু করে দেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু সীমানাদড়ির কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন ড্রেসিংরুমে থাকা সতীর্থদের হাত ইশারায়। দাঁড়িয়ে থাকেন তো দাঁড়িয়েই থাকেন। টিভি আম্পায়ার এনামুল হক রিপ্লে দেখছেন তো দেখছেনই। মিনিট দশেক পর নটআউট ঘোষণা করা হয় মাহমুদউল্লাহকে।
ততক্ষণে অধৈর্য জিম্বাবুয়ে দল চরম অসন্তুষ্ট, সিদ্ধান্তে অসম্মত। তাদের খেলায় ফেরাতে দুই আম্পায়ার তো বটেই, বাংলাদেশের অধিনায়ককেও এগিয়ে আসতে হয়। এরপর মাহমুদউল্লাহ করেছেন আরও ২০ রান, ফিরেছেন রানআউট হয়েই।
তবে বাংলাদেশের ইনিংসে এর চেয়েও কি আলোচিত তিনটি স্টাম্পিং? ইমরুল, তামিম, মুশফিক—দলের হয়ে সর্বোচ্চ রান যেমন করেছেন প্রথম তিন ব্যাটসম্যান, তিনজনই হয়েছেন স্টাম্পড। এমন ঘটনার দৃষ্টান্ত খুঁজে বের করতে ক্রিকেট ইতিহাসটাই ঢুঁড়ে ফেলতে হবে এবং শেষ পর্যন্ত পাওয়া যাবে না।
এই প্রতিবেদন যখন লেখা হচ্ছে, তখন ইতিহাস ঢুঁড়ে খারাপ কিছু খুঁজে নিতে চাইছে না মানুষ। তারা জয়ধ্বনি করছে ম্যান অব দ্য ম্যাচ তামিমের নামে, ম্যান অব দ্য সিরিজ মুশফিকের নামে। মাশরাফির দল তাদের অন্তরে! জয় এক আশ্চর্য সম্মোহন। সবকিছুকেই সে ভুলিয়ে দেয়।
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৭৬/৯
জিম্বাবুয়ে: ৪৩.৩ ওভারে ২১৫
ফল: বাংলাদেশ ৬১ রানে জয়ী
ছবিতে বাঘ কয়টি? ‘একটি’ কিন্তু ভুল উত্তর! সিরিজ জয়ের পর আরও একটি ট্রফি নিয়ে বাংলাদেশ দল। এ সময়ের সবচেয়ে পরিচিত দৃশ্য গতকাল আরও একবার ধরা পড়ল ক্যামেরায় l ছবি: শামসুল হক |
No comments