ডাকাতির অস্ত্রে বখতিয়ার খুন by নূরুজ্জামান
যে অস্ত্র দিয়ে ডাকাতরা বখতিয়ারকে খুন
করেছিল, ওই অস্ত্রটিও ছিল ডাকাতির। তিন বছর আগে কদমতলী থানাধীন হাজী জালাল
উদ্দিনের বাড়িতে হানা দিয়ে একটি বন্দুক ও একটি রিভলবার লুট করেছিল ডাকাত
দল।
কদমতলী থানা পুলিশ লুণ্ঠিত বন্দুক উদ্ধার করতে সক্ষম
হলেও রিভলবারটি উদ্ধার করতে পারেনি। সমপ্রতি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের
হাতে বখতিয়ার হত্যাকাণ্ডে জড়িত সংঘবদ্ধ ডাকাত দল গ্রেপ্তারের পর সেই
রিভলবারটি উদ্ধার হয়েছে। গতকাল এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা
পুলিশের এডিসি এ এইচ এম আবদুর রকিব বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছি
বখতিয়ার হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রটি প্রায় তিন বছর আগে লুট করেছিল এই
ডাকাত দল। সেই অস্ত্র নিয়ে ফের ডাকাতি করতে গিয়ে ‘ও লেভেল’ পড়ুয়া বখতিয়ারকে
হত্যা করা হয়। তিনি আরও বলেন, অস্ত্রটির ব্যালিস্টিক পরীক্ষার জন্য সিইডির
পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষার ওই রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরই বিষয়টি
নিশ্চিত হওয়া যাবে। গত ২৬শে অক্টোবর ৪ ডাকাত খলিল (৩৪), আক্তার (৩৫),
রুস্তম আলী হাওলাদার (৫০) ও জালাল উদ্দিন (৪৫) গ্রেপ্তার হয়। এদের মধ্যে
জালাল উদ্দিন আদালতের কাছে বখতিয়ার হত্যাকাণ্ডে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি
দিয়েছে। গত মঙ্গলবার ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় সে বলেছে, কোন কাজ না
পেয়ে একদিন কমলাপুর রেলস্টেশনে বসেছিলাম। হঠাৎ এক লোক আমার পাশে বসে।
মনোযোগ দিয়ে শোনে কষ্টের কথা। তার নাম আলমগীর। ধীরে ধীরে তার সঙ্গে
ঘনিষ্ঠতা বাড়লে সে-ই আমাকে তার ভাড়া করা বাসায় নিয়ে যায়। সেখানেই থাকতে
শুরু করি। পরে তার মাধ্যমেই আক্তার ও খলিলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
কিছুদিন পর আলমগীর একটি লোহার রড কেনার জন্য আমাকে ৬০০ টাকা দেয়। খলিল সেই
রড নিয়ে যাত্রাবাড়ী ব্রিজের কাছে যেতে বলে। যতদূর মনে পড়ে, দিনটি ছিল ১১ই
সেপ্টেম্বর। সেখানে গিয়ে দেখি খলিল, আক্তার, হাবিব, রুস্তম, স্বপন,
ট্রাকচালক মতি ও একজন চাচা বসে আছে। তারা আমার হাতের রড দেখেই বলে ওঠে, এই
রড দিয়ে তালা ভাঙা যাবে না। তখন সবাই যে যার বাসায় ফিরে যাই। পরের দিন
আবারও সেখানে মিলিত হই। ওই দিন তালা ভাঙার জন্য মোটা রড নিয়েছিলাম। আদালতের
কাছে জালাল আরও জানায়, ওই রাতে বাড়ির দেয়ালের পাশে ট্রাক নিয়ে অপেক্ষা
করছিল ট্রাকচালক মতি। আমি, খলিল, হাবিব, রুস্তম, স্বপন, আক্তার ও চাচা
বাড়ির দেয়াল টপকে ভেতরে যাই। তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকি। প্রথমে যে রুমে ঢুকি,
সেখানে টেলিভিশন চলছিল। বাড়ির মালিক, মালিকের স্ত্রী ও তাদের ছেলে একই রুমে
ছিল। টাঙানো মশারি খুলতেই তারা জেগে ওঠে। চিৎকার শুরু করে। এ সময় হাবিব ও
আক্তার বাড়িওয়ালার হাত বেঁধে ফেলে রাখে। তার কাছ থেকে চাবি নিয়ে আলমারি
খুলে ৩-৪ ভরি স্বর্ণালঙ্কার নেই। পরে আরও দু’টি আলমারি ভেঙে অনেক
খোঁজাখুঁজি করেও কিছু পাইনি। হঠাৎ বাড়িওয়ালার ছেলেটি (বখতিয়ার) খলিলকে
জাপটে ধরে। চিৎকার-চেঁচামেচি করতে থাকে। তখন খলিল ভড়কে যায়। বাঁচার জন্য
দুই রাউন্ড গুলি করে দেয়। জালাল জানায়, গুলিবিদ্ধ ছেলেটি তখন ছটফট করছিল।
আকুতি করছিল পানির জন্য। ছেলেটির মা-ও পানি দিতে বলে। এ সময় আক্তার ও
রুস্তম ফ্রিজ থেকে পানি বের করে খাওয়ায়। এরপরই সে মারা যায়। ছেলেটি মারা
যাওয়ার পরপরই সবাই ট্রাকে চড়ে পালিয়ে যাই। পালানোর একদিন পর ওই কাজের
বিনিময়ে পাঁচ হাজার টাকার ভাগ পাই। গত ১২ই সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে উত্তর
যাত্রাবাড়ী আল-সাজেদা ফিলিং স্টেশনের পাশে ৯৬ নম্বর বাড়িতে ঢুকে বাবা-মায়ের
সামনে একমাত্র সন্তান বখতিয়ারকে গুলি করে হত্যা করা হয়। বখতিয়ারের পিতা
জাহিদ আল লতিফ গ্রেপ্তার হওয়া চারজনের মধ্যে তিনজনকে শনাক্ত করেন।
গোয়েন্দারা জানান, যাত্রাবাড়ী এলাকার কানা সাত্তার নামে এক সন্ত্রাসী ওই
বাড়িতে অনেক স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা-পয়সা আছে বলে ৫-৬ মাস আগে এই ডাকাত দলের
কাছে তথ্য দেয়। তারপর থেকেই ওই বাড়িতে দু’বার ডাকাতির চেষ্টা চালায় তারা।
কিন্তু হিংস্র কুকুরের কারণে সম্ভব হয়নি তাদের অপারেশন। এ কারণে
হত্যাকাণ্ডের ১৫ দিন আগে বিষ মেশানো মাংস খাইয়ে ওই বাড়ির কুকুরটিকে মেরে
ফেলে তারা।
No comments