গণমাধ্যমের ওপর হামলা
সম্প্রতি বিরোধী দলের ৬০ ঘণ্টার হরতালের সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমপ্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমকর্মী এবং সংবাদপত্রের যানবাহনের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সম্পাদক পরিষদ, বেসরকারি টেলিভিশন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতারা। তাঁদের এই উদ্বেগের সঙ্গে আমরা একাত্মতা পোষণ করছি। একই সঙ্গে সরকারের কাছে প্রতিটি গণমাধ্যমপ্রতিষ্ঠান ও কর্মীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি। স্বাধীন গণমাধ্যম যেকোনো গণতান্ত্রিক সমাজের পূর্বশর্ত। এটি যারাই লঙ্ঘন করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার বিকল্প নেই। উল্লেখ করা প্রয়োজন, কেবল রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের সময়ই গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে না, গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর বা মতামত যখনই যাদের বিপক্ষে যায় তারা গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর চড়াও হয়। এটা যেমন তাদের চরম অসহিষ্ণু মানসিকতারই প্রকাশ, তেমনি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতিও মারাত্মক হুমকি। দুর্ভাগ্যজনক যে গণমাধ্যমের ওপর এসব সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় রাজনৈতিক নেতৃত্ব হয় নিশ্চুপ থাকে, না হয় সুবিধামতো প্রতিক্রিয়া জানিয়ে দায় শেষ করে। তারা নিজ দলের কর্মীদের রক্ষা করতে প্রতিপক্ষের,
এমনকি গণমাধ্যমের ওপর দায় চাপাতেও দ্বিধা করে না। ফলে গণমাধ্যমের ওপর হামলাকারীরা বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। বিরোধী দল গণমাধ্যমের যানবাহনকে হরতালের আওতামুক্ত ঘোষণা করেছিল। তার পরও কেন গণমাধ্যমকর্মী বা সংবাদপত্রের যানবাহনের ওপর হামলা চালানো হলো, সেই প্রশ্নের জবাব হরতাল আহ্বানকারীদের কাছে চাওয়া নিশ্চয়ই অযৌক্তিক হবে না। ‘সবকিছু সরকারের এজেন্টের কাজ’ বলেও তারা দায় এড়াতে পারে না। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের দুটি পথ আছে। একটি হলো নানা রকম কালাকানুন জারি, অপরটি ভয়ভীতি ও হামলা। ক্ষমতাসীনেরা যেমন প্রথমটির সুযোগ নেয়, দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে বিরোধী দলও পিছিয়ে নেই। ৬০ ঘণ্টার হরতালের সময় গণমাধ্যমপ্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। অপরাধীরা শাস্তি পাক—এটা সবার দাবি। সরকার ও বিরোধী দলসহ দায়িত্বশীল সবার প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
No comments