এডিবির আশঙ্কা জিডিপিতে কৃষির অবদান কমবে, সরকার মানছে না by ফখরুল ইসলাম
সারের দাম কমানো, কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়াসহ সরকারের অনেক নীতি-সহায়তা সত্ত্বেও এ বছর মোট দেশজ উত্পাদনে (জিডিপি) কৃষি খাতের অবদান কমবে। কৃষি খাতে গতবারের প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এবার তা নেমে আসবে ৪ দশমিক ১ শতাংশে। এ আশঙ্কা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি)।
তবে এডিবির এ আশঙ্কাকে সম্পূর্ণভাবেই উড়িয়ে দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। প্রথম আলোকে কৃষিমন্ত্রী জানান, মাঠপর্যায়ের খবর না রেখে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে হিসাব করলে এমন আশঙ্কাই হবে। আউশ ও আমনের উত্পাদন গতবারের তুলনায় কম তো হবেই না, বরং বাড়বে। আর বোরোর উত্পাদন এবার অতীতের যেকোনো রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এডিবি হিসাব করে দেখেছে, এবার খরার কারণে আউশ ও আমন ধানের ফলন কম হবে। আবার ফলন কম হওয়ার হিসাবটাও অত কঠিন নয় তাদের কাছে। সেটা হলো গতবারের তুলনায় এবার কম জমিতে ধানের চাষ করা হয়েছে। এদিকে গমের সন্তোষজনক উত্পাদনও প্রাকৃতিক শর্তসাপেক্ষ ব্যাপার বলে মনে করছে এডিবি। অর্থাত্ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী গমের উত্পাদন নির্ভর করবে, এবার শীত কতটা জেঁকে বসছে তার ওপর। তবে বোরোর উত্পাদন ভালো হলে আউশ ও আমনের কম ফলনের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব বলে মনে করে এডিবি।
সম্প্রতি প্রকাশিত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ত্রৈমাসিক অর্থনৈতিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থনীতির নানা দিক আলোকপাত করে এডিবি। এতে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়, ২০০৯-১০ অর্থবছরে জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান দশমিক ৫ শতাংশ কমে আসবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ধান ও গম মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের উত্পাদন লক্ষ্যমাত্রা তিন কোটি ৫৩ লাখ টন। এর মধ্যে ধান তিন কোটি ৪৩ লাখ টন আর গম ১০ লাখ টন। ২০০৮-০৯ অর্থবছরের প্রকৃত উত্পাদনের তুলনায় এ লক্ষ্যমাত্রা ৯ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি।
এডিবির মতে, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এ বছর ১২ লাখ হেক্টর জমিতে আউশ ধান চাষ হওয়ার কথা থাকলেও ধানের চাষ হয়েছে মাত্র নয় লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে। অর্থাত্ দুই লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতেই এবার আউশ ধান চাষ করা হয়নি, যা করা হয়েছে তাতে উত্পাদন হবে ১৭ লাখ টন।
এডিবি বলেছে, আগেরবারের প্রকৃত উত্পাদনের তুলনায় এ বছরের আউশ উত্পাদন কমবে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। আউশ উত্পাদনের পরিমাণ কমার অন্যতম কারণ হলো খরা। অর্থাত্ যথাসময়ে প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত না হওয়া।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রমতে, এ বছর ৫৮ লাখ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হবে। কিন্তু চাষ হয়েছে ৫২ লাখ হেক্টর জমিতে। চার লাখ হেক্টর জমিতেই আমন চাষ হয়নি।
তাই আমনেরও আশানুরূপ ফলন হবে না বলে মনে করছে এডিবি। এডিবি বলছে, হেক্টর অনুযায়ী উত্পাদনের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলেও আগেরবারের প্রকৃত উত্পাদনের তুলনায় উত্পাদন কমবে পাঁচ শতাংশ। আমন চাষও বৃষ্টিপাতের অভাবে ব্যাহত হয়েছে।
এডিবির মতে, বৃষ্টির অভাবে কৃষকেরা উচ্চফলনশীল ধান উত্পাদনে যেতে পারেননি। সেচের মাধ্যমে কম ফলনের স্থানীয় প্রজাতির ধান চাষে তাঁরা বাধ্য হয়েছেন।
তবে বোরো উত্পাদন নিয়ে আশাবাদী সরকার ও এডিবি উভয় পক্ষই। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, চলতি অর্থবছরে এক কোটি ৯০ লাখ টন বোরো উত্পাদন হওয়ার কথা। গতবারের প্রকৃত উত্পাদনের তুলনায় এ লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নির্ভর করবে যথাসময়ে পর্যাপ্ত কৃষিঋণ দেওয়া, ধানের যৌক্তিক মূল্য ও আবহাওয়ার ওপর।
সূত্রমতে, গত বছর আট লাখ টনের কাছাকাছি গম উত্পাদিত হয়েছিল। ২০ শতাংশ বাড়িয়ে এ বছর গম উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা করা হয়েছে ১০ লাখ টন। তবে গমের প্রার্থিত উত্পাদন নির্ভর করবে এ বছর শীত কতটা দীর্ঘস্থায়ী হয় তার ওপর।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা বিভাগের প্রধান উত্তম কুমার দেব প্রথম আলোকে জানান, খরার কারণে এ বছর আউশ ও আমনের ফলন কম হবে ঠিক, তবে বোরোর ব্যাপারে আশাবাদী হওয়ারও অনেক কারণ রয়েছে। কয়েক মাস আগে ধানের দাম কম থাকলেও এখন বাড়তি। সুতরাং বোরো চাষে কৃষকেরা বেশ আগ্রহী।
দেশের মোট ধানের অর্ধেকেরও বেশি বোরো থেকে আসার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বোরোর ওপরই নির্ভর করছে সবকিছু। উত্তম দেব বলেন, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বোরো অঞ্চল বাড়াতে চার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে সরকার। সুতরাং বোরোতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন আশা করা যায়।
জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান কমা নিয়ে এডিবির আশঙ্কা প্রসঙ্গে উত্তম দেব জানান, কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি নির্ধারণের ক্ষেত্রে পোলট্রি, মত্স্য ইত্যাদি খাতের কথাও বিবেচনায় নেওয়া হয়। বার্ড ফ্লু বা এজাতীয় অন্য কোনো সমস্যা গতবার থাকলেও এবার কিন্তু তা দেখা যায়নি। সুতরাং অর্থবছর শেষে কৃষি খাতে অবদান কমবেই—এমনটা হলফ করে বলা যায় না বলে মনে করেন তিনি।
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী জানান, জিডিপিতে কৃষির অবদান কমার এডিবির আশঙ্কা, অনুমান বা প্রাক্কলন কোনোভাবেই গ্রহণ করার যোগ্য নয়। চোর-প্রকৃতির সরকার হলে তাদের এ আশঙ্কাকে আমলে নিত। আওয়ামী লীগ নেবে না। প্রবৃদ্ধিতে কৃষির অবদান বাড়াতে আরও অনেক প্যাকেজ অঘোষিত রয়ে গেছে বলেও জানান কৃষিমন্ত্রী।
তবে এডিবির এ আশঙ্কাকে সম্পূর্ণভাবেই উড়িয়ে দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। প্রথম আলোকে কৃষিমন্ত্রী জানান, মাঠপর্যায়ের খবর না রেখে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে হিসাব করলে এমন আশঙ্কাই হবে। আউশ ও আমনের উত্পাদন গতবারের তুলনায় কম তো হবেই না, বরং বাড়বে। আর বোরোর উত্পাদন এবার অতীতের যেকোনো রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এডিবি হিসাব করে দেখেছে, এবার খরার কারণে আউশ ও আমন ধানের ফলন কম হবে। আবার ফলন কম হওয়ার হিসাবটাও অত কঠিন নয় তাদের কাছে। সেটা হলো গতবারের তুলনায় এবার কম জমিতে ধানের চাষ করা হয়েছে। এদিকে গমের সন্তোষজনক উত্পাদনও প্রাকৃতিক শর্তসাপেক্ষ ব্যাপার বলে মনে করছে এডিবি। অর্থাত্ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী গমের উত্পাদন নির্ভর করবে, এবার শীত কতটা জেঁকে বসছে তার ওপর। তবে বোরোর উত্পাদন ভালো হলে আউশ ও আমনের কম ফলনের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব বলে মনে করে এডিবি।
সম্প্রতি প্রকাশিত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ত্রৈমাসিক অর্থনৈতিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থনীতির নানা দিক আলোকপাত করে এডিবি। এতে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়, ২০০৯-১০ অর্থবছরে জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান দশমিক ৫ শতাংশ কমে আসবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ধান ও গম মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের উত্পাদন লক্ষ্যমাত্রা তিন কোটি ৫৩ লাখ টন। এর মধ্যে ধান তিন কোটি ৪৩ লাখ টন আর গম ১০ লাখ টন। ২০০৮-০৯ অর্থবছরের প্রকৃত উত্পাদনের তুলনায় এ লক্ষ্যমাত্রা ৯ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি।
এডিবির মতে, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এ বছর ১২ লাখ হেক্টর জমিতে আউশ ধান চাষ হওয়ার কথা থাকলেও ধানের চাষ হয়েছে মাত্র নয় লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে। অর্থাত্ দুই লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতেই এবার আউশ ধান চাষ করা হয়নি, যা করা হয়েছে তাতে উত্পাদন হবে ১৭ লাখ টন।
এডিবি বলেছে, আগেরবারের প্রকৃত উত্পাদনের তুলনায় এ বছরের আউশ উত্পাদন কমবে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। আউশ উত্পাদনের পরিমাণ কমার অন্যতম কারণ হলো খরা। অর্থাত্ যথাসময়ে প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত না হওয়া।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রমতে, এ বছর ৫৮ লাখ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হবে। কিন্তু চাষ হয়েছে ৫২ লাখ হেক্টর জমিতে। চার লাখ হেক্টর জমিতেই আমন চাষ হয়নি।
তাই আমনেরও আশানুরূপ ফলন হবে না বলে মনে করছে এডিবি। এডিবি বলছে, হেক্টর অনুযায়ী উত্পাদনের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলেও আগেরবারের প্রকৃত উত্পাদনের তুলনায় উত্পাদন কমবে পাঁচ শতাংশ। আমন চাষও বৃষ্টিপাতের অভাবে ব্যাহত হয়েছে।
এডিবির মতে, বৃষ্টির অভাবে কৃষকেরা উচ্চফলনশীল ধান উত্পাদনে যেতে পারেননি। সেচের মাধ্যমে কম ফলনের স্থানীয় প্রজাতির ধান চাষে তাঁরা বাধ্য হয়েছেন।
তবে বোরো উত্পাদন নিয়ে আশাবাদী সরকার ও এডিবি উভয় পক্ষই। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, চলতি অর্থবছরে এক কোটি ৯০ লাখ টন বোরো উত্পাদন হওয়ার কথা। গতবারের প্রকৃত উত্পাদনের তুলনায় এ লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নির্ভর করবে যথাসময়ে পর্যাপ্ত কৃষিঋণ দেওয়া, ধানের যৌক্তিক মূল্য ও আবহাওয়ার ওপর।
সূত্রমতে, গত বছর আট লাখ টনের কাছাকাছি গম উত্পাদিত হয়েছিল। ২০ শতাংশ বাড়িয়ে এ বছর গম উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা করা হয়েছে ১০ লাখ টন। তবে গমের প্রার্থিত উত্পাদন নির্ভর করবে এ বছর শীত কতটা দীর্ঘস্থায়ী হয় তার ওপর।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা বিভাগের প্রধান উত্তম কুমার দেব প্রথম আলোকে জানান, খরার কারণে এ বছর আউশ ও আমনের ফলন কম হবে ঠিক, তবে বোরোর ব্যাপারে আশাবাদী হওয়ারও অনেক কারণ রয়েছে। কয়েক মাস আগে ধানের দাম কম থাকলেও এখন বাড়তি। সুতরাং বোরো চাষে কৃষকেরা বেশ আগ্রহী।
দেশের মোট ধানের অর্ধেকেরও বেশি বোরো থেকে আসার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বোরোর ওপরই নির্ভর করছে সবকিছু। উত্তম দেব বলেন, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বোরো অঞ্চল বাড়াতে চার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে সরকার। সুতরাং বোরোতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন আশা করা যায়।
জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান কমা নিয়ে এডিবির আশঙ্কা প্রসঙ্গে উত্তম দেব জানান, কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি নির্ধারণের ক্ষেত্রে পোলট্রি, মত্স্য ইত্যাদি খাতের কথাও বিবেচনায় নেওয়া হয়। বার্ড ফ্লু বা এজাতীয় অন্য কোনো সমস্যা গতবার থাকলেও এবার কিন্তু তা দেখা যায়নি। সুতরাং অর্থবছর শেষে কৃষি খাতে অবদান কমবেই—এমনটা হলফ করে বলা যায় না বলে মনে করেন তিনি।
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী জানান, জিডিপিতে কৃষির অবদান কমার এডিবির আশঙ্কা, অনুমান বা প্রাক্কলন কোনোভাবেই গ্রহণ করার যোগ্য নয়। চোর-প্রকৃতির সরকার হলে তাদের এ আশঙ্কাকে আমলে নিত। আওয়ামী লীগ নেবে না। প্রবৃদ্ধিতে কৃষির অবদান বাড়াতে আরও অনেক প্যাকেজ অঘোষিত রয়ে গেছে বলেও জানান কৃষিমন্ত্রী।
No comments