বছর শেষে কেমন আছেন গাজাবাসী
অন্যদিকে দক্ষিণাঞ্চলে ত্রাণ পাওয়া যাচ্ছে। তবে তা পর্যাপ্ত নয়। মধ্য ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘ এজেন্সিগুলো রিপোর্ট করেছে যে, শতকরা ৫ ভাগ শিশু, যাদের বয়স দুই বছরের নিচে, তারা মারাত্মক পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। এসব কারণে এবং গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট (আইসিসি)। রায়ে বলা হয়েছে, যদি তারা এই আদালতের সদস্য ১২৪টি দেশের কোনোটিতে সফর করেন, তাহলে তাকে বা তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে। নভেম্বরের শেষের দিকে নেতানিয়াহু, ইয়োভ গ্যালান্ট এবং হামাসের কমান্ডার মোহাম্মদ দিয়েফের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। তবে ইসরাইলের দাবি জুলাইয়ে তারা মোহাম্মদ দিয়েফকে হত্যা করেছে। তবে তাকে হত্যা করা হয়েছে নাকি তিনি জীবিত আছেন- এ বিষয়ে আইসিসি কোনো মন্তব্য করেনি। আইসিসি তার রায়ে বলেছেন, নেতানিয়াহু ও গ্যালান্ট যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে মানুষকে অনাহারে রাখার কৌশল ব্যবহার করেছে। এর মধ্যদিয়ে তারা যুদ্ধাপরাধ করেছে। হত্যা, নিষ্পেষণ ও অন্যান্য অমানবিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তারা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে। এই ফৌজদারি অপরাধের দায় নেতানিয়াহু ও গ্যালান্টের। আইসিসি’র যৌক্তিক কারণ রয়েছে যে, মোহাম্মদ দিয়েফও হত্যা, নির্যাতন, অন্যান্য যৌন নির্যাতন, জিম্মি আটকসহ বিভিন্ন অপরাধের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধ করেছে।
কিছু সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংগঠন আরও একটু অগ্রসর হয়েছে। সম্প্রতি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক রিপোর্টে বলেছে, দখলিকৃত গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়েছে ইসরাইল এবং তা অব্যাহত আছে। গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যার জন্য ইসরাইলকে প্রথম দায়ী করে যেসব দেশ তার মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা অন্যতম। এমনকি তারা জানুয়ারিতে আইসিসিতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে মামলা করে। দাবি করা হয়, ইসরাইল জোনোসাইড কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে। ইসরাইলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার এই মামলায় যোগ দেয় বা স্বাক্ষর করে বিশ্বের কমপক্ষে ১৪টি দেশ। এরমধ্যে আছে স্পেন, বেলজিয়াম, তুরস্ক, মিশর এবং চিলি।
২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে যে হামলা হয় ইসরাইলে তাতে ইউএনআরডব্লিউএ’র বেশ কিছু কর্মী জড়িত বলে জানুয়ারিতে অভিযোগ করে ইসরাইল। এমন অভিযোগে ওই এজেন্সি তদন্ত শুরু করে। এ সময়ে ত্রাণ সহায়তা বন্ধ করে রাখে অনেক পশ্চিমা দাতা। তদন্ত শেষে ৯জন কর্মীকে দায়ী দেখিয়ে তাদের বরখাস্ত করে ইউএনআরডব্লিউএ। যুক্তরাষ্ট্র বাদে সব দাতা তাদের অর্থ আবার দেয়া শুরু করে। রিপোর্টে দেখা যায়, গাজায় ইউএনআরডব্লিউএ পরিচালিত স্কুলগুলোর মধ্যে শতকরা কমপক্ষে ৭০ ভাগ স্কুল ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরাইলের বোমা হামলায়। এসব স্কুলের শতকরা ৯৫ ভাগই ব্যবহার করা হতো ইসরাইলের হামলায় বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়স্থল হিসেবে। বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা আশ্রয় নিয়েছিলেন গাজার দক্ষিণে আল মাওয়াসি ক্যাম্পে। এটাকে মানবিক নিরাপদ জোন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিল ইসরাইল। কিন্তু ৪ঠা ডিসেম্বর সেখানেও হামলা চালায় তারা। যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই আল মাওয়াসি ক্যাম্প কয়েক লাখ বাস্তুচ্যুত গাজাবাসীর আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছিল। গাজায় এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে ইসরাইল হামলা চালায়নি, আর সেখানে রক্তপাত হয়নি।
No comments