নিরাপত্তা সংকট সাকিব ঢাকায় আসলেন না by ইশতিয়াক পারভেজ
গতকাল দুপুর থেকে মিরপুর শেরেবাংলা মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার অনুশীলনকে কেন্দ্র করে নেয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কিন্তু সেখানে হাজির হয় অন্দোলনকারীরা। অবস্থান নেন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের প্রধান ফটকের সামনে। তাদের দাবি সাকিবকে বাদ দেয়া হোক জাতীয় দল থেকে, তার বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে দেশে ফিরলে যেন তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিসিবি বলছে- তারা মাঠের বাইরে নিরাপত্তা দিতে পারবে না। সরকার বলছে- সাকিব দেশে এলে তাদের কোনো আপত্তি নেই। একজন ক্রিকেটার হিসেবে নিরাপত্তা দেয়া হবে। সাকিব বলছেন- নিরাপত্তার ইস্যুতে তিনি দেশে ফিরবেন না। আর ছাত্র-জনতা তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছেন। সব মিলিয়ে সাকিবকে নিয়ে গতকাল সারাদিন চলে জমজমাট নাটক। বলাবলি হচ্ছিল দেশে তার বিরুদ্ধে মানুষের যে ক্ষোভ তাতে মাঠে খেলার সময় এমনকি বাইরে চলাচলের সময় সাকিব হতে পারেন আক্রমণের শিকার। এমনকি শুরুতে সরকারকে গোয়েন্দারাও যে রিপোর্ট দিয়েছিল তাতে উল্লেখ ছিল সাকিব দেশে এলে তাকে ঘিরে করা হতে পারে ষড়যন্ত্র। সুবিধাবাদী পক্ষ হামলা করে তার দায় চাপাতে পারে সরকারের ওপর।
সরকার পতনের পর সাকিবের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় হত্যা মামলা। সেই সময় সাকিব দেশে না ফিরলেও খেলেন পাকিস্তান ও ভারতের মাটিতে টেস্ট সিরিজ। সবশেষ কানপুরে সিরিজের শেষ ম্যাচের আগে তিনি টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দেন। তবে তিনি সেখানে ইচ্ছা প্রকাশ করেন, তার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটি দেশের মাটিতে খেলে অবসরে যেতে চান। ২১শে অক্টোবর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্ট ম্যাচ শুরু হচ্ছে মিরপুরে। সেখানেই তিনি অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। তবে দেশে ফিরতে তিনি বিসিবি’র কাছে নিরাপত্তা চান। শুরুতেই বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ জানিয়ে দেন তাকে নিরাপত্তা দেয়া হবে না। এরপর ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদও জানান, সাকিবকে ক্রিকেটার হিসেবে নিরাপত্তা সরকার দিলেও জনরোষ তিনি ঠেকাতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, সাকিব যে দেশে ফিরে এলে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে না- সেটিরও নিশ্চয়তা দেয়নি সরকার। তবে সাকিব আল হাসানের গুরু নাজমুল আবেদিন ফাহিম হাল ছাড়েননি। বিসিবি’র নয়া পরিচালক তিনি, তাই প্রিয় শিষ্য ও দেশের অন্যতম ক্রিকেটারের জন্য শুরু করেন দৌড়ঝাঁপ। শেষ পর্যন্ত দুবাইয়ে নারী বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখতে গিয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টা সাকিব দেশে ফিরলে কোনো সমস্যা হবে না বলেই ঘোষণা দেন। তিনি বলেছিলেন, ‘একজন ক্রিকেটার (দেশে এসে) খেলবেন এবং তিনি বাংলাদেশের নাগরিক। দেশে আসার ক্ষেত্রে আমি কোনো বাধা দেখি না। তবে যে দেয়াল লিখন হয়েছে, এটা আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখেছি। এটা ইমোশনের ব্যাপার, গণতান্ত্রিক দেশে তাদের যেকোনো ধরনের মুভমেন্ট (আন্দোলন ও দাবি) করার অধিকার আছে।’ তবে প্রশ্ন ছিল সাকিব দেশে ফিরলেও তার ফিরে যাওয়া নিয়ে। মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হবেন কিনা তা নিয়ে ছিল আলোচনা। যদি তাকে আটক করা না হয় তাহলে সেটিও অন্যপক্ষ আদালতে রেফারেন্স হিসেবে নিতে পারে বলেই অনুমান করা হয়।
অন্যদিকে সাকিব নিজের ফেসবুকে ক্ষমা চেয়ে বিদায় বেলা দেশের জনগণকে পাশে থাকার আহ্বান জানান। কিন্তু তাতে আন্দোলনকারীদের মন ভেজাতে পারেননি। যদিও বিসিবি এক প্রকার নিশ্চিত ছিল সাকিব দেশে ফিরবেন। যেকারণে তাকে রাখা হয় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল) প্লেয়ার্স ড্রাফটের তালিকায়। সেখান থেকে ১৪ই অক্টোবর নিলাম অনুষ্ঠানের আগেই সাকিবকে সরাসরি দলে ভেড়ায় বিপিএলের ১১তম আসরের নয়া দল চট্টগ্রাম কিংস। এরপর বুধবার তাকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে রেখে দল ঘোষণা করে বিসিবি। গতকাল রাতেই সাকিবের দেশে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার আর ফেরা হচ্ছে না। কেউ বলছেন দুবাই থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পরিবারের কাছে চলে যাবেন। আর সাকিব বলেছেন, যেখানেই যাই না কেন দেশে ফিরছি না। তিনি বুঝতে পেরেছেন দেশে তার জন্য রয়েছে প্রচণ্ড নিরাপত্তার হুমকি!
No comments