৪৩তম বিসিএস’র নিয়োগ প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবি বিএনপি’র

সম্প্রতি পদত্যাগকারী পাবলিক সার্ভিস কমিশন কর্তৃক সুপারিশকৃত ৪৩তম বিসিএস’র নিয়োগকৃত ২ হাজার ৬৪ কর্মকর্তার প্রজ্ঞাপন এবং ৪৪, ৪৫ ও ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষার সকল প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি করেছে বিএনপি। গতকাল দলের চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি’র পক্ষ থেকে এই দাবি জানান স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

তিনি বলেন, পতিত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের দোসর হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এবং ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর সম্প্রতি পদত্যাগকারী দলকানা পাবলিক সার্ভিস কমিশন কর্তৃক সম্পূর্ণ দলীয় বিবেচনায় বিসিএস ৪৩তম ব্যাচের সুপারিশকৃত ২০৬৪ জন প্রার্থীকে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিসিএস’র বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। অসংখ্য প্রাণের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের এই সিদ্ধান্ত ও নিয়োগ প্রক্রিয়া দেশের মানুষকে চরমভাবে হতভম্ব ও হতাশ করেছে এবং জনমনে প্রচণ্ড ক্ষোভ ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা মনে করি, যাচাই-বাছাই ছাড়াই ঢালাওভাবে সুপারিশকৃত শাসকদলীয় প্রার্থীদের রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে নিয়োগ দান করা হলে তা হবে চরম আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। দেশের হাজার হাজার যোগ্য ও মেধাবী প্রার্থীদের বঞ্চিত করে দলীয় ভিত্তিতে বিবেচিত ও সুপারিশকৃত ৪৩তম বিসিএস বাতিল করার জন্য আমরা দেশ ও জাতির পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। একইসঙ্গে ৪৪, ৪৫ ও ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষার সকল প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা জানতে পেরেছি হাসিনা সরকারের সময় ইতিমধ্যে আবেদনকৃত ৪৪তম বিসিএসের যে ৯০০০ জনকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়েছিল তার মধ্যে ৩০০০ জনের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। ৪৫তম বিসিএস’র লিখিত উত্তরপত্রের মূল্যায়ন প্রায় শেষ পর্যায়ে। ৪৬ বিসিএস’র প্রিলিমিনারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে তিন মাস পূর্বে।

সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা দাবি করছি রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে প্রবেশে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী গোষ্ঠীর এবং সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের ক্যাডার বাহিনীকে নিবৃত্ত করার লক্ষ্যে এই ৩টি বিসিএস’র নিয়োগ প্রক্রিয়াসমূহ পুরোপুরি বাতিল করা হোক। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে দ্বিতীয় স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে হলে ফ্যাসিবাদের দোসরদের যেকোনো মূল্যে রুখে দিতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে এ বিষয়ে আপস করার বিন্দুমাত্র কোনো সুযোগ নেই। দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের পক্ষ থেকে যেখানে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার জোর দাবি জানানো হচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে ৪৩তম বিসিএস’র ঢালাও নিয়োগ দানের মাধ্যমে সেই সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্যদের সরকারি প্রশাসনের উচ্চতর পদসমূহে পুনর্বাসন করার এই অন্তর্ঘাতমূলক সিদ্ধান্ত জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তার পরিপন্থি এবং কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়।
৪৩তম বিসিএস প্রার্থীদের চূড়ান্ত কীভাবে হতে পারে- তার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, এখানে আমরা বলেছি, অতীতে ২৭তম বিসিএস একটা নজির রয়েছে। সেটা ২০০৭ সালে যে ২৭তম বিসিএস’র এর চূড়ান্ত ফলাফল বাতিল করা হয়েছিল। পরে পুনরায় মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল। আমরা ওই একই প্রক্রিয়া অনুসরণের জন্য যাতে জাস্টিস এনসিউর হয় সেটা প্রেসক্রাইভ করেছি। একই সঙ্গে ৪৪, ৪৫ ও ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষা বাতিল করে নতুন করে পরীক্ষা নেয়ার কথা বলেছি। আমরা আবেদনকারীদের আবেদন করতে বলছি না।

বিএনপি’র এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মাত্র ২ মাসের মধ্যে কীভাবে কোনো বাছবিচার ছাড়াই পতিত আওয়ামী দলীয় অনুগতদের নিয়োগ দানের মাধ্যমে প্রশাসনে আওয়ামী প্রেতাত্মার আধিপত্য আরও বিস্তৃত করার সুযোগ তৈরি করে দেয়া হলো সেটাই এখন বিরাট প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা মনে করি, এই নিয়োগ ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় আত্মত্যাগের সঙ্গে বেঈমানি ও বিশ্বাসঘাতকতার সামিল।
তিনি বলেন, এক সময় যে পাবলিক সার্ভিস কমিশন ছিল প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগের সেরা প্রতিষ্ঠান এবং যা ছিল জাতীয় গৌরবের বিষয়- ফ্যাসিবাদের দীর্ঘ শাসনামলে সেই পিএসসিকে এক আজ্ঞাবহ দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছিল। একদিন যে প্রতিষ্ঠান দেশের জ্ঞানী-গুণী এবং আদর্শস্থানীয় বিদগ্ধজনেরা নেতৃত্ব দিতেন, ফ্যাসিবাদী শাসনামলে সেই প্রতিষ্ঠান দলীয় ক্যাডারদের আস্তানায় পরিণত হয়েছিল। দলীয়করণ এতই নগ্নরূপ ধারণ করেছিল যে পুরস্কারস্বরূপ পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যানকে ডামি নির্বাচনের এমপি নির্বাচিত করা হয়েছিল। তিনি এখন পলাতক রয়েছেন। জাতির জন্য এর চেয়ে লজ্জার আর কি হতে পারে। এইসব দলবাজ কর্মকর্তাদের দ্বারা ঢালাওভাবে সুপারিশকৃত শাসকদলীয় প্রার্থীদের রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে নিয়োগ দান করা হলে তা হবে চরম আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলে আমরা মনে করি।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, চাকরি প্রার্থীসহ সর্বমহল থেকে পিএসসি সংস্কারের দাবি উঠেছে। এই দাবির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমাও বৃদ্ধি করা হচ্ছে বলে জানা যায়। আমরা এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। এর ফলে বঞ্চিত মেধাবীদের অন্তত একটি অংশ হলেও বিভিন্ন চাকরিতে নতুন করে আবেদনের সুযোগ পাবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। পিএসসি সংস্কার দাবির প্রেক্ষিতে পিএসসি’র নতুন একজন চেয়ারম্যান ও কয়েকজন সদস্যকে ইতিমধ্যে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আমরা মনে করি পিএসসি’র সংস্কার কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন করে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নতুন করে সকল নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা উচিত যেন চাকরি প্রার্থীরা পরিবর্তিত পিএসসি’র সুফল পায় এবং সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জাতির আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সরকারি, আধাসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিসহ ১ম শ্রেণির বিভিন্ন নন-ক্যাডার পদে নতুন চাকরি প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। আমরা মনে করি এসব পদে যারা ইতিমধ্যে আবেদন করেছেন তাদের পাশাপাশি আবেদনের সময়সীমা বাড়িয়ে নতুন করে আবেদনের সুযোগ দেয়া হোক। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধি করার কারণে এ সুযোগ চাকরি প্রার্থীদের প্রতিযোগিতাকে আরও উন্মুক্ত করবে এবং যোগ্য ও মেধাবীদের নিয়োগের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। এতে সরকার যোগ্য ও মেধাবীদের সেবা পাবে, দেশ ও জাতি উপকৃত হবে। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিহউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.