‘পাগলে কি না কয়’ by আনিসুল হক
বাংলাদেশের বাউলগানে পাগল বলতে ঠিক মানসিক রোগীকে বোঝানো হয় না। বরং খ্যাপা বাউল, বিশেষ দশাপ্রাপ্ত সাধকদের বলা হয়ে থাকে পাগল। পাগলদের সম্মেলনও হয় এই দেশে। গতকালই খবর পড়েছি: আসল নাম সিদ্দিক মিয়া। বয়স ষাটের কাছাকাছি। কিন্তু এলাকায় তাঁর পরিচিতি ‘সিদ্দিক পাগল’ হিসেবে। নামের সঙ্গে ‘পাগল’ জুড়ে ডাকলেও খারাপ লাগে না তাঁর। এই সিদ্দিক পাগল ভাবেন অন্য ‘পাগলদের’ নিয়েও। তাই তিন বছর ধরে তাঁর গ্রামে ‘পাগলের মেলা’র আয়োজন করছেন তিনি। (প্রথম আলো, ১১ জানুয়ারি) আবার একই দিনের খবর: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাগল হিসেবে অভিহিত করেছেন খালেদা জিয়াকে। কেন করেছেন, সেটার প্রেক্ষাপটটা আগে জেনে নিই।
সরকার এই আমলে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পারবে না দাবি করে ছাত্রদলের এক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘এখন পদ্মা সেতুর স্বপ্ন দেখাচ্ছে। কিন্তু পদ্মা সেতু এই আওয়ামী লীগের আমলে হবে না। আর সেই সেতুতে ওঠার জন্য...একটি যদি জোড়াতালি দিয়ে বানায়, সেই সেতুতে কেউ উঠতে যাবেন না। অনেক রিস্ক (ঝুঁকি) আছে।’ তো এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মত জানতে চাওয়া হয়েছিল জাতীয় সংসদে। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিএনপি নেত্রী পদ্মা সেতু নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, এ ব্যাপারে আমি কী মন্তব্যটা করব? তবে সেতু তো বিভিন্ন পার্ট (অংশ) তৈরি করে করে নির্মাণ হয়। এ ক্ষেত্রে তো জোড়া দিয়েই সেতু করা হয়। জোড়া না দিলে তো সেতু হয় না। কিন্তু উনি (খালেদা জিয়া) জোড়াতালি দিয়ে কী বোঝাতে চেয়েছেন, তা আমার বোধগম্য নয়। তবে বাংলাদেশে তো একটা প্রচলিত কথা রয়েছে, পাগলে কি না কয়, ছাগলে কি না খায়। আমার মনে হয়, এ ধরনের পাগলের কথায় বেশি মনোযোগ না দেওয়াই ভালো।’ বুধবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু তৈরি করা হচ্ছে—খালেদা জিয়ার এমন মন্তব্যের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান সংরক্ষিত আসনের সাংসদ ফজিলাতুন্নেসা। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কোনো সুস্থ মানুষ এ ধরনের কথা বলতে পারেন না। তাই এ মন্তব্যকে পাগলের প্রলাপ হিসেবে মেনে নেওয়া ভালো।’ (প্রথম আলো ডটকম) এ ব্যাপারে আমাদের তৃতীয় পক্ষের বক্তব্য শুনতে হবে। কারণ, একজন বলেছেন, পদ্মা সেতুতে ওঠা হবে বিপজ্জনক। আরেকজন বলেছেন, পাগলের কথায় গুরুত্ব দিতে নেই। তৃতীয় পক্ষের বক্তব্যও কালকের সংবাদমাধ্যমেই আমরা পেয়ে গেছি। তিনি কাদের সিদ্দিকী। খবরে প্রকাশ: বড় ধরনের ভূমিকম্প হলেও পদ্মা সেতু ভাঙবে না। বুধবার বিকেলে সখীপুরে একটি জনসভায় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কাদের সিদ্দিকী প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
সরকার এই আমলে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পারবে না দাবি করে ছাত্রদলের এক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘এখন পদ্মা সেতুর স্বপ্ন দেখাচ্ছে। কিন্তু পদ্মা সেতু এই আওয়ামী লীগের আমলে হবে না। আর সেই সেতুতে ওঠার জন্য...একটি যদি জোড়াতালি দিয়ে বানায়, সেই সেতুতে কেউ উঠতে যাবেন না। অনেক রিস্ক (ঝুঁকি) আছে।’ তো এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মত জানতে চাওয়া হয়েছিল জাতীয় সংসদে। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিএনপি নেত্রী পদ্মা সেতু নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, এ ব্যাপারে আমি কী মন্তব্যটা করব? তবে সেতু তো বিভিন্ন পার্ট (অংশ) তৈরি করে করে নির্মাণ হয়। এ ক্ষেত্রে তো জোড়া দিয়েই সেতু করা হয়। জোড়া না দিলে তো সেতু হয় না। কিন্তু উনি (খালেদা জিয়া) জোড়াতালি দিয়ে কী বোঝাতে চেয়েছেন, তা আমার বোধগম্য নয়। তবে বাংলাদেশে তো একটা প্রচলিত কথা রয়েছে, পাগলে কি না কয়, ছাগলে কি না খায়। আমার মনে হয়, এ ধরনের পাগলের কথায় বেশি মনোযোগ না দেওয়াই ভালো।’ বুধবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু তৈরি করা হচ্ছে—খালেদা জিয়ার এমন মন্তব্যের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান সংরক্ষিত আসনের সাংসদ ফজিলাতুন্নেসা। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কোনো সুস্থ মানুষ এ ধরনের কথা বলতে পারেন না। তাই এ মন্তব্যকে পাগলের প্রলাপ হিসেবে মেনে নেওয়া ভালো।’ (প্রথম আলো ডটকম) এ ব্যাপারে আমাদের তৃতীয় পক্ষের বক্তব্য শুনতে হবে। কারণ, একজন বলেছেন, পদ্মা সেতুতে ওঠা হবে বিপজ্জনক। আরেকজন বলেছেন, পাগলের কথায় গুরুত্ব দিতে নেই। তৃতীয় পক্ষের বক্তব্যও কালকের সংবাদমাধ্যমেই আমরা পেয়ে গেছি। তিনি কাদের সিদ্দিকী। খবরে প্রকাশ: বড় ধরনের ভূমিকম্প হলেও পদ্মা সেতু ভাঙবে না। বুধবার বিকেলে সখীপুরে একটি জনসভায় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কাদের সিদ্দিকী প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
খবরে আরও প্রকাশ: জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বলেন, ‘আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যদি সঠিক ভোট হয়, তাহলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যেতে পারবে না। আর ভোট না হলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলেও মরবে। অন্যদিকে নির্বাচনে বিএনপি জিতলে ওই রাতেই কয়েক লাখ মানুষ খুন হবে। হাসিনা-খালেদা কিছুই করতে পারবে না।’ কোনো দিক থেকেই তো কোনো সান্ত্বনার বাণী পাওয়া গেল না। কাদের সিদ্দিকী আমাদের আশ্বাস দিলেন পদ্মা সেতু ভাঙবে না। আমরা আশ্বাস পেলাম। কিন্তু ভোট হলেও আমরা মার খাব, ভোট না হলেও মার খাব, বিএনপি জিতলেও লক্ষ লোক মারা যাবে, শুনে মন কোনো সান্ত্বনা পাচ্ছে না। পদ্মা সেতু ভাঙলে একসঙ্গে কজন মানুষই–বা মারা যাবে? বিএনপি জিতলে লক্ষ মানুষ মারা যাবে? তাহলে আমাদের কোনো আশা নেই, উপায় নেই, উদ্ধার নেই! এ অবস্থায় জনগণের তাহলে করণীয় কী? আলী রিয়াজ প্রথম আলোয় একটা কলাম লিখেছেন। শিরোনাম: ‘নতুন মধ্যবিত্তের রাজনৈতিক ভূমিকার অবসান?’ বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত কি আত্মপর হয়ে গেছে? রাজনীতিতে কী হচ্ছে না–হচ্ছে, তা নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই? আচ্ছা, তা-ই যদি হবে, তাহলে আসুন পরপর তিনটা কৌতুক বলে নিই।
এক. হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন, সবচেয়ে ভালো উপদেশ দেন পাগলেরা। আমি একজন পাগলকে দেখেছি, যিনি কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে দাঁড়িয়ে রেলগাড়িগুলোকে উপদেশ দিচ্ছিলেন, বেটারা লাইনে থাকিস।
দুই. চাঁদপুর শহরে এক পাগল রাস্তার মধ্যখানে দাঁড়িয়ে ট্রাফিক কন্ট্রোল করত। বলত, ডাইনে ডাইনে, বামে বামে। সব বাস, ট্রাক, গাড়ি, রিকশা ডানে-বামে সরে যেত। পাগল দেখল, সড়কপথ ঠিক হয়ে গেছে। এবার রেলপথ ঠিক করতে হবে। সে চলে গেল রেললাইনের ওপরে। ট্রেন আসছে, রেললাইনের মধ্যখানে দাঁড়িয়ে সে বলতে লাগল, ডাইনে ডাইনে, বামে বামে। রেলগাড়ি তার কথা শুনল না।
তিন. মানসিক হাসপাতালের এক রোগী নিজেকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলে দাবি করছে। সে কিছুতেই ভেতরে যাবে না। বাইরে চিৎকার করছে, বলছে, ‘আমার অ্যাটম বোমার সুইচ বেশি মোটা।’ হাসপাতালের পরিচালক এলেন। বললেন, ‘প্রেসিডেন্ট, এবার আপনাকে আপনার রুমে যেতে হবে।’
‘যাব। তবে, আপনি কে?’
‘আমি এই হাসপাতালের পরিচালক।’
রোগী হেসে বললেন, ‘প্রথম প্রথম এসেছেন তো! কয় দিন থাকুন, ঠিক হয়ে যাবে। প্রথম প্রথম আমিও নিজেকে হাসপাতালের পরিচালক বলে দাবি করতাম।’ চলন্ত ট্রেনের সামনে দাঁড়িয়ে ট্রাফিক কন্ট্রোল করতে হয় না। সেটা সাহসের কাজ নয়, বুদ্ধিমানেরও কাজ নয়। কিন্তু যদি সত্যি সত্যি কোনো রেলগাড়ি থামানো দরকার হয়ে পড়ে, কী করতে হবে তা দেখিয়েছে রাজশাহীর দুই শিশু। ছয় আর সাত বছরের দুই শিশু রেললাইন ভাঙা দেখতে পেয়ে লাল মাফলার দেখিয়ে ট্রেন থামিয়ে দেয়। বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করে ট্রেন আর যাত্রীদের। সুতরাং, সাহস থাকতে হবে, কর্তব্যবোধ থাকতে হবে, আর থাকতে হবে প্রত্যুৎপন্নমতিতা। জাপানি চলচ্চিত্র পরিচালক আকিরা কুরোসাওয়া বলেছেন, পাগলের পৃথিবীতে সুস্থতাই পাগলামি। আর নিৎশে বলেছেন, সব ভালোবাসার মধ্যেই কিছু না কিছু পাগলামো থাকে, কিন্তু সব পাগলামোতেই কিছু না কিছু যুক্তি থাকে। আচ্ছা, শীতকালে কি পাগলামো বাড়ে? তাহলে আমাদের যুক্তি হলো, এত শীত কেন পড়েছে।
আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।
তিন. মানসিক হাসপাতালের এক রোগী নিজেকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলে দাবি করছে। সে কিছুতেই ভেতরে যাবে না। বাইরে চিৎকার করছে, বলছে, ‘আমার অ্যাটম বোমার সুইচ বেশি মোটা।’ হাসপাতালের পরিচালক এলেন। বললেন, ‘প্রেসিডেন্ট, এবার আপনাকে আপনার রুমে যেতে হবে।’
‘যাব। তবে, আপনি কে?’
‘আমি এই হাসপাতালের পরিচালক।’
রোগী হেসে বললেন, ‘প্রথম প্রথম এসেছেন তো! কয় দিন থাকুন, ঠিক হয়ে যাবে। প্রথম প্রথম আমিও নিজেকে হাসপাতালের পরিচালক বলে দাবি করতাম।’ চলন্ত ট্রেনের সামনে দাঁড়িয়ে ট্রাফিক কন্ট্রোল করতে হয় না। সেটা সাহসের কাজ নয়, বুদ্ধিমানেরও কাজ নয়। কিন্তু যদি সত্যি সত্যি কোনো রেলগাড়ি থামানো দরকার হয়ে পড়ে, কী করতে হবে তা দেখিয়েছে রাজশাহীর দুই শিশু। ছয় আর সাত বছরের দুই শিশু রেললাইন ভাঙা দেখতে পেয়ে লাল মাফলার দেখিয়ে ট্রেন থামিয়ে দেয়। বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করে ট্রেন আর যাত্রীদের। সুতরাং, সাহস থাকতে হবে, কর্তব্যবোধ থাকতে হবে, আর থাকতে হবে প্রত্যুৎপন্নমতিতা। জাপানি চলচ্চিত্র পরিচালক আকিরা কুরোসাওয়া বলেছেন, পাগলের পৃথিবীতে সুস্থতাই পাগলামি। আর নিৎশে বলেছেন, সব ভালোবাসার মধ্যেই কিছু না কিছু পাগলামো থাকে, কিন্তু সব পাগলামোতেই কিছু না কিছু যুক্তি থাকে। আচ্ছা, শীতকালে কি পাগলামো বাড়ে? তাহলে আমাদের যুক্তি হলো, এত শীত কেন পড়েছে।
আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।
No comments