ভর্তির সুযোগ পাবে না ২০,০০০ শিক্ষার্থী by সোলায়মান তুষার
শনিবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল
প্রকাশিত হয়। এবার গতবারের চেয়ে ফল একটু খারাপ হলেও সুখবর নেই
বিশ্ববিদ্যালয় বা মেডিকেলে ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জন্য।
জিপিএ-৫
পেয়েও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে না প্রায় ২০ হাজার
শিক্ষার্থী। দেশে বর্তমানে ৩৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে শিক্ষার্থী ভর্তি করা
হয় না। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বাদ দিলে ৩১টি
বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে ভর্তি করা হয়। সব ক’টি বিশ্ববিদ্যালয় মিলে অনার্সে
ভর্তি হতে পারে ৩৯ হাজার ৩৮০ জন শিক্ষার্থী। আর এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৮
হাজার ১৯৭ জন শিক্ষার্থী। জিপিএ-৪ থেকে ৫ পেয়েছে ২ লাখ ৩১ হাজার ৫৩৩ জন।
জিপিএ-৩.৫ থেকে ৪ পেয়েছে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৪২৮ জন, জিপিএ-৩ থেকে ৩.৫ পেয়েছে ১
লাখ ৩০ হাজার ৫৮০ জন। মোট ৫ লাখ ৬৪ হাজার ৭৩৮ জন। এছাড়া গত বছর সুযোগ না
পাওয়া অনেক শিক্ষার্থী এবারও প্রতিযোগিতা করবে। ফলে প্রতিযোগীর সংখ্যা ৬
লাখ ছাড়িয়ে যাবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া মেডিকেল ও অন্যান্য
ইনস্টিটিউটে ভর্তির সুযোগ রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষার্থীর। ৬ লাখ
শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতা করবে এ ৫০ হাজার আসনের বিপরীতে। উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল
রেজাল্ট করা বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরই স্বপ্ন মেডিকেল, বুয়েট বা পাবলিক
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। ভাল ফল এমনকি জিপিএ-৫ পেয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন
সীমিত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের কলেজে পড়তে হবে। স্নাতক পর্যায়ে ভর্তির
ক্ষেত্রে বড় ধরনের সমস্যা না হলেও অপেক্ষাকৃত কম জিপিএ পাওয়া শিক্ষার্থীরা
অনার্সে ভর্তির ফরমই কিনতে পারবে না বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দেয়া শর্তের কারণে।
যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় তার মধ্যে সবার
পছন্দ ঢাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাবিতে আসন রয়েছে ৬২৭০টি। রাজশাহী
বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন রয়েছে ৩৭৮০টি। সরকারি মেডিকেল কলেজে দু’হাজারের কিছু
বেশি আসন রয়েছে। এর মধ্যে ৯টি মেডিকেলে ১৭৫ জন করে বাকি বেশির ভাগ কলেজেই
১০০ করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। বেসরকারি মেডিকেলে প্রায় সমসংখ্যক
শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটি অনুষদ রয়েছে।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি অনুষদের অধীনে ২৫টি বিভাগে ২৪২০টি আসন রয়েছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭৫৫টি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৬১৯টি আসন রয়েছে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ১৪৬৫টি আসন রয়েছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও
প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৪৮২টি আসন রয়েছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬টি
ডিসিপ্লিনে ৬০০ আসন রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯১৪টি আসন রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫০টি আসন রয়েছে।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৫০টি আসন রয়েছে। হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও
প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৪২টি আসন রয়েছে। মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও
প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০০টি আসন রয়েছে। ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি
বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬টি বিভাগে ৫২৭টি আসন রয়েছে। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি
বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬০০টি আসন রয়েছে। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি
বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৬০টি আসন রয়েছে। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি
বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৭০ আসন রয়েছে। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪১৩ আসন রয়েছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৪০ আসন রয়েছে।
ময়মনসিংহের ত্রিশালে কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৯৯টি আসন রয়েছে।
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২৫টি,
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩১২টি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালে
৫৫টি ও রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২০০, পাবনা বিজ্ঞান ও
প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৬০টি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও
প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০টি, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭০টি ও
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০০ আসন রয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন প্রায়
১৭০০ অনার্স কলেজ রয়েছে। এছাড়া ১৬০০ ডিগ্রি কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।
সবমিলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ লাখ ২৪ হাজার ৪৬২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা
হয়। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয় ৪৪ হাজার ৪২৭ জন। এছাড়া দেশের
৭১টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৯০ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।
এছাড়া ৫৪টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও শতাধিক বেসরকারি পলিটেকনিক প্রায়
৫০ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তিও সুযোগ রয়েছে। সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়,
মেডিকেল, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় মিলে আসন রয়েছে ৬ লাখ
৪৮ হাজার ২৬৯টি। এ হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১ লাখ শিক্ষার্থী কোথাও ভর্তি হতে
পারবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক সদরুল আমিন বলেন,
এখন রাজনৈতিক বিবেচনায় জিপিএ-৫ দেয়া হয়। ফলে দেখা যায় জিপিএ-৫ পেয়েও অনেকে
ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক
এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, এসএসসি ও এইচএসসির ফল নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
ভাল ফল হলেও ভাল লেখাপড়া হচ্ছে না। সবকিছু হচ্ছে রাজনৈতিক বিবেচনায়।
রাজনৈতিক চিন্তা থেকেই জিপিএ-৫ ও পাসের হার বাড়ানো হচ্ছে। এজন্য ভাল ফল
করেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক
উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, পাসের হারের ন্যায় ঢালাওভাবে মান বেড়েছে
এটা বলা যাবে না। তবে বর্তমানের শিক্ষার্থীরা অনেক সিরিয়াস। তাদের মান
কিছুটা বেড়েছে এটা স্বীকার করতেই হবে। তিনি আরও বলেন, জিপিএ-৫ পেয়ে
শিক্ষার্থীরা ঠিকই উল্লসিত হয়। অথচ জিপিএ-৫ এর ভিত্তিতে যখন মেডিকেলে
ভর্তির কথা বলা হলো তখন তারা ভরসা রাখতে পারে না। এসোসিয়েশন অব প্রাইভেট
ইউনিভার্সিটিজ অব বাংলাদেশ (এপিইউবি)-এর সহসভাপতি আবুল কাশেম হায়দার বলেন,
জিপিএ ৫-এর সংখ্যা ও পাসের হার বাড়ানো হচ্ছে রাজনৈতিক বিবেচনায়। এটা করা
হচ্ছে জনগণকে খুশি করতে। এখন হাজার হাজার ছেলেমেয়ে জিপিএ-৫ পাচ্ছে। অথচ
অনেকের দ্বিতীয় বিভাগ পাওয়ার যোগ্যতা নেই। তারা ক্লাসে গিয়ে হা করে তাকিয়ে
থাকে। শিক্ষকদের লেকচার বোঝে না।
No comments