চাঁদরাতে চাঁদের সঙ্গে দিয়েছিলাম আড়ি by মোকাম্মেল হোসেন
এবাদত
সাহেব ঈদ মোবারক বলে হাত বাড়িয়ে দিলেন। তারপর বুক। ঈদের ছুটি শেষে অফিসে
এসেছি। রেওয়াজ অনুযায়ী সহকর্মীদের সঙ্গে ঈদ-পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় চলছে।
হাতের সঙ্গে হাত আর বুকের সঙ্গে বুক মেলানো শেষ করে এবাদত সাহেব বললেন,
: ঈদ কেমন কাটাইলেন?
ঈদ আনন্দেই কেটেছে। তবে এ আনন্দের দাম অনেক চড়ামূল্যে শোধ করতে হয়েছে। মূল্য শোধের কথা মনে হতেই আমার একটা ঘটনার কথা মনে পড়ল। ঘটনাটা আমাদের গ্রামের মৌরণের মা চাচিকে নিয়ে। চাচি মারা গেছেন অনেক বছর আগে। তবে তার সৃষ্ট ঘটনা বিবর্তিত হয়ে বর্তমানে গল্পের রূপ ধারণ করেছে। প্রচলিত গল্পটা হচ্ছে এরকম-
দুপুরবেলা মৌরণের মা চাচি রান্নাঘরে বসে খাবারের আয়োজন করছিলেন। এমন সময় এক ফকির এসে হাঁক ছাড়ল,
: মা- ফকিররে ভিক্ষা দেইন মা।
কিছুক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পর কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ফকির পুনরায় বলল,
: খয়রাত দেইন গো মা। দান-খয়রাতের অনেক বরকত। এক পয়সা দান করলে ৭০ পয়সা পাওয়া যায়।
ফকিরের কথায় চাচি চমৎকৃত হলেন। তিনি মনে মনে হিসাব করে দেখলেন- এক পয়সায় যদি ৭০ পয়সা পাওয়া যায় তাহলে এক টাকায় ৭০ টাকা আর ১০০ টাকায় ৭০০ টাকা পাওয়া যাওয়ার কথা! চাচি আর দেরি করলেন না। বালিশের নিচে রাখা ১০০ টাকার নোটখানা এনে ফকিরের হাতে তুলে দিলেন।
বিকেলে হাটে যাওয়ার আগে নসিমদ্দি চাচা টাকার তালাস করতেই চাচি বললেন,
: টেকা তো আমি এক ফকিররে দিয়া দিছি।
-ফকিররে দিয়া দিছস মানে?
ফকিরকে টাকা দেয়ার রহস্য খোলাসা করতেই চাচার মাথা গরম হয়ে গেল। আগের দিনের ১০০ টাকা এখনকার দিনের ১০০ টাকার মতো এত ফালতু ছিল না। চাচা দিগি¦দিক জ্ঞানশূন্য হয়ে চাচির গায়ে হাত তুললেন। তারপর কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বাজারে চলে গেলেন।
মার খেয়ে চাচি নাওয়া-খাওয়া করলেন না। রাতে ঘরে শুতে গেলেন না। রান্নঘরের পেছনে গিয়ে বসে রইলেন। অনেক রাতে চাচির মান ভাঙানোর জন্য কুপিবাতি হাতে চাচা সেখানে গিয়ে তার হাত ধরে টান দিতেই চাচি একটা ছোট্ট কলাগাছ আঁকড়ে ধরলেন। টানাটানির এক পর্যায়ে চারা কলাগাছটা উপড়ে যেতেই কুপিবাতির আলোয় গর্ত হয়ে যাওয়া জায়গায় একটা বস্তু চকচক করে উঠল। চাচা বস্তুটি হাতে নিয়ে দেখলেন, সেটা একটা আধুলি। আধুলির পাশেই একটা বাঁশের চোঙ্গা পড়েছিল। চাচা কৌতূহলী হয়ে বাঁশের চোঙ্গা হাতে নিয়ে ঝাঁকি দিতেই ভেতরের ধাতব মুদ্রা ঝনঝন করে উঠল। পরে ঘরে এসে বাঁশের চোঙ্গা ভেঙে বাইরে পড়ে থাকা সেই আধুলিসহ ৭০০ টাকা পাওয়া গেল।
এর কয়েক দিন পরে সেই ফকির আবার এসে হাঁক ছাড়ল,
: মা- ফকিররে ভিক্ষা দেইন মা।
কিছুক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পর কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ফকির পুনরায় বলল,
: খয়রাত দেইন গো মা। দান-খয়রাতের অনেক বরকত। এক পয়সা দান করলে ৭০ পয়সা পাওয়া যায়।
এ কথা শোনার পর চাচি আপনমনে বললেন,
: ফকির বাবা- এক পয়সা দান করলে ৭০ পয়সা পাওয়া যায় সত্য, তবে শরীরের ওপর চোট পড়ে...
পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে গিয়ে আমার কেবল শরীরের ওপরই চোট পড়েনি, জানের ওপরও চোট পড়ার উপক্রম হয়েছিল। পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে পরিবারের অন্য সদস্যরা ২০ রোজার পরই ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে হিজরত করেছিল। রুটি-রুজির কারণে ঢাকায় থাকতে বাধ্য হলেও ট্রেনের একখানা অগ্রিম টিকিট জোগাড় করতে সক্ষম হওয়ায় আমি বেশ নিশ্চিন্তেই ছিলাম। কিন্তু নির্ধারিত দিনে রেলস্টেশনে হাজির হওয়ার পর আমার মাথা চক্কর দিয়ে উঠল। আমি ঘুমের মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে রেলস্টেশনে চলে এসেছি, না সত্যি সত্যি এসেছি তা বোঝার জন্য হাতে চিমটি কাটলাম। চিমটির প্রতিক্রিয়া অনুভব করে বুঝতে পারলাম, বাস্তব জগতেই আছি। কিন্তু হিসাব তো মিলছে না!
হিসাব মেলানোর জন্য ট্রেনের অ্যাটেনডেন্টের দ্বারস্থ হলাম। সে দেখিয়ে দিল ট্রেনের গার্ডকে। গার্ড যেতে বলল স্টেশন মাস্টারের কাছে। স্টেশন মাস্টার সব শুনে বলল,
: ভাই একটু বসেন। স্যার বিদায় হওয়ার পর আপনের সমস্যাটা দেখতেছি...
স্যার মানে মন্ত্রী। মন্ত্রী বাহাদুর খলিফা হারুন-উর-রশিদ স্টাইলে দলবল নিয়ে প্লাটফর্মে ঘুরে ঘুরে জনগণের সুখ-দুঃখ দেখছেন। তাকে ঘিরে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর ক্যামেরা-লাইট-অ্যাকশনের মহড়া চলছে। আমার খুব ইচ্ছে হল, মন্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে বলি,
: অই মিয়া, আপনে যে টিভি ক্যামেরার সামনে দাঁড়াইয়া বুলি আওড়াইতেছেন- হেন করেছি, তেন করেছি। এই পর্যন্ত কী করতে সক্ষম হইছেন- এই দেখেন তার নমুনা।
কল্পনায় বন্দুক ছাড়াই বাঘ শিকার সম্ভব। কিন্তু বাস্তব সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। আমি মনে মনে কয়েকবার এ দৃশ্যটির মহড়া দিলেও বাস্তবে তা রূপায়নের সাহস পেলাম না। এই দেশে আইন-শৃংখলা বাহিনীর একজন সাধারণ সদস্যকেও সমীহ না করলে তারা সেটাকে বেয়াদবি মনে করে হাতে-পায়ে গুলি করে মানুষকে সারাজীবনের জন্য পঙ্গু করে দেয়। অস্ত্র মামলাসহ নানা ধরনের মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়। মন্ত্রী যদি আমার ন্যায্য কথাকে ধৃষ্টতা ভেবে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠেন, তাহলে জীবন কয়লা হতে সময় লাগবে না। আমি স্টেশন মাস্টারের দিকে সকাতর দৃষ্টিতে তাকালাম। ভদ্রলোক মনে হয় আমার কথা ভুলে গেছেন। তার মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করতেই করতেই ট্রেন ছাড়ার সময় হয়ে গেল। দেখলাম- সমস্যা সমাধানের আশায় এই লোকের দিকে তাকিয়ে থাকলে আজ আর বাড়ি যাওয়া হবে না। আমি মনের ব্যথা মনে রেখে ট্রেনের সামনে এসে দাঁড়ালাম। আর ঠিক তখনই ট্রেন ছাড়ার বাঁশি বেজে ওঠল।
অধিকার আদায়ের ব্যর্থ চেষ্টা না করে প্রথমেই যদি ট্রেনে ওঠার প্রয়াস চালাতাম, তবে ভেতরে দাঁড়ানোর মতো একটা জায়গা পাওয়া যেত। এখন তারও উপায় নেই। কোনো রকমে দরজার হ্যান্ডেল ধরে ঝুলে পড়ে ভেতরে মাথা ঢুকিয়ে বুঝতে পারলাম- কোথায় মাথা ঢুকিয়েছি! কয়েক মিনিট অতিবাহিত হতে না হতেই মানুষের চাপের ঠেলায় আমার জিহ্বা ঝুলে পড়ল। আল্লাহপাকের অসীম অনুগ্রহ- তিনি আমাদের শরীরে নাট-বল্টুর সিস্টেম রাখেননি। শরীরে নাট-বল্টুর সিস্টেম থাকলে এই চাপে এতক্ষণে তার অধিকাংশই খুলে পড়ে যেত। চাপ ও তাপ সহ্যের সীমা অতিক্রম করায় বিমানবন্দর স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে পড়লাম। একবার ভাবলাম, সড়কপথে যাওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু ভরসা পেলাম না। সকালবেলা টেলিভিশনের খবরে দেখেছি- ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ১০ কিলোমিটারব্যাপী যানজট লেগে আছে। চারলেনে উন্নীত করার নামে এই মহাসড়কের অবস্থা এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যাকে বলে ফর্দিফাই অবস্থা। আমরা বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের মানুষ বর্তমানে এই ফর্দিফাই অবস্থার মধ্যে পড়ে গেছি।
সড়কপথ অবরুদ্ধ। রেলপথে কাপড়-চোপড় তো দূরস্থান- গায়ের চামড়া পর্যন্ত অক্ষত রাখা কঠিন। কী করব ভেবে পাচ্ছি না। হঠাৎ দেখি, স্টেশনের ফুটওভার ব্রিজ থেকে লোকজন ট্রেনের ছাদের উপর টুপটাপ করে লাফিয়ে পড়ছে। শেষ উপায় হিসেবে আমিও একই পথ অনুসরণ করে ট্রেনের ছাদে লাফিয়ে পড়তেই একজন আমার হাত ধরে পাশে বসালেন। আমি তার নাম দিলাম ছাদসখা। দেখলাম, শুধু ছাদসখা নয়, আশপাশে প্রচুর ছাদসখিও রয়েছে। ছাদের পরিবেশ অনেকটা ভালো। গায়ে বেশ হাওয়া-বাতাস লাগছে। তবে জীবনে এর আগে কখনো ট্রেনের ছাদে চড়িনি। তাই ভয় পাচ্ছিলাম- যদি গড়িয়ে পড়ে যাই! আমার কাঁপাকাঁপি দেখে ছাদসখা বললেন,
: আপনের ছাদে ওঠা ঠিক হয় নাই!
ছাদসখার কথায় আমি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লাম। পকেট থেকে ট্রেনের টিকিট বের করে বললাম,
: দুঃখের কথা কী বলব ভাই! এই দেখেন আমার টিকিট। টিকিটে সিটনম্বর লেখা থাকলেও বাস্তবে তা নাই।
-কী রকম!
: রেল কর্তৃপক্ষ আমাকে এই ট্রেনের ‘ক’ বগির ৫৫ নম্বর সিট বরাদ্দ দিয়েছে। অথচ এই ট্রেনে সংযুক্ত ‘ক’ বগিতে ৩০ নম্বরের পরে আর কোনো সিটই নাই। কমলাপুর স্টেশনে এইটা লইয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেন-দরবার করার চেষ্টা করছি। কিন্তু লাভ হয় নাই। শেষে বাধ্য হইয়া ছাদে উঠছি।
: কমলাপুর স্টেশনে তো পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশনের সংবাদকর্মীরা ছিল। আপনে বিষয়টা তাদের নজরে আনতেন!
ছাদসখার কথায় আমি বিমর্ষ ভঙ্গিতে হাসলাম। বললাম,
: রেল ডিপার্টমেন্টের অবস্থা হইল কোনো ঝরনাধারার পাদদেশে পইড়া থাকা পাথরের মতো। ঝরনার পানিতে সেই পাথর সারাক্ষণ ভিজতেছে কিন্তু তার সর্দি লাগতেছে না। রেল বিভাগ লইয়া লেখালেখি-উপদেশ-অনুরোধ তো কম হইল না! কিন্তু যার শরীরের সব রক্ত দূষিত হইয়া পড়ছে, তারে ভিটামিন ট্যাবলেট খাওয়াইলে লাভ কী!
-তা ঠিক। তবে উন্নত দেশে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে হৈচৈ পইড়া যাইত। এমন কী বিষয়টা মামলা-মোকদ্দমা পর্যন্ত গড়াইত।
: মামলা করার কথা আমারও একবার মনে হইছিল। কিন্তু ভাইব্যা দেখলাম- নেকড়ের স্বেচ্ছাচারিতা সম্পর্কে নালিশ করার জন্য কুমিরের শরণাপন্ন হওয়ার পর কোনো মেষশাবকের যে দশা হয়, আমারও সেই একই দশা হবে। খামাকা ঝামেলা বাড়ানোর আর কোনো ফায়দা নাই...
ট্রেনের ঝাঁকুনিতে ঈদের বাজার-সদাই রাখা ব্যাগটা একপাশে কাত হয়ে পড়ে যাচ্ছিল। সেটা আগলে রাখতে গিয়ে আরেক ধরনের কষ্ট মনের মধ্যে মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। কয়েক দিন আগে টেলিভিশনে দেখলাম- টেলিভিশনের এক সংবাদকর্মী শপিং করতে যাওয়া ছোট্ট একটা মেয়েকে জিজ্ঞেস করছে,
: আপুমণি, এবারের ঈদে তোমার বাজেট কত?
ছোট্ট মেয়েটি কোনোরকম ইতস্তত না করে উচ্চারণ করল,
: ৫০ হাজার টাকা।
ঈদ উপলক্ষে আমার ব্যাগে যে বাজার-সদাই আছে, তা ওই ছোট্ট মেয়েটির বাজেটের ধারেকাছেও নেই। আমি তো তবু একটা অবস্থানে আছি। আমার নিচে যারা আছে- খুশির এই ঈদে তাদের প্রকৃত অবস্থা কী? আমার গ্রামের এক লোক কয়েক দিন আগে ফোন করে আমাকে বলল,
: ভাই, এইবার টাকা-পয়সার কোনো ব্যবস্থা করতে পারি নাই। আপনে আমারে ঈদ করার জন্য কিছু টাকা দেন।
-কত?
: এক হাজার।
-এক হাজারে চলব?
: চলব।
আমার জানা মতে ওই লোকের পরিবারের সদস্য সংখ্যা পাঁচ। তার মানে একা এই মেয়েটি আড়াইশ’ লোকের ঈদের আনন্দ হাতের তালুতে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভাবা যায়! এই বাস্তবতা আমাকে আরও একটি রূঢ় সত্যের সামনে দাঁড় করিয়ে দিল। শুনেছি, এবারের ঈদে লেনদেনের পরিমাণ অন্তত ৪০ হাজার কোটি টাকা। প্রশ্ন হল, এই ৪০ হাজার কোটি টাকায় আমার বা গ্রামের সেই লোকটির মতো দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অংশগ্রহণ কত শতাংশ?
ট্রেনের ছাদে বসেই ইফতার করলাম। ইফতার শেষে ঈদের চাঁদ দেখার জন্য মাথা উঁচু করেছি- এমন সময় মাথার উপর দিয়ে শাঁ করে একটা কিছু চলে গেল। তাকিয়ে দেখি আমার মাথার টুপিটা হাওয়ায় ভাসছে। এ সময় কেউ একজন চিৎকার করে উঠল,
: সবাই মাথা নিচু করেন। পোলাপানে পাথর ছুঁড়তেছে।
কিছুক্ষণ পর ছাদসখা আমাকে বললেন,
: আপনের ভাগ্য ভালো। ঢিলটা আধা ইঞ্চি নিচে দিয়া গেলে বাড়িতে আইজ আপনের লাশ যাইত!
রেললাইনের পাশে উল্লাসরত শিশু-কিশোরদের চেহারা মনের পর্দায় ভেসে উঠতেই আমার বুকটা হু হু করে উঠল। এই আমাদের বাংলাদেশ। এই আমাদের ভবিষ্যৎ। সরকার দেশে শিক্ষার হার শতভাগে উন্নীত করার সাফল্য নিয়ে গৌরব করে। গৌরব করা শিক্ষার এই হাল?
ভয়ে-আতংকে সেই যে মাথা নিচু করেছিলাম, আর উঁচু করিনি। হঠাৎ শুনি ছাদসখা কোমলস্বরে বলছেন,
: ভাই, আকাশে ঈদের চাঁদ দেখা যাইতেছে। দেখেন, কী সুন্দর চাঁদ!
শাওয়ালের চাঁদ খুশির বার্তা নিয়ে বাংলার আকাশে উদয় হয়েছে। চাঁদ কি জানে- তার আগমন এদেশের কত সহস্র মানুষের জীবনে দুর্ভোগ ও বেদনার দীর্ঘশ্বাস ডেকে এনেছে? আমি মাথা তুললাম না। শুধু মনে মনে চাঁদের উদ্দেশে বললাম,
: তুমি না এলে আমাকে এমন বিপন্ন সময় অতিক্রম করতে হতো না। তাই তোমার সঙ্গে আড়ি-আড়ি-আড়ি।
মোকাম্মেল হোসেন : সাংবাদিক
: ঈদ কেমন কাটাইলেন?
ঈদ আনন্দেই কেটেছে। তবে এ আনন্দের দাম অনেক চড়ামূল্যে শোধ করতে হয়েছে। মূল্য শোধের কথা মনে হতেই আমার একটা ঘটনার কথা মনে পড়ল। ঘটনাটা আমাদের গ্রামের মৌরণের মা চাচিকে নিয়ে। চাচি মারা গেছেন অনেক বছর আগে। তবে তার সৃষ্ট ঘটনা বিবর্তিত হয়ে বর্তমানে গল্পের রূপ ধারণ করেছে। প্রচলিত গল্পটা হচ্ছে এরকম-
দুপুরবেলা মৌরণের মা চাচি রান্নাঘরে বসে খাবারের আয়োজন করছিলেন। এমন সময় এক ফকির এসে হাঁক ছাড়ল,
: মা- ফকিররে ভিক্ষা দেইন মা।
কিছুক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পর কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ফকির পুনরায় বলল,
: খয়রাত দেইন গো মা। দান-খয়রাতের অনেক বরকত। এক পয়সা দান করলে ৭০ পয়সা পাওয়া যায়।
ফকিরের কথায় চাচি চমৎকৃত হলেন। তিনি মনে মনে হিসাব করে দেখলেন- এক পয়সায় যদি ৭০ পয়সা পাওয়া যায় তাহলে এক টাকায় ৭০ টাকা আর ১০০ টাকায় ৭০০ টাকা পাওয়া যাওয়ার কথা! চাচি আর দেরি করলেন না। বালিশের নিচে রাখা ১০০ টাকার নোটখানা এনে ফকিরের হাতে তুলে দিলেন।
বিকেলে হাটে যাওয়ার আগে নসিমদ্দি চাচা টাকার তালাস করতেই চাচি বললেন,
: টেকা তো আমি এক ফকিররে দিয়া দিছি।
-ফকিররে দিয়া দিছস মানে?
ফকিরকে টাকা দেয়ার রহস্য খোলাসা করতেই চাচার মাথা গরম হয়ে গেল। আগের দিনের ১০০ টাকা এখনকার দিনের ১০০ টাকার মতো এত ফালতু ছিল না। চাচা দিগি¦দিক জ্ঞানশূন্য হয়ে চাচির গায়ে হাত তুললেন। তারপর কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বাজারে চলে গেলেন।
মার খেয়ে চাচি নাওয়া-খাওয়া করলেন না। রাতে ঘরে শুতে গেলেন না। রান্নঘরের পেছনে গিয়ে বসে রইলেন। অনেক রাতে চাচির মান ভাঙানোর জন্য কুপিবাতি হাতে চাচা সেখানে গিয়ে তার হাত ধরে টান দিতেই চাচি একটা ছোট্ট কলাগাছ আঁকড়ে ধরলেন। টানাটানির এক পর্যায়ে চারা কলাগাছটা উপড়ে যেতেই কুপিবাতির আলোয় গর্ত হয়ে যাওয়া জায়গায় একটা বস্তু চকচক করে উঠল। চাচা বস্তুটি হাতে নিয়ে দেখলেন, সেটা একটা আধুলি। আধুলির পাশেই একটা বাঁশের চোঙ্গা পড়েছিল। চাচা কৌতূহলী হয়ে বাঁশের চোঙ্গা হাতে নিয়ে ঝাঁকি দিতেই ভেতরের ধাতব মুদ্রা ঝনঝন করে উঠল। পরে ঘরে এসে বাঁশের চোঙ্গা ভেঙে বাইরে পড়ে থাকা সেই আধুলিসহ ৭০০ টাকা পাওয়া গেল।
এর কয়েক দিন পরে সেই ফকির আবার এসে হাঁক ছাড়ল,
: মা- ফকিররে ভিক্ষা দেইন মা।
কিছুক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পর কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ফকির পুনরায় বলল,
: খয়রাত দেইন গো মা। দান-খয়রাতের অনেক বরকত। এক পয়সা দান করলে ৭০ পয়সা পাওয়া যায়।
এ কথা শোনার পর চাচি আপনমনে বললেন,
: ফকির বাবা- এক পয়সা দান করলে ৭০ পয়সা পাওয়া যায় সত্য, তবে শরীরের ওপর চোট পড়ে...
পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে গিয়ে আমার কেবল শরীরের ওপরই চোট পড়েনি, জানের ওপরও চোট পড়ার উপক্রম হয়েছিল। পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে পরিবারের অন্য সদস্যরা ২০ রোজার পরই ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে হিজরত করেছিল। রুটি-রুজির কারণে ঢাকায় থাকতে বাধ্য হলেও ট্রেনের একখানা অগ্রিম টিকিট জোগাড় করতে সক্ষম হওয়ায় আমি বেশ নিশ্চিন্তেই ছিলাম। কিন্তু নির্ধারিত দিনে রেলস্টেশনে হাজির হওয়ার পর আমার মাথা চক্কর দিয়ে উঠল। আমি ঘুমের মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে রেলস্টেশনে চলে এসেছি, না সত্যি সত্যি এসেছি তা বোঝার জন্য হাতে চিমটি কাটলাম। চিমটির প্রতিক্রিয়া অনুভব করে বুঝতে পারলাম, বাস্তব জগতেই আছি। কিন্তু হিসাব তো মিলছে না!
হিসাব মেলানোর জন্য ট্রেনের অ্যাটেনডেন্টের দ্বারস্থ হলাম। সে দেখিয়ে দিল ট্রেনের গার্ডকে। গার্ড যেতে বলল স্টেশন মাস্টারের কাছে। স্টেশন মাস্টার সব শুনে বলল,
: ভাই একটু বসেন। স্যার বিদায় হওয়ার পর আপনের সমস্যাটা দেখতেছি...
স্যার মানে মন্ত্রী। মন্ত্রী বাহাদুর খলিফা হারুন-উর-রশিদ স্টাইলে দলবল নিয়ে প্লাটফর্মে ঘুরে ঘুরে জনগণের সুখ-দুঃখ দেখছেন। তাকে ঘিরে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর ক্যামেরা-লাইট-অ্যাকশনের মহড়া চলছে। আমার খুব ইচ্ছে হল, মন্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে বলি,
: অই মিয়া, আপনে যে টিভি ক্যামেরার সামনে দাঁড়াইয়া বুলি আওড়াইতেছেন- হেন করেছি, তেন করেছি। এই পর্যন্ত কী করতে সক্ষম হইছেন- এই দেখেন তার নমুনা।
কল্পনায় বন্দুক ছাড়াই বাঘ শিকার সম্ভব। কিন্তু বাস্তব সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। আমি মনে মনে কয়েকবার এ দৃশ্যটির মহড়া দিলেও বাস্তবে তা রূপায়নের সাহস পেলাম না। এই দেশে আইন-শৃংখলা বাহিনীর একজন সাধারণ সদস্যকেও সমীহ না করলে তারা সেটাকে বেয়াদবি মনে করে হাতে-পায়ে গুলি করে মানুষকে সারাজীবনের জন্য পঙ্গু করে দেয়। অস্ত্র মামলাসহ নানা ধরনের মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়। মন্ত্রী যদি আমার ন্যায্য কথাকে ধৃষ্টতা ভেবে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠেন, তাহলে জীবন কয়লা হতে সময় লাগবে না। আমি স্টেশন মাস্টারের দিকে সকাতর দৃষ্টিতে তাকালাম। ভদ্রলোক মনে হয় আমার কথা ভুলে গেছেন। তার মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করতেই করতেই ট্রেন ছাড়ার সময় হয়ে গেল। দেখলাম- সমস্যা সমাধানের আশায় এই লোকের দিকে তাকিয়ে থাকলে আজ আর বাড়ি যাওয়া হবে না। আমি মনের ব্যথা মনে রেখে ট্রেনের সামনে এসে দাঁড়ালাম। আর ঠিক তখনই ট্রেন ছাড়ার বাঁশি বেজে ওঠল।
অধিকার আদায়ের ব্যর্থ চেষ্টা না করে প্রথমেই যদি ট্রেনে ওঠার প্রয়াস চালাতাম, তবে ভেতরে দাঁড়ানোর মতো একটা জায়গা পাওয়া যেত। এখন তারও উপায় নেই। কোনো রকমে দরজার হ্যান্ডেল ধরে ঝুলে পড়ে ভেতরে মাথা ঢুকিয়ে বুঝতে পারলাম- কোথায় মাথা ঢুকিয়েছি! কয়েক মিনিট অতিবাহিত হতে না হতেই মানুষের চাপের ঠেলায় আমার জিহ্বা ঝুলে পড়ল। আল্লাহপাকের অসীম অনুগ্রহ- তিনি আমাদের শরীরে নাট-বল্টুর সিস্টেম রাখেননি। শরীরে নাট-বল্টুর সিস্টেম থাকলে এই চাপে এতক্ষণে তার অধিকাংশই খুলে পড়ে যেত। চাপ ও তাপ সহ্যের সীমা অতিক্রম করায় বিমানবন্দর স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে পড়লাম। একবার ভাবলাম, সড়কপথে যাওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু ভরসা পেলাম না। সকালবেলা টেলিভিশনের খবরে দেখেছি- ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ১০ কিলোমিটারব্যাপী যানজট লেগে আছে। চারলেনে উন্নীত করার নামে এই মহাসড়কের অবস্থা এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যাকে বলে ফর্দিফাই অবস্থা। আমরা বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের মানুষ বর্তমানে এই ফর্দিফাই অবস্থার মধ্যে পড়ে গেছি।
সড়কপথ অবরুদ্ধ। রেলপথে কাপড়-চোপড় তো দূরস্থান- গায়ের চামড়া পর্যন্ত অক্ষত রাখা কঠিন। কী করব ভেবে পাচ্ছি না। হঠাৎ দেখি, স্টেশনের ফুটওভার ব্রিজ থেকে লোকজন ট্রেনের ছাদের উপর টুপটাপ করে লাফিয়ে পড়ছে। শেষ উপায় হিসেবে আমিও একই পথ অনুসরণ করে ট্রেনের ছাদে লাফিয়ে পড়তেই একজন আমার হাত ধরে পাশে বসালেন। আমি তার নাম দিলাম ছাদসখা। দেখলাম, শুধু ছাদসখা নয়, আশপাশে প্রচুর ছাদসখিও রয়েছে। ছাদের পরিবেশ অনেকটা ভালো। গায়ে বেশ হাওয়া-বাতাস লাগছে। তবে জীবনে এর আগে কখনো ট্রেনের ছাদে চড়িনি। তাই ভয় পাচ্ছিলাম- যদি গড়িয়ে পড়ে যাই! আমার কাঁপাকাঁপি দেখে ছাদসখা বললেন,
: আপনের ছাদে ওঠা ঠিক হয় নাই!
ছাদসখার কথায় আমি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লাম। পকেট থেকে ট্রেনের টিকিট বের করে বললাম,
: দুঃখের কথা কী বলব ভাই! এই দেখেন আমার টিকিট। টিকিটে সিটনম্বর লেখা থাকলেও বাস্তবে তা নাই।
-কী রকম!
: রেল কর্তৃপক্ষ আমাকে এই ট্রেনের ‘ক’ বগির ৫৫ নম্বর সিট বরাদ্দ দিয়েছে। অথচ এই ট্রেনে সংযুক্ত ‘ক’ বগিতে ৩০ নম্বরের পরে আর কোনো সিটই নাই। কমলাপুর স্টেশনে এইটা লইয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেন-দরবার করার চেষ্টা করছি। কিন্তু লাভ হয় নাই। শেষে বাধ্য হইয়া ছাদে উঠছি।
: কমলাপুর স্টেশনে তো পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশনের সংবাদকর্মীরা ছিল। আপনে বিষয়টা তাদের নজরে আনতেন!
ছাদসখার কথায় আমি বিমর্ষ ভঙ্গিতে হাসলাম। বললাম,
: রেল ডিপার্টমেন্টের অবস্থা হইল কোনো ঝরনাধারার পাদদেশে পইড়া থাকা পাথরের মতো। ঝরনার পানিতে সেই পাথর সারাক্ষণ ভিজতেছে কিন্তু তার সর্দি লাগতেছে না। রেল বিভাগ লইয়া লেখালেখি-উপদেশ-অনুরোধ তো কম হইল না! কিন্তু যার শরীরের সব রক্ত দূষিত হইয়া পড়ছে, তারে ভিটামিন ট্যাবলেট খাওয়াইলে লাভ কী!
-তা ঠিক। তবে উন্নত দেশে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে হৈচৈ পইড়া যাইত। এমন কী বিষয়টা মামলা-মোকদ্দমা পর্যন্ত গড়াইত।
: মামলা করার কথা আমারও একবার মনে হইছিল। কিন্তু ভাইব্যা দেখলাম- নেকড়ের স্বেচ্ছাচারিতা সম্পর্কে নালিশ করার জন্য কুমিরের শরণাপন্ন হওয়ার পর কোনো মেষশাবকের যে দশা হয়, আমারও সেই একই দশা হবে। খামাকা ঝামেলা বাড়ানোর আর কোনো ফায়দা নাই...
ট্রেনের ঝাঁকুনিতে ঈদের বাজার-সদাই রাখা ব্যাগটা একপাশে কাত হয়ে পড়ে যাচ্ছিল। সেটা আগলে রাখতে গিয়ে আরেক ধরনের কষ্ট মনের মধ্যে মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। কয়েক দিন আগে টেলিভিশনে দেখলাম- টেলিভিশনের এক সংবাদকর্মী শপিং করতে যাওয়া ছোট্ট একটা মেয়েকে জিজ্ঞেস করছে,
: আপুমণি, এবারের ঈদে তোমার বাজেট কত?
ছোট্ট মেয়েটি কোনোরকম ইতস্তত না করে উচ্চারণ করল,
: ৫০ হাজার টাকা।
ঈদ উপলক্ষে আমার ব্যাগে যে বাজার-সদাই আছে, তা ওই ছোট্ট মেয়েটির বাজেটের ধারেকাছেও নেই। আমি তো তবু একটা অবস্থানে আছি। আমার নিচে যারা আছে- খুশির এই ঈদে তাদের প্রকৃত অবস্থা কী? আমার গ্রামের এক লোক কয়েক দিন আগে ফোন করে আমাকে বলল,
: ভাই, এইবার টাকা-পয়সার কোনো ব্যবস্থা করতে পারি নাই। আপনে আমারে ঈদ করার জন্য কিছু টাকা দেন।
-কত?
: এক হাজার।
-এক হাজারে চলব?
: চলব।
আমার জানা মতে ওই লোকের পরিবারের সদস্য সংখ্যা পাঁচ। তার মানে একা এই মেয়েটি আড়াইশ’ লোকের ঈদের আনন্দ হাতের তালুতে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভাবা যায়! এই বাস্তবতা আমাকে আরও একটি রূঢ় সত্যের সামনে দাঁড় করিয়ে দিল। শুনেছি, এবারের ঈদে লেনদেনের পরিমাণ অন্তত ৪০ হাজার কোটি টাকা। প্রশ্ন হল, এই ৪০ হাজার কোটি টাকায় আমার বা গ্রামের সেই লোকটির মতো দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অংশগ্রহণ কত শতাংশ?
ট্রেনের ছাদে বসেই ইফতার করলাম। ইফতার শেষে ঈদের চাঁদ দেখার জন্য মাথা উঁচু করেছি- এমন সময় মাথার উপর দিয়ে শাঁ করে একটা কিছু চলে গেল। তাকিয়ে দেখি আমার মাথার টুপিটা হাওয়ায় ভাসছে। এ সময় কেউ একজন চিৎকার করে উঠল,
: সবাই মাথা নিচু করেন। পোলাপানে পাথর ছুঁড়তেছে।
কিছুক্ষণ পর ছাদসখা আমাকে বললেন,
: আপনের ভাগ্য ভালো। ঢিলটা আধা ইঞ্চি নিচে দিয়া গেলে বাড়িতে আইজ আপনের লাশ যাইত!
রেললাইনের পাশে উল্লাসরত শিশু-কিশোরদের চেহারা মনের পর্দায় ভেসে উঠতেই আমার বুকটা হু হু করে উঠল। এই আমাদের বাংলাদেশ। এই আমাদের ভবিষ্যৎ। সরকার দেশে শিক্ষার হার শতভাগে উন্নীত করার সাফল্য নিয়ে গৌরব করে। গৌরব করা শিক্ষার এই হাল?
ভয়ে-আতংকে সেই যে মাথা নিচু করেছিলাম, আর উঁচু করিনি। হঠাৎ শুনি ছাদসখা কোমলস্বরে বলছেন,
: ভাই, আকাশে ঈদের চাঁদ দেখা যাইতেছে। দেখেন, কী সুন্দর চাঁদ!
শাওয়ালের চাঁদ খুশির বার্তা নিয়ে বাংলার আকাশে উদয় হয়েছে। চাঁদ কি জানে- তার আগমন এদেশের কত সহস্র মানুষের জীবনে দুর্ভোগ ও বেদনার দীর্ঘশ্বাস ডেকে এনেছে? আমি মাথা তুললাম না। শুধু মনে মনে চাঁদের উদ্দেশে বললাম,
: তুমি না এলে আমাকে এমন বিপন্ন সময় অতিক্রম করতে হতো না। তাই তোমার সঙ্গে আড়ি-আড়ি-আড়ি।
মোকাম্মেল হোসেন : সাংবাদিক
No comments