পবিত্র কোরআনের আলো-সম্মানিত মাসেও আক্রমণের জবাবে আক্রমণ

১৯৩. ওয়া ক্বাতিলূহুম হাত্তা লা-তাকূনা ফিত্নাতুঁ ওয়া ইয়াকূনাদ দীনু লিল্লাহ; ফা-ইনিন্তাহাও ফালা 'উদ্ওয়ানা ইল্লা 'আলাজ জলিমীন। ১৯৪. আশ-শাহ্রুল হারামু বিশ্শাহ্রিল হারামি ওয়াল হুরুমাতু কি্বসাস; ফামানি'তাদা 'আলাইকুম ফা'তাদূ 'আলাইহি বিমিছ্লি মা'তাদা 'আলাইকুম; ওয়াত্তাক্বুল্লাহা ওয়া'লামূ আন্নাল্লাহা মা'আল মুত্তাক্বীন।


১৯৫. ওয়া আন্ফিক্বূ ফী সাবীলিল্লাহি ওয়ালা তুল্ক্বূ বিআইদীকুম ইলাত্ তাহ্লুকাতি ওয়া আহ্সিনূ; ইন্নাল্লাহা ইউহিব্বুল মুহ্সিনীন। [সুরা বাকারা, আয়াত ১৯৩-১৯৫]

অনুবাদ
১৯৩. তোমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে থাক, যতক্ষণ না ফ্যাসাদ অবশিষ্ট থাকে; এবং ধর্ম একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট হয়ে যায়। আর যদি তারা যুদ্ধ থেকে বিরত হয়, তাহলে তাদের সঙ্গে কোনো বাড়াবাড়ি করো না। তবে অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে তো লড়তেই হবে।
১৯৪. একটি সম্মানিত মাসের বদলেই আরেকটি সম্মানিত মাস। এই সম্মানিত বা হারাম মাসেও প্রতিবিধান (আক্রমণের জবাব দেওয়া) বৈধ হবে। যদি কেউ তোমাদের ওপর হস্তক্ষেপ করে, তাহলে তোমরাও সেই হস্তক্ষেপের জবাব দাও, যেমন করে তারা তোমাদের ওপর বাড়াবাড়ি করছে। সব সময় আল্লাহর প্রতি জবাবদিহি থেকো। জেনে রেখো, আল্লাহ তায়ালা দায়িত্বনিষ্ঠদের পাশে আছেন।
১৯৫. আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করো। নিজেদের হাতেই ধ্বংস ডেকে এনো না; এবং তোমরা মানুষের ওপর অনুগ্রহ করো। অবশ্যই আল্লাহ অনুগ্রহকারীদের পছন্দ করেন।

ব্যাখ্যা
উল্লিখিত আয়াতগুলো এসেছে গত সংখ্যায় উল্লিখিত আয়াতগুলোর ধারাবাহিকতায়। প্রসঙ্গ- কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। সম্মানিত মাস বা শাহ্রুল হারামের প্রচলন আরবে দীর্ঘকাল আগে থেকেই ছিল। শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমনের আগে থেকেই তা প্রচলিত ছিল। মক্কায় মুশরিক কুরাইশদের উপস্থিতিতে তাদের সঙ্গে সন্ধি করে মুসলমানরা যখন হজ পালন উপলক্ষে মক্কায় আসছিলেন, তখন তাঁরা চিন্তান্বিত ছিলেন এই ভেবে যে প্রচলিত নিয়ম ভঙ্গ করে মুশরিক কুরাইশরা তাঁদের ওপর আক্রমণ চালাতে পারে বা কোনো ধরনের ফ্যাসাদ সৃষ্টি করতে পারে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, ফ্যাসাদ তো চলছিলই। কারণ মুশরিক কুরাইশরা আল্লাহর একত্ববাদ তথা সত্য ও ন্যায়কে অস্বীকার করেই চলছিল। তারা মুসলমানদের এবং রাসুল (সা.)-কে তাঁদের পিতৃভূমি থেকে বিতাড়িত করে দিয়েছিল। উপরন্তু তারা মদিনায় আক্রমণ চালিয়ে মুসলমানদের নির্মূলের চেষ্টা করছিল। তারা ইসলাম প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে মরণপণ লড়াইয়ে লিপ্ত ছিল। এ অবস্থায় উল্লিখিত আয়াতগুলোর মাধ্যমে মুসলমানদের বিস্তারিত দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছিল। এই আয়াতগুলোতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে- প্রয়োজন হলে শাহ্রুল হারাম বা সম্মানিত মাসেও কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। তবে যুদ্ধের ব্যাপারে সব সময়ই সীমা লঙ্ঘন না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং তাকওয়া বা দায়িত্বনিষ্ঠতা অবলম্বন করার কথা বলা হয়েছে।
যুদ্ধের প্রাসঙ্গিক এসব আয়াত ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে আমাদের একটি কথা মনে রাখতে হবে, এই যুদ্ধ এক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অপর গোষ্ঠীর কিংবা এক দেশের বিরুদ্ধে অন্য দেশের যুদ্ধ ছিল না। এই যুদ্ধ কোনো অবস্থায়ই এক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অপর সম্প্রদায়ের যুদ্ধ ছিল না। এখানে আমাদের লক্ষ রাখতে হবে, মুসলমানদের প্রকৃত শত্রু ছিল কুরাইশরা, যে কুরাইশ বংশে রাসুল (সা.) জন্মগ্রহণ করেছেন। আর তাঁর সাহাবিদের প্রধান অংশও ছিল কুরাইশ বংশোদ্ভূত। সুতরাং তৎকালীন যুগের গোত্রে গোত্রে যুদ্ধ আর বর্তমান যুগের অধিকাংশ স্বার্থের যুদ্ধ বা সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে যুদ্ধের সঙ্গে সেই যুদ্ধের কোনো তুলনা হয় না। সেই যুদ্ধটা ছিল সত্য ও মিথ্যার
মধ্যকার যুদ্ধ।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.