বাজারে মসলার দাম দ্বিগুণ-ব্যবসায়ীদের যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়

ঈদুল আজহার প্রাক্কালে গত ১৫ অক্টোবর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের সঙ্গে আলোচনায় মসলা ব্যবসায়ীরা আশ্বাস দিয়েছিলেন, ঈদ সামনে রেখে মসলার দাম বাড়ানো হবে না। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এ সমঝোতার পর


মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাজার মনিটর করতে গোটা দেশে জেলা প্রশাসক ও জেলা পর্যায়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কমিটিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু চিরাচরিত নিয়মে ঈদ সামনে রেখে সব ধরনের মসলার দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে আমদানি ব্যয় ও শুল্কসহ পাইকারি পর্যায় পর্যন্ত পরিবহন খরচ ও ব্যবসায়ীদের ন্যায্য মুনাফাসহ সব ধরনের মসলার যে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, আক্ষরিক অর্থেই এর দ্বিগুণ আদায় করা হচ্ছে ক্রেতাদের কাছ থেকে। দাম বাড়ার ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের যুক্তি, অবৈধ পথে মসলা আমদানির কারণে বৈধ ব্যবসায়ীরা মার খাচ্ছেন। তাঁদের মতে, মসলার দাম বাড়ার ক্ষেত্রে চোরাকারবারিদের ভূমিকা রয়েছে। যুক্তির কথা হলো, ব্যবসায়ীরা যদি বৈধ পথে আমদানি করা মসলা বাজারে নির্ধারিত মূল্যে ক্রেতাদের পৌঁছে দেন, তাহলে চোরাকারবারিদের তা বাড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ কোথায়? খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতারা চড়া দামে চোরাকারবারিদের কাছ থেকে মসলা কিনবেন কেন? এ যুক্তি তাই হাস্যকর।
সরকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে আনুষ্ঠানিকভাবে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে বটে, কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেনি। যত দিন এ ধরনের সিন্ডিকেট ভাঙা না যাবে, তত দিন কোনো পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়ে লাভ হবে না। আর এ সিন্ডিকেট ভাঙতে প্রয়োজন কঠোর বাজার মনিটরিং। বাজার মনিটরিংয়ের ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে প্রশ্ন করা হলে তারা বরাবরই লোকবলের অভাবের কথা বলে দায়িত্ব এড়িয়ে যায়। বাজার মনিটরিংয়ের জন্য যে লোকবল আছে, তারা যদি যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করে তাহলে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব বলে আমরা মনে করি। প্রায়ই বিশেষ দল দিয়ে বাজারে ঝটিকা অভিযান চালানো হয়। কিন্তু আমাদের বাজারের যে চরিত্র তাতে ঝটিকা অভিযান কার্যকর হবে না। এখানে প্রয়োজন অব্যাহত তদারকি। অনুমেয়, এ কাজ খুব শক্ত নয়। প্রতিটি বাজারের, প্রতিটি দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে পাহারার দরকার নেই। শুধু আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের একটি অংশকে তদারকির আওতায় আনলেই দেশব্যাপী এর সুফল পাওয়া যাবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ সম্পর্কিত আইনকানুনের পক্ষপাতহীন প্রয়োগ পরিস্থিতির অবশ্যই আশাব্যঞ্জক উন্নতি ঘটাতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.