কেমন হওয়া উচিত আমাদের জলবায়ু কূটনীতি -জলবায়ু সম্মেলন by মশিউল আলম
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোপেনহেগেনের জলবায়ু সম্মেলন শেষে মন্তব্য করেছেন, সম্মেলনের পর সারা বিশ্বের দৃষ্টি এখন বাংলাদেশের দিকে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে যেসব বিজ্ঞানী-বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ থেকে ওই সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের বরাত দিয়ে সংবাদ বেরিয়েছে, বাংলাদেশের জলবায়ু কূটনীতি সফল হয়েছে।
কোপেনহেগেনে ১২ দিন ধরে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলন চলাকালে ইন্টারনেটে এ বিষয়ে খোঁজখবর রাখার চেষ্টা করেছি। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হবে, এমন দেশগুলোর মধ্যে প্রথম সারির দেশ বাংলাদেশ ওই সম্মেলনে নিজেকে কীভাবে উপস্থাপন করে এবং অন্যরা তাকে কীভাবে গ্রহণ করে, এ রকম কৌতূহল ছিল। কারণ, এটা এমন এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন, যার মূল আলোচ্য বিষয়ে বাংলাদেশ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি পক্ষ। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সর্বাধিক ক্ষতির শিকার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটা নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে বেরিয়ে আসতে পারত এ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে। এ সম্মেলন ছিল বাংলাদেশের জন্য এক নতুন মাত্রার বিরল সুযোগ।
সেখানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যেসব কথাবার্তা বেশি উচ্চারিত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ছিল জলবায়ু উদ্বাস্তু, অভিযোজন তহবিল, ক্ষতিপূরণমূলক তহবিল ইত্যাদি। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এসব কথা সাড়া জাগায়নি। আমাদের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে অবশ্য এ কথাগুলোই প্রাধান্য পেয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর সম্মেলনে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দি ইন্টারন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ফর ডিজাস্টার রিডাকশনের এক সমীক্ষায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নাম শীর্ষে উঠে এসেছে—এ কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘বন্যার ঝুঁকিতে বাংলাদেশ প্রথম, সুনামির ঝুঁকিতে তৃতীয়, ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকিতে ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে।’ ...‘এই সম্মেলনে আমাদের ক্ষতিপূরণমূলক আর্থিক সহায়তা দিতে হবে।’ অভিযোজনের পুরো অর্থ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই অর্থ অবশ্যই যথেষ্ট পরিমাণে ও সহজে পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’ অবশ্য কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিষয়েও প্রধানমন্ত্রীর ওই ভাষণে আহ্বান ছিল। তবে ওই ভাষণ, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনসহ অন্যান্য বিশ্বনেতার সঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যেসব বৈঠক ও আলাপ-আলোচনার খবর পাওয়া গেল, সেগুলোতে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের কণ্ঠ ছিল বেশি সোচ্চার, কার্বন নিঃসরণ কমানোর ব্যাপারে অপেক্ষাকৃত নিম্নকণ্ঠ।
কিন্তু ঝুঁকির শিকার ছোট ছোট কয়েকটি দেশের নেতারা কোপেনহেগেনে বেশ শোরগোল ফেলে দিয়েছেন। যেমন, জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার গরিব দেশগুলোর জন্য ২০২০ সাল নাগাদ বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার দেওয়া হবে—যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এ রকম এক প্রয়াসের কথা জানালে টুভালুর প্রধানমন্ত্রী আপিসাই ইয়েলেমিয়া বলেন, ‘টাকার বিনিময়ে আমরা আমাদের অস্তিত্ব বিক্রি করতে আগ্রহী নই।’
সম্মেলনের শেষে বিশ্ববাসী মাত্র তিন পৃষ্ঠার যে কাগুজে দলিলটি পেল, সেটি সম্পর্কে প্রথম তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্তকারীদের একজন টুভালু নামের দেশটিরই প্রতিনিধি, ইয়ান ফ্রাই। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের অবস্থা টাইটানিক জাহাজের মতো, আমরা দ্রুত ডুবে যাচ্ছি, এখনই কিছু করা দরকার। কিন্তু এর মধ্যে একদল বলছে, আমরা ডুবে যাচ্ছি কি না, সেটা নিয়ে আরও আলোচনা করার আছে।’
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, কোপেনহেগেনে জলবায়ু সম্মেলন চলাকালে টুভালু নামের দ্বীপরাষ্ট্রটি যে-মাত্রায় মনোযোগ আকর্ষণ করতে পেরেছে, তা ওই দেশটির আকারের তুলনায় অনেক অনেক বেশি। আসলেই, এতটুকু যন্ত্র থেকে এত জোরে শব্দ হয়! এক রত্তি দেশ টুভালু, নয়টি ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে পুরো রাষ্ট্রটির মোট ভূখণ্ডের আয়তন মাত্র ২৬ বর্গকিলোমিটার। লোকসংখ্যা হাতে গোনা যাবে—মাত্র ১১ হাজার ৯৯২ জন। পৃথিবীর চতুর্থ ক্ষুদ্রতম স্বাধীন রাষ্ট্র টুভালুর দ্বীপগুলো এত নিচু যে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আর মাত্র ছয় থেকে আট ইঞ্চি বাড়লেই প্রশান্ত মহাসাগরে তলিয়ে যাবে গোটা দেশ।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী আপিসাই ইয়েলেমিয়া জলবায়ু সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। আমাদের আর কিছুই করার নেই। এমন কোনো পাহাড় আমাদের নেই, যেখানে উঠে আমরা বাঁচতে পারি। এ জন্যই আমরা এত চিত্কার করছি। এখানে আমরা এত হইচই করছি, কারণ আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার মৌলিক অধিকার আছে।’ তাঁরা চিত্কার করছেন ক্ষতিপূরণ বা অভিযোজনের অর্থ পাওয়ার জন্য নয়; কার্বন নিঃসরণ কমাতে ধনী ও শিল্পোন্নত দেশগুলোকে আইনগত বাধ্যবাধকতাসহ চুক্তিবদ্ধ করার লক্ষ্যে। টুভালুর দাবি ছিল, তাপমাত্রা বৃদ্ধি শিল্পায়নপূর্ব সময় থেকে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে হবে, সে জন্য তারা কার্বন নিঃসরণ কমানোর নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ৩৫০ পিপিএম। টুভালুর নয়টি দ্বীপের মধ্যে চারটি হচ্ছে প্রবালদ্বীপ; সমুদ্রজলের অম্লতা বেড়ে যাওয়ার ফলে সেগুলো ক্ষয়ে যাচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা ও হার ক্রমেই বাড়ছে। সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ক্ষতিপূরণ দাবি করেননি, দাবি জানিয়েছেন কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ।
জলবায়ু সম্মেলনের আরেক আলোচিত বক্তা ছিলেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ। সাগরের নিচে মন্ত্রিসভার বৈঠক করে ইতিমধ্যে বিশ্বজুড়ে আলোচিত ৪২ বছর বয়সী যুবক এই রাষ্ট্রপতি জলবায়ু সম্মেলনে সর্বাধিক কার্বন নিঃসরণকারী শিল্পোন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান ২০২০ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ ও ২০৫০ সালের মধ্যে ৯৫ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ কমানোর উদ্যোগ নিতে। চীন, ভারত, ব্রাজিল—এসব দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান ২০২০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ কমাতে। আর সবার প্রতি আহ্বান জানান এমন এক চুক্তিতে পৌঁছাতে, যেখানে কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যে ‘পরিমাপযোগ্য ও আন্তর্জাতিকভাবে যাচাইযোগ্য’ (কোয়ান্টিফাইয়েবল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনালি ভেরিফাইয়েবল) পদক্ষেপ নেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা থাকবে।
সহস্রাধিক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র দ্বীপ নিয়ে গঠিত মালদ্বীপের ৮০ শতাংশ ভূখণ্ড সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র তিন ফুট উঁচু। যে হারে জলবায়ুর উষ্ণতা বাড়ছে, তা অব্যাহত থাকলে মালদ্বীপ নামের কোনো দেশ পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে যাবে। সেই দেশের রাষ্ট্রপতি কোপেনহেগেনে জলবায়ু সম্মেলনে বললেন, ‘কার্বন নিঃসরণ কমানোর পথ দেখাবে মালদ্বীপ। আমরা আগামী ২০২০ সালের মধ্যে কার্বন-নিউট্রাল দেশে পরিণত হব।’ ওই সময়ের মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করার ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মোহাম্মদ নাশিদ বলেন, ‘শিল্পোন্নত দেশগুলোর আর্থিক সহযোগিতা ছাড়া আমরা এটা করতে পারব না। আমি শিল্পোন্নত দেশগুলোকে বলি, আপনাদের টাকা আছে, প্রযুক্তির সিংহভাগও আপনাদের আছে। আমাদের সবুজ হতে সহযোগিতা করুন। কিন্তু একই সঙ্গে আমি এ কথাও বলতে চাই, দয়া করে মনে রাখবেন, জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক আলোচনার সঙ্গে টাকা-পয়সার কোনো, আদৌ কোনো সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক আছে আমাদের নাতি-নাতনিদের। আমার দুটি মেয়ে আছে। আমি নাতি-নাতনির মুখ দেখতে চাই। কিন্তু আমরা যা করছি, তা যদি চালিয়ে যাই, তাহলে নাতি-নাতনির মুখ দেখতে পাব না। টু অ্যাসিউম দ্যাট ক্লাইমেট চেঞ্জ নেগোসিয়েশনস হ্যাভ এনিথিং টু ডু উইথ মানি, ইন মাই মাইন্ড, ইজ দ্য হাইট অব অ্যারোগেন্স।’ টেকপার্ট নামের এক ওয়েবসাইটের একজন সাংবাদিক প্রেসিডেন্ট নাশিদকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ডুবে যাওয়ার আগে তিনি মালদ্বীপের সব মানুষকে অন্য কোনো দেশে সরিয়ে নেওয়ার কথা ভেবেছেন কি না। উত্তরে প্রেসিডেন্ট নাশিদ বলেন, ‘ভারত মহাসাগরের বুকে এই দ্বীপমালায় মানুষ বাস করছে ১০ হাজার বছর ধরে। আমাদের লিখিত ইতিহাসই আছে দুই হাজার বছরের। মালদ্বীপের মানুষ নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে যেতে চায় না। এমনকি এখানকার এক দ্বীপের মানুষ অন্য দ্বীপেও যেতে চায় না। উই ক্যান স্টে দিয়ার, ইফ দ্য ওয়ার্ল্ড স্টার্টস কেয়ারিং।’
আমাদের প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু সম্মেলনের ভাষণে ক্ষতিপূরণ ও অভিযোজনবাবদ তহবিলের দাবির পাশাপাশি এমন দাবিও তুলেছেন, আমাদের জলবায়ু উদ্বাস্তুদের বিশ্বজুড়ে অভিবাসনের সুযোগ দিতে হবে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, জলবায়ুর পরিবর্তন বা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির পেছনে বাংলাদেশের তেমন কোনো ভূমিকা নেই—মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যসহ সম্মেলনে দেওয়া সব তথ্য ও বক্তব্যই সন্দেহাতীতভাবে সঠিক ও যুক্তিসংগত। কিন্তু মূল আলোচ্য প্রসঙ্গ যেখানে কার্বন নিঃসরণ কমানো এবং সে লক্ষ্যেই একটি আইনি বাধ্যবাধকতাপূর্ণ চুক্তিতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে সর্বাত্মক চাপ সৃষ্টি করা, সেখানে এই সব যুক্তিসংগত দাবি-দাওয়া পার্শ্ব-আলোচনার বিষয়। আমাদের এই অবস্থান সঠিক হলো, নাকি এর চেয়ে ভালো অবস্থান আমরা নিতে পারতাম, এ নিয়ে ভাবনার অবকাশ আছে। আমাদের জলবায়ু কূটনীতি কেমন হওয়া উচিত, আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে আমরা কী ভাষায়, সুরে ও ভঙ্গিতে আমাদের বক্তব্য হাজির করব, এ নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার। বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১৫ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে বললেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের নির্দোষ শিকার বাংলাদেশকে সহায়তা করা তাদের (ধনী দেশগুলোর) নৈতিক দায়িত্ব। এখানে ভিক্ষার জন্য দেনদরবার করা মর্যাদাবান জাতি হিসেবে অপমানজনক।’ খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকলে এমন কথা বলতেন কি না সন্দেহ। এখন যখন বললেনই, কথাটা সংসদে গিয়ে বললে, এবং সেখানে এটা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হলে ভালো হতো। কে জানে, হয়তো সংসদে তর্ক-বিতর্কের মধ্য দিয়েই সরকারের নীতিনির্ধারক মহল বুঝতে পারত যে, কোপেনহেগেন সম্মেলনে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর নেতা হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার এক বিরল সুযোগ এসেছে বাংলাদেশের সামনে।
দুঃখের বিষয়, আমরা সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারলাম না। তবে সামনে সময় আছে। আগামী বছর মেক্সিকোতে অনুষ্ঠেয় সম্মেলনের আগে জাতীয় সংসদের ভেতরে ও বাইরে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে স্থির করতে হবে, জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হিসেবে আমরা ক্ষতিপূরণ-অভিযোজনসহ নানা ধরনের তহবিলের দাবিকে প্রাধান্য দেব, নাকি বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণ কমানোর দাবিকেই প্রধান করে তুলব এবং মালদ্বীপের অনুসরণে নিজেরাও সে পদক্ষেপ নেওয়ার মধ্য দিয়ে এই বৈশ্বিক আন্দোলনে নেতৃত্বের ভূমিকায় যাওয়ার চেষ্টা করব। এ বিষয়ে আমরা একটি কৌশলগত পরিকল্পনা মিলিতভাবে তৈরি করতে পারি, যেখানে বলা হবে কী ধরনের আন্তর্জাতিক ফোরামে আমরা কার্বন নিঃসরণ কমানোর দাবিতে বৈশ্বিক আন্দোলনে জোরালো ভূমিকা নিয়ে ভুক্তভোগী দেশগুলোর কাতারে নেতৃত্বের ভূমিকায় যাওয়ার চেষ্টা করব, আর কী ধরনের ফোরামে ক্ষতিপূরণ, অভিযোজন, সম্ভাব্য জলবায়ু উদ্বাস্তুদের অভিবাসন ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলব, দাবি-দাওয়া তুলে ধরব।
মশিউল আলম: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।
mashiul.alam@gmail.com
কোপেনহেগেনে ১২ দিন ধরে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলন চলাকালে ইন্টারনেটে এ বিষয়ে খোঁজখবর রাখার চেষ্টা করেছি। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হবে, এমন দেশগুলোর মধ্যে প্রথম সারির দেশ বাংলাদেশ ওই সম্মেলনে নিজেকে কীভাবে উপস্থাপন করে এবং অন্যরা তাকে কীভাবে গ্রহণ করে, এ রকম কৌতূহল ছিল। কারণ, এটা এমন এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন, যার মূল আলোচ্য বিষয়ে বাংলাদেশ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি পক্ষ। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সর্বাধিক ক্ষতির শিকার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটা নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে বেরিয়ে আসতে পারত এ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে। এ সম্মেলন ছিল বাংলাদেশের জন্য এক নতুন মাত্রার বিরল সুযোগ।
সেখানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যেসব কথাবার্তা বেশি উচ্চারিত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ছিল জলবায়ু উদ্বাস্তু, অভিযোজন তহবিল, ক্ষতিপূরণমূলক তহবিল ইত্যাদি। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এসব কথা সাড়া জাগায়নি। আমাদের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে অবশ্য এ কথাগুলোই প্রাধান্য পেয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর সম্মেলনে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দি ইন্টারন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ফর ডিজাস্টার রিডাকশনের এক সমীক্ষায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নাম শীর্ষে উঠে এসেছে—এ কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘বন্যার ঝুঁকিতে বাংলাদেশ প্রথম, সুনামির ঝুঁকিতে তৃতীয়, ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকিতে ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে।’ ...‘এই সম্মেলনে আমাদের ক্ষতিপূরণমূলক আর্থিক সহায়তা দিতে হবে।’ অভিযোজনের পুরো অর্থ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই অর্থ অবশ্যই যথেষ্ট পরিমাণে ও সহজে পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’ অবশ্য কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিষয়েও প্রধানমন্ত্রীর ওই ভাষণে আহ্বান ছিল। তবে ওই ভাষণ, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনসহ অন্যান্য বিশ্বনেতার সঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যেসব বৈঠক ও আলাপ-আলোচনার খবর পাওয়া গেল, সেগুলোতে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের কণ্ঠ ছিল বেশি সোচ্চার, কার্বন নিঃসরণ কমানোর ব্যাপারে অপেক্ষাকৃত নিম্নকণ্ঠ।
কিন্তু ঝুঁকির শিকার ছোট ছোট কয়েকটি দেশের নেতারা কোপেনহেগেনে বেশ শোরগোল ফেলে দিয়েছেন। যেমন, জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার গরিব দেশগুলোর জন্য ২০২০ সাল নাগাদ বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার দেওয়া হবে—যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এ রকম এক প্রয়াসের কথা জানালে টুভালুর প্রধানমন্ত্রী আপিসাই ইয়েলেমিয়া বলেন, ‘টাকার বিনিময়ে আমরা আমাদের অস্তিত্ব বিক্রি করতে আগ্রহী নই।’
সম্মেলনের শেষে বিশ্ববাসী মাত্র তিন পৃষ্ঠার যে কাগুজে দলিলটি পেল, সেটি সম্পর্কে প্রথম তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্তকারীদের একজন টুভালু নামের দেশটিরই প্রতিনিধি, ইয়ান ফ্রাই। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের অবস্থা টাইটানিক জাহাজের মতো, আমরা দ্রুত ডুবে যাচ্ছি, এখনই কিছু করা দরকার। কিন্তু এর মধ্যে একদল বলছে, আমরা ডুবে যাচ্ছি কি না, সেটা নিয়ে আরও আলোচনা করার আছে।’
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, কোপেনহেগেনে জলবায়ু সম্মেলন চলাকালে টুভালু নামের দ্বীপরাষ্ট্রটি যে-মাত্রায় মনোযোগ আকর্ষণ করতে পেরেছে, তা ওই দেশটির আকারের তুলনায় অনেক অনেক বেশি। আসলেই, এতটুকু যন্ত্র থেকে এত জোরে শব্দ হয়! এক রত্তি দেশ টুভালু, নয়টি ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে পুরো রাষ্ট্রটির মোট ভূখণ্ডের আয়তন মাত্র ২৬ বর্গকিলোমিটার। লোকসংখ্যা হাতে গোনা যাবে—মাত্র ১১ হাজার ৯৯২ জন। পৃথিবীর চতুর্থ ক্ষুদ্রতম স্বাধীন রাষ্ট্র টুভালুর দ্বীপগুলো এত নিচু যে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আর মাত্র ছয় থেকে আট ইঞ্চি বাড়লেই প্রশান্ত মহাসাগরে তলিয়ে যাবে গোটা দেশ।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী আপিসাই ইয়েলেমিয়া জলবায়ু সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। আমাদের আর কিছুই করার নেই। এমন কোনো পাহাড় আমাদের নেই, যেখানে উঠে আমরা বাঁচতে পারি। এ জন্যই আমরা এত চিত্কার করছি। এখানে আমরা এত হইচই করছি, কারণ আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার মৌলিক অধিকার আছে।’ তাঁরা চিত্কার করছেন ক্ষতিপূরণ বা অভিযোজনের অর্থ পাওয়ার জন্য নয়; কার্বন নিঃসরণ কমাতে ধনী ও শিল্পোন্নত দেশগুলোকে আইনগত বাধ্যবাধকতাসহ চুক্তিবদ্ধ করার লক্ষ্যে। টুভালুর দাবি ছিল, তাপমাত্রা বৃদ্ধি শিল্পায়নপূর্ব সময় থেকে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে হবে, সে জন্য তারা কার্বন নিঃসরণ কমানোর নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ৩৫০ পিপিএম। টুভালুর নয়টি দ্বীপের মধ্যে চারটি হচ্ছে প্রবালদ্বীপ; সমুদ্রজলের অম্লতা বেড়ে যাওয়ার ফলে সেগুলো ক্ষয়ে যাচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা ও হার ক্রমেই বাড়ছে। সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ক্ষতিপূরণ দাবি করেননি, দাবি জানিয়েছেন কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ।
জলবায়ু সম্মেলনের আরেক আলোচিত বক্তা ছিলেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ। সাগরের নিচে মন্ত্রিসভার বৈঠক করে ইতিমধ্যে বিশ্বজুড়ে আলোচিত ৪২ বছর বয়সী যুবক এই রাষ্ট্রপতি জলবায়ু সম্মেলনে সর্বাধিক কার্বন নিঃসরণকারী শিল্পোন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান ২০২০ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ ও ২০৫০ সালের মধ্যে ৯৫ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ কমানোর উদ্যোগ নিতে। চীন, ভারত, ব্রাজিল—এসব দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান ২০২০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ কমাতে। আর সবার প্রতি আহ্বান জানান এমন এক চুক্তিতে পৌঁছাতে, যেখানে কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যে ‘পরিমাপযোগ্য ও আন্তর্জাতিকভাবে যাচাইযোগ্য’ (কোয়ান্টিফাইয়েবল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনালি ভেরিফাইয়েবল) পদক্ষেপ নেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা থাকবে।
সহস্রাধিক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র দ্বীপ নিয়ে গঠিত মালদ্বীপের ৮০ শতাংশ ভূখণ্ড সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র তিন ফুট উঁচু। যে হারে জলবায়ুর উষ্ণতা বাড়ছে, তা অব্যাহত থাকলে মালদ্বীপ নামের কোনো দেশ পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে যাবে। সেই দেশের রাষ্ট্রপতি কোপেনহেগেনে জলবায়ু সম্মেলনে বললেন, ‘কার্বন নিঃসরণ কমানোর পথ দেখাবে মালদ্বীপ। আমরা আগামী ২০২০ সালের মধ্যে কার্বন-নিউট্রাল দেশে পরিণত হব।’ ওই সময়ের মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করার ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মোহাম্মদ নাশিদ বলেন, ‘শিল্পোন্নত দেশগুলোর আর্থিক সহযোগিতা ছাড়া আমরা এটা করতে পারব না। আমি শিল্পোন্নত দেশগুলোকে বলি, আপনাদের টাকা আছে, প্রযুক্তির সিংহভাগও আপনাদের আছে। আমাদের সবুজ হতে সহযোগিতা করুন। কিন্তু একই সঙ্গে আমি এ কথাও বলতে চাই, দয়া করে মনে রাখবেন, জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক আলোচনার সঙ্গে টাকা-পয়সার কোনো, আদৌ কোনো সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক আছে আমাদের নাতি-নাতনিদের। আমার দুটি মেয়ে আছে। আমি নাতি-নাতনির মুখ দেখতে চাই। কিন্তু আমরা যা করছি, তা যদি চালিয়ে যাই, তাহলে নাতি-নাতনির মুখ দেখতে পাব না। টু অ্যাসিউম দ্যাট ক্লাইমেট চেঞ্জ নেগোসিয়েশনস হ্যাভ এনিথিং টু ডু উইথ মানি, ইন মাই মাইন্ড, ইজ দ্য হাইট অব অ্যারোগেন্স।’ টেকপার্ট নামের এক ওয়েবসাইটের একজন সাংবাদিক প্রেসিডেন্ট নাশিদকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ডুবে যাওয়ার আগে তিনি মালদ্বীপের সব মানুষকে অন্য কোনো দেশে সরিয়ে নেওয়ার কথা ভেবেছেন কি না। উত্তরে প্রেসিডেন্ট নাশিদ বলেন, ‘ভারত মহাসাগরের বুকে এই দ্বীপমালায় মানুষ বাস করছে ১০ হাজার বছর ধরে। আমাদের লিখিত ইতিহাসই আছে দুই হাজার বছরের। মালদ্বীপের মানুষ নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে যেতে চায় না। এমনকি এখানকার এক দ্বীপের মানুষ অন্য দ্বীপেও যেতে চায় না। উই ক্যান স্টে দিয়ার, ইফ দ্য ওয়ার্ল্ড স্টার্টস কেয়ারিং।’
আমাদের প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু সম্মেলনের ভাষণে ক্ষতিপূরণ ও অভিযোজনবাবদ তহবিলের দাবির পাশাপাশি এমন দাবিও তুলেছেন, আমাদের জলবায়ু উদ্বাস্তুদের বিশ্বজুড়ে অভিবাসনের সুযোগ দিতে হবে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, জলবায়ুর পরিবর্তন বা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির পেছনে বাংলাদেশের তেমন কোনো ভূমিকা নেই—মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যসহ সম্মেলনে দেওয়া সব তথ্য ও বক্তব্যই সন্দেহাতীতভাবে সঠিক ও যুক্তিসংগত। কিন্তু মূল আলোচ্য প্রসঙ্গ যেখানে কার্বন নিঃসরণ কমানো এবং সে লক্ষ্যেই একটি আইনি বাধ্যবাধকতাপূর্ণ চুক্তিতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে সর্বাত্মক চাপ সৃষ্টি করা, সেখানে এই সব যুক্তিসংগত দাবি-দাওয়া পার্শ্ব-আলোচনার বিষয়। আমাদের এই অবস্থান সঠিক হলো, নাকি এর চেয়ে ভালো অবস্থান আমরা নিতে পারতাম, এ নিয়ে ভাবনার অবকাশ আছে। আমাদের জলবায়ু কূটনীতি কেমন হওয়া উচিত, আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে আমরা কী ভাষায়, সুরে ও ভঙ্গিতে আমাদের বক্তব্য হাজির করব, এ নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার। বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১৫ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে বললেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের নির্দোষ শিকার বাংলাদেশকে সহায়তা করা তাদের (ধনী দেশগুলোর) নৈতিক দায়িত্ব। এখানে ভিক্ষার জন্য দেনদরবার করা মর্যাদাবান জাতি হিসেবে অপমানজনক।’ খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকলে এমন কথা বলতেন কি না সন্দেহ। এখন যখন বললেনই, কথাটা সংসদে গিয়ে বললে, এবং সেখানে এটা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হলে ভালো হতো। কে জানে, হয়তো সংসদে তর্ক-বিতর্কের মধ্য দিয়েই সরকারের নীতিনির্ধারক মহল বুঝতে পারত যে, কোপেনহেগেন সম্মেলনে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর নেতা হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার এক বিরল সুযোগ এসেছে বাংলাদেশের সামনে।
দুঃখের বিষয়, আমরা সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারলাম না। তবে সামনে সময় আছে। আগামী বছর মেক্সিকোতে অনুষ্ঠেয় সম্মেলনের আগে জাতীয় সংসদের ভেতরে ও বাইরে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে স্থির করতে হবে, জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হিসেবে আমরা ক্ষতিপূরণ-অভিযোজনসহ নানা ধরনের তহবিলের দাবিকে প্রাধান্য দেব, নাকি বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণ কমানোর দাবিকেই প্রধান করে তুলব এবং মালদ্বীপের অনুসরণে নিজেরাও সে পদক্ষেপ নেওয়ার মধ্য দিয়ে এই বৈশ্বিক আন্দোলনে নেতৃত্বের ভূমিকায় যাওয়ার চেষ্টা করব। এ বিষয়ে আমরা একটি কৌশলগত পরিকল্পনা মিলিতভাবে তৈরি করতে পারি, যেখানে বলা হবে কী ধরনের আন্তর্জাতিক ফোরামে আমরা কার্বন নিঃসরণ কমানোর দাবিতে বৈশ্বিক আন্দোলনে জোরালো ভূমিকা নিয়ে ভুক্তভোগী দেশগুলোর কাতারে নেতৃত্বের ভূমিকায় যাওয়ার চেষ্টা করব, আর কী ধরনের ফোরামে ক্ষতিপূরণ, অভিযোজন, সম্ভাব্য জলবায়ু উদ্বাস্তুদের অভিবাসন ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলব, দাবি-দাওয়া তুলে ধরব।
মশিউল আলম: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।
mashiul.alam@gmail.com
No comments