আইনি প্রতিকার ও শক্তিশালী মানবাধিকার কমিশন by এ এম এম শওকত আলী |
শক্তিশালী মানবাধিকার কমিশন সম্পর্কে সম্প্রতি অনেক আলোচনা হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে। ২০০৪ থেকে ২০০৯-এর জানুয়ারি সময়কালে নির্বাহী বিভাগকে অধিকতর জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রীয় অঙ্গে রূপান্তর করার লক্ষ্যে সরকারের নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কিছু প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করা হয়েছে। সরকার অবশ্য স্বেচ্ছায় এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়নি। এর জন্য বিদেশি সাহায্যদানকারী প্রতিষ্ঠানসহ নাগরিক সমাজ ও মিডিয়া সোচ্চার ছিল। উদ্দেশ্য, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। এ উদ্দেশ্য অর্জনে সুশীল সমাজসহ দাতাগোষ্ঠীর কিছু প্রতিনিধি যে বক্তব্য মাঝেমধ্যে প্রকাশ্যে দিয়ে থাকেন, তা নিতান্তই অতি সাধারণ প্রকৃতির। এসব বক্তব্যে যে উপাদানটির অভাব, তা হলো সংবিধান স্বীকৃত ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করা। একই সঙ্গে এ কথাও বলা যায়, বক্তব্য দেওয়া অনেকেই যে আইনের বলে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো সৃষ্টি করা হয়, সে বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান রাখেন না।
সম্প্রতি বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে একটি সেমিনারে আইনমন্ত্রীসহ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান স্পষ্টভাবে বলেছেন, বর্তমান কমিশন যথেষ্ট শক্তিশালী। একই সঙ্গে আইনমন্ত্রী এ কথাও বলেছেন যে সরকার বর্তমান আইন সংশোধনের চিন্তা করছে। আইনগত দিক দিয়ে বর্তমান কমিশন যদি শক্তিশালীই হয়, তাহলে আইনের অধিকতর সংশোধনের প্রয়োজন কেন? তা স্পষ্ট নয়। বিষয়টি স্পষ্ট করা প্রয়োজন। অন্যদিকে কমিশনের চেয়ারম্যান বলেছেন, এ কমিশনের প্রধান দুর্বলতা লোকবলের অভাব। কমিশন এখনো কাঠামোগত দিক দিয়ে পূর্ণাঙ্গ রূপ অর্জন করেনি। এ কারণেই কমিশন কার্যকর ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হচ্ছে। প্রয়োজনীয় লোকবলের দুটি অংশ। এক. কমিশনের অন্য সদস্যদের অবিলম্বে নিযুক্ত করা। দুই. কমিশনের দাপ্তরিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ। এ দুটি বিষয়ই সরকারের আওতাভুক্ত। অবশ্য এ কথা সত্য যে শেষোক্ত বিষয়ে সরকার ক্ষমতাবান হলেও নিয়োগ দেবে কমিশন। এ জন্য প্রয়োজন নিয়োগ বিধিমালা। কমিশনের চেয়ারম্যান ওই সেমিনারে জানিয়েছেন, তিনি সংশ্লিষ্ট বিধির খসড়া প্রণয়ন করেছেন। এখানেও রয়েছে আরেকটি ধাপ। খসড়া চূড়ান্ত করতে হলে সরকারের পূর্বানুমোদন প্রয়োজন। এ ধাপ অতিক্রম করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়। কারণ, আইন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মতামত না নিয়ে কোনো খসড়াই চূড়ান্ত করতে আগ্রহী নয়। এ ক্ষেত্রে অবশ্য আইন মন্ত্রণালয়ই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয় মনোযোগী হলে খসড়া বিধি চূড়ান্ত কম সময়েই করা সম্ভব। তবে যে খসড়া ইতিমধ্যে প্রণীত হয়েছে, তা বিদ্যমান আইনের ভিত্তিতে। কাজেই আইনমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, এ আইনকে অধিকতর সংশোধন করা হবে। অর্থাত্ নতুন বিধির প্রয়োজন হবে।
এ পর্যায়ে একটি মৌলিক প্রশ্নের অবতারণা করা যায়। প্রশ্নটি হলো, কোন কমিশন এর আইন দ্বারা নির্দিষ্ট বিষয়ে অনুসন্ধান করে সরকারের কাছে সুপারিশ পাঠাবে। অবশ্য নির্বাচন কমিশনের ক্ষেত্রে এ বিষয়ে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে। এ ব্যতিক্রমের ভিত্তি সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত। নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে এ কমিশনের যেকোনো অনুরোধ অলঙ্ঘনীয়। একমাত্র উচ্চতর আদালতই এর ব্যতিক্রম করতে ক্ষমতাবান। তবে সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত ক্ষমতাকে উচ্চতর আদালত কখনো অবজ্ঞা করবেন না। এ জন্য কোনো কোনো সময় নাগরিক সমাজের কিছু ব্যক্তি কমিশনগুলোকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি উত্থাপন করে। এ দাবি করার সময় তাঁরা ভুলে যান যে সংসদীয় কমিটির সুপারিশেরও বাস্তবায়ন করার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এমনই একটি দাবি তাঁরা করেছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের জন্য। সরকার অবশ্য সে দাবি মেনে নেয়নি। কারণ, সংসদীয় কমিটির সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হলেও গৃহীত হয়নি। আমরা অনেকেই সর্বক্ষেত্রে সাংবিধানিক স্বীকৃতিসহ আইনি ক্ষমতায় বিশ্বাস করি। এ বিশ্বাসের কারণ, সরকারের ওপর কারও আস্থা নেই। এ অনাস্থার কারণ সরকারকে সবাই অত্যাচারের উত্স হিসেবে দেখে।
সংসদীয় গণতান্ত্রিক প্রথায় সবকিছুই আইন দিয়ে হয় না। এটা প্রথাগতভাবে স্বীকৃত। এ বিষয়ে কার্যকর প্রথা হলো অলিখিত নীতি বা নিয়ম। এর আওতায় কোনো সরকারই সংসদ বা অন্য কোনো সংস্থার জনস্বার্থবিষয়ক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে না। কারণ, প্রত্যাখ্যান করলে তারা জনরোষের শিকার হবে। একটি বিষয় স্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত, তা হলো, কোনো তথাকথিত শক্তিশালী কমিশনের সব সিদ্ধান্তই যে আইনসিদ্ধ বা জনস্বার্থের সপক্ষে নয়, তা অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এক-এগারোর পরবর্তী যে নির্যাতন কিছুসংখ্যক রাজনীতিকের বিরুদ্ধে করেছিল, তা সর্বজনবিদিত। সম্প্রতি দুদক চেয়ারম্যান বলেছেন, অনেক সিদ্ধান্তই দুককের অজ্ঞাতে করা হয়েছে। সবাই জানে, এ নির্যাতনের উত্স কে বা কারা।
সম্প্রতি মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে একজন প্রধান আইনজীবী এ প্রশ্নের অবতারণা করে মন্তব্য করেছেন যে বর্তমান সরকারও মানবাধিকার কমিশন স্বীকৃত মানবাধিকার রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। কারণ, যে গুটিকয়েক ব্যক্তি এটা করেছেন, তাঁরা এখনো দেশে-বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অথচ মানবাধিকার কমিশন এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপই এ পর্যন্ত নেয়নি। তিনি এর আগে একটি টিভিতে বলেছিলেন, এ কমিশন আইনগত দৃষ্টিকোণ থেকে যথেষ্ট শক্তিশালী। অর্থাত্ একে অধিকতর শক্তিশালী করার প্রয়োজন নেই।
কমিশনের বিরুদ্ধে যে প্রশ্ন তিনি করেছেন, উচ্চতর আদালত সম্পর্কে একই অভিযোগ করা সম্ভব। ২০০৭ সালে যেসব ঘটনা ঘটেছে, সে বিষয়ে এ আদালত ছিলেন নিশ্চুপ। কিছু ক্ষেত্রে হাইকোর্টে এর প্রতিকারমূলক সিদ্ধান্ত পাওয়া গেলেও আপিল বিভাগও ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত দেন। ২০০৮ জানুয়ারি থেকে অবশ্য এ দৃশ্যপট বদলে যায়। অন্যদিকে একই ব্যক্তিকে পর্যায়ক্রমে রিমান্ড মঞ্জুর করেন স্বাধীন বিচার বিভাগের অধস্তন আদালত।
স্বাধীন বিচার বিভাগসহ যেকোনো কমিশন শক্তিশালী হোক, এটা সবারই কাম্য। তবে কমিশন ও বিচার বিভাগ সমার্থক নয়। বিচার বিভাগ সংবিধানে স্বীকৃত একটি অন্যতম রাষ্ট্রীয় অঙ্গ। কমিশনগুলো সংসদ স্বীকৃত একটি প্রতিষ্ঠান। অর্থাত্ কমিশনের ক্ষমতা ও কার্যপরিধি সংসদই নির্ধারণ করবে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে। এসব কমিশনের ক্ষমতার গণ্ডি নির্দিষ্ট আইনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকাই বাঞ্ছনীয়। এ বাস্তব সত্য অস্বীকার করলে হিতে বিপরীত হবে।
কমিশন সম্পর্কে মূল অভিযোগটি উত্থাপিত হয় ক্রসফায়ার-সংক্রান্ত প্রতিবেদন সময়মতো সরকার দাখিল করতে ব্যর্থ হওয়ায়। কমিশন এ বিষয়ে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ একটি কমিটি গঠনের সুপারিশ করেছে। কমিশনের পক্ষে এ ধরনের সুপারিশ করা কি যুক্তিযুক্ত? কারণ, এ বিষয়ে আইনি বিধান স্পষ্ট। সে বিধান পালিত হচ্ছে না। সরকার প্রথমে এ বিষয়ে শূন্য সহনশীলতা, ইংরেজিতে জিরো টলারেন্সের অভিপ্রায় প্রকাশ্যে ব্যক্ত করে বর্তমানে বিপরীতধর্মী কথা বলছে। সরকার বলছে, আত্মরক্ষার প্রয়োজনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আইন দ্বারা ক্ষমতাবান। এ কথা সত্য। কিন্তু এ প্রসঙ্গে দুটি বিষয়ে সরকার নীরব। এক. আইনে এ কথাও বলা আছে, এ ধরনের ঘটনা ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা অনুসন্ধানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এবং এ ধরনের অনুসন্ধান হবে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় অনুসন্ধানের অতিরিক্ত। ম্যাজিস্ট্রেট অনুসন্ধানের পর যদি এ সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে গুলি ছুড়ে নিহত করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না, তাহলেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বেকসুর খালাস পাবে। অর্থাত্ তাদের বিরুদ্ধে হত্যার বা ক্ষমতার অপব্যবহারের কোনো অভিযোগ আনা যাবে না। দুই. যদি অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয় যে এ ধরনের শক্তি প্রয়োগ করাটা যুক্তিযুক্ত হয়নি, তাহলেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।
সরকারের ব্যর্থতা হলো, আজ পর্যন্ত বিচারবহির্ভূত যতগুলো হত্যা হয়েছে, তার কয়টি আইনি প্রক্রিয়ায় ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা অনুসন্ধান করা হয়েছে এবং এর মধ্যে কয়টি অনুসন্ধানে গৃহীত বা যথার্থ বলে প্রমাণিত এবং কয়টি নয়, তা এখনো কেউ জানে না। শেষোক্ত বিষয়ে কী ধরনের আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে? এসব তথ্য মানবাধিকার কমিশন সরকারের কাছে চেয়েছে কি না, তা স্পষ্ট নয়। এসব তথ্য বিশ্লেষণ না করেই হঠাত্ আইনি গণ্ডিবহির্ভূত একটি কমিটি গঠনের দাবি করা কি যুক্তিযুক্ত? যে বিষয়টি দৃশ্যমান, তা হলো, সরকারের নির্বাহী যন্ত্র অনেকাংশে অকার্যকর। টিভি ক্যামেরার সামনে খণ্ড খণ্ড বক্তব্য না দিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা এ সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হলে ভালো হবে। যে বিষয়টি দৃশ্যমান, তা হলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে সভার পর সভা এবং নির্দেশের পর নির্দেশ। এত সভা ও নির্দেশ দিয়ে নির্বাহী যন্ত্রকে ভারাক্রান্ত করা এবং এর সময়ক্ষেপণ করলে কাজ হবে কখন।
এ প্রসঙ্গে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। বিষয়টি হলো, কথায় কথায় মন্ত্রণালয় পর্যায়ে কমিটি গঠন। এ ধরনের প্রবণতা মাঠ প্রশাসনকে দুর্বল ও অকেজো করে দেয়। কারণ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বা অপরাধ দমনে অস্ত্র ব্যবহার করলে সে বিষয়টি মাঠ পর্যায়েই ম্যাজিস্ট্রেট এবং বিভাগীয় তদন্ত করার দায়িত্ব আইন ও বিধিতে স্বীকৃত। কয়েক যুগ ধরে এ প্রথা নির্বাসিত করা হয়েছে। একটি সহজ উপায়কে জটিল থেকে জটিলতর করার প্রক্রিয়ার ফলে মাঠ প্রশাসন বর্তমানে দুর্বল। তাদের আইন দ্বারা স্বীকৃত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, অথচ সে দায়িত্ব পালিত হচ্ছে সচিবালয়ে। ফলে আইন দ্বারা অর্পিত দায়িত্ব পালনে সচিবালয়সহ মাঠ প্রশাসনও ব্যর্থ হচ্ছে। এ জন্যই প্রশাসনে বর্তমানে বেহাল অবস্থা দৃশ্যমান। এ জন্যই প্রধানমন্ত্রী বারবার বলতে বাধ্য হচ্ছেন যে প্রশাসনকে সচল করতে হবে। সচিবদের একাধিকবার এবং সম্প্রতি মন্ত্রীদেরও তিনি তাঁর গভীর উত্কণ্ঠার কথা জানিয়েছেন। তবে এর সুফল এখনো পাওয়া যায়নি।
বিচারবহির্ভূত হত্যার মূল প্রশ্ন হলো দুটি। এক. অপরাধী হোক বা নিরপরাধই হোক, তাঁকে আদালতের কাঠগড়ায় না এনে হত্যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দুই. অপরাধীদের এ ধরনের হত্যার মূল গডফাদারকে আইনের আড়ালেই রাখা হয়। কারণ, এতে প্রকৃত তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা সমূলে বিনষ্ট হয়। অন্যদিকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ব্যক্তিদের সাফাই হলো, অপরাধীরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি করলে আত্মরক্ষার্থে তাদেরও পাল্টা গুলিবর্ষণ করতে হয়। এবং এটা আইনসিদ্ধ। এ ধরনের পাল্টা গুলি করা আইনসিদ্ধ কি না, তার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা অনুসন্ধানের আইনি বিধানও রয়েছে। সে বিধানটি যথাসময়ে প্রয়োগ করলে সরকার অহেতুক সমালোচনার শিকার হতো না। কেন এটা যথাসময়ে করা হচ্ছে না, তার ব্যাখ্যাও ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে। প্রকৃত উদ্দেশ্য হবে, বিচারবহির্ভূত হত্যার আইনি প্রতিকার। এ ধরনের হত্যাকে ঢালাওভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যা না বললেও হয়। বরং সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগ করে এ ধরনের প্রতিকার করা উচিত হবে। ইতিমধ্যে কয়েকজন নিরপরাধ ব্যক্তি এ ধরনের হত্যার শিকার হয়েছে, যা মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। এ বিষয়ে দুটি পদক্ষেপ নেওয়া আশু প্রয়োজন। এক. যেসব নিরপরাধ ব্যক্তি এ প্রক্রিয়ায় নিহত হয়েছেন, সে কেসগুলো অবিলম্বে আইনসিদ্ধ প্রক্রিয়ায় ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক অনুসন্ধান করে প্রকৃত তথ্য উদ্ঘাটন করা এবং প্রয়োজনে আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া। দুই. যত অভিযোগ আজ পর্যন্ত পাওয়া গেছে, সেগুলো সম্পর্কেও একই পদক্ষেপ নেওয়া এবং মানবাধিকার কমিশনসহ জনগণকে অবহিত করা।
এ এম এম শওকত আলী: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা।
সম্প্রতি বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে একটি সেমিনারে আইনমন্ত্রীসহ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান স্পষ্টভাবে বলেছেন, বর্তমান কমিশন যথেষ্ট শক্তিশালী। একই সঙ্গে আইনমন্ত্রী এ কথাও বলেছেন যে সরকার বর্তমান আইন সংশোধনের চিন্তা করছে। আইনগত দিক দিয়ে বর্তমান কমিশন যদি শক্তিশালীই হয়, তাহলে আইনের অধিকতর সংশোধনের প্রয়োজন কেন? তা স্পষ্ট নয়। বিষয়টি স্পষ্ট করা প্রয়োজন। অন্যদিকে কমিশনের চেয়ারম্যান বলেছেন, এ কমিশনের প্রধান দুর্বলতা লোকবলের অভাব। কমিশন এখনো কাঠামোগত দিক দিয়ে পূর্ণাঙ্গ রূপ অর্জন করেনি। এ কারণেই কমিশন কার্যকর ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হচ্ছে। প্রয়োজনীয় লোকবলের দুটি অংশ। এক. কমিশনের অন্য সদস্যদের অবিলম্বে নিযুক্ত করা। দুই. কমিশনের দাপ্তরিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ। এ দুটি বিষয়ই সরকারের আওতাভুক্ত। অবশ্য এ কথা সত্য যে শেষোক্ত বিষয়ে সরকার ক্ষমতাবান হলেও নিয়োগ দেবে কমিশন। এ জন্য প্রয়োজন নিয়োগ বিধিমালা। কমিশনের চেয়ারম্যান ওই সেমিনারে জানিয়েছেন, তিনি সংশ্লিষ্ট বিধির খসড়া প্রণয়ন করেছেন। এখানেও রয়েছে আরেকটি ধাপ। খসড়া চূড়ান্ত করতে হলে সরকারের পূর্বানুমোদন প্রয়োজন। এ ধাপ অতিক্রম করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়। কারণ, আইন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মতামত না নিয়ে কোনো খসড়াই চূড়ান্ত করতে আগ্রহী নয়। এ ক্ষেত্রে অবশ্য আইন মন্ত্রণালয়ই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয় মনোযোগী হলে খসড়া বিধি চূড়ান্ত কম সময়েই করা সম্ভব। তবে যে খসড়া ইতিমধ্যে প্রণীত হয়েছে, তা বিদ্যমান আইনের ভিত্তিতে। কাজেই আইনমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, এ আইনকে অধিকতর সংশোধন করা হবে। অর্থাত্ নতুন বিধির প্রয়োজন হবে।
এ পর্যায়ে একটি মৌলিক প্রশ্নের অবতারণা করা যায়। প্রশ্নটি হলো, কোন কমিশন এর আইন দ্বারা নির্দিষ্ট বিষয়ে অনুসন্ধান করে সরকারের কাছে সুপারিশ পাঠাবে। অবশ্য নির্বাচন কমিশনের ক্ষেত্রে এ বিষয়ে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে। এ ব্যতিক্রমের ভিত্তি সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত। নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে এ কমিশনের যেকোনো অনুরোধ অলঙ্ঘনীয়। একমাত্র উচ্চতর আদালতই এর ব্যতিক্রম করতে ক্ষমতাবান। তবে সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত ক্ষমতাকে উচ্চতর আদালত কখনো অবজ্ঞা করবেন না। এ জন্য কোনো কোনো সময় নাগরিক সমাজের কিছু ব্যক্তি কমিশনগুলোকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি উত্থাপন করে। এ দাবি করার সময় তাঁরা ভুলে যান যে সংসদীয় কমিটির সুপারিশেরও বাস্তবায়ন করার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এমনই একটি দাবি তাঁরা করেছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের জন্য। সরকার অবশ্য সে দাবি মেনে নেয়নি। কারণ, সংসদীয় কমিটির সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হলেও গৃহীত হয়নি। আমরা অনেকেই সর্বক্ষেত্রে সাংবিধানিক স্বীকৃতিসহ আইনি ক্ষমতায় বিশ্বাস করি। এ বিশ্বাসের কারণ, সরকারের ওপর কারও আস্থা নেই। এ অনাস্থার কারণ সরকারকে সবাই অত্যাচারের উত্স হিসেবে দেখে।
সংসদীয় গণতান্ত্রিক প্রথায় সবকিছুই আইন দিয়ে হয় না। এটা প্রথাগতভাবে স্বীকৃত। এ বিষয়ে কার্যকর প্রথা হলো অলিখিত নীতি বা নিয়ম। এর আওতায় কোনো সরকারই সংসদ বা অন্য কোনো সংস্থার জনস্বার্থবিষয়ক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে না। কারণ, প্রত্যাখ্যান করলে তারা জনরোষের শিকার হবে। একটি বিষয় স্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত, তা হলো, কোনো তথাকথিত শক্তিশালী কমিশনের সব সিদ্ধান্তই যে আইনসিদ্ধ বা জনস্বার্থের সপক্ষে নয়, তা অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এক-এগারোর পরবর্তী যে নির্যাতন কিছুসংখ্যক রাজনীতিকের বিরুদ্ধে করেছিল, তা সর্বজনবিদিত। সম্প্রতি দুদক চেয়ারম্যান বলেছেন, অনেক সিদ্ধান্তই দুককের অজ্ঞাতে করা হয়েছে। সবাই জানে, এ নির্যাতনের উত্স কে বা কারা।
সম্প্রতি মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে একজন প্রধান আইনজীবী এ প্রশ্নের অবতারণা করে মন্তব্য করেছেন যে বর্তমান সরকারও মানবাধিকার কমিশন স্বীকৃত মানবাধিকার রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। কারণ, যে গুটিকয়েক ব্যক্তি এটা করেছেন, তাঁরা এখনো দেশে-বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অথচ মানবাধিকার কমিশন এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপই এ পর্যন্ত নেয়নি। তিনি এর আগে একটি টিভিতে বলেছিলেন, এ কমিশন আইনগত দৃষ্টিকোণ থেকে যথেষ্ট শক্তিশালী। অর্থাত্ একে অধিকতর শক্তিশালী করার প্রয়োজন নেই।
কমিশনের বিরুদ্ধে যে প্রশ্ন তিনি করেছেন, উচ্চতর আদালত সম্পর্কে একই অভিযোগ করা সম্ভব। ২০০৭ সালে যেসব ঘটনা ঘটেছে, সে বিষয়ে এ আদালত ছিলেন নিশ্চুপ। কিছু ক্ষেত্রে হাইকোর্টে এর প্রতিকারমূলক সিদ্ধান্ত পাওয়া গেলেও আপিল বিভাগও ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত দেন। ২০০৮ জানুয়ারি থেকে অবশ্য এ দৃশ্যপট বদলে যায়। অন্যদিকে একই ব্যক্তিকে পর্যায়ক্রমে রিমান্ড মঞ্জুর করেন স্বাধীন বিচার বিভাগের অধস্তন আদালত।
স্বাধীন বিচার বিভাগসহ যেকোনো কমিশন শক্তিশালী হোক, এটা সবারই কাম্য। তবে কমিশন ও বিচার বিভাগ সমার্থক নয়। বিচার বিভাগ সংবিধানে স্বীকৃত একটি অন্যতম রাষ্ট্রীয় অঙ্গ। কমিশনগুলো সংসদ স্বীকৃত একটি প্রতিষ্ঠান। অর্থাত্ কমিশনের ক্ষমতা ও কার্যপরিধি সংসদই নির্ধারণ করবে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে। এসব কমিশনের ক্ষমতার গণ্ডি নির্দিষ্ট আইনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকাই বাঞ্ছনীয়। এ বাস্তব সত্য অস্বীকার করলে হিতে বিপরীত হবে।
কমিশন সম্পর্কে মূল অভিযোগটি উত্থাপিত হয় ক্রসফায়ার-সংক্রান্ত প্রতিবেদন সময়মতো সরকার দাখিল করতে ব্যর্থ হওয়ায়। কমিশন এ বিষয়ে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ একটি কমিটি গঠনের সুপারিশ করেছে। কমিশনের পক্ষে এ ধরনের সুপারিশ করা কি যুক্তিযুক্ত? কারণ, এ বিষয়ে আইনি বিধান স্পষ্ট। সে বিধান পালিত হচ্ছে না। সরকার প্রথমে এ বিষয়ে শূন্য সহনশীলতা, ইংরেজিতে জিরো টলারেন্সের অভিপ্রায় প্রকাশ্যে ব্যক্ত করে বর্তমানে বিপরীতধর্মী কথা বলছে। সরকার বলছে, আত্মরক্ষার প্রয়োজনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আইন দ্বারা ক্ষমতাবান। এ কথা সত্য। কিন্তু এ প্রসঙ্গে দুটি বিষয়ে সরকার নীরব। এক. আইনে এ কথাও বলা আছে, এ ধরনের ঘটনা ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা অনুসন্ধানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এবং এ ধরনের অনুসন্ধান হবে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় অনুসন্ধানের অতিরিক্ত। ম্যাজিস্ট্রেট অনুসন্ধানের পর যদি এ সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে গুলি ছুড়ে নিহত করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না, তাহলেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বেকসুর খালাস পাবে। অর্থাত্ তাদের বিরুদ্ধে হত্যার বা ক্ষমতার অপব্যবহারের কোনো অভিযোগ আনা যাবে না। দুই. যদি অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয় যে এ ধরনের শক্তি প্রয়োগ করাটা যুক্তিযুক্ত হয়নি, তাহলেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।
সরকারের ব্যর্থতা হলো, আজ পর্যন্ত বিচারবহির্ভূত যতগুলো হত্যা হয়েছে, তার কয়টি আইনি প্রক্রিয়ায় ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা অনুসন্ধান করা হয়েছে এবং এর মধ্যে কয়টি অনুসন্ধানে গৃহীত বা যথার্থ বলে প্রমাণিত এবং কয়টি নয়, তা এখনো কেউ জানে না। শেষোক্ত বিষয়ে কী ধরনের আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে? এসব তথ্য মানবাধিকার কমিশন সরকারের কাছে চেয়েছে কি না, তা স্পষ্ট নয়। এসব তথ্য বিশ্লেষণ না করেই হঠাত্ আইনি গণ্ডিবহির্ভূত একটি কমিটি গঠনের দাবি করা কি যুক্তিযুক্ত? যে বিষয়টি দৃশ্যমান, তা হলো, সরকারের নির্বাহী যন্ত্র অনেকাংশে অকার্যকর। টিভি ক্যামেরার সামনে খণ্ড খণ্ড বক্তব্য না দিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা এ সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হলে ভালো হবে। যে বিষয়টি দৃশ্যমান, তা হলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে সভার পর সভা এবং নির্দেশের পর নির্দেশ। এত সভা ও নির্দেশ দিয়ে নির্বাহী যন্ত্রকে ভারাক্রান্ত করা এবং এর সময়ক্ষেপণ করলে কাজ হবে কখন।
এ প্রসঙ্গে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। বিষয়টি হলো, কথায় কথায় মন্ত্রণালয় পর্যায়ে কমিটি গঠন। এ ধরনের প্রবণতা মাঠ প্রশাসনকে দুর্বল ও অকেজো করে দেয়। কারণ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বা অপরাধ দমনে অস্ত্র ব্যবহার করলে সে বিষয়টি মাঠ পর্যায়েই ম্যাজিস্ট্রেট এবং বিভাগীয় তদন্ত করার দায়িত্ব আইন ও বিধিতে স্বীকৃত। কয়েক যুগ ধরে এ প্রথা নির্বাসিত করা হয়েছে। একটি সহজ উপায়কে জটিল থেকে জটিলতর করার প্রক্রিয়ার ফলে মাঠ প্রশাসন বর্তমানে দুর্বল। তাদের আইন দ্বারা স্বীকৃত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, অথচ সে দায়িত্ব পালিত হচ্ছে সচিবালয়ে। ফলে আইন দ্বারা অর্পিত দায়িত্ব পালনে সচিবালয়সহ মাঠ প্রশাসনও ব্যর্থ হচ্ছে। এ জন্যই প্রশাসনে বর্তমানে বেহাল অবস্থা দৃশ্যমান। এ জন্যই প্রধানমন্ত্রী বারবার বলতে বাধ্য হচ্ছেন যে প্রশাসনকে সচল করতে হবে। সচিবদের একাধিকবার এবং সম্প্রতি মন্ত্রীদেরও তিনি তাঁর গভীর উত্কণ্ঠার কথা জানিয়েছেন। তবে এর সুফল এখনো পাওয়া যায়নি।
বিচারবহির্ভূত হত্যার মূল প্রশ্ন হলো দুটি। এক. অপরাধী হোক বা নিরপরাধই হোক, তাঁকে আদালতের কাঠগড়ায় না এনে হত্যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দুই. অপরাধীদের এ ধরনের হত্যার মূল গডফাদারকে আইনের আড়ালেই রাখা হয়। কারণ, এতে প্রকৃত তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা সমূলে বিনষ্ট হয়। অন্যদিকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ব্যক্তিদের সাফাই হলো, অপরাধীরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি করলে আত্মরক্ষার্থে তাদেরও পাল্টা গুলিবর্ষণ করতে হয়। এবং এটা আইনসিদ্ধ। এ ধরনের পাল্টা গুলি করা আইনসিদ্ধ কি না, তার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা অনুসন্ধানের আইনি বিধানও রয়েছে। সে বিধানটি যথাসময়ে প্রয়োগ করলে সরকার অহেতুক সমালোচনার শিকার হতো না। কেন এটা যথাসময়ে করা হচ্ছে না, তার ব্যাখ্যাও ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে। প্রকৃত উদ্দেশ্য হবে, বিচারবহির্ভূত হত্যার আইনি প্রতিকার। এ ধরনের হত্যাকে ঢালাওভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যা না বললেও হয়। বরং সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগ করে এ ধরনের প্রতিকার করা উচিত হবে। ইতিমধ্যে কয়েকজন নিরপরাধ ব্যক্তি এ ধরনের হত্যার শিকার হয়েছে, যা মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। এ বিষয়ে দুটি পদক্ষেপ নেওয়া আশু প্রয়োজন। এক. যেসব নিরপরাধ ব্যক্তি এ প্রক্রিয়ায় নিহত হয়েছেন, সে কেসগুলো অবিলম্বে আইনসিদ্ধ প্রক্রিয়ায় ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক অনুসন্ধান করে প্রকৃত তথ্য উদ্ঘাটন করা এবং প্রয়োজনে আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া। দুই. যত অভিযোগ আজ পর্যন্ত পাওয়া গেছে, সেগুলো সম্পর্কেও একই পদক্ষেপ নেওয়া এবং মানবাধিকার কমিশনসহ জনগণকে অবহিত করা।
এ এম এম শওকত আলী: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা।
No comments