আমস্টারডামের পতিতাপল্লীর ভিতর-বাহির
আমস্টারডামের
রেড লাইট ডিস্ট্রিক্ট। সারা দুনিয়ায় পরিচিত বিশ্বের সম্ভবত সবচেয়ে বড় ও
বৈধ পতিতাপল্লী। নেদারল্যান্ড সরকারের অনুমোদিত এই পতিতাপল্লীতে প্রায় ৬০০০
নারী দেহব্যবসা করেন। বছরে সেখানে ভিজিট করেন কমপক্ষে ২ কোটি পুরুষ। সারা
বছর, প্রতিদিনই এই পতিতাপল্লী জমজমাট। কিন্তু সপ্তাহান্তে বা সাপ্তাহিক
ছুটির দিনগুলোতে যেন তা আরো সরগরম হয়ে ওঠে। রাস্তার পাশে স্থাপিত রঙিন আলোর
মধ্যে স্বল্প বসনে নাচছেন যুবতী। খদ্দেরদের দু’হাতে আহ্বান জানাচ্ছেন।
কাচে ঘেরা সেই ঘরের ভিতরকার সব দৃশ্য বাইরে থেকে দেখা যায়। এমন আয়োজন যখন ছুটির দিনে বিশেষ করে করা হয় তখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে উৎসুক পুরুষ, যুবত তা প্রত্যক্ষ করেন। মাঝে মাঝে রাস্তায় ট্রাফিক বা যান চলাচল থেমে যায়।
দেশটিতে প্রাপ্ত বয়স্ক নরনারীর মধ্যে উভয়ের সম্মতিতে অর্থের বিনিময়ে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে বৈধতা রয়েছে। কিন্তু এই যৌনতাকে কেন্দ্র করে সেখানে মাদকের বিস্তার ঘটছে বলে অনেকে মনে করছেন। তাই অর্থের বিনিময়ে যৌনতা ও মাদক বন্ধের জন্য আন্দোলনে নেমেছেন নারীবাদী ও খ্রিস্টানদের একটি গ্রুপ। তারা এমন সংস্কৃতি বন্ধের জন্য প্রচারণা শুরু করেছেন। এই গ্রুপের নাম দেয়া হয়েছে ‘এক্সপোজ’। ফলে ওই পতিতাপল্লীতে যেসব যুবতী অর্থের বিনিময়ে দেহ দান করেন, তারা রীতিমতো হুমকিতে পড়েছেন। তাদের ভয়, দেহব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে তাদেরকে পথে বসতে হবে। বৃটেনের একটি অনলাইন ট্যাবলয়েড পত্রিকায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
এরই মধ্যে এক্সপোজ এ সংক্রান্ত আইন পরিবর্তন করার দাবিতে ৪০ হাজার মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছে। ফলে আইন পরিবর্তন করা হবে কিনা তা নিয়ে বিতর্কের জন্য তারিখ নির্ধারণ করবে ডাচ পার্লামেন্ট। এক্সপোজের দাবি, এই যৌন ব্যবসার কারণে নারী পাচার বাড়ছে। অর্থের বিনিময়ে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করার বিষয়টি অপরাধী কর্মকা-ের দিকে ধাবিত হচ্ছে। শুধু ২০১২ সালে মোট যে পরিমাণ মানুষকে পাচার করা হয়েছে, তার মধ্যে শতকরা ৪০ ভাগ নারীকে পাচার করা হয়েছে যৌনতার জন্য। এসব নারীর বেশির ভাগকে দেহব্যবসায় বাধ্য করা হয়েছে।
আমস্টারডামের রেড লাইট ডিস্ট্রিক্টে যেসব নারী দেহব্যবসা করেন তাদের প্রতি ঘন্টায় আয় ১০০ পাউন্ড। তাদের এ ব্যবসাকে বন্ধ করে দেয়া হলে তাদের জীবিকা কেড়ে নেয়া হবে বলে আতঙ্কিত। তাই তারা প্রতিবাদী নারীবাদী সংগঠনগুলোকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করছেন। তারা বলছেন, কিভাবে আপনারা নারীবাদী হন? কিভাবে আপনারা অন্য নারীর জীবিকা কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করেন? আমস্টারডামের এমনই একজন যৌনকর্মী মেলিসা হিউফ (৫৪)। তিনি বলেছেন, কোনো ভুল করবেন না। আমস্টারডামে যে নারী আছেন যৌন ব্যবসায়, তারা নিজেরাই তাদের দায়িত্বে আছেন। একজন খদ্দেরকে ধরতে হবে না কি করতে হবে এ বিষয়ে আইন আছে। ফলে একজন যৌনকর্মী এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। যৌনপল্লীর ভিতরে আছে একটি ‘প্যানিক বাটন’। কোনো পুরুষ খদ্দের যদি মনে করেন তিনি কোনোভাবে নির্যাতিত তাহলে তিনি এটির সাহায্য নিয়ে উইনডো ম্যানেজারকে তলব করতে পারেন। এমন কি কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়াই পুলিশকে কল করতে পারেন।
মেলিসা বলেন, এই রেড লাইট ডিস্ট্রিক্টে রয়েছে অনেক পুলিশ ক্যামেরা ও সিসিটিভি ক্যামেরা। তাই সবচেয়ে নিরাপদ স্থানগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। এখানে আমি ৫ বছর ধরে এ পেশায় জড়িত। আমি এই পেশা বেছে নিয়েছি। কারণ, আমি এটা পছন্দ করি। শুধু অর্থের জন্য এ পেশা বেছে নিই নি। এখন আমার বয়স ৫৪ বছর, যদিও খদ্দেরদের বলি আমার বয়স ৪৫ বছর। আমার কয়েকজন বয়ফ্রেন্ডও রয়েছে। গুরুত্বর কিছু নয়। কিন্তু আমার জীবন তো স্বাভাবিক। আমি পড়াশোনায় ডিগ্রি অর্জন করেছি। একজন নার্স হিসেবে কাজ করেছি। এ পেশায় থাকার সময় দেখেছি অনেক রোগি আছেন, যাদের রয়েছে শারীরিক তীব্র চাহিদা। কখনো কখনো এসব রোগি আপনার সঙ্গে চমৎকার ব্যবহার করেন। কখনো অশ্লীল ব্যবহার করেন। আবার কখনো আপনাকে জড়িয়ে ধরেন। তাই আমি পেশা পরিবর্তন করেছি। এখন একজন যৌনকর্মী হয়েও এখানে একজন নার্স হিসেবেই দায়িত্ব পালন করছি। আমি এ পেশাকে পছন্দ করছি এ জন্য যে, এতে একজন রোগির সঙ্গে ওয়ান-টু-ওয়ান প্রচুর সময় কাটানো যায়। আমি প্রচুর মানুষকে এর মাধ্যমে সন্তুষ্টি দিয়েছি। এটা শুধু অর্থ নয়। তাদেরকে মানসিক স্বস্তি দিতে পেরেছি।
তবে এক্সপোজের লোকজন বলছেন, আমি বুঝতে পারছি না কি করছি। তাদের এমন কথা আমাকে ক্ষুব্ধ করে। আমি তো ট্যাক্স পরিশোধ করি। আমাদের যখন কারো সাহায্য প্রয়োজন নেই, তখন তারা আমাদেরকে রক্ষার নামে এগিয়ে এসেছেন। তারা মনে করেন, যৌনকর্মীদের মধ্যে রয়েছে শৈশবের আসক্তি অথবা যৌন আসক্তি। মেলিসা প্রশ্ন রাখেন, যখন বৈধ বয়সের দু’জন মানুষ শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে সম্মত হয় তখন সমস্যাটা কোথায়? যারা এক্সপোজের হয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন তাদের বয়স কম, যুবা। আমার মনে হয়, যখন আমার বয়সে পৌঁছাবেন তারা তারা পিছন ফিরে দেখবেন এবং বুঝবেন।
মেলিসার এসব প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন এক্সপোজের কর্মী সারা লাউস (২৯)। তিনি বলেন, নেদারল্যান্ডে যৌন ব্যবসা বৈধ। আমরা বিশ্বাস করি, এটা একটি নিষ্ঠুরতা। সেখানে যুবতীদেরকে কাচে ঘেরা জানালার সামনে পাঠিয়ে দেয়া হয় অন্তর্বাস পরিয়ে। ধরে নেয়া হয় এটা স্বাভাবিক। রেড লাইট ডিস্ট্রিক্টের পাশ দিয়ে যেসব পর্যটক যান তারা কোনো অর্থ পরিশোধ না করেই তাদের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকেন। কারণ, পর্যটনের আকর্ষণ হয়ে ওঠেন ওইসব যুবতী। তাদেরকে বিনা পয়সায় আন্ডারওয়্যার পরা অবস্থায় নাচ করতে দেখতে পান তারা।
আমাদের প্রচারণায় যারা যুক্ত হয়েছেন তারা সবাই স্বেচ্ছাসেবক। যুবক বা যুবতী। আমরা দেখতে পাচ্ছি এ পেশা মারাত্মক ক্ষতি করছে। এ জন্য বিপুল সংখ্যক মানুষকে পাচার করা হচ্ছে। আর টাকার বিনিময়ে যৌন সম্পর্ককে স্বাভাবিকীকরণের বিষয়ে আমাদের রয়েছে আপক্তি। অর্থের কাছে যৌনতা বিলিয়ে দেয়া একজন নারীর অধিকার হতে পারে না। ফ্রান্স, সুইডেন ও অন্য আরো দেশের পথ অনুসরণ করতে পারে নেদারল্যান্ডস। ওইসব দেশে অর্থের বিনিময়ে যৌন সম্পর্ককে অবৈধ করা হয়েছে। পতিতাবৃত্তিতে ‘নরডিক মডেল’ অনুসরণ করে যেসব দেশ সেখানেও এর মাত্রা কমে এসেছে। অর্থের বিনিময়ে যৌন সম্পর্ককে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হলে তাতে নারী পাচার কমে যাবে।
নেদারল্যান্ডসে বর্তমানে এমন দেহব্যবসায়ী নারীর সংখ্যা ১৫০০০ থেকে ৩০০০০ হতে পারে। ২০০৮ সালের সরকারি হিসাব বলছে, সেখানে শুধু যৌন কর্মকান্ডে বছরে প্রায় ৭ কোটি ৯০ লাখ পাউন্ড হাতবদল হয়। আর বর্তমানে যৌনকর্মীরা তাদের উপার্জন থেকে আয়কর দিচ্ছেন। উল্লেখ্য, ২০১৬ সাল বৃটেনে যৌনকর্মীর সংখ্যা ছিল ৭২৮০০। এ সময়ে প্রতি ১০ জন পুরুষের মধ্যে একজন স্বীকার করেছেন তারা অর্থের বিনিময়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন।
মেলিসা যৌনকর্মীদের পক্ষে কথা বলেছেন। কিন্তু সারা বলেন, বেশির ভাগ নারী ওই নোংরা পল্লীকে বেছে নিয়েছেন বলে তিনি বিশ্বাস করেন না। যারা অর্থের বিনিময়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে যান, তারা নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন বলেও তিনি মনে করেন না। সারা মনে করেন, এসব পুরুষ থাকেন প্রচুর পরিমাণে মদ্যপ। প্রচণ্ডরকম আপত্তিকর আচরণ করেন। স্ত্রীরা তাদের সঙ্গে যে সব সম্পর্কে অস্বীকৃতি জানান, তারা এসব যৌনকর্মীর সঙ্গে তাই করেন, যদি ওই যৌনকর্মীর বয়স ১২ বছরও হয়। খদ্দেররা নানা রকম সহিংস আচরণ করেন। তারা কনডম ছাড়া সম্পর্ক স্থাপন করেন। এমন কি একজন নারীর যখন রক্তপাত হচ্ছে তখনও তিনি ছাড় পান না।
সারা বলেন, অর্থের বিনিময়ে যেসব নারী দেহব্যবসা করেন তাদের বেশির ভাগই বিপন্ন। ভীষণভাবে তাদের অর্থের প্রয়োজন না হয় তাদেরকে যৌনকাজে বাধ্য করা হয়েছে। ২০১৭ সালে ইউরোপোল এ নিয়ে একটি গবেষণা করে। তাতে দেখা যায়, আমস্টারডামে পাচারের শিকার অনেক নারী। কারণ, সেখানে সহজে ও সস্তায় এ পেশা চালানো যায়। একবার সেখানে একজন যুবতীকে প্রবেশ করাতে পারলে আর কোনো অন্তরায় থাকে না।
কাচে ঘেরা সেই ঘরের ভিতরকার সব দৃশ্য বাইরে থেকে দেখা যায়। এমন আয়োজন যখন ছুটির দিনে বিশেষ করে করা হয় তখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে উৎসুক পুরুষ, যুবত তা প্রত্যক্ষ করেন। মাঝে মাঝে রাস্তায় ট্রাফিক বা যান চলাচল থেমে যায়।
দেশটিতে প্রাপ্ত বয়স্ক নরনারীর মধ্যে উভয়ের সম্মতিতে অর্থের বিনিময়ে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে বৈধতা রয়েছে। কিন্তু এই যৌনতাকে কেন্দ্র করে সেখানে মাদকের বিস্তার ঘটছে বলে অনেকে মনে করছেন। তাই অর্থের বিনিময়ে যৌনতা ও মাদক বন্ধের জন্য আন্দোলনে নেমেছেন নারীবাদী ও খ্রিস্টানদের একটি গ্রুপ। তারা এমন সংস্কৃতি বন্ধের জন্য প্রচারণা শুরু করেছেন। এই গ্রুপের নাম দেয়া হয়েছে ‘এক্সপোজ’। ফলে ওই পতিতাপল্লীতে যেসব যুবতী অর্থের বিনিময়ে দেহ দান করেন, তারা রীতিমতো হুমকিতে পড়েছেন। তাদের ভয়, দেহব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে তাদেরকে পথে বসতে হবে। বৃটেনের একটি অনলাইন ট্যাবলয়েড পত্রিকায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
এরই মধ্যে এক্সপোজ এ সংক্রান্ত আইন পরিবর্তন করার দাবিতে ৪০ হাজার মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছে। ফলে আইন পরিবর্তন করা হবে কিনা তা নিয়ে বিতর্কের জন্য তারিখ নির্ধারণ করবে ডাচ পার্লামেন্ট। এক্সপোজের দাবি, এই যৌন ব্যবসার কারণে নারী পাচার বাড়ছে। অর্থের বিনিময়ে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করার বিষয়টি অপরাধী কর্মকা-ের দিকে ধাবিত হচ্ছে। শুধু ২০১২ সালে মোট যে পরিমাণ মানুষকে পাচার করা হয়েছে, তার মধ্যে শতকরা ৪০ ভাগ নারীকে পাচার করা হয়েছে যৌনতার জন্য। এসব নারীর বেশির ভাগকে দেহব্যবসায় বাধ্য করা হয়েছে।
আমস্টারডামের রেড লাইট ডিস্ট্রিক্টে যেসব নারী দেহব্যবসা করেন তাদের প্রতি ঘন্টায় আয় ১০০ পাউন্ড। তাদের এ ব্যবসাকে বন্ধ করে দেয়া হলে তাদের জীবিকা কেড়ে নেয়া হবে বলে আতঙ্কিত। তাই তারা প্রতিবাদী নারীবাদী সংগঠনগুলোকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করছেন। তারা বলছেন, কিভাবে আপনারা নারীবাদী হন? কিভাবে আপনারা অন্য নারীর জীবিকা কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করেন? আমস্টারডামের এমনই একজন যৌনকর্মী মেলিসা হিউফ (৫৪)। তিনি বলেছেন, কোনো ভুল করবেন না। আমস্টারডামে যে নারী আছেন যৌন ব্যবসায়, তারা নিজেরাই তাদের দায়িত্বে আছেন। একজন খদ্দেরকে ধরতে হবে না কি করতে হবে এ বিষয়ে আইন আছে। ফলে একজন যৌনকর্মী এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। যৌনপল্লীর ভিতরে আছে একটি ‘প্যানিক বাটন’। কোনো পুরুষ খদ্দের যদি মনে করেন তিনি কোনোভাবে নির্যাতিত তাহলে তিনি এটির সাহায্য নিয়ে উইনডো ম্যানেজারকে তলব করতে পারেন। এমন কি কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়াই পুলিশকে কল করতে পারেন।
মেলিসা বলেন, এই রেড লাইট ডিস্ট্রিক্টে রয়েছে অনেক পুলিশ ক্যামেরা ও সিসিটিভি ক্যামেরা। তাই সবচেয়ে নিরাপদ স্থানগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। এখানে আমি ৫ বছর ধরে এ পেশায় জড়িত। আমি এই পেশা বেছে নিয়েছি। কারণ, আমি এটা পছন্দ করি। শুধু অর্থের জন্য এ পেশা বেছে নিই নি। এখন আমার বয়স ৫৪ বছর, যদিও খদ্দেরদের বলি আমার বয়স ৪৫ বছর। আমার কয়েকজন বয়ফ্রেন্ডও রয়েছে। গুরুত্বর কিছু নয়। কিন্তু আমার জীবন তো স্বাভাবিক। আমি পড়াশোনায় ডিগ্রি অর্জন করেছি। একজন নার্স হিসেবে কাজ করেছি। এ পেশায় থাকার সময় দেখেছি অনেক রোগি আছেন, যাদের রয়েছে শারীরিক তীব্র চাহিদা। কখনো কখনো এসব রোগি আপনার সঙ্গে চমৎকার ব্যবহার করেন। কখনো অশ্লীল ব্যবহার করেন। আবার কখনো আপনাকে জড়িয়ে ধরেন। তাই আমি পেশা পরিবর্তন করেছি। এখন একজন যৌনকর্মী হয়েও এখানে একজন নার্স হিসেবেই দায়িত্ব পালন করছি। আমি এ পেশাকে পছন্দ করছি এ জন্য যে, এতে একজন রোগির সঙ্গে ওয়ান-টু-ওয়ান প্রচুর সময় কাটানো যায়। আমি প্রচুর মানুষকে এর মাধ্যমে সন্তুষ্টি দিয়েছি। এটা শুধু অর্থ নয়। তাদেরকে মানসিক স্বস্তি দিতে পেরেছি।
তবে এক্সপোজের লোকজন বলছেন, আমি বুঝতে পারছি না কি করছি। তাদের এমন কথা আমাকে ক্ষুব্ধ করে। আমি তো ট্যাক্স পরিশোধ করি। আমাদের যখন কারো সাহায্য প্রয়োজন নেই, তখন তারা আমাদেরকে রক্ষার নামে এগিয়ে এসেছেন। তারা মনে করেন, যৌনকর্মীদের মধ্যে রয়েছে শৈশবের আসক্তি অথবা যৌন আসক্তি। মেলিসা প্রশ্ন রাখেন, যখন বৈধ বয়সের দু’জন মানুষ শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে সম্মত হয় তখন সমস্যাটা কোথায়? যারা এক্সপোজের হয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন তাদের বয়স কম, যুবা। আমার মনে হয়, যখন আমার বয়সে পৌঁছাবেন তারা তারা পিছন ফিরে দেখবেন এবং বুঝবেন।
মেলিসার এসব প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন এক্সপোজের কর্মী সারা লাউস (২৯)। তিনি বলেন, নেদারল্যান্ডে যৌন ব্যবসা বৈধ। আমরা বিশ্বাস করি, এটা একটি নিষ্ঠুরতা। সেখানে যুবতীদেরকে কাচে ঘেরা জানালার সামনে পাঠিয়ে দেয়া হয় অন্তর্বাস পরিয়ে। ধরে নেয়া হয় এটা স্বাভাবিক। রেড লাইট ডিস্ট্রিক্টের পাশ দিয়ে যেসব পর্যটক যান তারা কোনো অর্থ পরিশোধ না করেই তাদের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকেন। কারণ, পর্যটনের আকর্ষণ হয়ে ওঠেন ওইসব যুবতী। তাদেরকে বিনা পয়সায় আন্ডারওয়্যার পরা অবস্থায় নাচ করতে দেখতে পান তারা।
আমাদের প্রচারণায় যারা যুক্ত হয়েছেন তারা সবাই স্বেচ্ছাসেবক। যুবক বা যুবতী। আমরা দেখতে পাচ্ছি এ পেশা মারাত্মক ক্ষতি করছে। এ জন্য বিপুল সংখ্যক মানুষকে পাচার করা হচ্ছে। আর টাকার বিনিময়ে যৌন সম্পর্ককে স্বাভাবিকীকরণের বিষয়ে আমাদের রয়েছে আপক্তি। অর্থের কাছে যৌনতা বিলিয়ে দেয়া একজন নারীর অধিকার হতে পারে না। ফ্রান্স, সুইডেন ও অন্য আরো দেশের পথ অনুসরণ করতে পারে নেদারল্যান্ডস। ওইসব দেশে অর্থের বিনিময়ে যৌন সম্পর্ককে অবৈধ করা হয়েছে। পতিতাবৃত্তিতে ‘নরডিক মডেল’ অনুসরণ করে যেসব দেশ সেখানেও এর মাত্রা কমে এসেছে। অর্থের বিনিময়ে যৌন সম্পর্ককে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হলে তাতে নারী পাচার কমে যাবে।
নেদারল্যান্ডসে বর্তমানে এমন দেহব্যবসায়ী নারীর সংখ্যা ১৫০০০ থেকে ৩০০০০ হতে পারে। ২০০৮ সালের সরকারি হিসাব বলছে, সেখানে শুধু যৌন কর্মকান্ডে বছরে প্রায় ৭ কোটি ৯০ লাখ পাউন্ড হাতবদল হয়। আর বর্তমানে যৌনকর্মীরা তাদের উপার্জন থেকে আয়কর দিচ্ছেন। উল্লেখ্য, ২০১৬ সাল বৃটেনে যৌনকর্মীর সংখ্যা ছিল ৭২৮০০। এ সময়ে প্রতি ১০ জন পুরুষের মধ্যে একজন স্বীকার করেছেন তারা অর্থের বিনিময়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন।
মেলিসা যৌনকর্মীদের পক্ষে কথা বলেছেন। কিন্তু সারা বলেন, বেশির ভাগ নারী ওই নোংরা পল্লীকে বেছে নিয়েছেন বলে তিনি বিশ্বাস করেন না। যারা অর্থের বিনিময়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে যান, তারা নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন বলেও তিনি মনে করেন না। সারা মনে করেন, এসব পুরুষ থাকেন প্রচুর পরিমাণে মদ্যপ। প্রচণ্ডরকম আপত্তিকর আচরণ করেন। স্ত্রীরা তাদের সঙ্গে যে সব সম্পর্কে অস্বীকৃতি জানান, তারা এসব যৌনকর্মীর সঙ্গে তাই করেন, যদি ওই যৌনকর্মীর বয়স ১২ বছরও হয়। খদ্দেররা নানা রকম সহিংস আচরণ করেন। তারা কনডম ছাড়া সম্পর্ক স্থাপন করেন। এমন কি একজন নারীর যখন রক্তপাত হচ্ছে তখনও তিনি ছাড় পান না।
সারা বলেন, অর্থের বিনিময়ে যেসব নারী দেহব্যবসা করেন তাদের বেশির ভাগই বিপন্ন। ভীষণভাবে তাদের অর্থের প্রয়োজন না হয় তাদেরকে যৌনকাজে বাধ্য করা হয়েছে। ২০১৭ সালে ইউরোপোল এ নিয়ে একটি গবেষণা করে। তাতে দেখা যায়, আমস্টারডামে পাচারের শিকার অনেক নারী। কারণ, সেখানে সহজে ও সস্তায় এ পেশা চালানো যায়। একবার সেখানে একজন যুবতীকে প্রবেশ করাতে পারলে আর কোনো অন্তরায় থাকে না।
No comments