নির্বাচন কমিশনের বিলম্বিত স্বীকারোক্তি by মো. তোফাজ্জল বিন আমীন
আমাদের
দেশে নির্বাচনী ব্যবস্থার ভিত্তি যতটুকু দাঁড়িয়েছিল তা খারাপ হতে হতে এমন
জায়গায় পৌঁছেছে ভোটাররা আর নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না।
ভোট মানেই যে একটি উৎসাহ ও উদ্দীপনার মিলন মেলা ছিল। অথচ এখন উদ্দীপনার ভোট
অনীহার ভোটে পরিণত হয়েছে। ভোটারদের এই অনীহা তো একদিনে তৈরি হয়নি। যে
কারণে ভোট এলেই গায়েবী ভোটের খবর পত্রিকার পাতায় মুদ্রিত হয়। ভোটারদের এই
অনীহা কি সরকারী দল কি বিরোধী দল কারও জন্যই কল্যাণকর নয়! পৃথিবীর যে কোন
দেশের তুলনায় বাংলাদেশের জনগণ সর্বাধিক নির্বাচনমুখী। গণতন্ত্রের জন্য এ
অঞ্চলের মানুষ যে ত্যাগ সংগ্রাম করেছে ভূ-ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে তার নজির
নেই। অথচ সেই গণতন্ত্র আজ শৃঙ্খলিত। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পেরিয়ে গেলেও
সুষ্ঠু ভোটের অধিকার নিয়ে কলাম লিখতে হচ্ছে,এর চেয়ে লজ্জা একটি আধুনিক
রাষ্ট্রের জন্য আর কি হতে পারে! রাষ্ট্রের জনগণ ভুল কিন্তু করে না। ভুল করে
শাসক। ইতিহাসের পাতা ঘাটলে এর ভুরি ভুরি প্রমাণ পাওয়া যাবে। সবকিছু যখন
নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে তখন মনের অজান্তে ভুল হয়ে যায়। হয়ে যাওয়া একাদশ
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের ফলাফল দেখে তাই মনে হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর
কথা না হয় বাদ-ই দিলাম। বিএনপির মতো একটি রাজনৈকি দল যারা সরকার গঠন করার
ক্ষমতা রাখে তারা ১০টি আসনও পেল না তা কি বিশ্বাসযোগ্য? কোনো দরকার ছিল না
এত ভোট দেখিয়ে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করার। আরও কম ভোট দেখালেও নির্বাচন কমিশন
পারতো! সাজানো মাঠের ভোটে এমনিতেই আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করতো। কারণ ২০০৮
সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী সরকার ২০১১
সালের জুনে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার
ব্যবস্থা বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান
চালু করে। আর তখন থেকেই জনগণের ভোটের প্রয়োজনীয়তা হারিয়ে যায়।
বৃটিশরা যখন বিশ্ব শাসন করতো তখন তারা এমন একটা নির্বাচনী ব্যবস্থা চালু করেছিল,সেখানে সর্বজনীন ভোটাধিকার ছিল না। যারা কর প্রদান করতো এবং শিক্ষিত ছিল কেবল তারাই ভোট দিতে পারতো। বৃটিশদের কথা না হয় বাদ-ই দিলাম। পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খান জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। কিন্তু তীব্র গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার জন্যে জনগণ যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল সে ভোটাধিকার আজ উধাও। স্থানীয় সরকারের নির্বাচন থেকে শুরু করে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন,ব্যবসায়ী সংগঠনের নির্বাচন,পরিবহন সমিতির নির্বাচনেও ভোট উধাও। সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিনিধি নির্বাচনের যতগুলো সংগঠন রয়েছে তার সিংহভাগ থেকে যেখানে ভোট উধাও সেখানে দলীয় সরকারের অধীনে বাংলাদেশে যে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় তা আবারও প্রমাণিত হলো। এবারের নির্বাচনের পর সবার মাঝেই নতুন একটা ধারণা এসে গেছে,ভোট নিয়ে নেতা-কমীদের দরকার নেই। পুলিশ আর সিভিল প্রশাসন থাকলেই চলবে। মাঝে তো রাকিব মার্কা নির্বাচন কমিশন একটা আছে। মনিটরিং করার জন্য রাষ্ট্রের অন্য সব প্রশাসনিক যন্ত্র রয়েছে তারা বাকিটা সামাল দেবে। কিন্তু এই সংস্কৃতি রাষ্ট্র,সমাজ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জন্য মোটেও সুখকর নয়! কারণ মিথ্যা দিয়ে সত্যের আলোকে সারাক্ষণ অন্ধকারে রাখা যায় না।
আমরা কখনোই মন্দের ভালো কিংবা নিয়ম রক্ষার নির্বাচন প্রত্যাশা করি না। তবু একপেশী হওয়ার কারণে অনেকের মতে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ। নির্বাচনে কোনো কারচুপি হয়নি এটা নিশ্চিত করে ক্ষমতাসীরাও বলেনি। কেননা গণমাধ্যমে নির্বাচন পরবর্তীতে যেসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে তা থেকে প্রতিয়মান হয় যে নির্বাচনে কিছু কলংকজনক ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়টি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও মুদ্রিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মারাত্মক সব অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে নিরপেক্ষ ও পক্ষপাতহীন কমিশন গঠনের আহ্বান জানিয়েছে। বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে এসব অনিয়মের মধ্যে রয়েছে নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনের দিনে বিরোধীদলীয় সদস্যদের ওপর হামলা। ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন। ভোট জালিয়াতি। নির্বাচনী কর্মকর্তাদের পক্ষপাতমূলক আচরণ।
নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচনের বিস্তারিত ফলাফল এত দিন কেন প্রকাশ করেনি তা জাতির সামনে উন্মোচন করা প্রয়োজন। দীর্ঘ ছয় মাস পর ইসি তার ওয়েবসাইটে একাদশ সংসদ নির্বাচনের বিস্তারিত ফল প্রকাশ করেছে। এতে দেখা গেছে ১০৩টি নির্বাচনী আসনের ২১৩টি কেন্দ্রেই শতভাগ ভোট পড়েছে। ১৪ টি আসনের সব কেন্দ্রেই, অর্থাৎ সাত হাজার ৬৮৯টি কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৯০ থেকে ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ। অথচ নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন-শতভাগ ভোট পড়া অস্বাভাবিক! কারণ ভোটারদের একটি অংশ প্রবাসী। অনেকে মারা গেছেন। অনেকে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের কারণে ভোট দিতে পারেন না। এসব কারণে শতভাগ ভোট পড়া প্রায় অসম্ভব। তাদের ভাষ্যমতে ৯০ শতাংশের বেশি ভোট পড়ার ঘটনা সন্দেহজনক। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যানকারী দলগুলো অভিযোগ করেছে যে,আগের রাতেই ব্যালটে সিল দিয়ে বাক্স ভরা হয়েছিল। বিরোধীদলগুলোর এ অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন তা কিন্তু নয়! তার কিছু আলামত আমরা ভোটের দিন লক্ষ্য করছি। যেমন ভোটের দিন অনেক কেন্দ্রই ছিল ভোটারবিহীন। কোথাও কোথাও সাজানো ভোটার লাইনে কিছু নারীকে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। বেশির ভাগ মানুষ কেন্দ্রে হাজির না হলেও কী করে শতাভাগ বা ৯০-৯৯ শতাংশ ভোট কাস্ট হলো সেটিই দেখার বিষয়! নির্বাচন কমিশনের বিস্তারিত ফল প্রকাশের দেরি এবং শতভাগ ভোটার উপস্থিতি সম্পর্কে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড.বদিউল আলম মজুমদারের মতে, এটি একটি অস্বাভাবিক ও অভূতপূর্ব ঘটনা। শতভাগ ভোট পড়ার ঘটনা প্রমাণ করছে,আগের রাতেই ভোট দেয়া হয়েছে। ভোটের দিন ভোট জালিয়াতি হয়েছে বলে যে অভিযোগ ছিল তা অমূলক নয়। নির্বাচনবিশেষজ্ঞ ড.তোফায়েল আহমেদ বলেন,ইসির এই হিসাব বিশ্বাস করার প্রশ্নই আসে না। ভোটারদের উপস্থিতির হার শতকরা ১৫ থেকে ২০ ভাগের বেশি হয়নি। এগুলো ম্যানিপুলেট করা হয়েছে। এ জন্যই প্রকাশ করতে এত সময় লেগেছে। সব কেন্দ্রের ভোট ওইদিনই গণনা এবং ব্যালট পেপারও জমা হয়ে গেছে। শুধু যোগ করতে এত সময় লাগার কথা না। এক সপ্তাহের মধ্যেই সাধারণত নির্বাচনের ফল প্রকাশের কথা।
আওয়ামী লীগের ১০ বছরের একটানা শাসনামলে গণতন্ত্র,মানবাধিকার ও পরিবেশ যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তা কারও জন্য কল্যাণকর নয়। একাদশ সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হওয়ায় দেশের জনগণের আশা-আকাংখার যেমন ব্যতয় ঘটেছে তেমনি বিদেশেও সমালোচনার ঝড় ওঠেছে। লন্ডনের বিখ্যাত দি ইকোনমিস্ট পত্রিকার এক প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়, বাংলাদেশের গণতন্ত্র পঁচে গেছে। একাদশ সংসদ নির্বাচন বহুদলীয় অংশগ্রহণমূলক হলেও সুষ্ঠু হয়নি। এ নির্বাচনে নজিরবিহীন অনিয়ম যেমন- নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্স সিল মেরে ভরে রাখা,বুথ দখল করে প্রকাশ্যে সরকারদলীয় প্রার্থীদের অনুকূলে ব্যালটে সিল মারা, বিরোধী জোটের পোলিং এজেণ্টদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে না দেয়া,নির্বাচনী ক্যাম্প ভাংচুর করা ও পুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ দেশ-বিদেশে এ নির্বাচনের ফলাফলকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আমরা আশা করব নির্বাচন কমিশন তাঁর স্বীকারোক্তি মোতাবেক বিতকিত নির্বাচনের অবসান ঘটিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কার্যকরী ভূমিকা পালন করবেন,এমনটিই দেশবাসীর প্রত্যাশা।
বৃটিশরা যখন বিশ্ব শাসন করতো তখন তারা এমন একটা নির্বাচনী ব্যবস্থা চালু করেছিল,সেখানে সর্বজনীন ভোটাধিকার ছিল না। যারা কর প্রদান করতো এবং শিক্ষিত ছিল কেবল তারাই ভোট দিতে পারতো। বৃটিশদের কথা না হয় বাদ-ই দিলাম। পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খান জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। কিন্তু তীব্র গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার জন্যে জনগণ যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল সে ভোটাধিকার আজ উধাও। স্থানীয় সরকারের নির্বাচন থেকে শুরু করে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন,ব্যবসায়ী সংগঠনের নির্বাচন,পরিবহন সমিতির নির্বাচনেও ভোট উধাও। সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিনিধি নির্বাচনের যতগুলো সংগঠন রয়েছে তার সিংহভাগ থেকে যেখানে ভোট উধাও সেখানে দলীয় সরকারের অধীনে বাংলাদেশে যে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় তা আবারও প্রমাণিত হলো। এবারের নির্বাচনের পর সবার মাঝেই নতুন একটা ধারণা এসে গেছে,ভোট নিয়ে নেতা-কমীদের দরকার নেই। পুলিশ আর সিভিল প্রশাসন থাকলেই চলবে। মাঝে তো রাকিব মার্কা নির্বাচন কমিশন একটা আছে। মনিটরিং করার জন্য রাষ্ট্রের অন্য সব প্রশাসনিক যন্ত্র রয়েছে তারা বাকিটা সামাল দেবে। কিন্তু এই সংস্কৃতি রাষ্ট্র,সমাজ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জন্য মোটেও সুখকর নয়! কারণ মিথ্যা দিয়ে সত্যের আলোকে সারাক্ষণ অন্ধকারে রাখা যায় না।
আমরা কখনোই মন্দের ভালো কিংবা নিয়ম রক্ষার নির্বাচন প্রত্যাশা করি না। তবু একপেশী হওয়ার কারণে অনেকের মতে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ। নির্বাচনে কোনো কারচুপি হয়নি এটা নিশ্চিত করে ক্ষমতাসীরাও বলেনি। কেননা গণমাধ্যমে নির্বাচন পরবর্তীতে যেসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে তা থেকে প্রতিয়মান হয় যে নির্বাচনে কিছু কলংকজনক ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়টি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও মুদ্রিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মারাত্মক সব অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে নিরপেক্ষ ও পক্ষপাতহীন কমিশন গঠনের আহ্বান জানিয়েছে। বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে এসব অনিয়মের মধ্যে রয়েছে নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনের দিনে বিরোধীদলীয় সদস্যদের ওপর হামলা। ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন। ভোট জালিয়াতি। নির্বাচনী কর্মকর্তাদের পক্ষপাতমূলক আচরণ।
নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচনের বিস্তারিত ফলাফল এত দিন কেন প্রকাশ করেনি তা জাতির সামনে উন্মোচন করা প্রয়োজন। দীর্ঘ ছয় মাস পর ইসি তার ওয়েবসাইটে একাদশ সংসদ নির্বাচনের বিস্তারিত ফল প্রকাশ করেছে। এতে দেখা গেছে ১০৩টি নির্বাচনী আসনের ২১৩টি কেন্দ্রেই শতভাগ ভোট পড়েছে। ১৪ টি আসনের সব কেন্দ্রেই, অর্থাৎ সাত হাজার ৬৮৯টি কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৯০ থেকে ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ। অথচ নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন-শতভাগ ভোট পড়া অস্বাভাবিক! কারণ ভোটারদের একটি অংশ প্রবাসী। অনেকে মারা গেছেন। অনেকে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের কারণে ভোট দিতে পারেন না। এসব কারণে শতভাগ ভোট পড়া প্রায় অসম্ভব। তাদের ভাষ্যমতে ৯০ শতাংশের বেশি ভোট পড়ার ঘটনা সন্দেহজনক। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যানকারী দলগুলো অভিযোগ করেছে যে,আগের রাতেই ব্যালটে সিল দিয়ে বাক্স ভরা হয়েছিল। বিরোধীদলগুলোর এ অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন তা কিন্তু নয়! তার কিছু আলামত আমরা ভোটের দিন লক্ষ্য করছি। যেমন ভোটের দিন অনেক কেন্দ্রই ছিল ভোটারবিহীন। কোথাও কোথাও সাজানো ভোটার লাইনে কিছু নারীকে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। বেশির ভাগ মানুষ কেন্দ্রে হাজির না হলেও কী করে শতাভাগ বা ৯০-৯৯ শতাংশ ভোট কাস্ট হলো সেটিই দেখার বিষয়! নির্বাচন কমিশনের বিস্তারিত ফল প্রকাশের দেরি এবং শতভাগ ভোটার উপস্থিতি সম্পর্কে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড.বদিউল আলম মজুমদারের মতে, এটি একটি অস্বাভাবিক ও অভূতপূর্ব ঘটনা। শতভাগ ভোট পড়ার ঘটনা প্রমাণ করছে,আগের রাতেই ভোট দেয়া হয়েছে। ভোটের দিন ভোট জালিয়াতি হয়েছে বলে যে অভিযোগ ছিল তা অমূলক নয়। নির্বাচনবিশেষজ্ঞ ড.তোফায়েল আহমেদ বলেন,ইসির এই হিসাব বিশ্বাস করার প্রশ্নই আসে না। ভোটারদের উপস্থিতির হার শতকরা ১৫ থেকে ২০ ভাগের বেশি হয়নি। এগুলো ম্যানিপুলেট করা হয়েছে। এ জন্যই প্রকাশ করতে এত সময় লেগেছে। সব কেন্দ্রের ভোট ওইদিনই গণনা এবং ব্যালট পেপারও জমা হয়ে গেছে। শুধু যোগ করতে এত সময় লাগার কথা না। এক সপ্তাহের মধ্যেই সাধারণত নির্বাচনের ফল প্রকাশের কথা।
আওয়ামী লীগের ১০ বছরের একটানা শাসনামলে গণতন্ত্র,মানবাধিকার ও পরিবেশ যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তা কারও জন্য কল্যাণকর নয়। একাদশ সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হওয়ায় দেশের জনগণের আশা-আকাংখার যেমন ব্যতয় ঘটেছে তেমনি বিদেশেও সমালোচনার ঝড় ওঠেছে। লন্ডনের বিখ্যাত দি ইকোনমিস্ট পত্রিকার এক প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়, বাংলাদেশের গণতন্ত্র পঁচে গেছে। একাদশ সংসদ নির্বাচন বহুদলীয় অংশগ্রহণমূলক হলেও সুষ্ঠু হয়নি। এ নির্বাচনে নজিরবিহীন অনিয়ম যেমন- নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্স সিল মেরে ভরে রাখা,বুথ দখল করে প্রকাশ্যে সরকারদলীয় প্রার্থীদের অনুকূলে ব্যালটে সিল মারা, বিরোধী জোটের পোলিং এজেণ্টদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে না দেয়া,নির্বাচনী ক্যাম্প ভাংচুর করা ও পুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ দেশ-বিদেশে এ নির্বাচনের ফলাফলকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আমরা আশা করব নির্বাচন কমিশন তাঁর স্বীকারোক্তি মোতাবেক বিতকিত নির্বাচনের অবসান ঘটিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কার্যকরী ভূমিকা পালন করবেন,এমনটিই দেশবাসীর প্রত্যাশা।
No comments