পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র: নতুন অর্থনৈতিক ভূগোলের অংশীদার! by হারুন শরিফ
প্রতিবেশ
আরব উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে সফলভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার পর মার্কিন
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের প্রত্যাশিত
বৈঠকটি উভয় দেশ ও অঞ্চলের জন্য ইতিবাচক ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
পাকিস্তানের জন্যও বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে
দায়িত্ব পালনের প্রথম বছরে তিনি পাশ্চাত্যের নেতাদের সাথে সম্পৃক্ত হননি।
পাকিস্তানের অন্যতম ব্যবসায়িক অংশীদার (বাণিজ্য মাত্রা ৬.৬ বিলিয়ন ডলার)
হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ইতিহাস ঝামেলাপূর্ণ,
লেনদেনভিত্তিক, নিরাপত্তাকেন্দ্রিক ও অবিশ্বস্ততার পরিপূর্ণ দেখা যাচ্ছে।
প্রধান প্রশ্ন হলো এই যে দ্রুত পরিবর্তনশীল ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দুই শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের আসন্ন বৈঠকটি দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে একমতের সৃষ্টি হবে কিনা, দক্ষিণ ও পশ্চিম এশিয়ার নতুন উদীয়মান অর্থনৈতিক ভূগোলে অর্থনৈতিক লেনদেনে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বাড়বে কিনা? কিংবা যুক্তরাষ্ট্র এরপরও আফগানিস্তান, এফএটিএফ ও চীনের সাথে সম্পর্কিত মানসিকতায় আবদ্ধ থাকবে?
জাপানে অনুষ্ঠিত জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে পাওয়া বার্তা, উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সম্পৃক্ততা, পাকিস্তানের শক্তিশালী মহলের বিবৃতিতে এমন উৎসাহজনক ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্র হয়তো নমনীয়তা প্রদর্শন করতে পারে এবং উদীয়মান আঞ্চলিক বাজার থেকে মধ্য মেয়াদে লাভবানও হতে পারে। এ থেকে আফগানিস্তানও উপকৃত হতে পারে।
এটা বোঝা পাকিস্তানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে যুক্তরাষ্ট্রের কাজ থেকে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা আবার লাভ করার বিষয়টি হিসাবের বাইরে। দীর্ঘ মেয়াদে এবং দুই দেশের মধ্যকার পারস্পরিক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের ভিত্তি হতে পারে না এটি। দুই দেশের মধ্যকার নতুন করে সম্পৃক্ততার প্রধান প্রধান উদ্দেশ্য হবে অভিন্ন অর্থনৈতিক লাভ, পৃষ্ঠপোষকতাভিত্তিক লেনদেন থেকে সরে যাওয়া, আঞ্চলিক কানেকটিভিটি ও স্থিতিশীলতা বাড়ানো।
যুক্তরাষ্ট্র – বাণিজ্যিক অংশীদার?
যে গুটিকতেক দেশের সাথে পাকিস্তানের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে, তাদের অন্যতম হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এর পরিমাণ প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার। আর ২০১৮ সালে পাকিস্তানের রফতানির ১৭ ভাগ তথা ৩.৭ বিলিয়ন ডলারের রফতানি গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত পাকিস্তানিদের কাছ থেকে প্রবাসী আয় এসেছে ৩.১ বিলিয়ন ডলার। তবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ হ্রাস পাচ্ছে, ২০১৯ সালে সর্বনিম্ন ৫০ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। অথচ এই সময়ে চীনা বিনিয়োগ ছিল ১.৮ বিলিয়ন ডলার।
পাকিস্তানকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে কেবল তার ভূ-কৌশলগত স্থান বিক্রি বা অবকাঠামো উন্নয়নের সুযোগ, বেসরকারিকরণ, পর্যটন বা গৃহায়নই বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে পারে না। পাকিস্তান এখন আইএমএফ কর্মসূচির যন্ত্রণাময় স্থিতিশীলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে মার্কিন বিনিয়োগকারীরা তখনই আকৃষ্ট হবে যখন এই অঞ্চলের দেশটি কৌশলগত স্বার্থও সমর্থন করবে।
প্রথমত, সদ্য ঘোষিত খাইবার পাখতুনখাওয়ার রাশাকাই অর্থনৈতিক জোনে যৌথ বিনিয়োগ করার জন্য আফগানিস্তানকে বিশেষ সুবিধা দিতে হবে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়কেই। এতে কেবল আফগান তরুণদের জন্য চাকরিরই ব্যবস্থা করবে না, সেইসাথে আফগান উদ্যোগগুলো চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের মাধ্যমে চীনা কোম্পানিগুলোর সাথে সম্পৃক্ত হবে। এর বিনিময়ে মধ্য এশিয়ার সাথে সিপিইসিকে সংযুক্ত করার জন্য পেশোয়ার-কাবুল-দুশানবে মটরওয়ে আবার চালু করার জন্য আফগানিস্তানকে রাজি হতে হবে।
দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রের পাকিস্তানি তথ্য প্রযুক্তিবিদদের নেতৃত্বে একটি বিশ্বমানের প্রযুক্তি পার্ক স্থাপনে এগিয়ে আসতে হবে যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানকে। এটি কেবল পাকিস্তানের প্রযুক্তিগত ভিত্তি, উৎপাদনশীলতা ও রফতানিই বাড়াবে না, সেইসাথে চীন ও ভারত থেকে মার্কিন প্রযুক্তির সোর্সিং স্পেসও বৈচিত্র্যময় করবে।
তৃতীয়ত, পাকিস্তানের জ্বালানি খাতে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের পরিকল্পিত বিনিয়োগ নিয়ে মার্কিন কারিগরি অংশীদারিত্ব উভয় দেশের জন্যই অত্যন্ত কল্যাণকর হবে।
অর্থনৈতিক কূটনীতিতে নেতৃত্বদানকারী ভূমিকা গ্রহণের আগে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে অবশ্যই প্রধান প্রধান রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সামর্থ্যের বিষয়টি কঠোরভাবে দেখতে হবে। বর্তমানে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনা প্রগতিশীলভাবে কৌশলগত চিন্তাভাবনা করতে অক্ষম।
সাম্প্রতিক সময়ে বেশির ভাগ দেশ বাণিজ্য ও পররাষ্ট্রনীতির কার্যক্রম একীভূত করেছে, আর পরিকল্পনা কমিশনগুলো কয়েক বছর আগেই বিশ্বজুড়ে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। পেশাদারিত্বের সাথে প্রতিষ্ঠানগুলোকে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে।
পাকিস্তানকে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দলকে দৃশ্যমান স্পর্শকাতর বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার সময় ঝুঁকি প্রশমিত করতে হবে। কারণ এটি দুই দেশের মধ্যকার ব্যাপকভিত্তিক ও টেকসই সম্পৃক্ততার পথে বাধার সৃষ্টি করতে পারে। ইমরান খানকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে, দায় পরিশোধের ব্যাপারে পাকিস্তানের নাজুক অবস্থার সুযোগ নিতে পারে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। আইএমএফের আসন্ন কর্মসূচির রাজনৈতিক মূল্য নিয়ে খুবই সতর্ক থাকতে হবে পাকিস্তানকে। ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের (এফএটিএফ) সাথে পাকিস্তানের সম্পৃক্ততা ইতোমধ্যেই খুব বেশি রাজনীতিকরণ করা হয়ে গেছে, এবং আরো কিছু দেয়ার দাবি অব্যাহত থাকবে।
দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো, পাকিস্তান এখনো অব্যাহত ঋণের জন্য ঐতিহ্যবাহী বহুজাতিক ব্যবস্থার ওপর নির্ভরতা হ্রাস করতে পারেনি। আগে হোক বা পরে হোক, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে বেকারত্ব, বাড়তে থাকা দারিদ্র্য, শিল্প ভিত্তির ক্ষয়, অর্থনৈতিক সুযোগের অব্যাহত পতনের বিষয়গুলো সামাল দিতে হবে। এ ধরনের পরিস্থিতি পাকিস্তানের দরকষাকষির সুযোগ আরো হ্রাস করবে।
সিপিইসি এখন চীন ও পাকিস্তান উভয়ের জন্য বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে, শিল্প সহযোগিতার দ্বিতীয় ধাপের জন্য প্রস্তুত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ইতোমধ্যেই নতুন অর্থনৈতিক স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হওয়ায় পাকিস্তান ও বিশ্বের অন্যান্য দেশকে দেখাতে হবে যে অভিন্ন সমৃদ্ধি ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য আঞ্চলিক কানেকটিভিটি অগ্রাধিকার পেতে পারে। এখন পর্যন্ত পাকিস্তান বহির্বিশ্বের কাছে সিপিইসির স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা প্রমাণ করতে হিমশিম খাচ্ছে।
সিপিইসির আওতায় ভবিষ্যতের বেসরকারি বিনিয়োগ নিয়ে সরকার এখনো বাস্তববাদী ও প্রমাণনির্ভর যোগাযোগ কৌশল গ্রহণ করতে পারেনি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অনেক দেশ এখনো বিশ্বাস করে যে সিপিইসির অধীনে অর্থনৈতিক জোনগুলো কেবল চীনা কোম্পানিগুলোর জন্যই কল্যাণকর। বাস্তবে এখানে সব বিনিয়োগকারীর জন্য দরজা খোলা আছে।
এখানেও পাকিস্তানের দুর্বলতা প্রকাশিত হচ্ছে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, মার্কিন কোম্পানিগুলোর সহায়তায় যৌথ প্রযুক্তি অর্থনৈতিক জোন নেতিবাচক ধারণা বদলাতে পারে, উভয় দেশের জন্য উইন-উইন পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পরে।
পাকিস্তান ও উপসাগরীয় দেশগুলো
ইমরান খানের সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতার সফর জ্বালানি, আতিথিয়েতা, রিয়াল এস্টেট উন্নয়ন, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ খাতে বিশাল বিনিয়োগের দরজা খুলে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও উপসাগরীয় কয়েকটি দেশের সাথে ঘনিষ্ঠ কৌশলগত অংশীদারিত্বের বিষয়টি বিবেচনা করে সম্ভাব্য মার্কিন প্রযুক্তিগত অংশীদারিত্ব এসব প্রস্তাবিত উদ্যোগের জন্য আরো কল্যাণকর হতে পারে। পাকিস্তানের জন্য পরীক্ষা হলো পেশাদারিত্ব ও ফাস্ট ট্র্যাকের ভিত্তিতে এসব প্রকল্প সামাল দেয়ার সামর্থ্য অর্জন। অন্যথায় এই স্বার্থ ফিকে হয়ে যাবে। আর যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিদ্যমান আঞ্চলিক সুযোগগুলো হাতের নাগালে রয়েছে। পাকিস্তানভিত্তিক মার্কিন কোম্পানিগুলো সহজেই পশ্চিম চীন, মধ্য এশিয়া, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের ৪০ কোটির বেশি লোকের বাজারে প্রবেশ করার সুযোগ পাবে।
>>>লেখক: সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত প্রতিমন্ত্রী ও পাকিস্তান বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি বিশ্বব্যাংক গ্রুপের দক্ষিণ ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক আঞ্চলিক উপদেষ্টার দায়িত্বও পালন করেছেন।
প্রধান প্রশ্ন হলো এই যে দ্রুত পরিবর্তনশীল ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দুই শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের আসন্ন বৈঠকটি দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে একমতের সৃষ্টি হবে কিনা, দক্ষিণ ও পশ্চিম এশিয়ার নতুন উদীয়মান অর্থনৈতিক ভূগোলে অর্থনৈতিক লেনদেনে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বাড়বে কিনা? কিংবা যুক্তরাষ্ট্র এরপরও আফগানিস্তান, এফএটিএফ ও চীনের সাথে সম্পর্কিত মানসিকতায় আবদ্ধ থাকবে?
জাপানে অনুষ্ঠিত জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে পাওয়া বার্তা, উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সম্পৃক্ততা, পাকিস্তানের শক্তিশালী মহলের বিবৃতিতে এমন উৎসাহজনক ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্র হয়তো নমনীয়তা প্রদর্শন করতে পারে এবং উদীয়মান আঞ্চলিক বাজার থেকে মধ্য মেয়াদে লাভবানও হতে পারে। এ থেকে আফগানিস্তানও উপকৃত হতে পারে।
এটা বোঝা পাকিস্তানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে যুক্তরাষ্ট্রের কাজ থেকে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা আবার লাভ করার বিষয়টি হিসাবের বাইরে। দীর্ঘ মেয়াদে এবং দুই দেশের মধ্যকার পারস্পরিক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের ভিত্তি হতে পারে না এটি। দুই দেশের মধ্যকার নতুন করে সম্পৃক্ততার প্রধান প্রধান উদ্দেশ্য হবে অভিন্ন অর্থনৈতিক লাভ, পৃষ্ঠপোষকতাভিত্তিক লেনদেন থেকে সরে যাওয়া, আঞ্চলিক কানেকটিভিটি ও স্থিতিশীলতা বাড়ানো।
যুক্তরাষ্ট্র – বাণিজ্যিক অংশীদার?
যে গুটিকতেক দেশের সাথে পাকিস্তানের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে, তাদের অন্যতম হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এর পরিমাণ প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার। আর ২০১৮ সালে পাকিস্তানের রফতানির ১৭ ভাগ তথা ৩.৭ বিলিয়ন ডলারের রফতানি গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত পাকিস্তানিদের কাছ থেকে প্রবাসী আয় এসেছে ৩.১ বিলিয়ন ডলার। তবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ হ্রাস পাচ্ছে, ২০১৯ সালে সর্বনিম্ন ৫০ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। অথচ এই সময়ে চীনা বিনিয়োগ ছিল ১.৮ বিলিয়ন ডলার।
পাকিস্তানকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে কেবল তার ভূ-কৌশলগত স্থান বিক্রি বা অবকাঠামো উন্নয়নের সুযোগ, বেসরকারিকরণ, পর্যটন বা গৃহায়নই বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে পারে না। পাকিস্তান এখন আইএমএফ কর্মসূচির যন্ত্রণাময় স্থিতিশীলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে মার্কিন বিনিয়োগকারীরা তখনই আকৃষ্ট হবে যখন এই অঞ্চলের দেশটি কৌশলগত স্বার্থও সমর্থন করবে।
প্রথমত, সদ্য ঘোষিত খাইবার পাখতুনখাওয়ার রাশাকাই অর্থনৈতিক জোনে যৌথ বিনিয়োগ করার জন্য আফগানিস্তানকে বিশেষ সুবিধা দিতে হবে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়কেই। এতে কেবল আফগান তরুণদের জন্য চাকরিরই ব্যবস্থা করবে না, সেইসাথে আফগান উদ্যোগগুলো চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের মাধ্যমে চীনা কোম্পানিগুলোর সাথে সম্পৃক্ত হবে। এর বিনিময়ে মধ্য এশিয়ার সাথে সিপিইসিকে সংযুক্ত করার জন্য পেশোয়ার-কাবুল-দুশানবে মটরওয়ে আবার চালু করার জন্য আফগানিস্তানকে রাজি হতে হবে।
দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রের পাকিস্তানি তথ্য প্রযুক্তিবিদদের নেতৃত্বে একটি বিশ্বমানের প্রযুক্তি পার্ক স্থাপনে এগিয়ে আসতে হবে যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানকে। এটি কেবল পাকিস্তানের প্রযুক্তিগত ভিত্তি, উৎপাদনশীলতা ও রফতানিই বাড়াবে না, সেইসাথে চীন ও ভারত থেকে মার্কিন প্রযুক্তির সোর্সিং স্পেসও বৈচিত্র্যময় করবে।
তৃতীয়ত, পাকিস্তানের জ্বালানি খাতে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের পরিকল্পিত বিনিয়োগ নিয়ে মার্কিন কারিগরি অংশীদারিত্ব উভয় দেশের জন্যই অত্যন্ত কল্যাণকর হবে।
অর্থনৈতিক কূটনীতিতে নেতৃত্বদানকারী ভূমিকা গ্রহণের আগে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে অবশ্যই প্রধান প্রধান রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সামর্থ্যের বিষয়টি কঠোরভাবে দেখতে হবে। বর্তমানে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনা প্রগতিশীলভাবে কৌশলগত চিন্তাভাবনা করতে অক্ষম।
সাম্প্রতিক সময়ে বেশির ভাগ দেশ বাণিজ্য ও পররাষ্ট্রনীতির কার্যক্রম একীভূত করেছে, আর পরিকল্পনা কমিশনগুলো কয়েক বছর আগেই বিশ্বজুড়ে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। পেশাদারিত্বের সাথে প্রতিষ্ঠানগুলোকে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে।
পাকিস্তানকে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দলকে দৃশ্যমান স্পর্শকাতর বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার সময় ঝুঁকি প্রশমিত করতে হবে। কারণ এটি দুই দেশের মধ্যকার ব্যাপকভিত্তিক ও টেকসই সম্পৃক্ততার পথে বাধার সৃষ্টি করতে পারে। ইমরান খানকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে, দায় পরিশোধের ব্যাপারে পাকিস্তানের নাজুক অবস্থার সুযোগ নিতে পারে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। আইএমএফের আসন্ন কর্মসূচির রাজনৈতিক মূল্য নিয়ে খুবই সতর্ক থাকতে হবে পাকিস্তানকে। ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের (এফএটিএফ) সাথে পাকিস্তানের সম্পৃক্ততা ইতোমধ্যেই খুব বেশি রাজনীতিকরণ করা হয়ে গেছে, এবং আরো কিছু দেয়ার দাবি অব্যাহত থাকবে।
দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো, পাকিস্তান এখনো অব্যাহত ঋণের জন্য ঐতিহ্যবাহী বহুজাতিক ব্যবস্থার ওপর নির্ভরতা হ্রাস করতে পারেনি। আগে হোক বা পরে হোক, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে বেকারত্ব, বাড়তে থাকা দারিদ্র্য, শিল্প ভিত্তির ক্ষয়, অর্থনৈতিক সুযোগের অব্যাহত পতনের বিষয়গুলো সামাল দিতে হবে। এ ধরনের পরিস্থিতি পাকিস্তানের দরকষাকষির সুযোগ আরো হ্রাস করবে।
সিপিইসি এখন চীন ও পাকিস্তান উভয়ের জন্য বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে, শিল্প সহযোগিতার দ্বিতীয় ধাপের জন্য প্রস্তুত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ইতোমধ্যেই নতুন অর্থনৈতিক স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হওয়ায় পাকিস্তান ও বিশ্বের অন্যান্য দেশকে দেখাতে হবে যে অভিন্ন সমৃদ্ধি ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য আঞ্চলিক কানেকটিভিটি অগ্রাধিকার পেতে পারে। এখন পর্যন্ত পাকিস্তান বহির্বিশ্বের কাছে সিপিইসির স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা প্রমাণ করতে হিমশিম খাচ্ছে।
সিপিইসির আওতায় ভবিষ্যতের বেসরকারি বিনিয়োগ নিয়ে সরকার এখনো বাস্তববাদী ও প্রমাণনির্ভর যোগাযোগ কৌশল গ্রহণ করতে পারেনি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অনেক দেশ এখনো বিশ্বাস করে যে সিপিইসির অধীনে অর্থনৈতিক জোনগুলো কেবল চীনা কোম্পানিগুলোর জন্যই কল্যাণকর। বাস্তবে এখানে সব বিনিয়োগকারীর জন্য দরজা খোলা আছে।
এখানেও পাকিস্তানের দুর্বলতা প্রকাশিত হচ্ছে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, মার্কিন কোম্পানিগুলোর সহায়তায় যৌথ প্রযুক্তি অর্থনৈতিক জোন নেতিবাচক ধারণা বদলাতে পারে, উভয় দেশের জন্য উইন-উইন পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পরে।
পাকিস্তান ও উপসাগরীয় দেশগুলো
ইমরান খানের সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতার সফর জ্বালানি, আতিথিয়েতা, রিয়াল এস্টেট উন্নয়ন, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ খাতে বিশাল বিনিয়োগের দরজা খুলে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও উপসাগরীয় কয়েকটি দেশের সাথে ঘনিষ্ঠ কৌশলগত অংশীদারিত্বের বিষয়টি বিবেচনা করে সম্ভাব্য মার্কিন প্রযুক্তিগত অংশীদারিত্ব এসব প্রস্তাবিত উদ্যোগের জন্য আরো কল্যাণকর হতে পারে। পাকিস্তানের জন্য পরীক্ষা হলো পেশাদারিত্ব ও ফাস্ট ট্র্যাকের ভিত্তিতে এসব প্রকল্প সামাল দেয়ার সামর্থ্য অর্জন। অন্যথায় এই স্বার্থ ফিকে হয়ে যাবে। আর যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিদ্যমান আঞ্চলিক সুযোগগুলো হাতের নাগালে রয়েছে। পাকিস্তানভিত্তিক মার্কিন কোম্পানিগুলো সহজেই পশ্চিম চীন, মধ্য এশিয়া, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের ৪০ কোটির বেশি লোকের বাজারে প্রবেশ করার সুযোগ পাবে।
>>>লেখক: সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত প্রতিমন্ত্রী ও পাকিস্তান বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি বিশ্বব্যাংক গ্রুপের দক্ষিণ ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক আঞ্চলিক উপদেষ্টার দায়িত্বও পালন করেছেন।
No comments