বাসায় দেরি হওয়ায় হামলা থেকে বেঁচে যান ইকরাম by জিয়া চৌধুরী
যেখান থেকে মাত্র মিনিট চারেকের দূরত্বে ডীন’স এভিনিউ। সেখানকার একটি বাড়িতে পরিবার নিয়ে থাকেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ইকরাম হোসেন বাবু। নিয়মিত নামাজ পড়তেন মসজিদে আল নূরে। সন্ত্রাসী হামলার দিনও ওই মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করার কথা ছিল ইকরাম হোসেনের।
তবে প্রস্তুতি নিয়ে বাড়ি থেকে বের হতে মিনিট পাঁচেক দেরি হওয়ায় নিশ্চিত মৃত্যু থেকে রক্ষা পান। হামলার শিকার না হলেও কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারছেন না এই বাংলাদেশি। এত সংখ্যক মানুষের প্রাণহানি ও হামলার ঘটনায় কিছুটা বাকরুদ্ধও তিনি। ঘটনার কথা মনে করতে গিয়ে তার চোখ ভিজে শোকে আর আতঙ্কে। ইকরামের এক স্বজন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিনারুল ইসলাম রাহাতের সহায়তায় গতকাল শনিবার ফেসবুক ও ইন্সট্রাগামে কথা হয় তার সঙ্গে। ইকরাম হোসেন জানান, তিনি মূলত দেশি-বিদেশি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের হয়ে বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করেন।
ঢাকায় থাকেন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়। তার স্ত্রী মৌটুসী তানহা মৌ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। পিএইচডির কাজে মেয়ে বারিরা রাঈদাকে নিয়ে গত চার বছর ধরে থাকছেন নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরে। সেখানকার ক্যান্টবেরি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচইডি গবেষণার পাশাপাশি শিক্ষক সহযোগী হিসেবেও কাজ করছেন। আর মেয়ে বারিরা রাঈদা বার্নসাইড হাইসৎ স্কুলে নাইন স্ট্যান্ডার্ডের শিক্ষার্থী। স্ত্রী মৌটুসী ও একমাত্র মেয়ে রাঈদা নিউজিল্যান্ডে থাকায় তিন চার মাস পরপরই নিউজিল্যান্ডে যেতেন ইকরাম হোসেন। পরিবারের সঙ্গে থাকতেন এক দেড় মাস। ইকরাম হোসেন জানান, শুক্রবার নিউজিল্যান্ডে ছুটির দিন না হওয়ায় সব ধরনের কাজ স্বাভাবিকভাবে চলতে থাকে। তার স্ত্রী মৌটুসী শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যান।
আর কন্যা রাঈদা তখনো স্কুলে। বাসায় ইকরাম হোসেন ছিলেন একা। দুপুরে অবশ্য স্ত্রী ও কন্যার ফেরার কথা। সেজন্য নিজেই দুপুরের খাবার রান্নার প্রস্তুতি নেন। দুপুরে মসজিদে আল নূরে জুমার নামাজ আদায় করবেন বলেও মনস্থির করেছিলেন ইকরাম। রান্না শেষে নামাজের প্রস্তুতি নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যান। তবে ততক্ষণে জামাতের সময় শুরু হয়ে গেছে। স্থানীয় সময় দুপুর পৌনে দুইটা নাগাদ ইকরামের মুঠোফোনে কল করেন নিউজিল্যান্ডে থাকা বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক আকরাম বিষয়টি জানান। তার মাধ্যমেই জানতে পারেন মসজিদে হামলার খবর।
কিছুটা যেন মুষড়ে পড়েন ইকরাম। স্ত্রী-কন্যার জন্য রান্না না করলে হয়তো তিনিও সেসময় মসজিদে থাকতেন। সন্ত্রাসীর গুলিতে তাকেও প্রাণ হারাতে হতো। মুহূর্তের মধ্যে কেমন যেন অচেতন হয়ে যায় তিনি। মনে পড়ে কন্যা রাঈদার হাসিমাখা মুখ। তিনি না থাকলে তাদের কি হতো? পরে বাসায় ঢুকে কিছুটা শান্ত করেন নিজেকে। টিভিতে দেখতে পান সন্ত্রাসী হামলার বিস্তারিত খবর। ইকরাম জানান, শুক্রবারের সন্ত্রাসী হামলার আগের দিনও মসজিদে আল নূরে মাগরিবের নামাজ আদায় করেন। নিউজিল্যান্ডে তার অন্যতম প্রিয় জায়গা ছিল আল নূর মসজিদ।
প্রতিদিন না হলেও সময় পেলেই সেখানে নামাজ আদায় করতেন ইকরাম হোসেন। নামাজ ছাড়াও মুসলিম ধর্মাবলম্বী ও বিশেষ করে বাঙালিরা মিলিত হতেন এখানে। তবে, এমন নৃশংস হামলায় কিছুটা ক্ষোভ আছে ইকরামের। কী করে একজন মানুষ অস্ত্র নিয়ে এভাবে মসজিদে ঢুকে গেল? পুলিশই বা কেন এত দেরি করে রেসপন্ড করলো? বাকি সবার মতো তার মনেও ঘুরেফিরে আসছে এসব প্রশ্ন। তবে, সব ছাপিয়ে একটা বড় প্রশ্ন তার মনে, পরিবার-পরিজন নিয়ে নিরাপদে থাকার পরিবেশ কি তাহলে বিশ্বের কোথাও নেই? যেখানে অন্তত স্ত্রী-কন্যার সঙ্গে নিশ্চিন্তে দিন যাপন করতে পারবেন ইকরাম হোসেন।
No comments