অর্থনীতিতে বড় অর্জন রাষ্ট্র মেরামতের তাগিদ by সাজেদুল হক ও মরিয়ম চম্পা
মুক্তিযুদ্ধ।
বাঙালির ইতিহাসে সবচেয়ে বড়, মহৎ অর্জন। বেশি দামে কেনা এই স্বাধীনতা। ৩০
লাখ বা তারও বেশি প্রাণ। দুই লাখের বেশি মা-বোনের সম্ভ্রম। কী ত্যাগই না
স্বীকার করেছে এ জনপদের মানুষ। কোনো কিছুর সঙ্গে এর তুলনা চলে না। কৃষক,
শ্রমিক, ছাত্র, জনতা।
পরিবারের টান। উজ্জ্বল ভবিষ্যতের হাতছানি। সবকিছু পেছনে রেখে তারা চলে গেছেন মুক্তির যুদ্ধে। কেউ ফিরেছেন, কেউ আর কোনো দিন ফেরেননি। কারো কবর হয়েছে, কারো কবরের খবর কেউ জানে না। বাংলার মাটির কোথাও তাদের ঠাঁই হয়েছে। মা, পরম মমতায় আশ্রয় দিয়েছে তার সন্তানকে।
১৬ই ডিসেম্বর। বিজয়ের দিন। উৎসবের দিন।
নয় মাস দীর্ঘ যুদ্ধের পর ধরা দেয় জয়। স্বজন হারানোর বেদনাকে সঙ্গী করে অনেকে যোগ দেন বিজয়ের উৎসবে। কেন এই বলিদান? মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত বারবার উচ্চারিত হয়েছে এ প্রশ্ন। কেন মানুষ তার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ জীবন উৎসর্গ করেছিল এই মাতৃভূমির জন্য। কী ছিল তাদের আকাঙ্ক্ষা। কী তারা চেয়েছিল। মা’কে মুক্ত করার যুদ্ধে মানুষ শামিল হয়েছিল সুনির্দিষ্ট কিছু আকাঙ্ক্ষা নিয়ে। শুধু নয় মাস নয়, পুরো পাকিস্তান আমলেই এর জন্য লড়াই করে গেছে এই ভূমের মানুষ। কে না জানে ’৫২, ’৬৯, ’৭১ একইসূত্রে গাঁথা। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, বৈষম্যের অবসান, গণতন্ত্র- মোটাদাগে এগুলোই ছিল মানুষের সবচেয়ে বড় দাবি। গণতন্ত্র মানে যে কেবল ভোট নয়, সে কথা না বললেও চলে।
৪৭ বছরের রাষ্ট্র শহীদদের, মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন কত দূর পূরণ করতে পেরেছে। অর্থনীতিতে স্বাধীন বাংলাদেশের অর্জন বিস্ময়কর। তামাম দুনিয়াতেই এখন প্রশংসিত হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। প্রবৃদ্ধি পৌঁছে গেছে সাত অঙ্কের ঘরে। মানুষের এবং সরকারের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অর্জিত হয়েছে এই অসাধারণ সাফল্য। প্রবাসী শ্রমিক আর গার্মেন্ট শ্রমিকরা এক্ষেত্রে রেখেছেন বড় অবদান। সরকারগুলো বিশেষত বর্তমান সরকার এ সাফল্যের অন্যতম বড় দাবিদার। সামাজিক ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের অগ্রগতি অসামান্য। পাকিস্তানকে সব সূচকেই ছাড়িয়ে গেছি আমরা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভারতের চেয়েও এগিয়ে বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশ রাষ্ট্র সম্ভবত সবচেয়ে বড় হোচট খেয়েছে গণতন্ত্রে। বহুদিন ধরে এখানে ভোট মানে ছিল উৎসব। নিকৃষ্ট কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া এরশাদের পতনের পর এ ধারায় এগিয়ে যাচ্ছিল দেশ।
২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন ছিল একতরফা এবং সংঘাতপূর্ণ। এবার বিজয়ের মাসে অনুষ্ঠিত হতে চলছে আরেকটি নির্বাচন। কিন্তু উৎসব নেই, শান্তি নেই। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও বিরোধীদের প্রচারণায় হামলা হচ্ছে। খুব কমসংখ্যক মানুষই মনে করছেন, তারা তাদের ভোটাধিকার অবাধে প্রয়োগ করতে পারবেন। মতপ্রকাশ আর গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অনেকটাই সংকুচিত হয়ে এসেছে। ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, আগে কোন উদ্বেগ ছাড়াই নিয়মিত কলাম লিখতাম। কিন্তু এখন লিখি কদাচিৎ। কিছুদিন আগে ছোট ছোট শিশুদের আন্দোলনের সময় একটি প্ল্যাকার্ড সবার দৃষ্টি আকর্ষণে করেছিল- রাষ্ট্রের মেরামত চলছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আজকের বাংলাদেশে এটাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। কারণ বিজয়ের এত বছর পরও আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তুলতে পারিনি। আমাদের বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, সংসদ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নির্বাহী বিভাগ সঠিকভাবে কাজ করছে কি না, তা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠছে। গুম-বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড পরিণত হয়েছে উদ্বেগের বড় কারণে। একটি শিশু যখন বলে, আমাকেও গুম করে দেন, তাহলে আমার বাবাকে দেখতে পাবো। এটা আসলে পুরো একটা জাতির মর্মবেদনার কারণ হয়ে ওঠে।
অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অর্জন নিয়ে সম্প্রতি মানবজমিনের কথা হয় বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান এ প্রসঙ্গে বলেন, গত ৪৭ বছরে নানা ঘাত-প্রতিঘাত সত্ত্বেও অর্থনীতি এবং সামাজিক খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি বিস্ময়কর। এই অর্থনৈতিক অর্জন নিয়ে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি সত্যিই আনন্দিত। আমরা এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ি নই। আমরা অনেক দূর এগিয়ে এসেছি। তবে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়েছে সেভাবে পৃথিবীর অন্যান্য দেশও এগিয়েছে। এবং আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য সূচকে আমাদের দেশকে এখনো অনেক দূরে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম তারা সমাজতান্ত্রিক একটি সমাজ ব্যবস্থা চেয়েছিলাম। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল যে এই সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য কম হবে। কিন্তু বাংলাদেশে এখন অর্থনৈতিক বৈষম্য বেড়ে চলেছে। যখন মুক্তিযুদ্ধ হয় তখন আমাদের এখানে ধনবৈষম্য খুব কম ছিল। অর্থনৈতিক এই বৈষম্যটাকে আমরা ‘জিনি সহগ’-এর নিক্তিতে পরিমাপ করে থাকি। ১৯৭০ সালের কাছাকাছি সময় আমাদের ‘জিনি সহগ’ ৩ শতাংশের নিচে ছিল। কিন্তু এখন সেটা ৫ শতাংশের কাছাকাছি চলে এসেছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের যে ধনবৈষম্য সেটা পৃথিবীর ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ দেশের মধ্যে ছিল। এখন কিন্তু এটা ৬০ শতাংশের মধ্যে চলে এসেছে। এবং এটা যদি আরো বাড়ে তাহলে আমরা ৮০ শতাংশ দেশের কাছাকাছি চলে যাবো। এ ব্যাপারে আমাদের অবশ্যই উদ্যোগ নেয়া উচিত এবং সেজন্য সরকারকেও বিভিন্ন ধরনের নীতিমালা অনুসরণ করার প্রয়োজন রয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে, এসব সমস্যার চটজলদি কোনো সমাধান নেই। এটা যদি অতি দ্রুত সমাধান করতে যাওয়া হয় তাহলে বেসরকারি বিনিয়োগের ওপর তার খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, আমরা যে অর্থনৈতিক অগ্রগতির কথা চিন্তা করি তার নানা সূচক আছে। একটি হচ্ছে খণ্ডিত সূচক আরেকটি হচ্ছে সার্বিকভাবে মূল্যায়ন করা। সার্বিক মূল্যায়নে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিষয়ে বলতে গেলে বলা যায় যে, স্বাধীনতার সময়ে আমাদের অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও একটি ভঙ্গুর অর্থনীতি ছিল। সে অবস্থা থেকে একধরনের টেকসই ভিত্তি তৈরি করা গেছে বর্তমান অর্থনীতিতে। যার ফলে আমাদের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দিক তৈরি হয়েছে। যেমন প্রবৃদ্ধির মাত্রাগুলো কোনো সময় ঠিক ওলটপালটের দিকে যায়নি। মোটামুটি একটি গতি ধরে এগিয়েছে। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরে আমাদের চাওয়ার জায়গাটায় একটি পরিবর্তন এসেছে। এক্ষেত্রে যে অবস্থা থেকে শুরু করেছিলাম সেটা দিয়ে অর্থনীতি কীভাবে চলছে তা পরিমাপ করা যাবে না।
৭০ দশকে আমাদের প্রবৃদ্ধি ১ থেকে ২ শতাংশে ছিল। এখন সেটা ৬ থেকে ৭-এর দিকে চলে গেছে। সরকারি এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এত কিছুর পরেও ২০১৮তে প্রায় ৩৯ মিলিয়ন মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। আমরা এগিয়েছি কিন্তু চার কোটি মানুষ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে। এই বিষয়গুলো আমাদের জানান দেয় যে, এগিয়েছে কিন্তু চ্যালেঞ্জটা কি পর্যায়ে সেটা জানা বা বোঝা দরকার। এক্ষেত্রে গতি বাড়ানো প্রয়োজন এবং এগুবার ধরনটাও উন্নত করা দরকার।
পরিবারের টান। উজ্জ্বল ভবিষ্যতের হাতছানি। সবকিছু পেছনে রেখে তারা চলে গেছেন মুক্তির যুদ্ধে। কেউ ফিরেছেন, কেউ আর কোনো দিন ফেরেননি। কারো কবর হয়েছে, কারো কবরের খবর কেউ জানে না। বাংলার মাটির কোথাও তাদের ঠাঁই হয়েছে। মা, পরম মমতায় আশ্রয় দিয়েছে তার সন্তানকে।
১৬ই ডিসেম্বর। বিজয়ের দিন। উৎসবের দিন।
নয় মাস দীর্ঘ যুদ্ধের পর ধরা দেয় জয়। স্বজন হারানোর বেদনাকে সঙ্গী করে অনেকে যোগ দেন বিজয়ের উৎসবে। কেন এই বলিদান? মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত বারবার উচ্চারিত হয়েছে এ প্রশ্ন। কেন মানুষ তার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ জীবন উৎসর্গ করেছিল এই মাতৃভূমির জন্য। কী ছিল তাদের আকাঙ্ক্ষা। কী তারা চেয়েছিল। মা’কে মুক্ত করার যুদ্ধে মানুষ শামিল হয়েছিল সুনির্দিষ্ট কিছু আকাঙ্ক্ষা নিয়ে। শুধু নয় মাস নয়, পুরো পাকিস্তান আমলেই এর জন্য লড়াই করে গেছে এই ভূমের মানুষ। কে না জানে ’৫২, ’৬৯, ’৭১ একইসূত্রে গাঁথা। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, বৈষম্যের অবসান, গণতন্ত্র- মোটাদাগে এগুলোই ছিল মানুষের সবচেয়ে বড় দাবি। গণতন্ত্র মানে যে কেবল ভোট নয়, সে কথা না বললেও চলে।
৪৭ বছরের রাষ্ট্র শহীদদের, মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন কত দূর পূরণ করতে পেরেছে। অর্থনীতিতে স্বাধীন বাংলাদেশের অর্জন বিস্ময়কর। তামাম দুনিয়াতেই এখন প্রশংসিত হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। প্রবৃদ্ধি পৌঁছে গেছে সাত অঙ্কের ঘরে। মানুষের এবং সরকারের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অর্জিত হয়েছে এই অসাধারণ সাফল্য। প্রবাসী শ্রমিক আর গার্মেন্ট শ্রমিকরা এক্ষেত্রে রেখেছেন বড় অবদান। সরকারগুলো বিশেষত বর্তমান সরকার এ সাফল্যের অন্যতম বড় দাবিদার। সামাজিক ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের অগ্রগতি অসামান্য। পাকিস্তানকে সব সূচকেই ছাড়িয়ে গেছি আমরা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভারতের চেয়েও এগিয়ে বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশ রাষ্ট্র সম্ভবত সবচেয়ে বড় হোচট খেয়েছে গণতন্ত্রে। বহুদিন ধরে এখানে ভোট মানে ছিল উৎসব। নিকৃষ্ট কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া এরশাদের পতনের পর এ ধারায় এগিয়ে যাচ্ছিল দেশ।
২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন ছিল একতরফা এবং সংঘাতপূর্ণ। এবার বিজয়ের মাসে অনুষ্ঠিত হতে চলছে আরেকটি নির্বাচন। কিন্তু উৎসব নেই, শান্তি নেই। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও বিরোধীদের প্রচারণায় হামলা হচ্ছে। খুব কমসংখ্যক মানুষই মনে করছেন, তারা তাদের ভোটাধিকার অবাধে প্রয়োগ করতে পারবেন। মতপ্রকাশ আর গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অনেকটাই সংকুচিত হয়ে এসেছে। ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, আগে কোন উদ্বেগ ছাড়াই নিয়মিত কলাম লিখতাম। কিন্তু এখন লিখি কদাচিৎ। কিছুদিন আগে ছোট ছোট শিশুদের আন্দোলনের সময় একটি প্ল্যাকার্ড সবার দৃষ্টি আকর্ষণে করেছিল- রাষ্ট্রের মেরামত চলছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আজকের বাংলাদেশে এটাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। কারণ বিজয়ের এত বছর পরও আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তুলতে পারিনি। আমাদের বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, সংসদ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নির্বাহী বিভাগ সঠিকভাবে কাজ করছে কি না, তা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠছে। গুম-বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড পরিণত হয়েছে উদ্বেগের বড় কারণে। একটি শিশু যখন বলে, আমাকেও গুম করে দেন, তাহলে আমার বাবাকে দেখতে পাবো। এটা আসলে পুরো একটা জাতির মর্মবেদনার কারণ হয়ে ওঠে।
অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অর্জন নিয়ে সম্প্রতি মানবজমিনের কথা হয় বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান এ প্রসঙ্গে বলেন, গত ৪৭ বছরে নানা ঘাত-প্রতিঘাত সত্ত্বেও অর্থনীতি এবং সামাজিক খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি বিস্ময়কর। এই অর্থনৈতিক অর্জন নিয়ে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি সত্যিই আনন্দিত। আমরা এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ি নই। আমরা অনেক দূর এগিয়ে এসেছি। তবে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়েছে সেভাবে পৃথিবীর অন্যান্য দেশও এগিয়েছে। এবং আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য সূচকে আমাদের দেশকে এখনো অনেক দূরে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম তারা সমাজতান্ত্রিক একটি সমাজ ব্যবস্থা চেয়েছিলাম। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল যে এই সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য কম হবে। কিন্তু বাংলাদেশে এখন অর্থনৈতিক বৈষম্য বেড়ে চলেছে। যখন মুক্তিযুদ্ধ হয় তখন আমাদের এখানে ধনবৈষম্য খুব কম ছিল। অর্থনৈতিক এই বৈষম্যটাকে আমরা ‘জিনি সহগ’-এর নিক্তিতে পরিমাপ করে থাকি। ১৯৭০ সালের কাছাকাছি সময় আমাদের ‘জিনি সহগ’ ৩ শতাংশের নিচে ছিল। কিন্তু এখন সেটা ৫ শতাংশের কাছাকাছি চলে এসেছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের যে ধনবৈষম্য সেটা পৃথিবীর ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ দেশের মধ্যে ছিল। এখন কিন্তু এটা ৬০ শতাংশের মধ্যে চলে এসেছে। এবং এটা যদি আরো বাড়ে তাহলে আমরা ৮০ শতাংশ দেশের কাছাকাছি চলে যাবো। এ ব্যাপারে আমাদের অবশ্যই উদ্যোগ নেয়া উচিত এবং সেজন্য সরকারকেও বিভিন্ন ধরনের নীতিমালা অনুসরণ করার প্রয়োজন রয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে, এসব সমস্যার চটজলদি কোনো সমাধান নেই। এটা যদি অতি দ্রুত সমাধান করতে যাওয়া হয় তাহলে বেসরকারি বিনিয়োগের ওপর তার খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, আমরা যে অর্থনৈতিক অগ্রগতির কথা চিন্তা করি তার নানা সূচক আছে। একটি হচ্ছে খণ্ডিত সূচক আরেকটি হচ্ছে সার্বিকভাবে মূল্যায়ন করা। সার্বিক মূল্যায়নে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিষয়ে বলতে গেলে বলা যায় যে, স্বাধীনতার সময়ে আমাদের অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও একটি ভঙ্গুর অর্থনীতি ছিল। সে অবস্থা থেকে একধরনের টেকসই ভিত্তি তৈরি করা গেছে বর্তমান অর্থনীতিতে। যার ফলে আমাদের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দিক তৈরি হয়েছে। যেমন প্রবৃদ্ধির মাত্রাগুলো কোনো সময় ঠিক ওলটপালটের দিকে যায়নি। মোটামুটি একটি গতি ধরে এগিয়েছে। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরে আমাদের চাওয়ার জায়গাটায় একটি পরিবর্তন এসেছে। এক্ষেত্রে যে অবস্থা থেকে শুরু করেছিলাম সেটা দিয়ে অর্থনীতি কীভাবে চলছে তা পরিমাপ করা যাবে না।
৭০ দশকে আমাদের প্রবৃদ্ধি ১ থেকে ২ শতাংশে ছিল। এখন সেটা ৬ থেকে ৭-এর দিকে চলে গেছে। সরকারি এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এত কিছুর পরেও ২০১৮তে প্রায় ৩৯ মিলিয়ন মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। আমরা এগিয়েছি কিন্তু চার কোটি মানুষ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে। এই বিষয়গুলো আমাদের জানান দেয় যে, এগিয়েছে কিন্তু চ্যালেঞ্জটা কি পর্যায়ে সেটা জানা বা বোঝা দরকার। এক্ষেত্রে গতি বাড়ানো প্রয়োজন এবং এগুবার ধরনটাও উন্নত করা দরকার।
No comments