বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে শংকা
চলতি
অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন চাপের মুখে পড়েছে। একদিকে বার্ষিক উন্নয়ন
কর্মসূচির (এডিপি) যথাযথ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। অর্থ ব্যয় ও বাস্তবায়নে ধীর
গতি রয়েছে। অপরদিকে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় না হওয়ায় ঘাটতি বেড়ে
যাচ্ছে। এ অবস্থায় এডিপি কাটছাঁট করা হয়েছে। রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রাও সংশোধন
হচ্ছে। এ ছাড়া রেমিটেন্স, রফতানি প্রবাহে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির কারণে চাপের
মুখে পড়েছে বৈদেশিক খাত। তবে অর্থনীতির অন্যান্য সূচক মোটামুটি ইতিবাচক
ধারায় চলছে। ভর্তুকি এখন পর্যন্ত সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। সরকারের ব্যয়ও
নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই আছে। সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংক থেকে
সরকারের ঋণ নেয়া অনেক কমেছে। সব মিলিয়ে সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, শেষ পর্যায়ে বাজেট বাস্তবায়ন পুরোপুরি হবে
না। বরাবরের মতো এটি সংশোধন করা হবে। চলতি অর্থবছরে মূল বাজেটের আকার ৩
লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, মূল বাজেট অপেক্ষা
১০ শতাংশ কমিয়ে সংশোধিত বাজেট নির্ধারণ করা হতে পারে। এ প্রসঙ্গে
অর্থনীতিবিদ ড. এমএ তসলিম বলেন, প্রতিবছর বাজেট ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু
বছরের মাঝামাঝি তা সংশোধন করা হয়। কারণ প্রকৃত বাস্তবায়ন ঘোষিত বাজেটের
তুলনায় আরও কম। সরকারের টাকা ব্যয় করার সক্ষমতাও কম। এ জন্য ব্যয়ের সক্ষমতা
বাড়াতে হবে। তিনি আরও বলেন, দেশের অর্থনীতির তুলনায় বাজেটের আকার এখনও
অনেক ছোট। এরপরও সেটি পুরো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। চলতি বাজেটে এ বছর
ব্যাংক ঋণের হার কমিয়েছে। সরকার ব্যাংক নির্ভরতা কমাচ্ছে। পাশাপাশি
সঞ্চয়পত্রের ওপর বেশি মাত্রায় নির্ভর হচ্ছে। যে কারণে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি
লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে। জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাস পাওয়ায় বাজেটে
ভর্তুকির চাপ কমছে।
নতুন করে ভর্তুকি গুনতে হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক বাজারের
তেলের মূল্য খুব বেশি অস্থিতিশীল নয়। যে কারণে আসন্ন বাজেটে এ খাতে ভর্তুকি
কম প্রয়োজন হবে। তবে ব্যাংকিং খাত নিয়ে বাজেটে বড় সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
কারণ ইতিমধ্যে ব্যাংকগুলো বড় ধরনের মূলধন ঘাটতির মুখে পড়েছে। এ ঘাটতি
বাজেট থেকে মেটানো সম্ভব নয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত ৩ লাখ ৪০ হাজার
৬০৫ কোটি টাকার ঘোষণা দেয়া হয়। বিশাল এই ব্যয় মেটাতে আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ
করা হয়েছে ২ লাখ ৪৮ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা (অনুদানসহ)। এ হিসাবে বাজেটে
ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯২ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। আর অনুদান ছাড়া এ ঘাটতির
পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে,
অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি এই সাত মাসে মোট রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা
হচ্ছে ১ লাখ ৩ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আদায় হয়েছে ৯৪
হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আদায় কম থাকলেও এটি গত বছরের
একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১৮ শতাংশ। এদিকে এডিপি বাস্তবায়ন
চলছে ধীর গতিতে। অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি এই আট মাসে এডিপি
বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে ৩৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে
ছিল ৩৪ শতাংশ। এই সময়ে ৬টি মন্ত্রণালয় ও সংস্থার বাস্তবায়নের হার ২০
শতাংশের নিচে রয়েছে। চলতি অর্থবছরে মোট এডিপির আকার ছিল ১ লাখ ২৩ হাজার ৩৪৬
কোটি টাকা। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো
ব্যয় করতে পেরেছে ৪৫ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে ব্যয়
হয়েছিল ৩৪ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসেই রফতানি আয় কমেছে
প্রায় ৯ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এই আয় ৫ দশমিক ০৮ ভাগ
কম। তবে প্রবৃদ্ধির বিবেচনায় এটি গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩
দশমিক ২২ শতাংশ বেশি। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) তথ্য মতে, চলতি
অর্থবছরে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। প্রথম ৮
মাসের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৪০৬ কোটি ডলার। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয়
হয়েছে ২ হাজার ২৮৪ কোটি ডলার। আয় কম হয়েছে ১২২ কোটি ডলারের বেশি। দেশীয়
মুদ্রায় এর পরিমাণ ৯ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা। এদিকে প্রবাসীদের পাঠানো
রেমিটেন্সও কমেছে। বিদেশে শ্রমিক যাচ্ছে বেশি আর রেমিটেন্স আসছে কম।
প্রকৃতপক্ষে রেমিটেন্স বেশি আসছে ঠিকই তবে অবৈধ পথে। ২০১৬ সালে বিভিন্ন
দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা আগের বছরের চেয়ে ১১ দশমিক ১৬ শতাংশ কম
রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে এর প্রবাহ কমতির দিকে
রয়েছে।
No comments