ধর্ম, জীবন, ক্রিকেট, রাজনীতি- মাশরাফির ভাবনা
ক্রিকেটার
কেবল নয়; কোন জাতির ইতিহাসে এমন মানুষই আসে শতবর্ষের আরাধনায়। মাশরাফি হলো
গ্রিক ট্রাজেডি আর ভারতীয় রোমান্টিকতার মিশেলে এক মহাকাব্য। সে মাশরাফি
বিন মুর্তজার জীবনী লিখেছেন সাংবাদিক দেবব্রত মুখোপাধ্যায়। ‘মাশরাফি’ নামের
বইটি এরই মধ্যে তৈরি করেছে বিপুল আলোচনা। মানবজমিনের অনলাইন পাঠকদের জন্য
ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হবে বইটির বিভিন্ন অংশ। আজ প্রকাশিত হলো বইয়ে
মাশরাফির দেয়া সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ-
২০০১ সালের শুরুর দিকে ঢাকায় এলেন অনূর্ধ্ব-১৭ একটা বিভাগীয় প্রতিযোগিতায় খেলতে। তরতর করে পরের কয়েকমাসের মধ্যে টেস্ট দলে চলে এলেন। খুব সোজা ছিল জীবনটা?
জীবন! জীবন নিয়ে এই ভাবনা এখনই ভাবি না; আর সেই বয়সে! আমার জীবন নিয়ে ভাবনাটা কি ছিল জানেন?
কী?
আমি প্রতিদিন ভাবতাম, আজকের ম্যাচ কি টিভিতে দেখাবে? যদি জানতাম দেখাবে, ভাবতাম, আজই তো শেষবার বাসায় বসে সবাই খেলা দেখতে পারবে। আজ সেরাটা খেলি। আজইতো শেষ। আর দেখাবে না। আমি এই ভাবনাটাকে হারাতে দিইনি। এখনো আমি প্রতি ম্যাচের আগে ভাবি, এটাই আমার শেষ ম্যাচ টিভিতে দেখা যাবে। তারপর সব শেষ। এই ম্যাচেই যা করার করে ফেলতে হবে।
আরেকটা ব্যাপার খেয়াল করেন, ক্রিকেট এখন দেশপ্রেম প্রকাশের একটা জায়গা হয়ে গেছে।
আমি তো নিয়মিত বলছি কথাটা। দেশের তুলনায় ক্রিকেট অতি ক্ষুদ্র একটা ব্যাপার। একটা দেশের অনেক অনেক ছোট ছোট মাধ্যমের একটা হতে পারে খেলাধুলা; তার একটা অংশ ক্রিকেট। ক্রিকেট কখনো দেশপ্রেমের প্রতীক হতে পারে না। সোজাকথা খেলাধুলা একটা বিনোদন।
অথচ বিনোদনটা এখন দেশের প্রধান ব্যাপারে পরিণত হয়েছে।
এটাতো বিস্ময়কর ব্যাপার। খেলা কখনো দেশের প্রধান আলোচনায় পরিণত হতে পারে না। দেশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার আছে যা সমাধানের বাকি। সেখানে ক্রিকেট নিয়েই পুরো জাতি, রাষ্ট্র; সবাই এভাবে এনগেজ হয়ে পড়তে পারে না। আজকে আমাদের সবচেয়ে বড় তারকা বানানো হচ্ছে, বীর বলা হচ্ছে, মিথ তৈরি করা হচ্ছে। এগুলো সব হলো বাস্তবতা থেকে পালানোর ব্যাপার।
তাহলে তারকা কে? বীর কে? আমাদের দেশে তো তারকাও নেই, বীরও নেই।
অবশ্যই আছে। আমাকে প্রশ্ন করুন, তারকা হলেন একজন ডাক্তার।........... তারকা হলো লেবাররা। দেশ গড়ে ফেলছে। ক্রিকেট দিয়ে আমরা কী বানাতে পারছি? একটা ইটও কি ক্রিকেট দিয়ে তৈরি করা যায়? একটা ধান জন্মায় ক্রিকেট মাঠে? জন্মায় না। যারা এই ইট দিয়ে দালান বানায়, যারা কারখানায় আমাদের জন্য এটা-ওটা বানায় বা ক্ষেতে ধান জন্মায় তারকা হলো তারা।
বীর? আপনি বীর নিয়ে অন্য একটা সাক্ষাৎকারে বলছিলেন?
হ্যাঁ, সব সময় বলি। বীর হলেন মুক্তিযোদ্ধারা। আরে ভাই, তারা জীবন দিয়েছে। জীবন যাবে জেনে ফ্রন্টে গেছেন দেশের জন্য। আমরা কী করি? খুব বাজেভাবে বলি- টাকা নেই, পারফর্ম করি। এটা অভিনেতা, গায়কের মতো আমরাও পারফর্মিং আর্ট করি। এর চেয়ে এক ইঞ্চিও বেশি কিছু না। মুক্তিযোদ্ধারা গুলির সামনে এই জন্য দাঁড়ায় নাই যে, জিতলে টাকা পাবে। কাদের সঙ্গে কাদের তুলনা রে! ক্রিকেটে বীর কেউ থেকে থাকলে রকিবুল হাসান, শহীদ জুয়েল।
ধর্মীয় জীবন যাপনের সঙ্গে এই পেশাগত জীবনকে কীভাবে মেলান?
আমাদের ধর্মে তো এই ব্যাপারে কোন বিরোধ নেই। ইসলাম একটা পরিপূর্ণ জীবনদর্শন। হাশিম আমলা সেটা পুরো অনুসরণ করেই তো ক্রিকেট খেলছে। পরিবার, সংসার, পেশা-সব ক্ষেত্রেই আমাদের ধর্মে পরিষ্কার নির্দেশনা আছে। ধর্ম পালন করে কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হয় না, উপকৃত হয়।
আপনি কি নিজে ধর্মের দেখানো সব পথ মেনে চলেন?
সেই দাবি করার সুযোগ নেই। আমার ইচ্ছা আছে। ইচ্ছা আছে হযরত মুহাম্মদ (সা.) যেভাবে জীবন যাপন করেছেন, ধর্মে যা বলা হয়েছে; সেভাবে জীবন কাটানোর। এখনো আমি তার ধারেকাছেও পৌঁছাতে পারিনি। তবে ইচ্ছে আছে, চেষ্টা আছে।
এমনিতে রাজনীতি আকর্ষণীয় মনে হয়? অনেকে তো নোংরা জগৎ বলে এড়িয়ে থাকতে চায়।
মোটেও না। রাজনীতি দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। আমার কাছে আকর্ষণীয়তো মনে হয়। রাজনীতি আমাদের সবচেয়ে প্রয়োজনের জায়গা। দেখেন এই দেশটার ভালো কিছু করতে হলে রাজনীতিবিদেরাই পারেন এসব ঠিক করতে। আমার ধারণা হয়তো ঠিক না, হয়তো আমি জ্ঞানী না। আমি এটা বুঝি, দেশটাকে বদলালে রাজনীতিবিদেরাই পারবেন। ক্রিকেট দিয়ে, খেলা দিয়ে দেশ বদলাবে না; এগুলো সৌন্দর্য বাড়াবে। দেশ রাজনীতিবিদেরাই সুন্দর করবেন।
আপনাকে অনেকে রাজনীতিতে দেখতে চায়।
দেখতে চাইলে তো হয়তো চলে আসব। হা হা হা....। না, আবারও বলি, আমি তো আমার ভবিষ্যৎ ঠিক করতে পারি না। সেটা পারলে সবার আগে মৃত্যুকে কিনে রাখতাম। এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করে না। ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে রাজনীতি নয়, মৃত্যুকে নিয়ন্ত্রণ করতাম। তাই যখন পারে না, বাকি কিছু নিয়ন্ত্রণের আশা করে লাভ নেই।
২০০১ সালের শুরুর দিকে ঢাকায় এলেন অনূর্ধ্ব-১৭ একটা বিভাগীয় প্রতিযোগিতায় খেলতে। তরতর করে পরের কয়েকমাসের মধ্যে টেস্ট দলে চলে এলেন। খুব সোজা ছিল জীবনটা?
জীবন! জীবন নিয়ে এই ভাবনা এখনই ভাবি না; আর সেই বয়সে! আমার জীবন নিয়ে ভাবনাটা কি ছিল জানেন?
কী?
আমি প্রতিদিন ভাবতাম, আজকের ম্যাচ কি টিভিতে দেখাবে? যদি জানতাম দেখাবে, ভাবতাম, আজই তো শেষবার বাসায় বসে সবাই খেলা দেখতে পারবে। আজ সেরাটা খেলি। আজইতো শেষ। আর দেখাবে না। আমি এই ভাবনাটাকে হারাতে দিইনি। এখনো আমি প্রতি ম্যাচের আগে ভাবি, এটাই আমার শেষ ম্যাচ টিভিতে দেখা যাবে। তারপর সব শেষ। এই ম্যাচেই যা করার করে ফেলতে হবে।
আরেকটা ব্যাপার খেয়াল করেন, ক্রিকেট এখন দেশপ্রেম প্রকাশের একটা জায়গা হয়ে গেছে।
আমি তো নিয়মিত বলছি কথাটা। দেশের তুলনায় ক্রিকেট অতি ক্ষুদ্র একটা ব্যাপার। একটা দেশের অনেক অনেক ছোট ছোট মাধ্যমের একটা হতে পারে খেলাধুলা; তার একটা অংশ ক্রিকেট। ক্রিকেট কখনো দেশপ্রেমের প্রতীক হতে পারে না। সোজাকথা খেলাধুলা একটা বিনোদন।
অথচ বিনোদনটা এখন দেশের প্রধান ব্যাপারে পরিণত হয়েছে।
এটাতো বিস্ময়কর ব্যাপার। খেলা কখনো দেশের প্রধান আলোচনায় পরিণত হতে পারে না। দেশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার আছে যা সমাধানের বাকি। সেখানে ক্রিকেট নিয়েই পুরো জাতি, রাষ্ট্র; সবাই এভাবে এনগেজ হয়ে পড়তে পারে না। আজকে আমাদের সবচেয়ে বড় তারকা বানানো হচ্ছে, বীর বলা হচ্ছে, মিথ তৈরি করা হচ্ছে। এগুলো সব হলো বাস্তবতা থেকে পালানোর ব্যাপার।
তাহলে তারকা কে? বীর কে? আমাদের দেশে তো তারকাও নেই, বীরও নেই।
অবশ্যই আছে। আমাকে প্রশ্ন করুন, তারকা হলেন একজন ডাক্তার।........... তারকা হলো লেবাররা। দেশ গড়ে ফেলছে। ক্রিকেট দিয়ে আমরা কী বানাতে পারছি? একটা ইটও কি ক্রিকেট দিয়ে তৈরি করা যায়? একটা ধান জন্মায় ক্রিকেট মাঠে? জন্মায় না। যারা এই ইট দিয়ে দালান বানায়, যারা কারখানায় আমাদের জন্য এটা-ওটা বানায় বা ক্ষেতে ধান জন্মায় তারকা হলো তারা।
বীর? আপনি বীর নিয়ে অন্য একটা সাক্ষাৎকারে বলছিলেন?
হ্যাঁ, সব সময় বলি। বীর হলেন মুক্তিযোদ্ধারা। আরে ভাই, তারা জীবন দিয়েছে। জীবন যাবে জেনে ফ্রন্টে গেছেন দেশের জন্য। আমরা কী করি? খুব বাজেভাবে বলি- টাকা নেই, পারফর্ম করি। এটা অভিনেতা, গায়কের মতো আমরাও পারফর্মিং আর্ট করি। এর চেয়ে এক ইঞ্চিও বেশি কিছু না। মুক্তিযোদ্ধারা গুলির সামনে এই জন্য দাঁড়ায় নাই যে, জিতলে টাকা পাবে। কাদের সঙ্গে কাদের তুলনা রে! ক্রিকেটে বীর কেউ থেকে থাকলে রকিবুল হাসান, শহীদ জুয়েল।
ধর্মীয় জীবন যাপনের সঙ্গে এই পেশাগত জীবনকে কীভাবে মেলান?
আমাদের ধর্মে তো এই ব্যাপারে কোন বিরোধ নেই। ইসলাম একটা পরিপূর্ণ জীবনদর্শন। হাশিম আমলা সেটা পুরো অনুসরণ করেই তো ক্রিকেট খেলছে। পরিবার, সংসার, পেশা-সব ক্ষেত্রেই আমাদের ধর্মে পরিষ্কার নির্দেশনা আছে। ধর্ম পালন করে কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হয় না, উপকৃত হয়।
আপনি কি নিজে ধর্মের দেখানো সব পথ মেনে চলেন?
সেই দাবি করার সুযোগ নেই। আমার ইচ্ছা আছে। ইচ্ছা আছে হযরত মুহাম্মদ (সা.) যেভাবে জীবন যাপন করেছেন, ধর্মে যা বলা হয়েছে; সেভাবে জীবন কাটানোর। এখনো আমি তার ধারেকাছেও পৌঁছাতে পারিনি। তবে ইচ্ছে আছে, চেষ্টা আছে।
এমনিতে রাজনীতি আকর্ষণীয় মনে হয়? অনেকে তো নোংরা জগৎ বলে এড়িয়ে থাকতে চায়।
মোটেও না। রাজনীতি দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। আমার কাছে আকর্ষণীয়তো মনে হয়। রাজনীতি আমাদের সবচেয়ে প্রয়োজনের জায়গা। দেখেন এই দেশটার ভালো কিছু করতে হলে রাজনীতিবিদেরাই পারেন এসব ঠিক করতে। আমার ধারণা হয়তো ঠিক না, হয়তো আমি জ্ঞানী না। আমি এটা বুঝি, দেশটাকে বদলালে রাজনীতিবিদেরাই পারবেন। ক্রিকেট দিয়ে, খেলা দিয়ে দেশ বদলাবে না; এগুলো সৌন্দর্য বাড়াবে। দেশ রাজনীতিবিদেরাই সুন্দর করবেন।
আপনাকে অনেকে রাজনীতিতে দেখতে চায়।
দেখতে চাইলে তো হয়তো চলে আসব। হা হা হা....। না, আবারও বলি, আমি তো আমার ভবিষ্যৎ ঠিক করতে পারি না। সেটা পারলে সবার আগে মৃত্যুকে কিনে রাখতাম। এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করে না। ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে রাজনীতি নয়, মৃত্যুকে নিয়ন্ত্রণ করতাম। তাই যখন পারে না, বাকি কিছু নিয়ন্ত্রণের আশা করে লাভ নেই।
No comments