ইসলাম প্রশ্নে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জামায়াত থেকে পিছিয়ে নেই -ভারতীয় রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর মূল্যায়ন
ভারতীয় রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মাইদুল ইসলাম মনে করেন, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পরে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় জীবনে ইসলাম অনুসরণের প্রশ্নে এতটাই আপসকামিতা দেখান, আওয়ামী লীগ ও বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপির মধ্যে সেটা আদর্শগত পার্থক্য ঘুচিয়ে দেয়। আওয়ামী লীগ তখন থেকে ধর্ম প্রশ্নে ‘রূপান্তরণকৃত’ এবং বিএনপির সঙ্গে এই বিষয়ে একটি ‘পুরোপুরি অভিন্ন চরিত্র’ ধারণ করে।
সম্প্রতি ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রকাশিত ‘লিমিটস অব ইসলামিজম জামায়াত-ই-ইসলামী ইন কনটেম্পরারি ইন্ডিয়া অ্যান্ড বাংলাদেশ’ বইয়ে ওই মন্তব্য ছাপা হয়েছে। বইটির লেখক কলকাতা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ওই বইটি মূলত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টরাল থিসিস, লেখক মর্যাদা সম্পন্ন ক্লারেনডন বৃত্তি পান। ২০০৭ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে তিনি থিসিসটি লিখেছেন যেটি এখন বই আকারে বেরুলো।
অধ্যাপক ইসলাম বলেন, বাংলাদেশী রাজনীতিতে যদি ইসলাম ধর্মের উপস্থিতিকে জামায়াত কতটা ধারণ করে আছে তার সঙ্গে দেশের প্রধান দুই দলের তুলনা করা হয়, তাহলে ভোটাররা দেখবেন যে, জামায়াতের তুলনায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি- দুই দলের কেউ তার চেয়ে পিছিয়ে নেই। বরং বাস্তব অবস্থা এখন এই দাঁড়িয়েছে যে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়ে মিলে নিজেদেরকে জনগণের সামনে এভাবে উপস্থাপন করেছে যাতে কিনা ‘ইসলামের একক ঝাণ্ডাধারী’ হিসেবে জামায়াতের মর্যাদা যথেষ্ট খর্ব হয়েছে।’
অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম এরপর লিখেছেন যে, ‘একজন পর্যবেক্ষক মন্তব্য করেছেন যে, ‘জামায়াত বাংলাদেশে কখনই বড় রকম জনসমর্থন পায়নি। তার কারণ সাধারণ মানুষ ধর্মপ্রাণ মধ্যপন্থি, তাই মৌলবাদিতা তাদের পছন্দ নয়। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মতে ধর্ম হলো ব্যক্তিগত বিষয়, তাই ধর্মকে যারা ‘দলীয় উদ্দেশ্যে’ ব্যবহার করে মানুষ তাদের পছন্দ করে না।
জেনারেল এরশাদ কেন অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করেছিলেন তার কারণ চিহ্নিত করে অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম বলেন, এরশাদবিরোধী আন্দোলন চলাকালে বিএনপি নেতারা এটা দাবি করতেন যে, বিএনপিই বাংলাদেশে ইসলামকে ফিরিয়ে এনেছে। সে কারণে এরশাদ ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম প্রতিষ্ঠা করলেন। তবে তখনই একটি বিষয় হয়ে গেল যে, যদিও ১৯৭২ সালের সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম মূলনীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল কিন্তু বাস্তবে আওয়ামী লীগেরই তার প্রতি অঙ্গীকার ছিল দুর্বল। সে কারণে অষ্টম সংশোধনী যখন পাস করা হলো, তখন আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কাউকেই এর বিরুদ্ধে বড় আকারে কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে দেখা গেল না। সেটা ছিল একটা অনন্য রাজনৈতিক পরিস্থিতি। কারণ এটা বোঝা যায়নি যে, বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হয়েও তারা ইসলামকে আদৌ রাষ্ট্র ধর্ম হিসেবে দেখতে চেয়েছিল কিনা। বরং এটাই সত্যি যে, ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে বাংলাদেশের রাজপথে জনতার ঢল কেউ কখনও দেখেনি। আবার রাষ্ট্র্রধর্ম কেন করা হলো, তার বিরোধিতা করতেও তারা রাস্তায় নামেনি। তবে একজন ভাস্যকার বলেছেন, এরশাদ যখন এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিলেন তখন বড় দুটি দলের কোনটিই যে এর বিরুদ্ধে দাঁড়ালো না, তার কারণ হলো- ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি তাদের উভয়ের অঙ্গীকার দুর্বল।’ অধ্যাপক ইসলাম বলেন, আশির দশকের ওই সময়টায় জামায়াত আবার ধর্মনিরপেক্ষ গোষ্ঠীর সঙ্গে রাজথের আন্দোলনে শরিক ছিল।
তাঁর আরও মূল্যায়ন: ‘১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জামায়াত-ই-ইসলামী যদিও নির্বাচনে বড় রকমের ধাক্কা খেয়েছে কিন্তু তা সত্ত্বেও কোন একটি ইসলামী দল হিসেবে না হলেও ইসলাম ধর্মের আধিপত্য (হেজিমনিক উপস্থিতি) বাংলাদেশ রাজনীতিতে বড় আকারে জেঁকে বসেছে। তবে এই অগ্রগতিকে একটি মুসলিম দেশে উদারনৈতিক বা মধ্যপন্থি ইসলামের একটি আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হিসেবে বর্ণনা করা যায়, কারণ দেশটির উল্লেখযোগ্য জনগোষ্ঠীই ‘খোদাভীরু’। আর সে কারণে এমনকি ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী শেখ হাসিনাকেও ইসলাম ধর্মের প্রতি আনুগত্য থাকার প্রমাণ দিতে হয়। শেখ হাসিনা কতিপয় প্রতীকী পদক্ষেপ গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে এই প্রমাণ রাখেন।’
সম্প্রতি ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রকাশিত ‘লিমিটস অব ইসলামিজম জামায়াত-ই-ইসলামী ইন কনটেম্পরারি ইন্ডিয়া অ্যান্ড বাংলাদেশ’ বইয়ে ওই মন্তব্য ছাপা হয়েছে। বইটির লেখক কলকাতা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ওই বইটি মূলত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টরাল থিসিস, লেখক মর্যাদা সম্পন্ন ক্লারেনডন বৃত্তি পান। ২০০৭ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে তিনি থিসিসটি লিখেছেন যেটি এখন বই আকারে বেরুলো।
অধ্যাপক ইসলাম বলেন, বাংলাদেশী রাজনীতিতে যদি ইসলাম ধর্মের উপস্থিতিকে জামায়াত কতটা ধারণ করে আছে তার সঙ্গে দেশের প্রধান দুই দলের তুলনা করা হয়, তাহলে ভোটাররা দেখবেন যে, জামায়াতের তুলনায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি- দুই দলের কেউ তার চেয়ে পিছিয়ে নেই। বরং বাস্তব অবস্থা এখন এই দাঁড়িয়েছে যে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়ে মিলে নিজেদেরকে জনগণের সামনে এভাবে উপস্থাপন করেছে যাতে কিনা ‘ইসলামের একক ঝাণ্ডাধারী’ হিসেবে জামায়াতের মর্যাদা যথেষ্ট খর্ব হয়েছে।’
অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম এরপর লিখেছেন যে, ‘একজন পর্যবেক্ষক মন্তব্য করেছেন যে, ‘জামায়াত বাংলাদেশে কখনই বড় রকম জনসমর্থন পায়নি। তার কারণ সাধারণ মানুষ ধর্মপ্রাণ মধ্যপন্থি, তাই মৌলবাদিতা তাদের পছন্দ নয়। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মতে ধর্ম হলো ব্যক্তিগত বিষয়, তাই ধর্মকে যারা ‘দলীয় উদ্দেশ্যে’ ব্যবহার করে মানুষ তাদের পছন্দ করে না।
জেনারেল এরশাদ কেন অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করেছিলেন তার কারণ চিহ্নিত করে অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম বলেন, এরশাদবিরোধী আন্দোলন চলাকালে বিএনপি নেতারা এটা দাবি করতেন যে, বিএনপিই বাংলাদেশে ইসলামকে ফিরিয়ে এনেছে। সে কারণে এরশাদ ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম প্রতিষ্ঠা করলেন। তবে তখনই একটি বিষয় হয়ে গেল যে, যদিও ১৯৭২ সালের সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম মূলনীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল কিন্তু বাস্তবে আওয়ামী লীগেরই তার প্রতি অঙ্গীকার ছিল দুর্বল। সে কারণে অষ্টম সংশোধনী যখন পাস করা হলো, তখন আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কাউকেই এর বিরুদ্ধে বড় আকারে কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে দেখা গেল না। সেটা ছিল একটা অনন্য রাজনৈতিক পরিস্থিতি। কারণ এটা বোঝা যায়নি যে, বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হয়েও তারা ইসলামকে আদৌ রাষ্ট্র ধর্ম হিসেবে দেখতে চেয়েছিল কিনা। বরং এটাই সত্যি যে, ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে বাংলাদেশের রাজপথে জনতার ঢল কেউ কখনও দেখেনি। আবার রাষ্ট্র্রধর্ম কেন করা হলো, তার বিরোধিতা করতেও তারা রাস্তায় নামেনি। তবে একজন ভাস্যকার বলেছেন, এরশাদ যখন এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিলেন তখন বড় দুটি দলের কোনটিই যে এর বিরুদ্ধে দাঁড়ালো না, তার কারণ হলো- ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি তাদের উভয়ের অঙ্গীকার দুর্বল।’ অধ্যাপক ইসলাম বলেন, আশির দশকের ওই সময়টায় জামায়াত আবার ধর্মনিরপেক্ষ গোষ্ঠীর সঙ্গে রাজথের আন্দোলনে শরিক ছিল।
তাঁর আরও মূল্যায়ন: ‘১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জামায়াত-ই-ইসলামী যদিও নির্বাচনে বড় রকমের ধাক্কা খেয়েছে কিন্তু তা সত্ত্বেও কোন একটি ইসলামী দল হিসেবে না হলেও ইসলাম ধর্মের আধিপত্য (হেজিমনিক উপস্থিতি) বাংলাদেশ রাজনীতিতে বড় আকারে জেঁকে বসেছে। তবে এই অগ্রগতিকে একটি মুসলিম দেশে উদারনৈতিক বা মধ্যপন্থি ইসলামের একটি আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হিসেবে বর্ণনা করা যায়, কারণ দেশটির উল্লেখযোগ্য জনগোষ্ঠীই ‘খোদাভীরু’। আর সে কারণে এমনকি ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী শেখ হাসিনাকেও ইসলাম ধর্মের প্রতি আনুগত্য থাকার প্রমাণ দিতে হয়। শেখ হাসিনা কতিপয় প্রতীকী পদক্ষেপ গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে এই প্রমাণ রাখেন।’
No comments