সাজাইলে হয় ফুলের বাগান- না সাজাইলে হয় জঙ্গল by মোকাম্মেল হোসেন
দু’বছর
পার না হতেই গুঞ্জন শুরু হয়ে গেল। চারপাশে ফিসফাস-ভুসভাস ও দীর্ঘশ্বাসের
পরিধি ক্রমশ স্ফীত হতে থাকায় লবণ বেগমকে একদিন জিজ্ঞেস করলাম-
: ঘটনা কী!
লবণ বেগম কোনো কথা না বলে বড় বড় চোখ দুটোয় অসহায়ত্ব ফুটিয়ে তুলে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। হঠাৎ তার চোখে জলের ধারা দেখে বিস্মিত হয়ে বললাম-
: কী হইছে! তুমি কাঁদতেছ কীজন্য?
লবণ বেগম মাথা নিচু করে চোখের জল গোপন করার চেষ্টা করতেই দু’হাতের করতলে তার মুখমণ্ডল রেখে মাথাটা উঁচু করে তুলে ধরলাম। তারপর মৃদুস্বরে বললাম-
: কষ্ট ভাগ করলে কইম্যা যায়। মনের মাইকোষ থেইক্যা তোমার কষ্টগুলান জলদি বাইর কর।
- সবাই আজেবাজে কথা বলে!
: কী রকম?
: বলে- আমাদের নাকি বাচ্চাকাচ্চা হবে না!
- ধুরউ! যত সব আউল-ফাউল কথাবার্তা। বাচ্চাকাচ্চা না হওয়ার কোনো কারণ নাই। ফারদার কেউ এই ধরনের কথা বললে তুমি বলবা- একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আমরা গ্যাপ দিছি!
: তাই তো বলি। কিন্তু কোনো লাভ হইতেছে না...
এর কিছুদিন পর শ্বশুরবাড়ি গিয়ে দেখলাম, লবণ বেগম ভেজা শাড়ি গায়ে জড়িয়ে কলপাড়ে বসে আছে। তার হাতে একটা কলাপাতা। কলাপাতায় নানা ধরনের কবিরাজি ওষুধ। বিষয়টা আন্দাজ করতে পেরে শাশুড়িকে ডাক দিয়ে বললাম-
: আম্মা, এইসব কী?
কোনো উত্তর না পেয়ে হইচই শুরু করতেই লবণ বেগম চোখের দৃষ্টিতে আমাকে খামোশ হওয়ার নির্দেশ দিল। নারীজাতির চোখের চাহনির কাছে পরাস্ত হয় না এমন পুরুষ বিরল। আমি চুপ মেরে গেলাম। এতো ভারি যন্ত্রণা শুরু হয়েছে! ইনস্ট্যান্ট বাচ্চাকাচ্চা লাভের কোনো ব্যবস্থা নেই। মানবশিশু গাছের ফল বা পুকুরের মাছ নয়- মন চাইলেই একটা এনে লবণ বেগমের হাতে ধরিয়ে দেব। সন্তান কোলে নিয়ে তার মুখে আব্বা ডাক শোনার জন্য একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এজন্য সময় দরকার। কিন্তু চারপাশের পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, সময় দিতে কেউ আর রাজি নয়। বিষয়টা উপলব্ধি করে মনে মনে বললাম-
: ওকে! মাই ডিয়ার ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ফ্যামেলি। জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড সি- ইনশাল্লাহ...
পরের মাসেই লবণ বেগম সবাইকে সুসংবাদ দিল এবং নির্দিষ্ট সময় শেষে আমাদের প্রথম সন্তান মাতৃগর্ভের অন্ধকার থেকে পৃথিবীর আলোয় এসে ওয়াও-ওয়াও বলে নিজের অস্তিত্ব ঘোষণা করল। প্রথম সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর কয়েক মাস যেতে না যেতে লবণ যখন আবার মা হওয়ার ঘোষণা দিল- সবাই চমৎকৃত হল। ঠাট্টার সম্পর্ক- এমন এক আত্মীয়া তার চোখ দুটো প্রজাপতির পাখার মতো এদিক-ওদিক নাচিয়ে আমাকে বলল-
: দুলাভাই, ক্ষেইপ্যা গেলাইন নাকি?
আমি মুচকি হেসে বললাম-
: তোমরা যেভাবে সন্দেহ পোষণ করতে শুরু করছিলা, না ক্ষেইপ্যা উপায় আছে?
এখানেই শেষ নয়। এক্কা-দুক্কার পর তৃতীয়বারের মতো মা হওয়ার কৃতিত্ব নিয়ে লবণ বেগম ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পর রোগীর ইতিহাস জানার পর তিনি থ মেরে গেলেন। ভীত গলায় লবণ বেগমের উদ্দেশে বললেন-
: আপনার পরপর দুইটা বেবি সিজার অপারেশনের মাধ্যমে হইছে- তারপরও আপনি থার্ড টাইম মা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন কোন আক্কেলে! আপনার কি মৃত্যুভয় নাই?
ডাক্তারের কথা শুনে লবণ বেগম ইতস্তত না করে বলল-
: মরতে কোনো সমস্যা নাই। আপনে এখন আমার আলট্রাসনোগ্রাম করার ব্যবস্থা করেন। মরবার আগে আমি শুধু জাইন্যা যাবার চাই- আমার গর্ভের এই সন্তানটা মেয়ে!
লবণ বেগমের কথায় ডাক্তার খুবই অবাক হল। গলার স্বর নিচু করে বলল-
: আপনার আগের দুটি সন্তান ছেলে?
- জ্বি।
: কন্যাশিশুর আশায় আপনি এরকম একটা ঝুঁকি নিছেন?
- জ্বি।
: তার কি কোনো দরকার ছিল?
- জ্বি, দরকার ছিল।
এটুকু বলার পর লবণ বেগম থামল। তারপর আমার দিকে ইঙ্গিত করে ডাক্তারের উদ্দেশে বলল-
: উনি বলেন- কন্যাশিশু হইল সংসারের ছায়াবৃক্ষ। যে সংসারে কন্যাশিশু নাই, সেই সংসার মরুভূমি। আমার সংসার একটা মরুভূমি হোক- এইটা আমি চাই না।
শুধু লবণ বেগম কেন, কোনো বাবা-মা চায় না তাদের সংসার মরুভূমির রূপ ধারণ করুক। সবারই স্বপ্ন ও প্রত্যাশা থাকে তাদের সংসার হবে একটি ফুলের বাগান। নানা রঙের, নানা গন্ধের ফুল মিলে একটি বাগানকে যে রকম স্নিগ্ধতায় ভরে তোলে, সেই স্নিগ্ধতা তাদের সংসারেও বিরাজ করবে। রূপ, গুণ ও সুবাসে চারপাশ আমোদিত করা বাগানের ফুলের মতো তাদের সন্তানরাও সৌরভ ছড়াবে, সবার প্রশংসা কুড়াবে। সন্তানের সুকর্ম, সদাচরণ ও সাফল্যে মা-বাবার হৃদয় আনন্দে যেমন নেচে ওঠে, তেমনি সন্তানের কুকর্ম, অসদাচরণ ও ব্যর্থতায় তাদের মন ভেঙে খানখান হয়ে যায়। ১৯৭৪ সালের কথা। আমি তখন খুবই ছোট। তারপরও দৃশ্যটা স্পষ্ট মনে আছে। আমাদের অষ্টধার উচ্চ বিদ্যালয়ে সেসময় এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল। বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছি, দেখলাম- এক অভিভাবক তার পরীক্ষার্থী সন্তানের জন্য টিফিন-ক্যারিয়ারে করে খাবার নিয়ে যাচ্ছেন। বিপরীত দিক থেকে আসা এক লোক এসময় তার সামনে দাঁড়িয়ে বলল-
: খাওন-দাওন লইয়া যাইয়া কী করবাইন! বাড়িত যাইনগা।
- ক্যান, কী হইছে!
: আপনের পোলা নকল করতে যাইয়া ধরা পড়ছে। তারে পরীক্ষার হল থেইক্যা বহিষ্কার করা হইছে।
এ কথা শোনার পর সেই অভিভাবক জ্ঞান হারিয়ে রাস্তার ওপর পড়ে গেলেন। তার হাতে থাকা টিফিন-ক্যারিয়ারের খাবারগুলো চারপাশে ছড়িয়ে পড়ল। যে মা তার সন্তানের জন্য খাবারগুলো সযতেœ সাজিয়ে দিয়েছিলেন, আর যে বাবা সেগুলো বহন করে নিয়ে যাচ্ছিলেন- তাদের নিশ্চয়ই চাওয়া ছিল ছেলে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে মা-বাবার মুখ উজ্জ্বল করবে। তাদের গর্বের ধনে পরিণত হবে।
চাওয়ার কাজটা খুবই সহজ। তবে পাওয়াটা মোটেই সহজ নয়। কেবল সন্তান জন্ম দিলেই একটা সংসার ফুলের বাগান হয়ে যায় না। বাগান তৈরি করতে হয়। এ ব্যাপারে বাবা-মা তথা পরিবারের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাগান তৈরি করতে হলে ধৈর্য ও শ্রম দিয়ে এর আগাছাগুলো পরিষ্কার করতে হয়। পরিকল্পনা দিয়ে তাকে সাজাতে হয়। সাজানোর কাজটি ঠিকমতো হলে তবেই সেটা বাগান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। শ্রম না দিয়ে আগাছা পরিষ্কারের ব্যাপারে উদাসীন থাকলে, সাজানোর কাজটি সঠিকভাবে না হলে সেটা বাগান না হয়ে জঙ্গলে পরিণত হয়। সেই জঙ্গল তখন হিংস্র জন্তু-জানোয়ার ও পোকামাকড়ের অবাধ বিচরণস্থলে পরিণত হয়ে সমূহ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মেয়ে ঐশীর হাতে তার বাবা-মা খুন হওয়ার ঘটনা আমাদের সবার প্রত্যাশিত একটি বাগান জঙ্গলে পরিণত হওয়ারই হৃদয়বিদারক কাহিনী। এ ঘটনা থেকে অনেক কিছু শিক্ষা নেয়ার আছে।
মোকাম্মেল হোসেন : সাংবাদিক
: ঘটনা কী!
লবণ বেগম কোনো কথা না বলে বড় বড় চোখ দুটোয় অসহায়ত্ব ফুটিয়ে তুলে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। হঠাৎ তার চোখে জলের ধারা দেখে বিস্মিত হয়ে বললাম-
: কী হইছে! তুমি কাঁদতেছ কীজন্য?
লবণ বেগম মাথা নিচু করে চোখের জল গোপন করার চেষ্টা করতেই দু’হাতের করতলে তার মুখমণ্ডল রেখে মাথাটা উঁচু করে তুলে ধরলাম। তারপর মৃদুস্বরে বললাম-
: কষ্ট ভাগ করলে কইম্যা যায়। মনের মাইকোষ থেইক্যা তোমার কষ্টগুলান জলদি বাইর কর।
- সবাই আজেবাজে কথা বলে!
: কী রকম?
: বলে- আমাদের নাকি বাচ্চাকাচ্চা হবে না!
- ধুরউ! যত সব আউল-ফাউল কথাবার্তা। বাচ্চাকাচ্চা না হওয়ার কোনো কারণ নাই। ফারদার কেউ এই ধরনের কথা বললে তুমি বলবা- একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আমরা গ্যাপ দিছি!
: তাই তো বলি। কিন্তু কোনো লাভ হইতেছে না...
এর কিছুদিন পর শ্বশুরবাড়ি গিয়ে দেখলাম, লবণ বেগম ভেজা শাড়ি গায়ে জড়িয়ে কলপাড়ে বসে আছে। তার হাতে একটা কলাপাতা। কলাপাতায় নানা ধরনের কবিরাজি ওষুধ। বিষয়টা আন্দাজ করতে পেরে শাশুড়িকে ডাক দিয়ে বললাম-
: আম্মা, এইসব কী?
কোনো উত্তর না পেয়ে হইচই শুরু করতেই লবণ বেগম চোখের দৃষ্টিতে আমাকে খামোশ হওয়ার নির্দেশ দিল। নারীজাতির চোখের চাহনির কাছে পরাস্ত হয় না এমন পুরুষ বিরল। আমি চুপ মেরে গেলাম। এতো ভারি যন্ত্রণা শুরু হয়েছে! ইনস্ট্যান্ট বাচ্চাকাচ্চা লাভের কোনো ব্যবস্থা নেই। মানবশিশু গাছের ফল বা পুকুরের মাছ নয়- মন চাইলেই একটা এনে লবণ বেগমের হাতে ধরিয়ে দেব। সন্তান কোলে নিয়ে তার মুখে আব্বা ডাক শোনার জন্য একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এজন্য সময় দরকার। কিন্তু চারপাশের পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, সময় দিতে কেউ আর রাজি নয়। বিষয়টা উপলব্ধি করে মনে মনে বললাম-
: ওকে! মাই ডিয়ার ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ফ্যামেলি। জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড সি- ইনশাল্লাহ...
পরের মাসেই লবণ বেগম সবাইকে সুসংবাদ দিল এবং নির্দিষ্ট সময় শেষে আমাদের প্রথম সন্তান মাতৃগর্ভের অন্ধকার থেকে পৃথিবীর আলোয় এসে ওয়াও-ওয়াও বলে নিজের অস্তিত্ব ঘোষণা করল। প্রথম সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর কয়েক মাস যেতে না যেতে লবণ যখন আবার মা হওয়ার ঘোষণা দিল- সবাই চমৎকৃত হল। ঠাট্টার সম্পর্ক- এমন এক আত্মীয়া তার চোখ দুটো প্রজাপতির পাখার মতো এদিক-ওদিক নাচিয়ে আমাকে বলল-
: দুলাভাই, ক্ষেইপ্যা গেলাইন নাকি?
আমি মুচকি হেসে বললাম-
: তোমরা যেভাবে সন্দেহ পোষণ করতে শুরু করছিলা, না ক্ষেইপ্যা উপায় আছে?
এখানেই শেষ নয়। এক্কা-দুক্কার পর তৃতীয়বারের মতো মা হওয়ার কৃতিত্ব নিয়ে লবণ বেগম ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পর রোগীর ইতিহাস জানার পর তিনি থ মেরে গেলেন। ভীত গলায় লবণ বেগমের উদ্দেশে বললেন-
: আপনার পরপর দুইটা বেবি সিজার অপারেশনের মাধ্যমে হইছে- তারপরও আপনি থার্ড টাইম মা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন কোন আক্কেলে! আপনার কি মৃত্যুভয় নাই?
ডাক্তারের কথা শুনে লবণ বেগম ইতস্তত না করে বলল-
: মরতে কোনো সমস্যা নাই। আপনে এখন আমার আলট্রাসনোগ্রাম করার ব্যবস্থা করেন। মরবার আগে আমি শুধু জাইন্যা যাবার চাই- আমার গর্ভের এই সন্তানটা মেয়ে!
লবণ বেগমের কথায় ডাক্তার খুবই অবাক হল। গলার স্বর নিচু করে বলল-
: আপনার আগের দুটি সন্তান ছেলে?
- জ্বি।
: কন্যাশিশুর আশায় আপনি এরকম একটা ঝুঁকি নিছেন?
- জ্বি।
: তার কি কোনো দরকার ছিল?
- জ্বি, দরকার ছিল।
এটুকু বলার পর লবণ বেগম থামল। তারপর আমার দিকে ইঙ্গিত করে ডাক্তারের উদ্দেশে বলল-
: উনি বলেন- কন্যাশিশু হইল সংসারের ছায়াবৃক্ষ। যে সংসারে কন্যাশিশু নাই, সেই সংসার মরুভূমি। আমার সংসার একটা মরুভূমি হোক- এইটা আমি চাই না।
শুধু লবণ বেগম কেন, কোনো বাবা-মা চায় না তাদের সংসার মরুভূমির রূপ ধারণ করুক। সবারই স্বপ্ন ও প্রত্যাশা থাকে তাদের সংসার হবে একটি ফুলের বাগান। নানা রঙের, নানা গন্ধের ফুল মিলে একটি বাগানকে যে রকম স্নিগ্ধতায় ভরে তোলে, সেই স্নিগ্ধতা তাদের সংসারেও বিরাজ করবে। রূপ, গুণ ও সুবাসে চারপাশ আমোদিত করা বাগানের ফুলের মতো তাদের সন্তানরাও সৌরভ ছড়াবে, সবার প্রশংসা কুড়াবে। সন্তানের সুকর্ম, সদাচরণ ও সাফল্যে মা-বাবার হৃদয় আনন্দে যেমন নেচে ওঠে, তেমনি সন্তানের কুকর্ম, অসদাচরণ ও ব্যর্থতায় তাদের মন ভেঙে খানখান হয়ে যায়। ১৯৭৪ সালের কথা। আমি তখন খুবই ছোট। তারপরও দৃশ্যটা স্পষ্ট মনে আছে। আমাদের অষ্টধার উচ্চ বিদ্যালয়ে সেসময় এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল। বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছি, দেখলাম- এক অভিভাবক তার পরীক্ষার্থী সন্তানের জন্য টিফিন-ক্যারিয়ারে করে খাবার নিয়ে যাচ্ছেন। বিপরীত দিক থেকে আসা এক লোক এসময় তার সামনে দাঁড়িয়ে বলল-
: খাওন-দাওন লইয়া যাইয়া কী করবাইন! বাড়িত যাইনগা।
- ক্যান, কী হইছে!
: আপনের পোলা নকল করতে যাইয়া ধরা পড়ছে। তারে পরীক্ষার হল থেইক্যা বহিষ্কার করা হইছে।
এ কথা শোনার পর সেই অভিভাবক জ্ঞান হারিয়ে রাস্তার ওপর পড়ে গেলেন। তার হাতে থাকা টিফিন-ক্যারিয়ারের খাবারগুলো চারপাশে ছড়িয়ে পড়ল। যে মা তার সন্তানের জন্য খাবারগুলো সযতেœ সাজিয়ে দিয়েছিলেন, আর যে বাবা সেগুলো বহন করে নিয়ে যাচ্ছিলেন- তাদের নিশ্চয়ই চাওয়া ছিল ছেলে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে মা-বাবার মুখ উজ্জ্বল করবে। তাদের গর্বের ধনে পরিণত হবে।
চাওয়ার কাজটা খুবই সহজ। তবে পাওয়াটা মোটেই সহজ নয়। কেবল সন্তান জন্ম দিলেই একটা সংসার ফুলের বাগান হয়ে যায় না। বাগান তৈরি করতে হয়। এ ব্যাপারে বাবা-মা তথা পরিবারের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাগান তৈরি করতে হলে ধৈর্য ও শ্রম দিয়ে এর আগাছাগুলো পরিষ্কার করতে হয়। পরিকল্পনা দিয়ে তাকে সাজাতে হয়। সাজানোর কাজটি ঠিকমতো হলে তবেই সেটা বাগান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। শ্রম না দিয়ে আগাছা পরিষ্কারের ব্যাপারে উদাসীন থাকলে, সাজানোর কাজটি সঠিকভাবে না হলে সেটা বাগান না হয়ে জঙ্গলে পরিণত হয়। সেই জঙ্গল তখন হিংস্র জন্তু-জানোয়ার ও পোকামাকড়ের অবাধ বিচরণস্থলে পরিণত হয়ে সমূহ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মেয়ে ঐশীর হাতে তার বাবা-মা খুন হওয়ার ঘটনা আমাদের সবার প্রত্যাশিত একটি বাগান জঙ্গলে পরিণত হওয়ারই হৃদয়বিদারক কাহিনী। এ ঘটনা থেকে অনেক কিছু শিক্ষা নেয়ার আছে।
মোকাম্মেল হোসেন : সাংবাদিক
No comments