জাতীয় শিক্ষানীতিতে জেন্ডার প্রসঙ্গ by জোবাইদা নাসরীন,শিক্ষক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
জাতীয় শিক্ষানীতির (চূড়ান্ত খসড়া) প্রতিবেদনটি ৭ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে এবং এই প্রতিবেদনের ওপর মতামত আশা করছে সরকার।
এ লেখায় শিক্ষানীতিতে জেন্ডার প্রসঙ্গটির মধ্যেই দৃষ্টি সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করা হবে। শিক্ষানীতির এই খসড়া প্রতিবেদন মোট ২৮টি অধ্যায়ে সাজানো হয়েছে। আলোচনায় ও নীতিতে যুক্ত করা হয়েছে শিক্ষা ও শিক্ষাসংক্রান্ত নানা দিক। এই খসড়াতে নারী শিক্ষা (অধ্যায় ১৭) আলাদাভাবে স্থান পেয়েছে। এই বিষয়ে এসেছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জও। নারী শিক্ষা অধ্যায় ছাড়াও অন্য বেশ কিছু অধ্যায়েও যোগ হয়েছে নারী শিক্ষাকেন্দ্রিক বেশ কিছু ধারা। যেমন অধ্যায় ২ (প্রাক-প্রাথমিক এবং প্রাথমিক শিক্ষা) অংশের ১৪ নম্বর ধারায় দেওয়া হয়েছে ‘মেয়েশিশুদের মধ্যে ঝরে পড়ার প্রবণতা তুলনামূলকভাবে অধিক, তাই এই সকল শিশু যাতে ঝরে না পড়ে সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। মেয়ে শিক্ষার্থীরা যেন বিদ্যালয়ে কোনোভাবে উত্ত্যক্ত না হয় সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।’ এর কাছাকাছি আরেকটি ধারার উল্লেখ রয়েছে নারী শিক্ষা (অধ্যায় ১৭)-এর ২ নম্বর অনুচ্ছেদে, ‘ছাত্রীদের বিদ্যালয় ত্যাগের হার কমানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং ঝরেপড়া ছাত্রীদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে হবে। যাদের এভাবে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না তাদের বিভিন্ন বৃত্তিমূলক কর্মসূচির আওতায় আনতে হবে।’
এই ক্ষেত্রে যে কথাটি গুরুত্বপূর্ণ সেটি হলো, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিদ্যালয়গুলো থেকে ছেলে ও মেয়েদের ঝরে পড়ার কারণ, ধরন ও সংখ্যা কোনোটিই এক নয়। আবার প্রাথমিক পর্যায়ের স্কুল ও মাধ্যমিক স্কুল থেকে মেয়েশিশু ঝরে পড়ার কারণও অনেকাংশেই ভিন্ন। তাই মেয়ে শিক্ষার্থীর ঝরে পড়া কমানোর জন্য ছেলে শিক্ষার্থীর মতো শুধু বৃত্তিমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান করা যাবে না। তাই একে পৃথকভাবে দেখা একান্তভাবেই প্রয়োজন।
অধ্যায় ২ (প্রাক-প্রাথমিক এবং প্রাথমিক শিক্ষা) অংশের ১৪ নম্বর ধারাটির দ্বিতীয় ভাগে যুক্ত হওয়া অংশটি ততোধিক গুরুত্বপূর্ণ যেখানে গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছে যে মাধ্যমিক পর্যায়ে ছয় শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী স্কুল ছাড়ে বখাটেদের উত্পাতে। কিন্তু এ খসড়ায় মেয়ে শিক্ষার্থী এবং নারী শিক্ষক উভয়ই কীভাবে উত্ত্যক্ততার হাত থেকে রক্ষা পাবে তার কোনো নির্দেশনা নেই।
নারী শিক্ষা অধ্যায়ের ১ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘বাজেটে নারীশিক্ষা খাতে নির্দিষ্ট বরাদ্দ দিতে হবে। শিক্ষার সকল স্তরে নারীশিক্ষার হার বাড়ানোর জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করতে হবে এবং বেসরকারি উদ্যোগ ও অর্থায়নকে উত্সাহিত করার ব্যবস্থা থাকতে হবে।’ কিন্তু নারীশিক্ষার জন্য নির্দিষ্টভাবে অর্থনৈতিক সহায়তার কথা বলা হলেও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কার্যকর পদক্ষেপের ধরনের কথা বলা হয়নি।
বলা হয় যে সামাজিক নির্মাণের পাশাপাশি একজন ছেলে এবং একজন মেয়ে সামাজিক লিঙ্গীয় ভূমিকা সম্পর্কে ধারণা লাভ করে পাঠ্যপুস্তক থেকে। বিশেষ করে অঙ্কের মতো বিষয়ে যেখানে উল্লেখ থাকে, ‘একজন পুরুষ সমান দুইজন নারী’র মতো হিসেবের বাহানা। এই বিষয়ে যদিও একটি ধারা আছে, ‘প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে পাঠ্যসূচিতে যথাযথ পরিবর্তনের মাধ্যমে নারীর ইতিবাচক ও প্রগতিশীল ভাবমূর্তি ও সমান অধিকারের কথা তুলে ধরতে হবে এবং ইতিবাচক দিকগুলো পাঠ্যসূচিতে আনতে হবে, যাতে নারীর প্রতি সামাজিক আচরণের পরিবর্তন হয়।’ (ধারা ৫, নারী শিক্ষা, অধ্যায় ১৭)। কিন্তু এর সঙ্গে সঙ্গে যদি বইতে ব্যবহূত বিভিন্ন ছবি (যেখানে নারী-পুরুষকে সমানভাবে উপস্থাপন করা হবে), উদাহরণ এবং ভাষার ক্ষেত্রে লিঙ্গনিরপেক্ষ শব্দ ব্যবহার করা হয় সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য শিক্ষানীতিতে একটি ধারা যুক্ত হওয়া প্রয়োজন।
এই অধ্যায়ের ৬ নম্বর ধারাটিও আলোচনার দাবি রাখে, যেখানে বলা হয়েছে ‘প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যসূচিতে আরও অধিক সংখ্যক মহীয়সী নারীর জীবনী ও নারীদের রচিত লেখা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’ সে ক্ষেত্রে একটি বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন এটি যেন ধর্মীয়, জাতিগত কিংবা শ্রেণীনিরপেক্ষ হয়, কেননা বাংলাদেশে সব ধর্ম, বহু জাতি এবং একাধিক শ্রেণীর শিক্ষার্থী বিরাজমান।
এই অধ্যায়ের ৭ ও ৮ নম্বর ধারা অত্যন্ত প্রশংসনীয় দুটি ধারা, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যক্রমে জেন্ডার স্টাডিজ এবং প্রজনন-স্বাস্থ্য অন্তর্ভুক্ত করার বিষয় এবং মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরে বিষয় নির্বাচনে ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে সবার পুরো স্বাধীনতা থাকতে হবে এবং সব বিষয়ের ওপর সমান গুরুত্ব দিতে হবে। মেয়েদের কোনো বিশেষ বিষয়ের দিকে (যেমন গার্হস্থ্য অর্থনীতি) উত্সাহিত করা বা ঠেলে দেওয়া যাবে না।
এই অধ্যায়ে আরও বেশ কিছু ইতিবাচক অনুচ্ছেদ রয়েছে, যার মধ্যে দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে ছাত্রীদের যাতায়াত ও বাসস্থানের সুবিধা, বিজ্ঞান ও পেশাদারি শিক্ষার সুবিধা, স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থাসহ নীতি-নির্ধারণী ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যায়ে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য প্রণীত যৌন নিপীড়ন ও নির্যাতনসংক্রান্ত প্রণীত বিধিবিধান কঠোরভাবে অনুসরণ করার জন্য নির্দেশ।
তবে এই খসড়ায় নারী শিক্ষা বিষয়ক আলোচনায় কোথাও খেলাধুলার প্রসঙ্গ নেই। তার মানে কি নারীশিক্ষার সঙ্গে খেলাধুলার কোনো সম্পর্ক নেই? এই শিক্ষানীতির ১৯ নম্বর অধ্যায়ে রাখা হয়েছে ক্রীড়াশিক্ষা। সেখানেও নারীর খেলাধুলার কোনো বিষয় নেই। এর বাইরে আরেকটি অধ্যায় রাখা হয়েছে ‘বিশেষ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও শারীরিক শিক্ষা, স্কাউট ও গার্লস গাইড এবং ব্রতচারী’ নামে (অধ্যায় ১৮)। এখানে মেয়ে ও ছেলেদের জন্য শুধু একটি ধারা আছে সেটি হলো ‘শরীরচর্চা বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের শারীরিক শিক্ষা দিতে হবে’ (অনুচ্ছেদ ২)। শারীরিক শিক্ষা এবং খেলাধুলা কিছুতেই এক বিষয় নয়। বাংলাদেশের বাস্তবতায় স্কুল মাঠে শুধু ছেলে শিক্ষার্থীরাই খেলে। খেলাধুলার বিষয়টি অনেকাংশেই লিঙ্গীয় পক্ষপাতমূলক। যাতে মেয়ে ও ছেলে উভয়ই খেলাধুলা করার সুযোগ পায়। কারণ শারীরিক সুস্থতা সবারই প্রয়োজন। শিক্ষানীতিতে নারীদের খেলাধুলার প্রতি জোর দেওয়া দরকার।
এ লেখায় শিক্ষানীতিতে জেন্ডার প্রসঙ্গটির মধ্যেই দৃষ্টি সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করা হবে। শিক্ষানীতির এই খসড়া প্রতিবেদন মোট ২৮টি অধ্যায়ে সাজানো হয়েছে। আলোচনায় ও নীতিতে যুক্ত করা হয়েছে শিক্ষা ও শিক্ষাসংক্রান্ত নানা দিক। এই খসড়াতে নারী শিক্ষা (অধ্যায় ১৭) আলাদাভাবে স্থান পেয়েছে। এই বিষয়ে এসেছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জও। নারী শিক্ষা অধ্যায় ছাড়াও অন্য বেশ কিছু অধ্যায়েও যোগ হয়েছে নারী শিক্ষাকেন্দ্রিক বেশ কিছু ধারা। যেমন অধ্যায় ২ (প্রাক-প্রাথমিক এবং প্রাথমিক শিক্ষা) অংশের ১৪ নম্বর ধারায় দেওয়া হয়েছে ‘মেয়েশিশুদের মধ্যে ঝরে পড়ার প্রবণতা তুলনামূলকভাবে অধিক, তাই এই সকল শিশু যাতে ঝরে না পড়ে সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। মেয়ে শিক্ষার্থীরা যেন বিদ্যালয়ে কোনোভাবে উত্ত্যক্ত না হয় সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।’ এর কাছাকাছি আরেকটি ধারার উল্লেখ রয়েছে নারী শিক্ষা (অধ্যায় ১৭)-এর ২ নম্বর অনুচ্ছেদে, ‘ছাত্রীদের বিদ্যালয় ত্যাগের হার কমানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং ঝরেপড়া ছাত্রীদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে হবে। যাদের এভাবে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না তাদের বিভিন্ন বৃত্তিমূলক কর্মসূচির আওতায় আনতে হবে।’
এই ক্ষেত্রে যে কথাটি গুরুত্বপূর্ণ সেটি হলো, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিদ্যালয়গুলো থেকে ছেলে ও মেয়েদের ঝরে পড়ার কারণ, ধরন ও সংখ্যা কোনোটিই এক নয়। আবার প্রাথমিক পর্যায়ের স্কুল ও মাধ্যমিক স্কুল থেকে মেয়েশিশু ঝরে পড়ার কারণও অনেকাংশেই ভিন্ন। তাই মেয়ে শিক্ষার্থীর ঝরে পড়া কমানোর জন্য ছেলে শিক্ষার্থীর মতো শুধু বৃত্তিমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান করা যাবে না। তাই একে পৃথকভাবে দেখা একান্তভাবেই প্রয়োজন।
অধ্যায় ২ (প্রাক-প্রাথমিক এবং প্রাথমিক শিক্ষা) অংশের ১৪ নম্বর ধারাটির দ্বিতীয় ভাগে যুক্ত হওয়া অংশটি ততোধিক গুরুত্বপূর্ণ যেখানে গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছে যে মাধ্যমিক পর্যায়ে ছয় শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী স্কুল ছাড়ে বখাটেদের উত্পাতে। কিন্তু এ খসড়ায় মেয়ে শিক্ষার্থী এবং নারী শিক্ষক উভয়ই কীভাবে উত্ত্যক্ততার হাত থেকে রক্ষা পাবে তার কোনো নির্দেশনা নেই।
নারী শিক্ষা অধ্যায়ের ১ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘বাজেটে নারীশিক্ষা খাতে নির্দিষ্ট বরাদ্দ দিতে হবে। শিক্ষার সকল স্তরে নারীশিক্ষার হার বাড়ানোর জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করতে হবে এবং বেসরকারি উদ্যোগ ও অর্থায়নকে উত্সাহিত করার ব্যবস্থা থাকতে হবে।’ কিন্তু নারীশিক্ষার জন্য নির্দিষ্টভাবে অর্থনৈতিক সহায়তার কথা বলা হলেও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কার্যকর পদক্ষেপের ধরনের কথা বলা হয়নি।
বলা হয় যে সামাজিক নির্মাণের পাশাপাশি একজন ছেলে এবং একজন মেয়ে সামাজিক লিঙ্গীয় ভূমিকা সম্পর্কে ধারণা লাভ করে পাঠ্যপুস্তক থেকে। বিশেষ করে অঙ্কের মতো বিষয়ে যেখানে উল্লেখ থাকে, ‘একজন পুরুষ সমান দুইজন নারী’র মতো হিসেবের বাহানা। এই বিষয়ে যদিও একটি ধারা আছে, ‘প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে পাঠ্যসূচিতে যথাযথ পরিবর্তনের মাধ্যমে নারীর ইতিবাচক ও প্রগতিশীল ভাবমূর্তি ও সমান অধিকারের কথা তুলে ধরতে হবে এবং ইতিবাচক দিকগুলো পাঠ্যসূচিতে আনতে হবে, যাতে নারীর প্রতি সামাজিক আচরণের পরিবর্তন হয়।’ (ধারা ৫, নারী শিক্ষা, অধ্যায় ১৭)। কিন্তু এর সঙ্গে সঙ্গে যদি বইতে ব্যবহূত বিভিন্ন ছবি (যেখানে নারী-পুরুষকে সমানভাবে উপস্থাপন করা হবে), উদাহরণ এবং ভাষার ক্ষেত্রে লিঙ্গনিরপেক্ষ শব্দ ব্যবহার করা হয় সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য শিক্ষানীতিতে একটি ধারা যুক্ত হওয়া প্রয়োজন।
এই অধ্যায়ের ৬ নম্বর ধারাটিও আলোচনার দাবি রাখে, যেখানে বলা হয়েছে ‘প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যসূচিতে আরও অধিক সংখ্যক মহীয়সী নারীর জীবনী ও নারীদের রচিত লেখা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’ সে ক্ষেত্রে একটি বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন এটি যেন ধর্মীয়, জাতিগত কিংবা শ্রেণীনিরপেক্ষ হয়, কেননা বাংলাদেশে সব ধর্ম, বহু জাতি এবং একাধিক শ্রেণীর শিক্ষার্থী বিরাজমান।
এই অধ্যায়ের ৭ ও ৮ নম্বর ধারা অত্যন্ত প্রশংসনীয় দুটি ধারা, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যক্রমে জেন্ডার স্টাডিজ এবং প্রজনন-স্বাস্থ্য অন্তর্ভুক্ত করার বিষয় এবং মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরে বিষয় নির্বাচনে ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে সবার পুরো স্বাধীনতা থাকতে হবে এবং সব বিষয়ের ওপর সমান গুরুত্ব দিতে হবে। মেয়েদের কোনো বিশেষ বিষয়ের দিকে (যেমন গার্হস্থ্য অর্থনীতি) উত্সাহিত করা বা ঠেলে দেওয়া যাবে না।
এই অধ্যায়ে আরও বেশ কিছু ইতিবাচক অনুচ্ছেদ রয়েছে, যার মধ্যে দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে ছাত্রীদের যাতায়াত ও বাসস্থানের সুবিধা, বিজ্ঞান ও পেশাদারি শিক্ষার সুবিধা, স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থাসহ নীতি-নির্ধারণী ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যায়ে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য প্রণীত যৌন নিপীড়ন ও নির্যাতনসংক্রান্ত প্রণীত বিধিবিধান কঠোরভাবে অনুসরণ করার জন্য নির্দেশ।
তবে এই খসড়ায় নারী শিক্ষা বিষয়ক আলোচনায় কোথাও খেলাধুলার প্রসঙ্গ নেই। তার মানে কি নারীশিক্ষার সঙ্গে খেলাধুলার কোনো সম্পর্ক নেই? এই শিক্ষানীতির ১৯ নম্বর অধ্যায়ে রাখা হয়েছে ক্রীড়াশিক্ষা। সেখানেও নারীর খেলাধুলার কোনো বিষয় নেই। এর বাইরে আরেকটি অধ্যায় রাখা হয়েছে ‘বিশেষ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও শারীরিক শিক্ষা, স্কাউট ও গার্লস গাইড এবং ব্রতচারী’ নামে (অধ্যায় ১৮)। এখানে মেয়ে ও ছেলেদের জন্য শুধু একটি ধারা আছে সেটি হলো ‘শরীরচর্চা বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের শারীরিক শিক্ষা দিতে হবে’ (অনুচ্ছেদ ২)। শারীরিক শিক্ষা এবং খেলাধুলা কিছুতেই এক বিষয় নয়। বাংলাদেশের বাস্তবতায় স্কুল মাঠে শুধু ছেলে শিক্ষার্থীরাই খেলে। খেলাধুলার বিষয়টি অনেকাংশেই লিঙ্গীয় পক্ষপাতমূলক। যাতে মেয়ে ও ছেলে উভয়ই খেলাধুলা করার সুযোগ পায়। কারণ শারীরিক সুস্থতা সবারই প্রয়োজন। শিক্ষানীতিতে নারীদের খেলাধুলার প্রতি জোর দেওয়া দরকার।
No comments