উত্তরখানে মা ও দুই সন্তানের লাশ উদ্ধার: হত্যা না আত্মহত্যা নানা রহস্য by শুভ্র দেব
বাসাটি
থেকে ভেসে আসছিল পচা গন্ধ। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবেশীদের সন্দেহ
বাড়তে থাকে। খবর দেয়া হয় পুলিশকে। পুলিশ এসে দেখে, বাসা থেকে গন্ধ আসছে তবে
ওই বাসা ভেতর থেকে বন্ধ করা। এরপর প্রতিবেশীদের উপস্থিতিতে দরজার ছিটকিনি
ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে পুলিশ। উদ্ধারকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের চোখ যায়
ফ্লোরের মেঝেতে। সেখানে রক্তের শুকনো লাল দাগ লেগে আছে। তার পাশে উপুড় হয়ে
পড়ে আছে এক যুবকের মরদেহ। আর খাটের মধ্যে পড়ে আছে পঞ্চাশোর্ধ এক নারী ও
আনুমানিক কুড়ি বছরের এক তরুণীর মরদেহ। মরদেহগুলোতে মাছি ভন ভন করেছিল।
মরদেহ উদ্ধারের পর ওই ঘরের টেবিলের ওপর মোবাইল চাপা দিয়ে রাখা একটি চিরকুট
পাওয়া যায়। সেখানে লেখা ছিল ‘আমাদের মৃত্যুর জন্য ভাগ্য ও আমাদের
আত্মীয়-স্বজনদের অবহেলা দায়ী’। নির্মম এই ঘটনাটি ঘটে ঢাকার উত্তরখান
এলাকায়। প্রাথমিকভাবে ধরে নেয়া হয়েছিল তারা তিনজনই আত্মহত্যা করেছেন।
কিন্তু গতকাল তাদের ময়নাতদন্ত শেষে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন আত্মহত্যা নয় তাদের
তিনজনের শরীরেই হত্যার আলামত মিলেছে।
রোববার ঢাকার উত্তরখান থানা পুলিশ ময়নারটেকের চাপানেরটেক এলাকার একতলা বাড়ির ভেতর থেকে বন্ধ থাকা ঘর থেকে মা জাহানার বেগম মুক্তা (৫০) তার ছেলে কাজী মহিব হোসেন রশ্মি (৩০) ও মেয়ে আফিয়া সুলতানা মিমের (১৮) মরদেহ উদ্ধার করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তার পাশাপাশি সেখানে ছুটে যান পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), মহানগর গোয়েন্দা সংস্থা (ডিবি) ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কর্মকর্তারা। তারা প্রত্যকেই ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু বদ্ধ ঘরের ভেতর থেকে একই পরিবারের তিন সদস্যের মরদেহ উদ্ধারের পর নানা রহস্য তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন তারা মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত ছিলেন এ কারণে আত্মহত্যা করেছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, তাদেরকে দুর্বৃত্তরা হত্যা করেছে। উত্তর খানের চার কাঠার প্লট, প্রয়াত গৃহকর্তার পেনশনের টাকা ও পৈত্রিক সম্পত্তি এ ‘হত্যাকাণ্ডের’র পেছণের কারণ হতে পারে। এছাড়া আত্মীয় স্বজনদের অসহযোগিতার বিষয়টিও সামনে আনছেন কেউ। তবে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে গৃহকর্তার পেনশনের টাকা, ঢাকায় কোটি টাকার জমি, চাকরি পাওয়ার যোগ্য ছেলে সন্তান থাকার পরও কেন একটি পরিবারের সবাই ‘আত্মহত্যা’ করতে যাবে। তাই আত্মহত্যার বিষয়টি অনেকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না।
যদিও পুলিশ বলছে বহিরাগত কেউ তাদেরকে হত্যা করেনি। তারা নিজেদের মধ্যে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। প্রথমে দুজনকে হত্যা করে পরে একজন নিজেই আত্মহত্যা করেছে।
এদিকে গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহত তিনজনের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। ময়নাতদন্তে তাদেরকে হত্যা করার আলামত পেয়েছেন ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকরা। ছেলে মুহিব হাসানকে গলা কেটে, মা জাহানারা বেগম মুক্তাকে শ্বাসরোধে ও মেয়ে তাসফিয়া সুলতানা মিমকে গলায় গামছা পেঁছিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ময়নাতদন্ত করে আমরা জানতে পেরেছি ছেলেকে মারা হয়েছে গলা কেটে। তার গলায় আমরা আঘাতের জখম পেয়েছি। আর মা-মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। মায়ের গলায় ও পেটে আঘাতের চিহ্ন পেয়েছি। তিনি বলেন, আলামত দেখে আমাদের মনে হচ্ছে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের ভিসেরা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ক্রাইম সিন ভিজিট করে মরদেহগুলো কিভাবে কি অবস্থায় পড়ে ছিল, বা ঘরের পরিস্থিতি কিভাবে ছিল সেটা দেখলে বিস্তারিত জানা যাবে। তবে ৭২ ঘণ্টা আগে হত্যাকাণ্ডটি হয়েছে। এই কারণে অনেক আলামত নষ্ট হয়ে গেছে বলেও জানান এই ফরেনসিক চিকিৎসক।
উত্তরখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন বলেন, প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হচ্ছে ছেলে কাজী মহিব হোসেন রশ্মি প্রথমে তার মা ও বোনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। পরে সে নিজেই গলায় বটি চালিয়ে আত্মহত্যা করে। ঘটনাস্থল থেকে আমরা একটি রক্তমাখা বটি উদ্ধার করেছি। ছেলেটির গলায় আঘাতের চিহ্ন দেখে আমরা নিশ্চিত হয়েছি ডান হাত দিয়ে বটি ধরে বাম দিক থেকে গলার নরম অংশে আঘাত করেছে। আর ভেতর থেকে দরজাও বন্ধ ছিল। সুতরাং সেখানে বহিরাগত কেউ এসে এমনটা ঘটায়নি। যদি বাইরে থেকে তালা মারা থাকত তবে বিষয়টি নিয়ে আলাদাভাবে চিন্তা করা যেত। তিনি বলেন, তাদের ঘর থেকে পুলিশ একটি চিরকুটও উদ্ধার করেছে। তাতে লেখা আছে আমাদের মৃত্যুর জন্য আমাদের ভাগ্য ও আত্মীয় স্বজনদের অবহেলাই দায়ী। মৃত্যুর পর আমাদের অর্থ-সম্পত্তি দাতব্য প্রতিষ্ঠানে যেন দান করা হয়। আলাদাভাবে মা ছেলে এই লেখাটি লিখে নিচে তাদের নামও লিখেছেন।
পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, নিহতদের আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে আমরা জানতে পেরেছি ছেলে-মেয়ে ও সংসার নিয়ে জাহানারা বেগম খুবই হতাশায় ভুগছিলেন। হতাশায় কেন ভুগছিলেন আর কেনই বা এমনটা ঘটালেন আমরা সেই তদন্তও করছি। সেখানে তিনটি কারণকে প্রাধান্য দিচ্ছি। প্রথমত, স্বামীর মৃত্যুর পর তার পেনশনের টাকা তোলার সময় আত্বীয় স্বজন কারো কোন সহযোগীতা না পাওয়া। ওই সময়টা তাদের খুব খারাপ অবস্থায় গেছে। দ্বিতীয়ত, মেয়েটা ছিল বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। তার ভবিষ্যৎ ও বিভিন্ন অস্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে জাহানারা বেগম খুবই চিন্তাগ্রস্ত ছিলেন। এছাড়া ছেলেটি অনেক দিন ধরে বেকার ছিলেন। আত্মীয়-স্বজন ভালো অবস্থানে থাকার পরও কেউ সহযোগীতা করেননি। পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসেই জাহানারা বেগম ছেলে-মেয়েকে নিয়ে চাপানেরটেকের ওই এক তলা বাড়িতে ভাড়ায় উঠেন। এর আগে তারা কাফরুলের একটি বাসায় ভাড়ায় থাকতেন। জাহানারা বেগমের স্বামী ইকবাল হোসেন পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ছিলেন। অবসরে যাওয়ার পর তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
নিহত জাহানার বেগমের বাড়ি কুমিল্লার তিতাস উপজেলার বাড়ি কান্দিতে। তার বাবার নাম জহির উদ্দিন আহমেদ। ছেলে মহিব হোসেন রশ্মি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন। ৪০তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি। মেয়ে তাসফিয়া সুলতানা মিম মানসিক প্রতিবন্ধি ছিল। পুলিশ সূত্র বলছে, জাহানারা স্বামীর মৃত্যুর পর দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকার কাফরুলের একটি বাসায় থাকতেন। কিন্তু সেখান থেকে প্রতিবেশীদের অসহযোগিতার কারণে আড়াই মাস আগে চলে যান ভৈরবের গ্রামের বাড়িতে। পরে রমজানের প্রথম দিকে ফের ঢাকা এসে তারা উত্তরখানের ওই বাসায় উঠেন। উত্তরখান এলাকায় তাদের চার কাঠার একটি জমি আছে। ওই জমিতেই একটি টিনশেড বাড়ি করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু রোববার ইফতারের পর স্থানীয় লোকজন ওই বাসা থেকে পঁচা দুর্গন্ধ পেয়ে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
উত্তরখানের যে বাসায় জাহানারা তার সন্তান নিয়ে থাকতেন ওই বাসার কেয়ারটেকার মাহবুব আলম বলেন, চলতি মাসেই তারা বাসায় উঠেছিলেন। বৃহস্পতিবার জাহানারা বেগম তার মেয়েকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার সময় দেখা হয়েছিল। শনিবার বিকালে তাদের এক আত্মীয় আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, তাদের খোঁজ খবর নেন। তিনি নাকি তাদেরকে ফোনে পাচ্ছেন না। তখন তাদের ঘরের সামনে গিয়ে দেখি ভেতর থেকে দরজা বন্ধ। তবে ঘরের একটি জানালা কিছুটা খোলা ছিল। ভেতরে গিয়ে দেখি রুমের ভেতর লাইট জ্বলছে আর ফ্যান ঘুরছে। পুরো জানালা খুলে দেখি মেঝের মধ্যে ছেলে পড়ে আছে আর মা মেয়ে খাটের মধ্যে। তারপর খবর দিলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। মাহবুব আরও বলেন, তাদের কোন আত্মীয়-স্বজন কাউকে কখনও আসতে দেখি নাই। নান্টু মিয়া নামের এক স্বজন বলেন, বৃহস্পতিবার তাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম। এসে শুনি তারা ডাক্তারের কাছে গেছেন। শুক্রবার তাদেরকে ফোন করলে তারা ফোন ধরে নাই। নিহত জাহানারার দেবর মো. হাসান উল্লাহ বলেন, ভাই ছাড়া ভাবীর পরিবারের কেউ চাকরি করতেন না। ভাতিজাটাও বেকার ছিল আর মেয়েটা শারীরিক প্রতিবন্ধি ছিল। তার ভবিষ্যৎ নিয়ে সবাই খুব টেনশনে ছিল।
রোববার ঢাকার উত্তরখান থানা পুলিশ ময়নারটেকের চাপানেরটেক এলাকার একতলা বাড়ির ভেতর থেকে বন্ধ থাকা ঘর থেকে মা জাহানার বেগম মুক্তা (৫০) তার ছেলে কাজী মহিব হোসেন রশ্মি (৩০) ও মেয়ে আফিয়া সুলতানা মিমের (১৮) মরদেহ উদ্ধার করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তার পাশাপাশি সেখানে ছুটে যান পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), মহানগর গোয়েন্দা সংস্থা (ডিবি) ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কর্মকর্তারা। তারা প্রত্যকেই ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু বদ্ধ ঘরের ভেতর থেকে একই পরিবারের তিন সদস্যের মরদেহ উদ্ধারের পর নানা রহস্য তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন তারা মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত ছিলেন এ কারণে আত্মহত্যা করেছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, তাদেরকে দুর্বৃত্তরা হত্যা করেছে। উত্তর খানের চার কাঠার প্লট, প্রয়াত গৃহকর্তার পেনশনের টাকা ও পৈত্রিক সম্পত্তি এ ‘হত্যাকাণ্ডের’র পেছণের কারণ হতে পারে। এছাড়া আত্মীয় স্বজনদের অসহযোগিতার বিষয়টিও সামনে আনছেন কেউ। তবে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে গৃহকর্তার পেনশনের টাকা, ঢাকায় কোটি টাকার জমি, চাকরি পাওয়ার যোগ্য ছেলে সন্তান থাকার পরও কেন একটি পরিবারের সবাই ‘আত্মহত্যা’ করতে যাবে। তাই আত্মহত্যার বিষয়টি অনেকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না।
যদিও পুলিশ বলছে বহিরাগত কেউ তাদেরকে হত্যা করেনি। তারা নিজেদের মধ্যে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। প্রথমে দুজনকে হত্যা করে পরে একজন নিজেই আত্মহত্যা করেছে।
এদিকে গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহত তিনজনের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। ময়নাতদন্তে তাদেরকে হত্যা করার আলামত পেয়েছেন ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকরা। ছেলে মুহিব হাসানকে গলা কেটে, মা জাহানারা বেগম মুক্তাকে শ্বাসরোধে ও মেয়ে তাসফিয়া সুলতানা মিমকে গলায় গামছা পেঁছিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ময়নাতদন্ত করে আমরা জানতে পেরেছি ছেলেকে মারা হয়েছে গলা কেটে। তার গলায় আমরা আঘাতের জখম পেয়েছি। আর মা-মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। মায়ের গলায় ও পেটে আঘাতের চিহ্ন পেয়েছি। তিনি বলেন, আলামত দেখে আমাদের মনে হচ্ছে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের ভিসেরা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ক্রাইম সিন ভিজিট করে মরদেহগুলো কিভাবে কি অবস্থায় পড়ে ছিল, বা ঘরের পরিস্থিতি কিভাবে ছিল সেটা দেখলে বিস্তারিত জানা যাবে। তবে ৭২ ঘণ্টা আগে হত্যাকাণ্ডটি হয়েছে। এই কারণে অনেক আলামত নষ্ট হয়ে গেছে বলেও জানান এই ফরেনসিক চিকিৎসক।
উত্তরখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন বলেন, প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হচ্ছে ছেলে কাজী মহিব হোসেন রশ্মি প্রথমে তার মা ও বোনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। পরে সে নিজেই গলায় বটি চালিয়ে আত্মহত্যা করে। ঘটনাস্থল থেকে আমরা একটি রক্তমাখা বটি উদ্ধার করেছি। ছেলেটির গলায় আঘাতের চিহ্ন দেখে আমরা নিশ্চিত হয়েছি ডান হাত দিয়ে বটি ধরে বাম দিক থেকে গলার নরম অংশে আঘাত করেছে। আর ভেতর থেকে দরজাও বন্ধ ছিল। সুতরাং সেখানে বহিরাগত কেউ এসে এমনটা ঘটায়নি। যদি বাইরে থেকে তালা মারা থাকত তবে বিষয়টি নিয়ে আলাদাভাবে চিন্তা করা যেত। তিনি বলেন, তাদের ঘর থেকে পুলিশ একটি চিরকুটও উদ্ধার করেছে। তাতে লেখা আছে আমাদের মৃত্যুর জন্য আমাদের ভাগ্য ও আত্মীয় স্বজনদের অবহেলাই দায়ী। মৃত্যুর পর আমাদের অর্থ-সম্পত্তি দাতব্য প্রতিষ্ঠানে যেন দান করা হয়। আলাদাভাবে মা ছেলে এই লেখাটি লিখে নিচে তাদের নামও লিখেছেন।
পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, নিহতদের আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে আমরা জানতে পেরেছি ছেলে-মেয়ে ও সংসার নিয়ে জাহানারা বেগম খুবই হতাশায় ভুগছিলেন। হতাশায় কেন ভুগছিলেন আর কেনই বা এমনটা ঘটালেন আমরা সেই তদন্তও করছি। সেখানে তিনটি কারণকে প্রাধান্য দিচ্ছি। প্রথমত, স্বামীর মৃত্যুর পর তার পেনশনের টাকা তোলার সময় আত্বীয় স্বজন কারো কোন সহযোগীতা না পাওয়া। ওই সময়টা তাদের খুব খারাপ অবস্থায় গেছে। দ্বিতীয়ত, মেয়েটা ছিল বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। তার ভবিষ্যৎ ও বিভিন্ন অস্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে জাহানারা বেগম খুবই চিন্তাগ্রস্ত ছিলেন। এছাড়া ছেলেটি অনেক দিন ধরে বেকার ছিলেন। আত্মীয়-স্বজন ভালো অবস্থানে থাকার পরও কেউ সহযোগীতা করেননি। পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসেই জাহানারা বেগম ছেলে-মেয়েকে নিয়ে চাপানেরটেকের ওই এক তলা বাড়িতে ভাড়ায় উঠেন। এর আগে তারা কাফরুলের একটি বাসায় ভাড়ায় থাকতেন। জাহানারা বেগমের স্বামী ইকবাল হোসেন পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ছিলেন। অবসরে যাওয়ার পর তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
নিহত জাহানার বেগমের বাড়ি কুমিল্লার তিতাস উপজেলার বাড়ি কান্দিতে। তার বাবার নাম জহির উদ্দিন আহমেদ। ছেলে মহিব হোসেন রশ্মি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন। ৪০তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি। মেয়ে তাসফিয়া সুলতানা মিম মানসিক প্রতিবন্ধি ছিল। পুলিশ সূত্র বলছে, জাহানারা স্বামীর মৃত্যুর পর দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকার কাফরুলের একটি বাসায় থাকতেন। কিন্তু সেখান থেকে প্রতিবেশীদের অসহযোগিতার কারণে আড়াই মাস আগে চলে যান ভৈরবের গ্রামের বাড়িতে। পরে রমজানের প্রথম দিকে ফের ঢাকা এসে তারা উত্তরখানের ওই বাসায় উঠেন। উত্তরখান এলাকায় তাদের চার কাঠার একটি জমি আছে। ওই জমিতেই একটি টিনশেড বাড়ি করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু রোববার ইফতারের পর স্থানীয় লোকজন ওই বাসা থেকে পঁচা দুর্গন্ধ পেয়ে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
উত্তরখানের যে বাসায় জাহানারা তার সন্তান নিয়ে থাকতেন ওই বাসার কেয়ারটেকার মাহবুব আলম বলেন, চলতি মাসেই তারা বাসায় উঠেছিলেন। বৃহস্পতিবার জাহানারা বেগম তার মেয়েকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার সময় দেখা হয়েছিল। শনিবার বিকালে তাদের এক আত্মীয় আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, তাদের খোঁজ খবর নেন। তিনি নাকি তাদেরকে ফোনে পাচ্ছেন না। তখন তাদের ঘরের সামনে গিয়ে দেখি ভেতর থেকে দরজা বন্ধ। তবে ঘরের একটি জানালা কিছুটা খোলা ছিল। ভেতরে গিয়ে দেখি রুমের ভেতর লাইট জ্বলছে আর ফ্যান ঘুরছে। পুরো জানালা খুলে দেখি মেঝের মধ্যে ছেলে পড়ে আছে আর মা মেয়ে খাটের মধ্যে। তারপর খবর দিলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। মাহবুব আরও বলেন, তাদের কোন আত্মীয়-স্বজন কাউকে কখনও আসতে দেখি নাই। নান্টু মিয়া নামের এক স্বজন বলেন, বৃহস্পতিবার তাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম। এসে শুনি তারা ডাক্তারের কাছে গেছেন। শুক্রবার তাদেরকে ফোন করলে তারা ফোন ধরে নাই। নিহত জাহানারার দেবর মো. হাসান উল্লাহ বলেন, ভাই ছাড়া ভাবীর পরিবারের কেউ চাকরি করতেন না। ভাতিজাটাও বেকার ছিল আর মেয়েটা শারীরিক প্রতিবন্ধি ছিল। তার ভবিষ্যৎ নিয়ে সবাই খুব টেনশনে ছিল।
No comments