কান্নায় ভারি বাতাস- ডিএনএ পরীক্ষায় মিললো ১১ জনের লাশ by রুদ্র মিজান
লাশকাটা
ঘরের সামনে মানুষের ভিড়। কেউ চিৎকার করে কাঁদছেন। কেউ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে কান্নার শব্দ। কাঁদতে কাঁদতে চোখের জল শুকিয়ে গেছে
কারও কারও। কাঁদছেন স্বজনহারা মানুষ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে
স্বজনের পুড়ে যাওয়া লাশ। চুড়িহাট্টার অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে নিহত হয়েছেন তারা।
বিকৃত লাশ। চেনার উপায় ছিল না। দীর্ঘ দুই সপ্তাহ ছিল সংরক্ষণাগারে। অবশেষে ডিএনএ পরীক্ষায় মিলেছে ১১ জনের পরিচয়।
খবর পেয়ে লাশ নিতে এসেছেন স্বজনরা। কেউ সন্তান হারিয়েছেন, কেউ হারিয়েছেন স্বামী, কেউ হারিয়েছেন বাবা-মা। গতকাল অন্তত আটটি লাশ নিতে ঢামেক মর্গে ভিড় করেন স্বজনরা। মা শিরীনের সঙ্গে বাবার লাশ নিতে এসেছিলো পাঁচ মাসের শিশু আবুল হোসেন। স্বামীর লাশ দেখার পর থেকেই চিৎকার করে কাঁদছিলেন তিনি। মায়ের কান্না দেখে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে ছিল শিশুটি। মায়ের চোখের জল মুছে দিচ্ছিলো কচি হাতে। এক পর্যায়ে শিশু সন্তানকে অন্যের কাছে রেখে দুই হাতে লাশবাহী এম্বুলেন্স ধরে বলছিলেন, আমার সন্তানের বাবা কেন নাইগো, আমার সন্তান এখন কাকে বাবা বলে ডাকবে...।
শিরীনের কান্না দেখে চোখের জল ধরে লাখতে পারেন নি আশেপাশের লোকজন। পৃথিবীর তেমন কিছুই বুঝে না নুরুজ্জামান-শিরীন দম্পতির অবোধ শিশুটি। অথচ জীবনের শুরুতেই সে হারিয়েছে জীবনের সবচেয়ে বড়ছায়া বাবাকে। ডিএনএ পরীক্ষার পর গতকাল নিশ্চিত হওয়া গেছে চুড়িহাট্টার আগুনে পুড়ে মারা গেছেন শিশুটির পিতা নুরুজ্জামান।
শিশু সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার দেলপাড়া থাকতেন নুরুজ্জামান। তিনি ময়মনসিংহের তারাকান্দার বোয়ালকান্দির সোহরাব হোসেনের একমাত্র ছেলে। ঢাকায় রিকশা চালাতেন। ঘটনার দিনও সকালে রিকশা নিয়ে বের হয়েছিলেন। প্রতিদিনের মতো রাতে বাসায় ফিরলেও সে রাতে আর বাসায় ফেরা হয়নি নুরুজ্জামানের। পুরান ঢাকার অগ্নিকাণ্ডের কিছুক্ষণ আগে স্ত্রী শিরীনকে নুরুজ্জামান বলেছিলেন, ‘আমি চকবাজারে জ্যামে আছি। অনেক শব্দ। কিছুই বুঝতে পারছি না। পরে ফোন দাও। আমার ফিরতে দেরি হবে।’ কিন্তু নুরুজ্জামানের আর ফেরা হয়নি। কথাও হয়নি স্ত্রীর সঙ্গে। ২০শে ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার অগ্নিকাণ্ডের পরদিন নুরুজ্জামানকে খুঁজেছেন শিরীন। কোথাও পাননি। এমনকি মর্গের ৬৭টি লাশ দেখেছেন। চিনতে পারেন নি। ২৩শে ফেব্রুয়ারি ডিএনএ নমুনা দেন। তারপরই আজ সিআইডি থেকে তাকে জানানো হয় নুরুজ্জামানের লাশ শনাক্ত করা হয়েছে। সেই লাশ নিতে এসেছেন তিনি ও তার সন্তান এবং নিহত নুরুজ্জামানের বোন বেগম।
পৃথিবীতে সবচেয়ে কষ্টের পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ। কথাটি বলছিলেন কলেজছাত্রী ফাতেমা তুজ জোহরা ওরফে বৃষ্টির পিতা জসিম উদ্দিন। বৃষ্টি বেঁচে আছে নাকি নেই, নিশ্চিত ছিলেন না তারা। ঘটনার দিন বান্ধবী দোলা আর বৃষ্টি শিল্পকলার একটি অনুষ্ঠান শেষে চকবাজারের বাসায় ফিরছিলেন। তারপর থেকে তাদের আর খোঁজ নেই। আগুনে পোড়া লাশ দেখেও বৃষ্টিকে চিনতে পারেন নি। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমেই গতকাল লাশটি শনাক্ত হয়েছে। বৃষ্টির মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না তার মা শামসুন্নাহার। সারাটি দিন মায়ের সঙ্গে সময় কাটতো মেয়ের। লালবাগ পোস্তার ৪১/১ হাজী রহিম বক্স লেনের বাসায় বৃষ্টির নানা স্মৃতিচিহ্ন। তার শোয়ার খাট, বইপত্র, কসমেটিকস ও শখের গিটার পড়ে আছে। দেয়ালে তাকালেই তার আঁকা আল্পনা দেখতে পান। এগুলো দেখে দেখে আর মেয়ের জামা বুকে জড়িয়ে সারাক্ষণ কান্না করেন শামসুন্নাহার। আজ (গতকাল) খবর পেয়ে সিআইডি অফিস ও ঢামেক মর্গে ছুটে যান এই হতভাগা মা-বাবা। এসময় কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। এতদিন পর অন্তত মেয়ের লাশ পেয়েছেন এতেই সান্ত্বনা খোঁজার চেষ্টা করছেন বাবা জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, মেয়ের লাশ পেয়েছি। কবরটা অন্তত দিতে পারবো। আজিমপুরে বৃষ্টির লাশ দাফন করা হবে বলে জানান তার স্বজনরা।
রিকশায় করে স্ত্রী নাসরিন জাহান ও সাত বছর বয়সী সন্তান আফতাহী রাজাকে নিয়ে চুড়িহাট্টার বাসায় ফিরছিলেন সালেহ আহমদ লিপু। এরমধ্যেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। লাশও পাচ্ছিলেন না স্বজনরা। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে লিপু ও নাসরিনের লাশ পাওয়া গেছে গতকাল। লিপুর মামা আবদুল আজিজ জানান, একটি আইসক্রিম কোম্পানিতে চাকরি করতো লিপু আর নাসরিন চাকরি করতো চুড়িহাট্টার আশিক টাওয়ারে। পরিবারের তিনজনই আগুনে পুড়ে মারা গেছে। তবে শিশুটির লাশ এখনো পাননি তারা। আজিজ বলেন, লাশ বিকৃত, দেখার কিছু নেই। লাশ পেয়েছি- এটাই বড় কথা। এখন দাফন করবো।
বাবার লাশ সন্তানরা সহ্য করতে পারবে না। অগ্নিকাণ্ডের পর থেকেই ঘুমের মধ্যে ‘বাবা বাবা’ বলে চিৎকার করে শাহীনের তিন সন্তান। তাই তাদের বাসায় রেখে স্বজনদের সহযোগিতায় স্বামীর লাশ নিতে এসেছিলেন ময়না বেগম। কাঁদতে কাঁদতে বোরকা পরা ময়না বলছিলেন, ছয় বছর বয়সী হুমায়রা বাবার অপেক্ষায় পথ চেয়ে থাকে। কলিংবেল বাজলেই দ্রুত দরজার পাশে ছুটে যায়। ‘আব্বু, তুমি আসছো’ বলে চিৎকার করে। ১ বছর বয়সী সাফোয়ান ও ১১ বছর বয়সী হাফসা একদম নীরব হয়ে গেছে। সারাদিন চুপচাপ। ওরা আমাকে জড়িয়ে কান্না করে। আমি তাদের বাবাকে কীভাবে ফিরিয়ে আনবো। আল্লাহ কেন তিন সন্তানের পিতাকে এভাবে নিয়ে গেলেন। চুড়িহাট্টা এলাকাতেই শাহীন-ময়না দম্পতির বাসা। ঘটনার দিন মসজিদে নামাজ শেষে রাজমহল রেস্টুরেন্টে চা পান করতে যান। তারপরই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
১১ লাশের পরিচয় শনাক্তের পর গতকাল সকালে সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি জানিয়েছে, ৪৮ জন নিকটাত্মীয়ের কাছ থেকে মোট ৪৮টি রেফারেন্স ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে সিআইডি’র ফরেনসিক দল। ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরিতে দুই ধাপে পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রথম ধাপে ১৫টি লাশ থেকে ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করা হয়। সেই সঙ্গে ৪৮ জন দাবিদারের ডিএনএ প্রোফাইল করা হয়। প্রথম ধাপ থেকে প্রাপ্ত ডিএনএ প্রোফাইল, ডিএনএ বিশ্লেষণ করে ১১ লাশের পরিচয় পাওয়া গেছে। বাকি চার জনের পরিচয় নির্ণয়ের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
দ্বিতীয় ধাপে পাঁচটি অজ্ঞাত লাশের হাড় থেকে ডিএনএ পরীক্ষার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এই প্রক্রিয়াটি দুই সপ্তাহের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে জানায় সিআইডি। চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডের পরপরই সিআইডি’র দুটি ক্রাইমসিন ঘটনাস্থলে যায়। পরবর্তীতে নিহত ব্যক্তিদের পরিচয় শনাক্তকরণের জন্য ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরির একটি বিশেষজ্ঞ দল ডিএনএ নমুনা (রক্ত, টিস্যু, হাড় ও বাক্কাল সোয়াব) সংগ্রহের কাজ শুরু করে। ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেলের ফরেনসিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে যৌথভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গ থেকে মোট ৬৭টি লাশ থেকে ২৫৬টি ক্রাইমসিন, ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ২৩শে ফেব্রুয়ারি একটি বিচ্ছিন্ন হাতকে পৃথক আলামত হিসেবে গণ্য করে সেটি থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ফলে মোট ডিএনএ নমুনা দাঁড়ায় ২৫৭টি।
ঢামেক মর্গ থেকে লাশ হস্তান্তরের সময় ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শফিকুল ইসলাম বলেন, ১১টি লাশের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে আটটি লাশ বুধবার হস্তান্তর হয়েছে। বাকি তিনটি লাশ বৃহস্পতিবার হস্তান্তর হতে পারে। তাদের স্বজনরা আসতে দেরি হওয়ায় বুধবার লাশ তিনটি হস্তান্তর সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি।
বিকৃত লাশ। চেনার উপায় ছিল না। দীর্ঘ দুই সপ্তাহ ছিল সংরক্ষণাগারে। অবশেষে ডিএনএ পরীক্ষায় মিলেছে ১১ জনের পরিচয়।
খবর পেয়ে লাশ নিতে এসেছেন স্বজনরা। কেউ সন্তান হারিয়েছেন, কেউ হারিয়েছেন স্বামী, কেউ হারিয়েছেন বাবা-মা। গতকাল অন্তত আটটি লাশ নিতে ঢামেক মর্গে ভিড় করেন স্বজনরা। মা শিরীনের সঙ্গে বাবার লাশ নিতে এসেছিলো পাঁচ মাসের শিশু আবুল হোসেন। স্বামীর লাশ দেখার পর থেকেই চিৎকার করে কাঁদছিলেন তিনি। মায়ের কান্না দেখে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে ছিল শিশুটি। মায়ের চোখের জল মুছে দিচ্ছিলো কচি হাতে। এক পর্যায়ে শিশু সন্তানকে অন্যের কাছে রেখে দুই হাতে লাশবাহী এম্বুলেন্স ধরে বলছিলেন, আমার সন্তানের বাবা কেন নাইগো, আমার সন্তান এখন কাকে বাবা বলে ডাকবে...।
শিরীনের কান্না দেখে চোখের জল ধরে লাখতে পারেন নি আশেপাশের লোকজন। পৃথিবীর তেমন কিছুই বুঝে না নুরুজ্জামান-শিরীন দম্পতির অবোধ শিশুটি। অথচ জীবনের শুরুতেই সে হারিয়েছে জীবনের সবচেয়ে বড়ছায়া বাবাকে। ডিএনএ পরীক্ষার পর গতকাল নিশ্চিত হওয়া গেছে চুড়িহাট্টার আগুনে পুড়ে মারা গেছেন শিশুটির পিতা নুরুজ্জামান।
শিশু সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার দেলপাড়া থাকতেন নুরুজ্জামান। তিনি ময়মনসিংহের তারাকান্দার বোয়ালকান্দির সোহরাব হোসেনের একমাত্র ছেলে। ঢাকায় রিকশা চালাতেন। ঘটনার দিনও সকালে রিকশা নিয়ে বের হয়েছিলেন। প্রতিদিনের মতো রাতে বাসায় ফিরলেও সে রাতে আর বাসায় ফেরা হয়নি নুরুজ্জামানের। পুরান ঢাকার অগ্নিকাণ্ডের কিছুক্ষণ আগে স্ত্রী শিরীনকে নুরুজ্জামান বলেছিলেন, ‘আমি চকবাজারে জ্যামে আছি। অনেক শব্দ। কিছুই বুঝতে পারছি না। পরে ফোন দাও। আমার ফিরতে দেরি হবে।’ কিন্তু নুরুজ্জামানের আর ফেরা হয়নি। কথাও হয়নি স্ত্রীর সঙ্গে। ২০শে ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার অগ্নিকাণ্ডের পরদিন নুরুজ্জামানকে খুঁজেছেন শিরীন। কোথাও পাননি। এমনকি মর্গের ৬৭টি লাশ দেখেছেন। চিনতে পারেন নি। ২৩শে ফেব্রুয়ারি ডিএনএ নমুনা দেন। তারপরই আজ সিআইডি থেকে তাকে জানানো হয় নুরুজ্জামানের লাশ শনাক্ত করা হয়েছে। সেই লাশ নিতে এসেছেন তিনি ও তার সন্তান এবং নিহত নুরুজ্জামানের বোন বেগম।
পৃথিবীতে সবচেয়ে কষ্টের পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ। কথাটি বলছিলেন কলেজছাত্রী ফাতেমা তুজ জোহরা ওরফে বৃষ্টির পিতা জসিম উদ্দিন। বৃষ্টি বেঁচে আছে নাকি নেই, নিশ্চিত ছিলেন না তারা। ঘটনার দিন বান্ধবী দোলা আর বৃষ্টি শিল্পকলার একটি অনুষ্ঠান শেষে চকবাজারের বাসায় ফিরছিলেন। তারপর থেকে তাদের আর খোঁজ নেই। আগুনে পোড়া লাশ দেখেও বৃষ্টিকে চিনতে পারেন নি। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমেই গতকাল লাশটি শনাক্ত হয়েছে। বৃষ্টির মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না তার মা শামসুন্নাহার। সারাটি দিন মায়ের সঙ্গে সময় কাটতো মেয়ের। লালবাগ পোস্তার ৪১/১ হাজী রহিম বক্স লেনের বাসায় বৃষ্টির নানা স্মৃতিচিহ্ন। তার শোয়ার খাট, বইপত্র, কসমেটিকস ও শখের গিটার পড়ে আছে। দেয়ালে তাকালেই তার আঁকা আল্পনা দেখতে পান। এগুলো দেখে দেখে আর মেয়ের জামা বুকে জড়িয়ে সারাক্ষণ কান্না করেন শামসুন্নাহার। আজ (গতকাল) খবর পেয়ে সিআইডি অফিস ও ঢামেক মর্গে ছুটে যান এই হতভাগা মা-বাবা। এসময় কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। এতদিন পর অন্তত মেয়ের লাশ পেয়েছেন এতেই সান্ত্বনা খোঁজার চেষ্টা করছেন বাবা জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, মেয়ের লাশ পেয়েছি। কবরটা অন্তত দিতে পারবো। আজিমপুরে বৃষ্টির লাশ দাফন করা হবে বলে জানান তার স্বজনরা।
রিকশায় করে স্ত্রী নাসরিন জাহান ও সাত বছর বয়সী সন্তান আফতাহী রাজাকে নিয়ে চুড়িহাট্টার বাসায় ফিরছিলেন সালেহ আহমদ লিপু। এরমধ্যেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। লাশও পাচ্ছিলেন না স্বজনরা। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে লিপু ও নাসরিনের লাশ পাওয়া গেছে গতকাল। লিপুর মামা আবদুল আজিজ জানান, একটি আইসক্রিম কোম্পানিতে চাকরি করতো লিপু আর নাসরিন চাকরি করতো চুড়িহাট্টার আশিক টাওয়ারে। পরিবারের তিনজনই আগুনে পুড়ে মারা গেছে। তবে শিশুটির লাশ এখনো পাননি তারা। আজিজ বলেন, লাশ বিকৃত, দেখার কিছু নেই। লাশ পেয়েছি- এটাই বড় কথা। এখন দাফন করবো।
বাবার লাশ সন্তানরা সহ্য করতে পারবে না। অগ্নিকাণ্ডের পর থেকেই ঘুমের মধ্যে ‘বাবা বাবা’ বলে চিৎকার করে শাহীনের তিন সন্তান। তাই তাদের বাসায় রেখে স্বজনদের সহযোগিতায় স্বামীর লাশ নিতে এসেছিলেন ময়না বেগম। কাঁদতে কাঁদতে বোরকা পরা ময়না বলছিলেন, ছয় বছর বয়সী হুমায়রা বাবার অপেক্ষায় পথ চেয়ে থাকে। কলিংবেল বাজলেই দ্রুত দরজার পাশে ছুটে যায়। ‘আব্বু, তুমি আসছো’ বলে চিৎকার করে। ১ বছর বয়সী সাফোয়ান ও ১১ বছর বয়সী হাফসা একদম নীরব হয়ে গেছে। সারাদিন চুপচাপ। ওরা আমাকে জড়িয়ে কান্না করে। আমি তাদের বাবাকে কীভাবে ফিরিয়ে আনবো। আল্লাহ কেন তিন সন্তানের পিতাকে এভাবে নিয়ে গেলেন। চুড়িহাট্টা এলাকাতেই শাহীন-ময়না দম্পতির বাসা। ঘটনার দিন মসজিদে নামাজ শেষে রাজমহল রেস্টুরেন্টে চা পান করতে যান। তারপরই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
১১ লাশের পরিচয় শনাক্তের পর গতকাল সকালে সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি জানিয়েছে, ৪৮ জন নিকটাত্মীয়ের কাছ থেকে মোট ৪৮টি রেফারেন্স ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে সিআইডি’র ফরেনসিক দল। ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরিতে দুই ধাপে পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রথম ধাপে ১৫টি লাশ থেকে ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করা হয়। সেই সঙ্গে ৪৮ জন দাবিদারের ডিএনএ প্রোফাইল করা হয়। প্রথম ধাপ থেকে প্রাপ্ত ডিএনএ প্রোফাইল, ডিএনএ বিশ্লেষণ করে ১১ লাশের পরিচয় পাওয়া গেছে। বাকি চার জনের পরিচয় নির্ণয়ের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
দ্বিতীয় ধাপে পাঁচটি অজ্ঞাত লাশের হাড় থেকে ডিএনএ পরীক্ষার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এই প্রক্রিয়াটি দুই সপ্তাহের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে জানায় সিআইডি। চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডের পরপরই সিআইডি’র দুটি ক্রাইমসিন ঘটনাস্থলে যায়। পরবর্তীতে নিহত ব্যক্তিদের পরিচয় শনাক্তকরণের জন্য ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরির একটি বিশেষজ্ঞ দল ডিএনএ নমুনা (রক্ত, টিস্যু, হাড় ও বাক্কাল সোয়াব) সংগ্রহের কাজ শুরু করে। ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেলের ফরেনসিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে যৌথভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গ থেকে মোট ৬৭টি লাশ থেকে ২৫৬টি ক্রাইমসিন, ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ২৩শে ফেব্রুয়ারি একটি বিচ্ছিন্ন হাতকে পৃথক আলামত হিসেবে গণ্য করে সেটি থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ফলে মোট ডিএনএ নমুনা দাঁড়ায় ২৫৭টি।
ঢামেক মর্গ থেকে লাশ হস্তান্তরের সময় ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শফিকুল ইসলাম বলেন, ১১টি লাশের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে আটটি লাশ বুধবার হস্তান্তর হয়েছে। বাকি তিনটি লাশ বৃহস্পতিবার হস্তান্তর হতে পারে। তাদের স্বজনরা আসতে দেরি হওয়ায় বুধবার লাশ তিনটি হস্তান্তর সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি।
No comments