আমাদের পেছনে কেউ নেই অনেকের সমর্থন আছে -সাক্ষাৎকারে মজিবুর রহমান মঞ্জু by কাফি কামাল
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj8NL8jSWAttRlu-6Jm12MdLsFbzrh3fiJuxwa-0VERCddWVX0JswQ4NmR4WNBYAWvYY7JtFItS7DafPGHUg5s8Paq9XtrWD3d3uIjJ1rTE31_q1oodCBgclX6aCTOvd72un5iKVX96ovo/s400/mon-ju.jpg)
রাজনৈতিক
প্রতিকূলতার মধ্যেই দলের সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে নতুন এক সংকটের মধ্যে
পড়েছে জামায়াতের রাজনীতি। সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়কে সামনে রেখে দল থেকে
পদত্যাগ করেছেন লন্ডনে অবস্থানরত সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক। সংস্কার প্রস্তাব দিয়ে তার পক্ষে জনসমর্থন সৃষ্টির উদ্যোগ নেয়ায় দল থেকে বহিষ্কার হয়েছেন ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু।
জামায়াতের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রচর্চার দাবিসহ নানা ইস্যুতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অস্বস্তির মধ্যে ছিলেন জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্ব। সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যদিয়ে নতুন করে সংকটের মধ্যে পড়ছে দলটি। অবশ্যই রাজনৈতিক মহলে এ নিয়ে দেখা যাচ্ছে- মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছেন, নতুন কৌশলে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে জামায়াত; আবার কেউ বলছে, জামায়াতে ভাঙন ধরাতে আমাদের কৌশল বাস্তবায়নের উদ্যোগ এটি। জামায়াতের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ, দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের দায়, অদূরদর্শিতা, নতুন উদ্যোগ, উদ্যোগের নেপথ্যে, ইসলামী রাজনীতির উপযোগিতাসহ নানা বিষয়ে মানবজমিনের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলেছেন জামায়াতের সদ্য বহিষ্কৃত নেতা মজিবুর রহমান মঞ্জু।
প্রশ্ন: জামায়াতের সংস্কারের যে আওয়াজ তুলেছেন, সেটার পেছনে কারা আছে?
মঞ্জু: আমার পেছনে দেয়াল দেখা যাচ্ছে। আমার সামনে যারা আছে তাদের নিয়ে আমি এগিয়ে যেতে চাই। আমি বলেছি, ক্লেইম করছি- এ ধরনের চিন্তাটা আমাদের সবার মাঝেই আছে। আমি একটু ঝুঁকি নিয়ে কথাগুলো বলেছি। দায় নিয়েই বলেছি। বাংলাদেশের এ ধরনের পরিস্থিতিতে তরুণদের উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলেছি। যারা বাংলাদেশ নিয়ে ভাবেন। তারাই আমাদের পথ নির্দেশক। আমার কথাগুলো যৌক্তিক হলে অবশ্যই তাদের সাড়া পাব, এটাই বিশ্বাস।
প্রশ্ন: সংস্কার প্রস্তাবটি রাজনীতির এই মুহূর্তে এসে কেন? এ উদ্যোগ কি জামায়াতকে আরো খাদের কিনারে ঠেলে দেবে?
মঞ্জু: এই কথাগুলো এই মুহূর্তে বলিনি। এগুলো আমাদের দলের মধ্যে বিভিন্ন পর্ষদে আমরা বলেছি। এ আলোচনাগুলো বিভিন্ন সময়ে হয়েছে। এ বিষয়ে কবে থেকে কথা বলছেন সেটা ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক ডকুমেন্টারি আকারে লিখেছেন। ফলে এখন এসব বিষয়ে বলছি বা আলোচনায় এসেছে বিষয়টি কিন্তু তা নয়। বিভিন্ন সময়ে ব্যাপারগুলো আলোচনায় এসেছে। এটা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায়। তিনি বলেন, দলে এসব আলোচনা হয়েছে। দল বলেছে, আমরা একটি প্রোগ্রেসিভ চিন্তা করছি। দল বলছে, আমি যে ওয়েতে কথাগুলো বলেছি, এটা গঠনতান্ত্রিকভাবে শুদ্ধ নয়। আমি আমার পরিতৃপ্তি হচ্ছে, আমি আমার কথাগুলো বলতে পেরেছি। আমার মনে হয় প্রসেসকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে আমার কথাগুলোর যৌক্তিকতার গুরুত্ব দেয়া উচিত। আমার কথাগুলো দাবি গুলো যদি যুক্তিপূর্ণ হয় তবে দল গ্রহণ করবে। বহিষ্কার নিয়ে দ্বিমত নেই। তবু অনেক দিনের সম্পর্ক তাই খারাপ তো লাগেই।
প্রশ্ন: অতীতে জামায়াত-শিবিরের সংস্কারের উদ্যোগ যারা নিয়েছেন তারা এবং তাদের উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে, আপনারা কতটুকু আশাবাদী?
মঞ্জু: সাফল্য-ব্যর্থতা আপেক্ষিক ব্যাপার। আমি মনে করি কোনো উদ্যোগই ব্যর্থ হয় না। সংস্কার প্রক্রিয়াটা জটিল এবং কঠিন। পৃথিবীতে যারাই সংস্কারের কথা বলেছেন, তারাই কিন্তু নিগৃহীত ও নির্যাতিত হয়েছেন। তাদের কথাগুলো একটা পর্যায়ে বাস্তবায়ন হয়েছে। অতীতের ব্যর্থতার ব্যাপারে দ্বিমত করে বলবো, কাউকে ব্যর্থ বলতে চাই না। কে সফল কে ব্যর্থ সেটা বলা কঠিন। আমি মনে করি এ সমস্ত প্রয়াসের ফল বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো ভোগ করবে এবং এগিয়ে যাবে।
প্রশ্ন: সংস্কারের এই উদ্যোগ নিয়ে দুই ধরনের গুঞ্জন এখন রাজনৈতিক মহলে। কেউ বলছে, জামায়াতের ঘুরে দাঁড়ানোর কৌশল এটা আবার কেউ বলছে, জামায়াতে ভাঙন ধরানোর জন্য সরকারের কৌশল- আসলে কি?
মঞ্জু: এগুলো সবই ধারণাপ্রসূত এবং অপপ্রচার। এ ধরনের অভিযোগ, ব্লেইম গেম বাংলাদেশের রাজনীতিতে আছে- এগুলো নিয়ে কথা বলতে চাই না। আমরা যে চেষ্টা করছি সেটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য অনেকে অনেক কথা বলবে। সেটা সময়ই বলে দেবে কোনটি সত্য। আমি দৃঢ়ভাবে বলছি, আমরা সিনসিয়ারলি চাইছি এবং আমরা সে চেষ্টাটা করে যাবো। এটা আমাদের কমিটমেন্ট।
প্রশ্ন: ইতিমধ্যে কেমন সাড়া পেয়েছেন বা পাচ্ছেন?
মঞ্জু: এটা মিশ্র। অনেকেই সাড়া দিচ্ছেন, ফোন করছেন, সাধুবাদ জানাচ্ছেন। মেইন স্ট্রিমের অনেকেই আমাকে ফোন করেছেন। তারা বলছেন, তোমরা যেটা বলছো সেটা যদি সিনসিয়ারলি বলে থাকো তাহলে আমাদের জন্য দোয়া করছেন। আসলে ভালোবাসা যেমন পেয়েছি, তেমনি প্রতিকূলতাও পেয়েছি। কটু বাক্যবানেও জর্জরিত হয়েছি। যারা কটুবাক্য বলছেন, তারা হয়তো তাদের বিশ্বাস থেকে বলছেন। এটা আমাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। চ্যালেঞ্জের মধ্যেই আমি সারাজীবন কাজ করেছি, এখনো এটা আমার প্রত্যয়। তিনি বলেন, আমি যে কথাগুলো বলেছি সেগুলো অনেকের মনের কথা। অনেকেই অনেক কারণে হয়তো সেগুলো বলতে পারছে না। আমি হয়তো একটি শক্তি দিয়ে বলেছি। অনেকের সমর্থন আছে। আমি মনে করি এটা নিয়ে ওপেন বিতর্ক হতে পারে। একটা জরিপ তো চলতে পারে। দলে এসব দাবিও করেছি। আমাদের বেশিরভাগ লোকদের মধ্যে এটা আছে আমি মনে করছি। এটার সঙ্গে অনেকের সমর্থন থাকবে, অনেকেরই সায় আছে।
প্রশ্ন: উদ্যোগের নেপথ্যে কারা আছেন সেটার জবাবে বারবার বলছেন- ‘আমরা’, এই আমরা কারা?
মঞ্জু: আমরা হচ্ছে, আমাদের কমন এপ্রোচ। আমি যখন একটি কথা বলি তখন তো অনেকেই আমাকে সমর্থন করেন। তারা তো আমার সহযাত্রী। যখন আমি বলি তখন এটা শক্তিশালী হয়।
প্রশ্ন: বর্তমান বৈশ্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে ইসলামী মূল্যবোধ ও জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ভবিষ্যৎ কি?
মঞ্জু: জাতীয়তাবাদী না বলে আমি বলবো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের যে বিশ্বাস সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের কথা। মুক্তিযুদ্ধের এই চেতনার সঙ্গে ধর্মীয় অনুপ্রেরণার সমন্বয়ে কল্যাণের চিন্তা নিয়ে যে রাজনীতি হবে সেটাই হবে বাংলাদেশে শক্তিশালী রাজনীতি। আপনি যে ধারার কথা বলেছেন, এটা তার চেয়েও শক্তিশালী হবে। আমরা যেটা বলছি সেটা এখনও তাত্ত্বিক, যখন আমরা সেটা নিয়ে কাজ করবো, আহ্বান করবো তখন অনেক চিন্তাযুক্ত হবে, অনেক গতিশীলতার সঙ্গে কাজ করতে পারবো।
প্রশ্ন: আপনারা যাদের জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির ব্যাকগ্রাউন্ড আছে তারা নতুন উদ্যোগের নেতৃত্বে থাকলে রাজনীতিতে কতটুকু গ্রহণযোগ্য পাবেন বলে মনে করেন?
মঞ্জু: আমরা সফল হবো কিনা সেটা নির্ভর করবে আমরা কি নিয়ে পথ চলছি তার ওপর। আমাদের মধ্যে যদি সিনসিয়ারিটি থাকে, আমাদের কথাগুলো যদি প্রোপারলি বলতে পারি, কথাগুলো যদি যুক্তিপূর্ণ হয় তবে অবশ্যই সফল হব। যদি আমাদের কথাগুলো কৃত্রিমতা নিয়ে, কোন ধরনের ইশারা ইঙ্গিতের মধ্যদিয়ে চলতে চাই তাহলে তো সফল হবো না। আমি তো একটি আন্তরিক পরিবেশের মধ্যে ছিলাম। আমাদের এই বিদ্রোহ করতে, এই সত্য কথা বলতে যারা শিখিয়েছেন, তাদের কথাই তো আমরা বলছি। আমরা প্রলুব্ধ হলে, হতাশ হলে বা প্রতিবন্ধকতায় টলে গেলে তাহলে নিশ্চিত পরাজয় ঘটবে। আশা করছি, সবার সহযোগিতা আমরা পাবো।
প্রশ্ন: এ উদ্যোগের মাধ্যমে কি প্রকাশ্যে আসার সুযোগ পেয়েছেন বা পাচ্ছেন?
মঞ্জু: আমি সবসময় প্রকাশ্যে ছিলাম। আর আমি তো এমন বড় কিছু করেছি বা করছি তা নয়। আমি কিছু ভয়েস রেস করেছি, কিছু লেখালেখি করেছি, দলের কাছে লিখিতভাবে কিছু দাবি দিয়েছি এই তো। এখন এটাকে তো কোন অপরচুনিটি বলা ঠিক হবে না।
প্রশ্ন: সংস্কারের এই উদ্যোগ নিয়ে নতুন পথচলায় কতদূর যেতে চান?
মঞ্জু: দেশের একটি ক্রান্তিলগ্নে জাতির মুক্তির যে আন্দোলন, একটি সুশাসনের যে আন্দোলন, ছাত্র ও শ্রমিক অধিকারের যে আন্দোলন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন- সবমিলিয়ে এগুলোই আমাদের জাতীয় মুক্তির আন্দোলন হওয়া উচিত। এখন আমাদের যে অপ্রাপ্তিগুলো- জাতীয় ঐক্য, মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার যে কাজগুলো আমরা করতে পারিনি সেটা করতে আমরা কমিটেড। আমরা এটার জন্য কাজ করবো। দেশের প্রয়োজনে কাজ করবো।
প্রশ্ন: যে ছাত্রশিবিরের রাজনীতির শীর্ষ নেতা ছিলেন সে সংগঠনের ক্যাডারভিত্তিক রাজনীতির বিকাশ অব্যাহত আছে নাকি, স্থবিরতা তৈরি হয়েছে?
মঞ্জু: ক্যাডার শব্দটি শুনতে আমরা একটু অন্যভাবে মনে করি। আসলে এটা স্তরবিন্যাস। আমি মনে করি, ছাত্রছাত্রীদের মেধা ও নেতৃত্ব বিকাশে একটি বিজ্ঞানভিত্তিক পন্থা। এটাতে আমরা যথেষ্ট সাফল্য পেয়েছি। ছাত্রদের মান উন্নয়নের জন্য, একটি স্তরে পৌঁছে দেয়ার জন্য এক ধরনের ইম্প্রেশন বা আকাঙ্ক্ষা তার মধ্যে কাজ করে। এই রাজনীতিতে ছাত্রদের গঠনমূলকভাবে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা আমি ইতিবাচকভাবে দেখি। ছাত্রদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা কমাতে হবে। রাজনীতি বোধটা থাকতে হবে। আমাদের দেশে ছাত্রদের যেভাবে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয় সেটা বন্ধ করতে হবে। আমরা যে নতুন রাজনীতির কথা বলছি, সেখানে এটা আমাদের প্রত্যয়। ছাত্ররা তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলবে, ছাত্ররা কাউকে এমপি বানানো, মন্ত্রী বানানো বা কোনো সরকারকে উঠানো বা নামানোর জন্য হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে না।
প্রশ্ন: নেতৃত্ব নির্বাচন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে জামায়াতের অভ্যন্তরে কতটুকু গণতন্ত্র চর্চা হয়?
মঞ্জু: অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তুলনা করলে বলব জামায়াতের মধ্যে গণতন্ত্র চর্চাটা বেটার। কিন্তু আরো যুগোপযোগী করার প্রয়োজন আছে। জামায়াতের চেয়ে ছাত্ররাজনীতিতে আমার ভূমিকা বেশি ছিল এবং সেখানে গণতান্ত্রিক চর্চা করেছি। জামায়াতের এখনকার যে পরিবেশ যেটা, যেসব ত্রুটি আছে সেগুলোকে যদি দূর করা যায় তাহলে গণতন্ত্র চর্চা আরো শানিত হবে।
প্রশ্ন: দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্বের কতটুকু দায় আছে বলে মনে করেন?
মঞ্জু: নেতৃত্বের দায় তো থাকেই। নেতৃত্বই তো দলকে পরিচালিত করেন। তবে জামায়াতকে একটি কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয়েছে। তাদের শীর্ষ সারির নেতাদের বিচারে আইনের প্রক্রিয়ায় বিষয়গুলোর ফায়সালা করা হয়নি। প্রবল প্রতিরোধ তাদের মোকাবিলা করতে হয়েছে। একটি রাজনৈতিক দলের ওপর যে বিরাট ডিফ্রেশন সেটাকে মোকাবিলা করা কঠিন। তাই নেতৃত্বের সফলতা বা ব্যর্থতা নিয়ে কিছু বলতে চাই না। যারা এ আদর্শের আন্দোলনটা করে এসেছেন তাদের অনেক অ্যাসিভমেন্ট আপনারা পাবেন। কিন্তু কতটুকু তারা করতে পারতো সেটা যদি আপনি দেখেন তবে তাদের ঘাটতিগুলো ধরা পড়বে। নেতৃত্বের দায়তো আছেই।
প্রশ্ন: রাজনীতিতে জামায়াতের কোন সিদ্ধান্তগুলো ভুল ছিল বলে মনে করেন?
মঞ্জু: জামায়াত যে আদর্শ ভিত্তিক আন্দোলন সংগ্রাম করেছে বাস্তবতার সঙ্গে মিলিয়ে, দার্শনিক তত্ত্বের সঙ্গে মিলিয়ে এটা সময়ে সময়ে যুগোপযোগী করা দরকার ছিল। এই জায়গায় আমরা বলতে চেয়েছি যে, সঠিকভাবে যুগোপযোগী করা হয়নি। বলেছি, সময়ের দাবির সঙ্গে সঙ্গে সংস্কার করতে হবে। বর্তমান দাবি এবং পরিস্থিতির সঙ্গে আপডেটেশন করতে হবে। তিনি বলেন, রাজনীতি একটি কঠিন কার্যক্রম। রাজনীতির সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভুলত্রুটি থাকবেই। মৌলিক জায়গায় যে ভুল বা সীমাবদ্ধতাটা আমরা দেখতে পাচ্ছি সেটা হচ্ছে- স্বাধীনতা যুদ্ধের জায়গায় পরিস্কার একটি অবস্থান জামায়াতকে ঠিক করতে হবে।
প্রশ্ন: শিবিরের রাজনীতির আগে কি অন্য কোনো ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন?
মঞ্জু: আমি শৈশবে সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। ছোটবেলায় ছাত্র ইউনিয়নের প্রতি একটি প্যাসিনেশন ছিল। তাদের ভালো ভালো দেয়াল লিখন থাকতো। কিন্তু অন্য কোনো সংগঠন করতাম না। আমি শিবিরে যুক্ত হয়েছি ১৯৮৮ সালে। আমার আব্বা ও বোনের জামাইরা সবাই মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে আমাদের পারিবারিকভাবে একটি শ্রদ্ধাবোধ আছে। যখন শিবির করি তখন বড় বোনের বাসায় ছিলাম। তার স্বামী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই তারা এটা ভালোভাবে নেয়নি। বিভিন্ন জায়গায় আমাকে পালিয়ে থাকতে হয়েছে।
দুলাভাই পুলিশ দিয়ে খুঁজেছেন। তখন সংগঠনের নেতারা আমাকে সহযোগিতা করেছেন। আমার জীবনে শিবিরের অবদান অনেক বেশি। ছাত্রশিবিরের কাছ থেকে আমি একটি বিপ্লবী অনুপ্রেরণা পেয়েছি। এটা আমি আমার জীবন থেকে আলাদা করতে পারি না। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একবার আমার উপর হামলা হয়েছিল। মাথায় ইটের আঘাত পেয়ে আমি সংজ্ঞা হারিয়ে পড়ে গিয়েছিলাম। হামলাকারীরা মৃতভেবে চলে যাওয়ার পর আমার সহপাঠী ও শিক্ষকরা এসে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। ঢাকায় ২৮শে অক্টোবর একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। আমরা তো জীবন দেয়ার প্রেরণা নিয়েই ছাত্ররাজনীতি করেছি।
জামায়াতের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রচর্চার দাবিসহ নানা ইস্যুতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অস্বস্তির মধ্যে ছিলেন জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্ব। সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যদিয়ে নতুন করে সংকটের মধ্যে পড়ছে দলটি। অবশ্যই রাজনৈতিক মহলে এ নিয়ে দেখা যাচ্ছে- মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছেন, নতুন কৌশলে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে জামায়াত; আবার কেউ বলছে, জামায়াতে ভাঙন ধরাতে আমাদের কৌশল বাস্তবায়নের উদ্যোগ এটি। জামায়াতের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ, দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের দায়, অদূরদর্শিতা, নতুন উদ্যোগ, উদ্যোগের নেপথ্যে, ইসলামী রাজনীতির উপযোগিতাসহ নানা বিষয়ে মানবজমিনের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলেছেন জামায়াতের সদ্য বহিষ্কৃত নেতা মজিবুর রহমান মঞ্জু।
প্রশ্ন: জামায়াতের সংস্কারের যে আওয়াজ তুলেছেন, সেটার পেছনে কারা আছে?
মঞ্জু: আমার পেছনে দেয়াল দেখা যাচ্ছে। আমার সামনে যারা আছে তাদের নিয়ে আমি এগিয়ে যেতে চাই। আমি বলেছি, ক্লেইম করছি- এ ধরনের চিন্তাটা আমাদের সবার মাঝেই আছে। আমি একটু ঝুঁকি নিয়ে কথাগুলো বলেছি। দায় নিয়েই বলেছি। বাংলাদেশের এ ধরনের পরিস্থিতিতে তরুণদের উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলেছি। যারা বাংলাদেশ নিয়ে ভাবেন। তারাই আমাদের পথ নির্দেশক। আমার কথাগুলো যৌক্তিক হলে অবশ্যই তাদের সাড়া পাব, এটাই বিশ্বাস।
প্রশ্ন: সংস্কার প্রস্তাবটি রাজনীতির এই মুহূর্তে এসে কেন? এ উদ্যোগ কি জামায়াতকে আরো খাদের কিনারে ঠেলে দেবে?
মঞ্জু: এই কথাগুলো এই মুহূর্তে বলিনি। এগুলো আমাদের দলের মধ্যে বিভিন্ন পর্ষদে আমরা বলেছি। এ আলোচনাগুলো বিভিন্ন সময়ে হয়েছে। এ বিষয়ে কবে থেকে কথা বলছেন সেটা ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক ডকুমেন্টারি আকারে লিখেছেন। ফলে এখন এসব বিষয়ে বলছি বা আলোচনায় এসেছে বিষয়টি কিন্তু তা নয়। বিভিন্ন সময়ে ব্যাপারগুলো আলোচনায় এসেছে। এটা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায়। তিনি বলেন, দলে এসব আলোচনা হয়েছে। দল বলেছে, আমরা একটি প্রোগ্রেসিভ চিন্তা করছি। দল বলছে, আমি যে ওয়েতে কথাগুলো বলেছি, এটা গঠনতান্ত্রিকভাবে শুদ্ধ নয়। আমি আমার পরিতৃপ্তি হচ্ছে, আমি আমার কথাগুলো বলতে পেরেছি। আমার মনে হয় প্রসেসকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে আমার কথাগুলোর যৌক্তিকতার গুরুত্ব দেয়া উচিত। আমার কথাগুলো দাবি গুলো যদি যুক্তিপূর্ণ হয় তবে দল গ্রহণ করবে। বহিষ্কার নিয়ে দ্বিমত নেই। তবু অনেক দিনের সম্পর্ক তাই খারাপ তো লাগেই।
প্রশ্ন: অতীতে জামায়াত-শিবিরের সংস্কারের উদ্যোগ যারা নিয়েছেন তারা এবং তাদের উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে, আপনারা কতটুকু আশাবাদী?
মঞ্জু: সাফল্য-ব্যর্থতা আপেক্ষিক ব্যাপার। আমি মনে করি কোনো উদ্যোগই ব্যর্থ হয় না। সংস্কার প্রক্রিয়াটা জটিল এবং কঠিন। পৃথিবীতে যারাই সংস্কারের কথা বলেছেন, তারাই কিন্তু নিগৃহীত ও নির্যাতিত হয়েছেন। তাদের কথাগুলো একটা পর্যায়ে বাস্তবায়ন হয়েছে। অতীতের ব্যর্থতার ব্যাপারে দ্বিমত করে বলবো, কাউকে ব্যর্থ বলতে চাই না। কে সফল কে ব্যর্থ সেটা বলা কঠিন। আমি মনে করি এ সমস্ত প্রয়াসের ফল বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো ভোগ করবে এবং এগিয়ে যাবে।
প্রশ্ন: সংস্কারের এই উদ্যোগ নিয়ে দুই ধরনের গুঞ্জন এখন রাজনৈতিক মহলে। কেউ বলছে, জামায়াতের ঘুরে দাঁড়ানোর কৌশল এটা আবার কেউ বলছে, জামায়াতে ভাঙন ধরানোর জন্য সরকারের কৌশল- আসলে কি?
মঞ্জু: এগুলো সবই ধারণাপ্রসূত এবং অপপ্রচার। এ ধরনের অভিযোগ, ব্লেইম গেম বাংলাদেশের রাজনীতিতে আছে- এগুলো নিয়ে কথা বলতে চাই না। আমরা যে চেষ্টা করছি সেটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য অনেকে অনেক কথা বলবে। সেটা সময়ই বলে দেবে কোনটি সত্য। আমি দৃঢ়ভাবে বলছি, আমরা সিনসিয়ারলি চাইছি এবং আমরা সে চেষ্টাটা করে যাবো। এটা আমাদের কমিটমেন্ট।
প্রশ্ন: ইতিমধ্যে কেমন সাড়া পেয়েছেন বা পাচ্ছেন?
মঞ্জু: এটা মিশ্র। অনেকেই সাড়া দিচ্ছেন, ফোন করছেন, সাধুবাদ জানাচ্ছেন। মেইন স্ট্রিমের অনেকেই আমাকে ফোন করেছেন। তারা বলছেন, তোমরা যেটা বলছো সেটা যদি সিনসিয়ারলি বলে থাকো তাহলে আমাদের জন্য দোয়া করছেন। আসলে ভালোবাসা যেমন পেয়েছি, তেমনি প্রতিকূলতাও পেয়েছি। কটু বাক্যবানেও জর্জরিত হয়েছি। যারা কটুবাক্য বলছেন, তারা হয়তো তাদের বিশ্বাস থেকে বলছেন। এটা আমাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। চ্যালেঞ্জের মধ্যেই আমি সারাজীবন কাজ করেছি, এখনো এটা আমার প্রত্যয়। তিনি বলেন, আমি যে কথাগুলো বলেছি সেগুলো অনেকের মনের কথা। অনেকেই অনেক কারণে হয়তো সেগুলো বলতে পারছে না। আমি হয়তো একটি শক্তি দিয়ে বলেছি। অনেকের সমর্থন আছে। আমি মনে করি এটা নিয়ে ওপেন বিতর্ক হতে পারে। একটা জরিপ তো চলতে পারে। দলে এসব দাবিও করেছি। আমাদের বেশিরভাগ লোকদের মধ্যে এটা আছে আমি মনে করছি। এটার সঙ্গে অনেকের সমর্থন থাকবে, অনেকেরই সায় আছে।
প্রশ্ন: উদ্যোগের নেপথ্যে কারা আছেন সেটার জবাবে বারবার বলছেন- ‘আমরা’, এই আমরা কারা?
মঞ্জু: আমরা হচ্ছে, আমাদের কমন এপ্রোচ। আমি যখন একটি কথা বলি তখন তো অনেকেই আমাকে সমর্থন করেন। তারা তো আমার সহযাত্রী। যখন আমি বলি তখন এটা শক্তিশালী হয়।
প্রশ্ন: বর্তমান বৈশ্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে ইসলামী মূল্যবোধ ও জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ভবিষ্যৎ কি?
মঞ্জু: জাতীয়তাবাদী না বলে আমি বলবো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের যে বিশ্বাস সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের কথা। মুক্তিযুদ্ধের এই চেতনার সঙ্গে ধর্মীয় অনুপ্রেরণার সমন্বয়ে কল্যাণের চিন্তা নিয়ে যে রাজনীতি হবে সেটাই হবে বাংলাদেশে শক্তিশালী রাজনীতি। আপনি যে ধারার কথা বলেছেন, এটা তার চেয়েও শক্তিশালী হবে। আমরা যেটা বলছি সেটা এখনও তাত্ত্বিক, যখন আমরা সেটা নিয়ে কাজ করবো, আহ্বান করবো তখন অনেক চিন্তাযুক্ত হবে, অনেক গতিশীলতার সঙ্গে কাজ করতে পারবো।
প্রশ্ন: আপনারা যাদের জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির ব্যাকগ্রাউন্ড আছে তারা নতুন উদ্যোগের নেতৃত্বে থাকলে রাজনীতিতে কতটুকু গ্রহণযোগ্য পাবেন বলে মনে করেন?
মঞ্জু: আমরা সফল হবো কিনা সেটা নির্ভর করবে আমরা কি নিয়ে পথ চলছি তার ওপর। আমাদের মধ্যে যদি সিনসিয়ারিটি থাকে, আমাদের কথাগুলো যদি প্রোপারলি বলতে পারি, কথাগুলো যদি যুক্তিপূর্ণ হয় তবে অবশ্যই সফল হব। যদি আমাদের কথাগুলো কৃত্রিমতা নিয়ে, কোন ধরনের ইশারা ইঙ্গিতের মধ্যদিয়ে চলতে চাই তাহলে তো সফল হবো না। আমি তো একটি আন্তরিক পরিবেশের মধ্যে ছিলাম। আমাদের এই বিদ্রোহ করতে, এই সত্য কথা বলতে যারা শিখিয়েছেন, তাদের কথাই তো আমরা বলছি। আমরা প্রলুব্ধ হলে, হতাশ হলে বা প্রতিবন্ধকতায় টলে গেলে তাহলে নিশ্চিত পরাজয় ঘটবে। আশা করছি, সবার সহযোগিতা আমরা পাবো।
প্রশ্ন: এ উদ্যোগের মাধ্যমে কি প্রকাশ্যে আসার সুযোগ পেয়েছেন বা পাচ্ছেন?
মঞ্জু: আমি সবসময় প্রকাশ্যে ছিলাম। আর আমি তো এমন বড় কিছু করেছি বা করছি তা নয়। আমি কিছু ভয়েস রেস করেছি, কিছু লেখালেখি করেছি, দলের কাছে লিখিতভাবে কিছু দাবি দিয়েছি এই তো। এখন এটাকে তো কোন অপরচুনিটি বলা ঠিক হবে না।
প্রশ্ন: সংস্কারের এই উদ্যোগ নিয়ে নতুন পথচলায় কতদূর যেতে চান?
মঞ্জু: দেশের একটি ক্রান্তিলগ্নে জাতির মুক্তির যে আন্দোলন, একটি সুশাসনের যে আন্দোলন, ছাত্র ও শ্রমিক অধিকারের যে আন্দোলন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন- সবমিলিয়ে এগুলোই আমাদের জাতীয় মুক্তির আন্দোলন হওয়া উচিত। এখন আমাদের যে অপ্রাপ্তিগুলো- জাতীয় ঐক্য, মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার যে কাজগুলো আমরা করতে পারিনি সেটা করতে আমরা কমিটেড। আমরা এটার জন্য কাজ করবো। দেশের প্রয়োজনে কাজ করবো।
প্রশ্ন: যে ছাত্রশিবিরের রাজনীতির শীর্ষ নেতা ছিলেন সে সংগঠনের ক্যাডারভিত্তিক রাজনীতির বিকাশ অব্যাহত আছে নাকি, স্থবিরতা তৈরি হয়েছে?
মঞ্জু: ক্যাডার শব্দটি শুনতে আমরা একটু অন্যভাবে মনে করি। আসলে এটা স্তরবিন্যাস। আমি মনে করি, ছাত্রছাত্রীদের মেধা ও নেতৃত্ব বিকাশে একটি বিজ্ঞানভিত্তিক পন্থা। এটাতে আমরা যথেষ্ট সাফল্য পেয়েছি। ছাত্রদের মান উন্নয়নের জন্য, একটি স্তরে পৌঁছে দেয়ার জন্য এক ধরনের ইম্প্রেশন বা আকাঙ্ক্ষা তার মধ্যে কাজ করে। এই রাজনীতিতে ছাত্রদের গঠনমূলকভাবে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা আমি ইতিবাচকভাবে দেখি। ছাত্রদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা কমাতে হবে। রাজনীতি বোধটা থাকতে হবে। আমাদের দেশে ছাত্রদের যেভাবে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয় সেটা বন্ধ করতে হবে। আমরা যে নতুন রাজনীতির কথা বলছি, সেখানে এটা আমাদের প্রত্যয়। ছাত্ররা তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলবে, ছাত্ররা কাউকে এমপি বানানো, মন্ত্রী বানানো বা কোনো সরকারকে উঠানো বা নামানোর জন্য হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে না।
প্রশ্ন: নেতৃত্ব নির্বাচন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে জামায়াতের অভ্যন্তরে কতটুকু গণতন্ত্র চর্চা হয়?
মঞ্জু: অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তুলনা করলে বলব জামায়াতের মধ্যে গণতন্ত্র চর্চাটা বেটার। কিন্তু আরো যুগোপযোগী করার প্রয়োজন আছে। জামায়াতের চেয়ে ছাত্ররাজনীতিতে আমার ভূমিকা বেশি ছিল এবং সেখানে গণতান্ত্রিক চর্চা করেছি। জামায়াতের এখনকার যে পরিবেশ যেটা, যেসব ত্রুটি আছে সেগুলোকে যদি দূর করা যায় তাহলে গণতন্ত্র চর্চা আরো শানিত হবে।
প্রশ্ন: দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্বের কতটুকু দায় আছে বলে মনে করেন?
মঞ্জু: নেতৃত্বের দায় তো থাকেই। নেতৃত্বই তো দলকে পরিচালিত করেন। তবে জামায়াতকে একটি কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয়েছে। তাদের শীর্ষ সারির নেতাদের বিচারে আইনের প্রক্রিয়ায় বিষয়গুলোর ফায়সালা করা হয়নি। প্রবল প্রতিরোধ তাদের মোকাবিলা করতে হয়েছে। একটি রাজনৈতিক দলের ওপর যে বিরাট ডিফ্রেশন সেটাকে মোকাবিলা করা কঠিন। তাই নেতৃত্বের সফলতা বা ব্যর্থতা নিয়ে কিছু বলতে চাই না। যারা এ আদর্শের আন্দোলনটা করে এসেছেন তাদের অনেক অ্যাসিভমেন্ট আপনারা পাবেন। কিন্তু কতটুকু তারা করতে পারতো সেটা যদি আপনি দেখেন তবে তাদের ঘাটতিগুলো ধরা পড়বে। নেতৃত্বের দায়তো আছেই।
প্রশ্ন: রাজনীতিতে জামায়াতের কোন সিদ্ধান্তগুলো ভুল ছিল বলে মনে করেন?
মঞ্জু: জামায়াত যে আদর্শ ভিত্তিক আন্দোলন সংগ্রাম করেছে বাস্তবতার সঙ্গে মিলিয়ে, দার্শনিক তত্ত্বের সঙ্গে মিলিয়ে এটা সময়ে সময়ে যুগোপযোগী করা দরকার ছিল। এই জায়গায় আমরা বলতে চেয়েছি যে, সঠিকভাবে যুগোপযোগী করা হয়নি। বলেছি, সময়ের দাবির সঙ্গে সঙ্গে সংস্কার করতে হবে। বর্তমান দাবি এবং পরিস্থিতির সঙ্গে আপডেটেশন করতে হবে। তিনি বলেন, রাজনীতি একটি কঠিন কার্যক্রম। রাজনীতির সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভুলত্রুটি থাকবেই। মৌলিক জায়গায় যে ভুল বা সীমাবদ্ধতাটা আমরা দেখতে পাচ্ছি সেটা হচ্ছে- স্বাধীনতা যুদ্ধের জায়গায় পরিস্কার একটি অবস্থান জামায়াতকে ঠিক করতে হবে।
প্রশ্ন: শিবিরের রাজনীতির আগে কি অন্য কোনো ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন?
মঞ্জু: আমি শৈশবে সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। ছোটবেলায় ছাত্র ইউনিয়নের প্রতি একটি প্যাসিনেশন ছিল। তাদের ভালো ভালো দেয়াল লিখন থাকতো। কিন্তু অন্য কোনো সংগঠন করতাম না। আমি শিবিরে যুক্ত হয়েছি ১৯৮৮ সালে। আমার আব্বা ও বোনের জামাইরা সবাই মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে আমাদের পারিবারিকভাবে একটি শ্রদ্ধাবোধ আছে। যখন শিবির করি তখন বড় বোনের বাসায় ছিলাম। তার স্বামী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই তারা এটা ভালোভাবে নেয়নি। বিভিন্ন জায়গায় আমাকে পালিয়ে থাকতে হয়েছে।
দুলাভাই পুলিশ দিয়ে খুঁজেছেন। তখন সংগঠনের নেতারা আমাকে সহযোগিতা করেছেন। আমার জীবনে শিবিরের অবদান অনেক বেশি। ছাত্রশিবিরের কাছ থেকে আমি একটি বিপ্লবী অনুপ্রেরণা পেয়েছি। এটা আমি আমার জীবন থেকে আলাদা করতে পারি না। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একবার আমার উপর হামলা হয়েছিল। মাথায় ইটের আঘাত পেয়ে আমি সংজ্ঞা হারিয়ে পড়ে গিয়েছিলাম। হামলাকারীরা মৃতভেবে চলে যাওয়ার পর আমার সহপাঠী ও শিক্ষকরা এসে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। ঢাকায় ২৮শে অক্টোবর একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। আমরা তো জীবন দেয়ার প্রেরণা নিয়েই ছাত্ররাজনীতি করেছি।
No comments